মধ্যবিত্ত আমরা

আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার, তাই আমরা এক ঈদে মার্কেটের মোটামুটি সবচেয়ে সুন্দর জামা পড়ি আর আরেক ঈদে আম্মার হাতে বানানো জামা পড়ি। আমাদের মাসের শুরুতে অনেক টাকা ওড়ানো হয় কিন্তু সেই মাসের শেষেই আমাদের পরিবার প্রধান হিসাবের খাতা খুলে ভ্রু কুঁচকে ভাবতে থাকেন কিভাবে বাকি আট দশটা দিন যাবে। আমাদের ইগো এত বেশি যে আমরা আমাদের উচ্চবিত্ত পরিচিতদের কাছ থেকে নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে সাহায্য নেই না, কিন্তু ছোটবেলায় আমরাই তাদের সুন্দর খেলনা, লাইট জ্বলা জুতা দেখে হিংসায় জ্বলি … আর বড়বেলায় তাদের দামি ফোন, ক্যামেরা, অকারণ টাকা ওড়ানো দেখে। আমরা তাই স্কলারশিপের টাকা জমাই, বাবার পকেট বা হাত খরচের টাকা সরাই অথবা নিজের পড়াশোনার চিন্তা বাদ দিয়ে অন্যকে পড়াই।

আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের, তাই আমাদের বাবা মা-রা বাজারের সবচেয়ে ভালো জিনিসটা কেনেন ঠিকই কিন্তু দরদাম করার জন্য একদুই ঘন্টা ব্যয় করতেও পিছপা হন না। এজন্য আবার তারাই ফিক্সড প্রাইজের দোকানে গিয়ে উশখুশ করতে থাকেন, ভুলে মাঝে মাঝে দাম কমানোর কথা বলেও ফেলেন, কর্মচারীরা কঠোর চেহারা করে ফিক্সড প্রাইজ লেখা দেখিয়ে দেয় … আর আমরা তাদের অত্যন্ত স্মার্ট সন্তানেরা তাদের নিয়ে লজ্জা পাই! ছি ছি কি অদ্ভুত! আব্বু আম্মু যে কি না! কিচ্ছু বোঝে না!

আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের তাই আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারলে হাফ ছেড়ে বাঁচি, আর বেসরকারিতে পড়লে আমাদের প্রানপন চেষ্টা থাকে কিভাবে ভালো রেসাল্ট করে টিউশন ফি কমানো যায়। আমাদের কৈশোরে আমরা(ছেলেরা) কোন বেনী দোলানো মেয়ের সাথে একটু চোখাচুখির জন্য রাস্তায় তার আসা যাওয়ার সময়েই আমাদের সব কাজের সময় ঠিক করি… অথবা আমরাই (মেয়েরা) সেই বেণী দোলানো মেয়ে হলে বিকেলে ছাদে উঠে দাঁড়িয়ে থাকি কোন এক লাল সাইকেলে চড়ে খেলতে যাওয়া ছেলের জন্য। আমাদেরই নিষ্ঠুর জীবনচক্রে আমরাই এমন অনেক ছেলে বা মেয়ের সাথে, তাদের একসময়ের লাল সাইকেল বা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা অতীতের সাথে ছিনিমিনি খেলি। আমরা তখন ভুলে যাই আমরাও একসময় এই কষ্টই পেয়েছিলাম!

আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের … “বিত্ত”- এর ভিত্তিতেই আমরা এই শ্রেণীর, তবুও এই কাগজের নোটের সাথেই আমাদের অনেক আবেগ, মনস্তত্ত্ব ও দুঃখ মিশে থাকে। আমরাও বেড়ে উঠি সেইসব ব্যক্তিগত আবেগ নিয়ে … মধ্যবিত্ত হয়ে! বিত্ত হয়তো বেড়ে ওঠে একসময় কিন্তু মনটা মধ্যবিত্ত হয়েই থেকে যায়।

২,৪০৫ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “মধ্যবিত্ত আমরা”

  1. রকিব (০১-০৭)
    আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের … “বিত্ত”- এর ভিত্তিতেই আমরা এই শ্রেণীর, তবুও এই কাগজের নোটের সাথেই আমাদের অনেক আবেগ, মনস্তত্ত্ব ও দুঃখ মিশে থাকে। আমরাও বেড়ে উঠি সেইসব ব্যক্তিগত আবেগ নিয়ে … মধ্যবিত্ত হয়ে! বিত্ত হয়তো বেড়ে ওঠে একসময় কিন্তু মনটা মধ্যবিত্ত হয়েই থেকে যায়।

    :clap: :clap:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    শুধুমাত্র বিত্তের ভিত্তিতে বোধহয় ভাগটা হয়না। সাথে আরও কিছু অনুষংগ লাগে। তবে মধ্যবিত্তের যে দুঃখটা এখানে উল্লেখ করেছ তা কিন্তু জীবনের মোটিভেশন হিসেবেও কাজ করে। এজন্য দেখা যায় মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় ভাল করে বেশি। কারণ এক লেখাপড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই এই চক্র ভাংগার।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    খুব সুন্দর লেখা!
    এই নিয়ে আমিও মাঝে মাঝে ভাবি।
    তুমি হয়তো আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে। যাদের ঢাকাতে বাড়ী ও গাড়ী দুটাই আছে, আবার সেই সাথে কিছু অভাবও আছে। মাসের শুরুতে চলছে খারাপ না, আবার মাসের শেষে টানাটানি, এরা কোন বিত্ত শ্রেণিতে পড়বে?
    কিছু আছে কিছু নাই, এখান থেকেই একটা দুঃখবোধ জন্মায়, আর সেই দুঃখ থেকে জন্ম হয় আকাঙ্খার। এই আকাঙ্খা থেকেই প্রাপ্তি লাভের উদ্দেশ্যে অনুশীলন। তাই মধ্যবিত্তের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় ভাল করে আর সৃষ্টিশীল কাজেও অবদান রাখে বেশী।

    জবাব দিন
  4. মুহিব (৯৬-০২)

    … আর আমরা তাদের অত্যন্ত স্মার্ট সন্তানেরা তাদের নিয়ে লজ্জা পাই! ছি ছি কি অদ্ভুত! আব্বু আম্মু যে কি না! কিচ্ছু বোঝে না!

    আমি আজও সেইসব দিনের কথা আমার বউ এর সাথে গল্প করি। আমি শুধু ফিক্সড প্রাইসের দোকানেই যাই। কারণ আমি দামাদামি করতে পারি না। লজ্জা পাই। ছিঃ কম দাম বললে দোকানদার কি ভাববে :dreamy: :duel: :gulti:

    লিখাটা ছোট কিন্তু মনের ভিতর অনেক বড় যায়গা নিয়েছে। (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  5. btw লাল সাইকেল বালক ব্যাপারটা কি কোন জায়গা থেকে প্রভাবিত?লাল সাইকেল বালক ছাদে দাড়িয়ে থাকা একটা মেয়েকে দেখতে যায় এরকম একটা ব্যাপার আমারও পরিচিত পরিচিত লাগতেসে।

    জবাব দিন
  6. আহমদ (৮৮-৯৪)
    ছি ছি কি অদ্ভুত! আব্বু আম্মু যে কি না! কিচ্ছু বোঝে না!
    বিত্ত হয়তো বেড়ে ওঠে একসময় কিন্তু মনটা মধ্যবিত্ত হয়েই থেকে যায়।

    কি অদ্ভুত সুন্দর করে কথাগুলো বলে দিলে।
    ::salute::


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  7. হুমায়ুন (২০০২-০৮)

    অনেকদিন আগে সম্ভবত প্রথম আলোর ''ছুটির দিনে'' তে এমজিসিসির একজন আপুর লেখা পড়েছিলাম এই মধ্যবিত্ত টপিক নিয়ে।অসাধারণ একটা লেখা।আপনার লেখাটা পড়ে মনে পড়লো। 🙂


    তুমি গেছো
    স্পর্ধা গেছে
    বিনয় এসেছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।