অসুখের অসুখ

আমার হুমায়ুন আহমেদের মতো অসুখবিসুখে চিৎকার করে লোক জড় করতে ভাল্লাগে। বাসায় মা কে কাজ করতে দেইনা, একটু পর পর ডাক দিয়ে রান্নাঘর থেকে নিয়ে আসি।অসুখ সহ্য করতে পারিনা। ছোটবেলায় হতও না। ক্লাসে কতবার গর্ব করে বলেছি আমি সিজারিয়ান বাচ্চা কিন্তু আমার অসুখ হয়না(শোনা কথা _সিজারিয়ান বাচ্চাদের অসুখ বেশি হয়)… এখন তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ক্লাস এইটের আগে কোনদিন কলেজের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। সেভেনে সবাই খেলাধুলা,ক্লাস থেকে মুক্তি নিয়ে হাসপাতালে থেকে কয়েকদিন পর কি সুন্দর বিদেশ ফেরত ছেলেমেয়েদের মতো ফরশা আর গোলগাল হয়ে আসতো (বেলা পর্যন্ত ঘুমানো,হাত দিয়ে খাওয়া আর সারাদিন ছায়ায় বসে ঝিমানোর ফল) আমি দেখে আফসোস করতাম,আমার কেন খুচরা জ্বরটাও হয়না!এইটে বাস্কেটবল খেলতে গিয়ে হাঁটু থেঁতলে গেলো বাজে ভাবে।সেই প্রথম যাওয়া। হাসপাতালে ছিলাম সব চোখ ওঠা পার্টির সাথে।সেবারই কলেজে স্টাফ কলেজ থেকে অনেক অনেক অফিসার আসলো, সবাই হাসপাতালে এসে আমাকে মজার মজার গল্প শুনিয়ে গেল যে বিদেশি অফিসাররা কি কি করল, আমি হাসপাতালের মশা বিরোধী নেটের(যেটায় এক ফুট ব্যাসের ফুটা থাকায় তা দিয়ে বিড়াল,পাখি,সাপ,ব্যাং সব ঢুকত!!!) ফাঁক দিয়ে তা শুনে শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম। ক্লাস টেনে যে ভাইরাল জ্বর হল!!! আমার মনে হয়না Noshin Promy , Nishat Leeza আর আমি জীবনে ভুলবো সেই স্মৃতি।আমি প্রথম ভিক্টিম ছিলাম।সবচেয়ে সিরিয়াস কেস ছিল প্রমির।সে রাতে একা ঘুমাতে পারতোনা!তার ধারণা হয়েছিল সেই ক্লাস টেনে সে আর বাঁচবেনা। তাও সামান্য ভাইরাল ফিভারের জন্য!ওষুধটা এমনিই ছিল!ইলেভেনে এক প্যারেন্টস ডে তে পেট ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তাও আবার জেপি ছিলাম(উইথ ভাব!) কি লজ্জা!!!জুনিওরদের সামনে দিয়ে বাবা আর বোন যে কিভাবে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো তারাই জানে।

মাথা ব্যাথা খুব বাজে জিনিস।খুব খুব বাজে।জ্বর ও বাজে। এখন খুব বেশি হয়। এখানে বাসার কেউ নাই, কলেজের কেউ নাই,দেশের কেউ নাই। বাসায় আমি ফোন ও দেইনা বেশি।কেন যে দেইনা নিজেও জানিনা। কিন্তু কাউকে চিৎকার করে ডাকতে ইচ্ছা করে খালি।

১,৩৮৮ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “অসুখের অসুখ”

  1. আসিফ মাহমুদ

    "মাথা ব্যাথা খুব বাজে জিনিস"- এই এক মাথা ব্যাথা আমাকে অনেকটাই শেষ করে দিয়েছে...still fighting against that bullshit.... 🙁


    ...একদিন সবকিছু মুছে যায় হিমেল হাওয়ায়, স্মৃতিমাত্র লিখে নাম...সেইখানে আমিও ছিলাম...

    জবাব দিন
  2. ফেরদৌস জামান রিফাত (ঝকক/২০০৪-২০১০)

    ক্লাস এইটের একদম শুরুর দিকে আমার বাম হাঁটুতে একটা ফ্রাকচার ধরা পড়লো। মেডিক্যাল অফিসার বললেন, ঘটনা খারাপ!! সি এম এইচ পাঠাইলেন। হাড় ভাঙা-জোড়া বিশেষজ্ঞ বললেন, ক্যাডেট কলেজে থাইকা আর কাম নাই যাও বাড়ি চইলা যাও। নাইলে অকালে পঙ্গু হইবা। আব্বুও বললেন বাদ দাও বাবা। আমি বললাম আব্বু কয়টা দিন দেখি। ৩ মাস পিটি প্যারেড গেমস এক্সকিউজ নিয়া কলেজে ফিরলাম। এক সপ্তাহ পর ক্রিকেট কম্পিটিশন। বেস্ট প্লেয়ার হইলাম। ফুটবল কম্পিটিশনে খেললাম। প্রতিদিন সকালে পিটিতে খাঁড়াইয়া থাকতাম আর ঝিমাইতাম। বিকালে ধুমসে ফুটবল খেলতাম। স্বপ্নের মতো ৩ টা মাস কাটসিল। :khekz: :khekz: :khekz:


    যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের- মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা

    জবাব দিন
  3. মাজহার (০৬-১২)
    সেভেনে সবাই খেলাধুলা,ক্লাস থেকে মুক্তি নিয়ে হাসপাতালে থেকে কয়েকদিন পর কি সুন্দর বিদেশ ফেরত ছেলেমেয়েদের মতো ফরশা আর গোলগাল হয়ে আসতো

    :khekz: :khekz:


    MH

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আসিফ মাহমুদ (০০-০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।