অপ্রিয় প্রসঙ্গ

 

ক্যাডেট কলেজ বিষয়ে আজ আমার ১টি অপ্রিয় প্রসঙ্গে বলবো। আর পরের কিস্তির লেখাটা হবে ক্যাডেট কলেজের প্রিয় ২টি বিষয় নিয়ে। আজকের লেখাটা তারেক ভাইকে উত্সর্গ করলাম।

বাঁশিঃ

বোধকরি এটা আমাদের সবারই অন্যতম অপ্রিয় একটি অভিজ্ঞতা। আমার কাছে বাঁশির একেকটা আওয়াজকে যেন অসহায় জীবের আর্তনাদ বলে মনে হতো। একদল নিষ্পাপ কিশোরকে উপুর্যুপরি অত্যাচারের বাহন ছিলো এই বাঁশি।
কখনোই এই বাঁশির আওয়াজে আমি তৃপ্তির আভাস পাইনি। কখনোই এই বাঁশির তারস্বরে পুলকিত হতে পারিনি আমি। কখনোই এ ডাকাতিয়া বাঁশি উদ্যম দেয়নি আমায়। নজরুলের ভাষায় এর প্রতিটি ডাক যেন “প্রিয়হারা কার কান্নার মতো এ বুকে আসিয়া বিঁধে”। একদিকে ওতে ছিল ব্যথিতের অস্ফুট রোদন, অন্যদিকে যেন ছিল নির্যাতিতের অব্যক্ত প্রতিবাদ।

কিছুই করার নেই। অজানা কোনো সফল ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্য নিয়ে, স্বেচ্ছায় এই জগতে পদার্পণ আমাদের। সুতরাং এ-জগতের স্রষ্টার আইন মানতে আমরা বাধ্য। লাভ যা হবার তা নাকি সবই আমারই, অতএব এই বাঁশির তালে তালে জীবনকেই মেনে নিলাম আমরা।
প্রতি সকালে ঘুম ভাঙে একটা কর্কশ ডাকে। কুককুরুকু কিংবা কা-কা নয়, এসবেরও অনেক আগেই এই বাঁশির কলরব শুরু। সাথে শুরু আমাদের যান্ত্রিক আয়োজন, নিত্যদিনকার। এরপর পিটি সেরে ফিরে ১০ মিনিটের মতো সময়, বদনখানি খানিক ভিজিয়ে ইউনিফর্ম পরা। আবার বাঁশি, নাস্তার, এরপর ক্লাস।
দুপুরে লাঞ্চশেষে রুমে ফিরে ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিলেম বিছানায়, অমনি ফের সেই আহবান। সে সময়টা এতো বিরক্তির ছিল, মেনে নিতে মনে সয়না, আমার সংজ্ঞায় সেটাই হলো “জিহাদে আকবর”, প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
আফটারনুন প্রেপে সবাই যেতাম হেলতে-দুলতে, যেন একান্ত অনিচ্ছায় পড়তে বসা। এরপর গেমসের বাঁশি, এ সময় কিছুটা হাসির আভাস থাকতো চোখেমুখে। হাউসে ফিরে গোসল, এবারের বাঁশিটা টিব্রেকের, কোনরকম কারুকার্যবিহীন পাঞ্জাবী পরে বাধ্যতামূলক মাগরিব নামাজে অংশগ্রহণের। নামাজ থেকে ফিরতে না ফিরতেই আবার বাঁশি, ইভিনিং প্রেপের। এই সময়টাও ছিল বেশ তড়িত্গতির। এরপর উল্লেখযোগ্য বাঁশিটা বাজতো রাত পৌনে এগারোটায়, শোবার নিমন্ত্রণ, যদিও আমরা ভালো রেজাল্টের খাতিরে কেউ শুয়ে পড়তে পারতাম না- করিডোরের লাইট জ্বালিয়ে শববেদারী (নৈশ ইবাদত) করা লাগতো।

এসব নিয়মমাফিক কার্যক্রমের বাইরেও আনুষঙ্গিক অনেক ব্যবহারাদি ছিল এই বাঁশির। যেমন এর যথার্থ প্রয়োগ করে নানা স্থানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতেন মান্যবর ‘ওস্তাদজী’গণ। তাদের বাঁশির ছন্দে তালে তালে পা চালাতাম আমরা, কিংবা ফ্রন্টরোল, কিংবা পুশআপ। মোটের উপর, দিনের যেকোন প্রহরে যেকোন প্রান্তে একটিও বাঁশির আওয়াজ শুনতেই কান সজাগ হয়ে উঠতো আমাদের। যেন প্রতি নিঃশ্বাসে ইসরাফিলের শিঙ্গার ফুঁকের ভয়ে তটস্থ থাকতো আমাদের কোমলমতি মন।

শেষ করব কুমিল্লার কিংবদন্তী মজিব ভাইয়ের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে। তখন ওঁরা ইলেভেনে। ইডি বা কোনো শক্ত পানিশমেন্ট খেয়ে ফিরেছেন, তাই মুড অফ। ডাইনিং হলে আফসোস করে বলছিলেন, “আমার কী মনে হয় জানস দোস্ত? এইটা আমার ধারনা হয় যে, পরকালে ক্যাডেটগো শাস্তি অনেক কম হইবো। এইখানেই আল্লা যতোটা পুষাইয়া দিতেসে, বাপরে বাপ।” প্রার্থনা করি তাঁর আকাংক্ষা বাস্তব হোক।

 

আলম,’৯৭-‘০৩,ককক

 

২,২৫৬ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “অপ্রিয় প্রসঙ্গ”

  1. প্রিয় পাঠকগণের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, এই লেখাটির সাথে ডঃ জাফর ইকবালের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কোনো দূরতম সম্পর্কও নেই।
    কারণ এটি প্রায় ১০/১২ দিন আগেই লেখা হয়েছে। এটা লেখকের সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফসল।

    জবাব দিন
  2. @তারেক ভাই
    ১) প্রিয় জিনিসটা পড়ার পরে দেখবেন যে সবকিছুর মূল এই অপ্রিয় জিনিসটাই। অতএব মূল জিনিসটাই আপনাকে দেয়া হইসে। 😉
    ২) অন্য কোথাও লেখালেখি করা হয়না। এই ব্লগের কল্যাণেই কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং শুরু, তা নাহলে ক্যাডেট কলেজের লৈখিক স্মৃতিচারণটা বোধহয় হয়েই উঠতো না।

    জবাব দিন
  3. sundor likha..basi r kotha sune ekta kotha mone pore gelo...ami tokhn class 7 e...may be 2nd term ses kore basai asci...to amer ammu r dharona sele cadet theke asce nischoi sokal 5tai laf die ghum theke uthe porbe!!!!!!r ammu r ki chesta college er ovvas ta basai dhore rakher jonne!!ses e puro sutir 20 ta din bartho hoe ammu jaber age amk bollo, ASSA BABA AMER TO TOKE NIE KHUBBB CHINTA HOI,AMI TOKE EKTA DIN O SOAKLE GHUM THKE UTHATE PARLUM NA.!!!COLLEGE E KI TOKE MERE MERE GHUM THEKE UTHAI!!!!AMI TOKHN BOLLUM AMMU NEXT TERM E TUMI EKTA BASI REKHO BASAI ND BLOW IT AT MORNING ND THN SEE AMER GHUM KOI JAIIIIIIIIII!!!!!!!!

    জবাব দিন
  4. @ তানভীরBCC ভাই
    ছুটিতে বাসার বাঁশির কথা তুলে আরেকটা জিনিস মনে করায়া দিসেন।
    শেখ হাসিনার সরকার তখন দারুণ 'একটা' কাজ করেছিলো। ঢাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সমবায় সমিতি খুলেছিলো যাদের একটা কাজ ছিলো এলাকার প্রতিটি বাসায় গিয়ে ময়লা নিষ্কাশন করা, প্রতিদিন দু'একজন মেথর এসে ময়লা নিয়ে যেত।
    এই লোকগুলি তাদের উপস্থিতি জানান দিতে বাঁশির ব্যবহার করতো। আমি হয়তো পড়তেসি, আচানক ওঁদের বাঁশির আওয়াজে ভয় পেয়ে উঠতাম, কলজেটা যেন মোচড় দিয়ে উঠতো। পরক্ষণে ভয় কাটতো, আমিতো বাসায় আছি- কলেজে না।

    জবাব দিন
  5. একটি আনন্দঘন মুহূর্তও ছিলো এই বাঁশির অবদান। সময়টা হলো প্রতি সপ্তাহান্তের special dinner. এই বাঁশিটা শুনে কেউ রাগ করতো বলে মনে পড়েনা।
    আমারও বেশ ভালোই লাগতো। ফুরফুরে একটা অনুভূতি। আসলে পেট ভরে খাওয়ার আনন্দকে ছাপিয়ে যেত পরদিন শুক্রবার freeday পাবার আনন্দ। এ-কারণে বৃহঃবার রাতটা আমাদের কাছে ছিলো একটা পরম প্রত্যাশিত রাত। এ দিনের বাঁশিতেও তাই ছিলো অপার আনন্দের ঘনঘটা।

    জবাব দিন
  6. আমাদের আবার সবখানেই বেল সিস্টেম ছিল।বাশির ব্যবহার তেমন একটা ছিলনা।

    @তানভীর বিসিসি- ঘুমের এই ব্যপারটা মনে হয় সবার ক্ষেত্রেই কমন।কলেজে ঘুমাতে না পারার কষ্ট বাসায় এসে একেবারে সুদে আসলে উসুল করতে কোনদিন আলসেমি করিনাই।যদিও অলস হিসেবে আমার রেপুটেশন বেশ প্রফেসনাল পর্যায়ের।

    জবাব দিন
  7. আমাদের ডিউটি ক্যাডেট এর বাশি দিবার সিস্টেমও ছিলনা।

    আপনাদের কি বেল সিস্টেম একেবারেই ছিলনা??

    আমাদের দুইটা বেল দিতো প্রথমে রাইসিং বেল।তার পনেরো মিনিট পরে ফল ইন বেল।

    জবাব দিন
  8. @zihad...

    tora taile onek shanti tei sili re..2 ta bell r kisu n1 r amra jokhn 7 tokhn to ritimoto 3 house er house duty cadet der er vitor k kotojore basi bajate pari ei baper ta k silper pojae nie gesilum....r sathe free hisebe silo class 11 er college duty cadet er stick hate dabrani!!!!basi r sound ektu komlei hoise...........ufff 3o mins eltana basi bajano!!!!!! boro bhai der ghum theke uthano theke suru kore fall in jaoa porjonto..obosso jedin house duty cadet hotum sedin ekta vab silo,house er sobai fall in e namer pore house duty cadet lat bahadur er moto helte dulte(i mean double double up korte korte) fall in a asto r sobaik khubb vaber sohit bujhato
    TODAY IM HOUSE DUTY CADET(jer most important kaj basi bajano)!!!!!!!

    জবাব দিন
  9. @ তানভীর
    ঈদের রাআআআআআত! হাহাহা। ভাইজান, বাংলায় লিখলে ভাল হয়।
    @ জিহাদ
    আমাদের বাঁশির সিস্টেমটা ছিলো তানভীর যা বললো, ঠিক সেইরকম।
    বেল সিস্টেম একেবারেই ছিলনা। লাগাতার বাঁশি...
    আচ্ছা, কেউ যদি বেল না শুনতে পায় তখন কী হতো?(আই মিন, গভীর ঘুমে?)

    জবাব দিন
  10. আমাদের ও বাশিঁ ছিলো না,বেল ছিলো।তবে আমাদের হাউস ডিউটি ক্যাডেটের কাজ ছিল ইলিভেন আর টুয়েলভের ব্লক বাদ দিয়ে আর সব খানে করিডরে গিয়ে গিয়ে বলতো...."ভাইয়া প্লিজ ফলইনে যান,ভাইয়া প্লিজ ফলইনে যান,ভাইয়া প্লিজ ফলইনে যান....." আর ক্লাস টেনের ব্লকে গিয়ে যদি ভুলে যদি ডিউটি ক্যাডেট একটু জোরে বলে ফেলসে তাইলেই সারছে...ইলিভেনের ভাইয়ারা আইসসা মাইর..আর দাবড়ানি..............."তাই যে হাউস ডিউটি ক্যাডেট তার ছিলো আজাবের দিন।।
    ইলিভেন আর টুয়েল্ভের জন্য ছিলো হাউস বেয়ারার চাবি...রুমে রুমে গিয়ে উনি চাবি দিয়ে দরজা পিটাইতো....................

    জবাব দিন
  11. @konok bhai....

    chabi baper ta amader college e silo bt seta basi r thekeo osojjo..jehetu class 7 basi dito junior block e tai senior block e sound ta onek kom asto r tai house beara i silo XI&XII er duty cadet!!!house beara class xi nd xii er block e gie janalai jore jore sobdo korto r bolto...UTHEN UTHEN TARATARI FALL IN E JAN!!!R SURU HOITO JANALA R UPOR TER DRAM ER BEATTTTT DEA(ei sound kora ta keo tara ek somoi soilpik pojai nie gesilen!!!pura tal kore kore sobdo)......ekhono kane bjae amader HALIM R SULTAN bhai er janala r dram er beat!!!!

    জবাব দিন
  12. নওরীন (৯৪-০০)

    আমাদের কি আর কমু...কিছুই বাদ ছিলনা। স্টাফ দের বাঁশি,হাউস ডিউটি ক্যাডেটদের বাঁশি, বেলের আওয়ায, হাউস বেয়ারার কানফাটা চিত্‌কার, (রেগে গেলে) ডিএম এর চিল্লাচিল্লি...সব-ই ছিল ঃ(

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তারেক

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।