কলকাতার চিঠি

নিউমার্কেটের বাসে উঠেই বুঝলাম পূজার সিজনে বের হওয়া মোটেও উচিৎ হয়নি। অসম্ভব ভীড় আর গরমে দাঁড়িয়ে আছি (আমার সিট ভাগ্য খুব খারাপ) , এদিকে উচ্চতা কম বলে উপরের রডও নাগাল পাইনা, তাই হাতের ছাতা ব্যস্ততার সাথে ব্যাগে ঢুকিয়ে দুই সিট ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম।
যে সিটের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম তাতে দুই বোন বসে ছিল, বড় বোন ছোট জনের চেয়ে খুব বড় না হলেও বুঝদারের মত জানালাটা তুলে দে,খুব রোদ, সানস্ক্রিন মেখে এসেছিস? ইত্যাদি প্রশ্ন করছিল ও মতামত জানাচ্ছিল – আমরাও দুই বোনও কাছাকাছি বয়সের- কাছাকাছি বয়সের হলেই একই মায়ের শরীর থেকে রক্ত ও পুষ্টি নিয়ে জন্ম নেওয়া দু’টি মানুষ ভালো বন্ধু হতে পারে না- আমরা কাছাকাছি মনেরও। এই বোনেরা তা কিনা জানিনা।
বাস বিদ্যা সাগর সেতুতে উঠলে আমার মন শত খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যায়। আকাশের মেঘ যেন বাসটার মাথায় ছাতা ধরে রোদ বাঁচিয়ে পাড় করে দিল সেতুর অংশটুকু। সেতু পাড় হতেই মেঘ নেই! আমি অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছি দেখে সিনিয়র সিটিজেন সিটে বসা সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন- হয়ত আমি তার মেয়ের মত দেখতে। আমাদের প্রিয় কিছুর সাথে মিল খুঁজে পেলেই আমরা নিতান্তই অচেনা কিছুদেরও প্রিয় চোখে দেখতে পারি। অপ্রিয় কিছুর ক্ষেত্রে অবশ্য তা ঠিক বিপরীত।

অবশেষে একটা সিট ফাঁকা হলে এবং আমি সেখানে বসতে পারায় সেই বৃদ্ধ দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে সোজা হয়ে বসলেন। জানালা দিয়ে দ্রুত পার হয়ে যাওয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দেখলাম একটি ছেলের কাঁধে তার পা ভাঙ্গা বন্ধু ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
বন্ধুত্ব অদ্ভুত জিনিস, আজকের বন্ধুত্বের কাঁধ দেওয়া মানুষটিই মাঝে মাঝে আগামীকালের শীতল কাঁধ দেওয়া মানুষ হয়ে যায়।

১,৫০৬ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “কলকাতার চিঠি”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ছোট বাট ভালো লেখা।
    আরেকটু বড়ো কোরো।

    যেহেতু ছোট লেখা তাই শাস্তি হিসাবে একটা ঘটনা বলি।

    বন্ধুর মা অসুস্থ; ক্যান্সার। তাকে নিয়া আঙ্কেল গেছে ভারতে।
    ডাক্তারের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে ফিরছেন; একা। টেনশন, মন খারাপ।
    যাচ্ছেন বাসে করে রড ধরে দাড়িয়ে।
    আচমকা বাস কড়া ব্রেক।
    আঙ্কেল গিয়ে পড়লেন সম্মুখে দাড়ানো এক মেয়ের গায়ের উপর।
    মেয়ে বললো,

    কি দাদা, বগলের গন্ধ শুকছেন!


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    আজকে লক্ষ্য করলাম আসলে তুমি আমার হাঁটুর বয়সী। অ্যান্ড পূজা অ্যান্ড পূজা সব জায়গায়।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামিউল(২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।