কেমন দেখলাম বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ঘুরে এলাম। প্রায় দু’টি মাস ধরে দেখলাম আমার দেশকে; বড় আবেগে, বড় উচ্ছাসে।

প্রবাসে যারা আছেন, দেশের প্রতি তাদের টানটা বোধকরি বেশ বেশিই থাকে। দেশকে তারা মিস করেন বেশি, তাই দেশের মাটিতে পা দিতেই ফিলিংসে উথলে পড়ে তাদের।
আমিও তাদেরই একজন। এক বছর পর দেশে গিয়ে তাই দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিলাম যেন। ঢাকার রাস্তায় নিঃসংকোচে ঘুরে বেড়িয়েছি দিবানিশি, সবুজ শ্যামল দেশটাকে নিয়ে যত্রতত্র ভেবেছি, ট্রাফিক জ্যামে বসে বসে চিন্তা করেছি কীভাবে যানজটমুক্ত ঢাকা গড়া যায়… আরও কতো কি।

১৪ই আগস্টে যখন রওয়ানা হই, সেটা ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস, আর ১৫ই আগস্টে যখন ঢাকায় পা রাখি, সেটা ছিল বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস। টেনশন ছিল, তবে কোনো অঘটন ছাড়াই ঘরে পৌঁছি।
এরপর প্রথম যেটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে তা হলো সিসিবি’র গেটটুগেদার। বেশ ভালো লেগেছিল সেদিন, এতোগুলো প্রতিভাধর চেহারাকে একসাথে দেখতে পেয়ে। আয়োজকদের ধন্যবাদ, স্পেশাল্যি আমার বন্ধু মাশরুফকে।
ব্লগের কল্যাণে যাদের সাথে পরিচয় তাদের সাথে বাক্যবিনিময় হলো। শফি ভাই, কনক ভ্রাতৃদ্বয়, জিহাদ, আরো অনেকে। সাথে টুকিটাকি ভুরিভোজ। তবে একটা অতৃপ্তি রয়েই গেল, আমার “স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা” এলোনা…।

রোজার ভেতরে কলেজে (ককক) গিয়ে এসেছি একদিন। এডজুট্যান্টসহ যতো কর্মকর্তা-কর্মচারির সাথে কথা হলো, সবার মুখে দেশপ্রেমের গল্প। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, দুর্নীতি এসব বিষয়ে অভূতপূর্ব সচেতনতা সবার মাঝে।

বর্তমান জরুরি অবস্থার সরকারের কিছু সাফল্য চোখে পড়লো। পল্লবীতে আমাদের এলাকায় লোডশেডিং বেশ কম হয়েছে রমযানে।
পাবলিকের মাঝে দুর্নীতিবিরোধী একটা জাগরণও লক্ষ্য করলাম। বিগত বছরগুলোর নীতিহীন নেতৃত্বের বিপক্ষেও জনগণের অবস্থান স্পষ্ট মনে হল। তবে দুর্নীতির প্রসঙ্গে কেবল রাজনীতিবিদদের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করবার একটা প্রবণতাও চোখে পড়েছে।

এ-সরকারের ব্যর্থতাও প্রচুর। সংবিধানের তোয়াক্কা না করে অনভিজ্ঞতার বশে সার্বভৌমত্বের হুমকি তৈরি করেছে সরকার। দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে দেখেছি দেশবাসীকে, অনেক লোককে দেখেছি ব্যাংক থেকে সঞ্চয় তুলে খাবার খেতে।
নিম্ন আয়ের মানুষের মাথা বেশ গরম হয়ে যেতে দেখেছি, অল্পতেই ঝগড়া এবং গালিগালাজ শুরু। জীবনধারণের এতো প্রতিকূলতা নিয়ে বাঁচাটা যেন অতিশয় কষ্টের।
ফুটপাতে শুয়ে রাত কাটাবার লোকসংখ্যাও বেড়েছে বলেই মনে হল। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শুনি, একটি পরিবার- গত এক বছরেও তারা একটাও ডিম খেতে পারেনি। ফার্মগেটে র‌্যাঙ্গস ভবনের সামনে দিয়ে গিয়েছি কত, বারবার মনে পড়েছে পত্রিকায় দেখা সেই শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশের ছবি।

তবে শহরে বা আমার আশেপাশের লোকজনের জীবনমান কমেনি বরং বেড়েছে বৈকি। উঁচু ভাড়া দিয়ে সিটিং গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে চলেছে মানুষ, প্রাইভেট কারের সংখ্যাও বর্ধিষ্ণু। কারণ হয়তোবা সময়ের মূল্য দিতে শিখেছে সবাই।

ঈদে জামাকাপড়ও পেলাম বেশ। ছোটদের দিলামও। সবার সাথে ঈদ করার আনন্দটাই অন্যরকম, টানা ৪ বছর এই আনন্দটা পাইনি।
তৈরি পোশাকের রকমারি শোরুমগুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে ভালোই এগিয়েছে; সেইসাথে আছে শ্রমিক অসন্তোষ, ভাংচু্‌র, ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।
নিত্যনতুন ফ্যাশন দেখেছি পরিধেয় বস্ত্রে, বিশেষত মেয়েদের। বোরকা পরিহিতার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, অবরোধমুক্ত পোশাকের পরিমাণও তেমনই বেড়েছে। সালোয়ার-কামিজের জায়গাটা যেন বদলি হয়েছে জিন্সের সাথে ওড়নাবিহীন ফতুয়ায়। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব এক্ষেত্রে মুখ্য কারণ মনে হয়।
রিকশায় করে অল্প বয়সী যুগলদের অন্তরঙ্গ যাতায়াতও বেশ নজরে পড়েছে। বাসে বসে দেখেছি রমনা পার্ক কিংবা জিয়া উদ্যানের রোমান্স।

এই কদিনে বিয়ে খেলাম মোট ৬টা। দেশের বাড়িতে গিয়েছি ৩বার। হোটেলে লাঞ্চ করেছি মাত্র একদিন, নানান জাতের সবজি ও ভর্তা এবং ইলিশ আর মাংসে হাত হলুদ করে মেখে ভাত খাবার যে কী মজা!
অপূর্ব সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে IUTতে গিয়ে, আমাদের ব্লগ এডজুট্যান্টের সাথে দেখা করলাম। বর্ষা নামে সত্যিই যে কেউ আছে, সেটা নিশ্চিত হলাম সেদিন।

অবশেষে সব ছেড়েছুড়ে আবার এলাম ফিরে। ZIA পেরিয়ে বিমানটা যখন উপরের দিকে উঠে যাচ্ছিলো ক্রমাগত, আমি তখন আপ্রাণ তাকিয়ে আছি নিচে- আমার ঢাকা অতি দ্রুত ছোট হয়ে আসছে। প্রথমে হোটেল র‌্যাডিসন, এরপর তুরাগ নদী ছোট্ট সুতার মতো হয়ে গেল, আরো উপরে উঠে যেতেই ঢাকা শহরকে হাতড়ে বেড়াতে লাগলাম, আরো পরে খুঁজতে লাগলাম গোটা বাংলাদেশের কিছুটাও যদিবা চোখে পড়ে!

আবার ব্যস্ত জীবন- পড়াশুনা, ইউনিফর্ম, ক্লাস। আর শুধু দূর হতে ভালবেসে যাওয়া, প্রিয় বাংলাদেশকে।
সাথে থাকছে সিসিবিতে গুঁতোগুঁতি। আবার শুরু আমার সেইসব বোরিং লেখালেখি।

১,৪১৯ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “কেমন দেখলাম বাংলাদেশ”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আপনার দেশে ছুটি কাটাতে আসাটা পুরা সার্থক। অনেক কিছু দেখে নিলেন যেটা আমরা সবসময় দেশে থেকেও দেখতে পারি না।
    আলম ভাই, সিসিবি গেট টুগেদারে আপনি বলছিলেন, আমাকে আগে কোথায় যেন দেখেছেন।
    আসলেই দেখছেন। জুবায়ের ভাইয়ের সাথে আমারও পরিচয় আছে, আপনেরও। ফার্মগেটে আপনের সাথে দেখা হইছিল, সেই ২০০৪-০৫ সালে।
    অনেকদিন জুবায়ের ভাইয়ের সাথে দেখা নাই। কারও সাথেই তেমন যোগাযোগ নাই। একা একা থাকি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রবিন (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।