তানভীর বন্দনা

সিসিবি’র এক অনন্য প্রতিভাধর সদস্য তানভীর ভাই। :-B কুমিল্লার বিখ্যাত ১৫তম ব্যাচের (৯৪-০০) একজন স্বনামধন্য এক্স-ক্যাডেট, এরপর বুয়েটেও। পড়াশুনায় তার আগে কেউ ছিলনা কখনোই। বোর্ডের উভয় পরীক্ষায় স্ট্যান্ড, গোমতীর এসিস্ট্যান্ট হাউস প্রিফেক্ট, বর্তমানে জিপিতে। :boss:

আমার বড় সৌভাগ্য ছিল তার সাথে একই সময়ে একই কলেজে একই হাউসে থাকার। :guitar: বোধকরি ক্লাস এইটে উঠতেই ওনি আমার নজর কেড়ে নেন, কিন্তু সিনিয়রতো, কেবল দূর থেকে তাকে ফলো করি আমি, কখনো কিছু বলা হয়না। 😉
তাকে বেশি বেশি দেখতাম ডাইনিং হলে, জুনিয়র বলে আমরা আগেই গিয়ে বসে থাকতাম আর ওঁরা আসতো দল বেধে হৈচৈ করতে করতে, ডাইনিং হলে ঢুকে মাঝখানের খালি স্পেসটায় আড্ডা… আমি ৬ নাম্বার টেবিলে বসে বসে দেখি তাদের। :dreamy: ভদ্র ছেলে বলে তানভীর ভাই বকতেন কম, কেবল শুনতেন, আর হাসতেন মিটিমিটি, শ্যামলা মুখের সেই মিষ্টি হাসি আমি দু’চোখ ভরে দেখতাম।

যাহোক, আসল কাহিনী বলি। ওঁরা তখন এসএসসি’র ছুটি কাটিয়ে কলেজে ফিরেছেন। ৩ মাস বাসায় খেয়েদেয়ে সবাই ‘সিভিল পানি’ নিয়ে এসেছেন, আগের কাপড়ে আঁটছেনা! উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মোটা ছিলো শাহেদ-সাইফ-মাশফিক ভাই। :gulti: ঠিক এমনি একদিন সন্ধ্যায় করিডোরে বেরিয়েই ধরা পড়লাম তানভীর ভাইয়ের হাতে। এবার কিন্তু খুশি হতে পারলাম না। সিনিয়রসুলভভাবে ওনি বললেন, “আলম, তোমার নতুন পুলওভারটা নিয়া আস আর আমারটা তুমি নিয়া যাও”, :(( সেদিন কী কষ্টটা আমি পেয়েছিলাম… পরে দেখেছি ওনার ৪ বছরের ইউজ্‌ড পুলওভারটা বেশ স্মার্ট ছিলো, সুন্দর ঝকঝকে। মজার ব্যাপার হলো এখনো আমি সেটা পরি এবং সবাই ওর পরিষ্কার রঙ দেখে বাহবা দেয়, :party: আমি তখন দেখাই এটার গলার কাছে লেখা তানভীর ভাইয়ের পরিষ্কার হস্তাক্ষর “গ-৭৩৯”।

তানভীর ভাইরা যেদিন এসএসসি’র শেষ পরীক্ষা দিয়ে ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন, আমি সেদিন ওনার কিছু নোট চেয়ে রেখেছিলাম। তার অপূর্ব সুন্দর হাতের লেখায় ভরপুর ২টা খাতা, বাংলা-ইংরেজির কিছু নোট এবং আরো কিছু। তার নোটগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিলঃ সেখানে কোনোকিছু ডিটেইল্‌স ছিলনা, কেবল পয়েন্টস একসাথে লিখে রাখা। আমার ধারণা ওনি পয়েন্ট+উদ্ধৃতিগুলো মনে রাখতেন আর হলে বসে নিজের মত ব্যাখ্যা করতেন। পদ্ধতিটা আমি ফলো করলাম। ওনার খাতায় আরেকটা জিনিস ছিলঃ স্থানে স্থানে বিভিন্ন গান/কবিতার লাইন পরিপাটিভাবে লেখা, সমসাময়িক হিন্দী/ইংলিশ গানের লিরিক্‌স, হিন্দীগুলো বাংলা অক্ষরে লেখা। আরেকটা জিনিস শিখেছি, সেখানে পদার্থ/রসায়নের বিভিন্ন “গাণিতিক প্রতিপাদনের” স্টেপগুলো লেখা ছিলো, শুধু মূল স্টেপগুলো, যাতে পুরো বিষয়টা মনেও থাকে এবং হলে বসে সবগুলো পর্যায়ক্রমে লিখা যায়। বুদ্ধি করে গুছিয়ে গুছিয়ে পড়ার কী ফায়দা, তা আমি শিখেছিলাম সেখান থেকে। আমি আরেকটা কাজ করেছিলাম, ওনার handwriting খুব ভাল্লাগতো, তাই আমি প্রতিটা অক্ষর দেখে দেখে লিখতাম। এভাবে আমারও হস্তাক্ষর বেশ ইম্প্রুভ হয়েছিল। :grr: উদাহরণস্বরুপ, ওনার ঈ-কারটা আকর্ষণীয় ছিল, তাছাড়া ‘জ’ এবং ‘শ’ লিখবার স্টাইল শেখাবার জন্য আমি তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবো। আর ওনার ইংরেজি লেখাগুলো ছিল মুক্তার মত, আমি প্রতিটা অক্ষর ধরে ধরে copy করতাম।… অবাক হলাম যেদিন SSCর Pre-test পরীক্ষার ইংরেজী খাতার উপর শাহীন জামান স্যার লিখে দিলেন, “Your handwriting and writing skill is very nice.. appreciable..”, :shy: আমি সেদিন মনের গহীন থেকে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম তানভীর ভাইকে, স্মরণ করেছিলাম তাঁর ইংরেজি লেখা খাতাটির।

আজ প্রায় ৮ বছর পর তার সাথে দেখা, সিসিবি’র কল্যাণে। তাই এ-সুযোগে তাঁর সেসব অবদানগুলো স্বীকার করে নিলাম। :clap: আসলে প্রতিভাবানেরা সর্বত্রই শেষ্ঠ, এর প্রমাণ আমরা পেলাম সিসিবিতে তার অল্প কিছু লেখনীতেই। আমরা আবার দেখলাম ভাল ছাত্রেরা ভাল গল্পও লিখতে জানে (প্রহর শেষের আলোয় রাঙ্গা দ্রষ্টব্য), যিনি রাঁধেন তিনি যে চুলও বাঁধতে জানেন বৈকি। :hatsoff:

৪,১৭২ বার দেখা হয়েছে

৫০ টি মন্তব্য : “তানভীর বন্দনা”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    তানভীররে তো ন্যাংটাকাল থেইকা চিনি।
    কিন্তু ও যে রাঁধে আবার চুল বাঁধে এইটা কোনদিন জানতে পারি নাই :grr:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. তৌফিক (৯৬-০২)

    তানভীর ভাইয়ের সাথে পরিচয় ব্লগে, তারপর ফেসবুকে। আমি খুব বেশি খোমাখাতাই না, তাই সেইখানে মিথস্কৃয়া তেমন হয় না। তবে আমার ধারণা, মানুষটা সেইরকম, বিনয়ী এবং কেয়ারিং।

    তানভীর ভাইয়ের জন্য শুভেচ্ছা। 🙂

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    :salute: টু তানভীর ভাই।

    :hatsoff: টু আলম ভাই।

    গুণীর কদর নাকী গুণীরাই করে।

    অফটপিকঃ আমিও কিন্তু উনাদের কদর করছি।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)
    গুণীজনদের প্রতি গুণমুগ্ধতা আমার বরাবরই।

    আমারও।
    আলমকে ধন্যবাদ ভাইয়ার গুণ সম্বন্ধে অবগত করার জন্য। তবে না জানলেও এইটুকু জানতাম উনি এইরকমই হবেন। হওয়ারই কথা।

    জবাব দিন
  5. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    তানভীরের সাথে প্রথম পরিচয় কবে তা ঠিক মনে নাই, সেই পরিচয়টা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল কিনা তাও মনে নাই..,.শুধু এইটুকে মনে আছে...বহুদিনের অসাক্ষাতেও ওকে ভুলিনি...
    কিছু মানুষ ভোলা যায় না

    আর সিসিবিটাকে ও যেমনে জমিয়ে রেখেছে তারজন্য :salute: :hatsoff: দেযাটাও কম হয়ে যায়।

    দুরুণ একটা লেখার জন্য আলমকে ধন্যবাদ

    ভাল থাকিস তানভীর ...অনেক ভালো


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  6. তানভীর (৯৪-০০)

    আজকে সকালে যে কার মুখ দেখে উঠলাম...ও হ্যাঁ, আমার নিজের মুখই দেখছি আয়নায়! পোলাপাইন আমার ইজ্জতের একদম ফালুদা কইরা দিল! 🙁 🙁

    ধুর! কি লিখব! আলম- তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
    বাকী সবাইকেও অনেক ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  7. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    কালকে থেকে এই লেখাটা পড়তেছি আর চিন্তা করতেছি কি লিখি তানভীর কে নিয়ে। কথা তো কম না। ৬ বছর ফর্মে একসাথে কতো কাহিনি। শেষ বছরটা ডাইনিং এ পাশাপাশি বসা।
    মনে আছে, এস এস সি এর প্রি-টেস্ট এ আমরা কয়েকজন অংকে খুব কম পেলাম। কোনোরকমে পাশ। তারপর তানভীর এর সাহায্যে তার পর বোর্ড পরীক্ষা তে আমি হাইয়েস্ট পাইসিলাম। ৯৯।
    এক সাথে কমন রুমে ক্রিকেট খেলতাম।

    আরো অনেক কথা। নাহ, মনে হয়, তানভীর বন্দনা-২ লেখতে হবে।

    জবাব দিন
  8. রকিব (০১-০৭)

    এই লেখাটা পইড়া আবার কমেন্টাইতে মন চাইলো। তানভীর ভাই বসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসসস (বসতে কই নাই, boss কইছি) :goragori: :goragori: :hug:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  9. মেহবুবা (৯৯-০৫)

    তানভীর ভাই আপনি আসলেই :hatsoff:
    আশা করি আরো অনেক বড় হোন আর আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেন। :party:
    যাতে এখনের মত করে কইতে পারি এইটা আমাদের ক্যাডেট ভাই কিন্তু।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আমিন (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।