ক্যাডেটলাউঞ্জ !!

ষ্টাফ লাউঞ্জের প্রতিশব্দ আর কি…

০১ দি ক্যানন অব টীপু সুলতান

তখন টীপু সুলতান জনপ্রিয়তার তুঙ্গে । এর প্রভাবে প্রায় ই সুযোগ পেলে ক্লাস রুম কে রনক্ষেত্র বানিয়ে একজন মুখ দিয়ে হুঙ্কার দিত তোপ চালাও” ( এই আদেশ টা ডেস্ক এর উপর দাড়িয়ে ডান হাত তুলে দিতে হত, সেইরকম ই নিয়ম ছিল), আর কাল্পনিক ফিরিঙ্গিদের উদ্দ্দেশ্যে আরেকটা মানব কামান গর্জে উঠত “ভো…কি…ইয়া…” ( এক্ষেত্রে দুই হাত মুখের কাছে এনে শরির দুলিয়ে কাল্পনিক গোলা ছুরতে হত) । কোনো একদিন প্রেপ এর শেষ মুহুর্তে এমনই তুমুল রনাংগনে আমাদের নিয়মিত গোলন্দাজ রহমতের আদেশে যেই মাত্র“ভো…কি…ইয়া…” ভুপাতিত হল, সবাই মৃত ফিরিঙ্গির বদলে জীবিত ভিপি স্যার কে ( এ টি এম নজরুল ইসলাম স্যার ) আবিস্কার করলাম । স্যার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে তোপ চালালো, কে তোপ চালালো… টীপু সুলতান টা কে? উপায়ন্তহীন রহমত ডেস্কের উপর থেকেই মিন মিন করে উঠলো, আমি স্যার।

০২ নারী নির্যাতন

সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাসটা নিতেন হোসনে আরা ম্যাডাম । কোনো এক বিচিত্র কারনে ম্যাডাম সব সময় ই খুব বিরক্ত থাকতেন । ভাবখানা এমন যেন ক্লাস থেকে বের হয়েই ফরজ অযু করবেন । বলাবাহুল্ল তার আচরনেও তা সুদ সমেত প্রকাশ পেত । সম্ভবত ক্লাস নাইন এ একবার তিনি আমাদের নারী নির্যাতন বিষয়ে ক্লাস নিছ্ছিলেন । খুব সাভাবিক এবং রুটিন মত আমাদের মির্জ্জা উঠে দাড়ালো, ম্যাডাম টয়লেট এ যাব । আছ্ছা যাও । মির্জা টয়লেটেই যাছ্ছিলো, শুধু এসিসটেন্ট ফর্মলিডার এর সামনে এসে তার উশৃংখল তাবু টা একটু ঠিক করে নিয়ে রওনা হছ্ছিল আর কি ( এই তাবু ঠিক করতে করতে বেচারার জিপার এ স্থায়ী দাগ ই হয়ে গিয়েছিল, সবগুলা ইউনিফরম ই ) । এই অভুত দৃশ্য দেখে আমাদের মুন আর ঠিক থাকতে পারলনা , কয়েক জোড়া দাঁত আর হাড়কিপটের মত অল্প কিছু ফিক ফিক শব্দ উত্পাদন করেছিল । এইবার ম্যাডাম বই থেকে মুখ তুলে তাকালেন !!! ” এই ছেলে দাড়াও…নারী নির্যাতনের কথা আগে শো্ননি…বাড়ীতে মা বোন নেই…বেয়াদব , পরিবার থেকে এই শিখেছ………………………” । একটু পর তাকিয়ে দেখি বেচারা মুন এর চেহারা ডাইনিং হলের কাস্টার্ড এর মত , থলথলে । ম্যাডাম ঐ অব্দি থেমে গেলেও আমাদের জন্য সেই শুরু , মুন কে দেখলেই , কিরে দোস্ত নারী নির্যাতনের কথা আগে শুনিস নি ।

০৩ মেগা ধরা

আমাদের এক বন্ধু মেগা , কারন সে মেগা মেগা ধরা খেত এবং আমাদের বিঃশাস তাকে স্যাররা জাদু মন্ত্র করেছিল । কেননা যেকোন কাজে ( কুকাজে ) সে উপস্থিত হওয়া মাত্রই কোন দিক থেকে যেন কোনো না কোনো স্যার উপস্থিত হত । অবশ্য এই ঘটনা তার উপর কোনো দাগ কাটতে পারত কিনা তা নিয়ে আমাদের যথেশ্ঠ সন্দেহ ছিল ( নইলে এমন নিরবিকার ভাবে একটু পরেই কেউ আবার পরবর্তী কাজে ঝাপিয়ে পরে ) । যাই হোক অনেক বারন সত্তেও মেগা একদিন মাঝ রাতে এক গ্রুপ এর সাথে ভিড়ে গেল , উদ্দেশ্য কলেজের ডাব গুলার পানি মাপা আর কি , দেখি এক ডাবে কয় লিটার হয় । সব ই ঠিক ছিল , কিন্তু ঐ একি সমস্সা , হঠাত মেগার মনে হলো বানর যে তারও পুর্বপুরুশ ছিলো এইটা এই মুহুরতে অবস্সই প্রমান করা দরকার । কে শোনে কার কথা । যথারিতি মেগা গাছের ডগায় উঠা মাত্র ই নাইট ডিএম আর হাউজ বেয়ারার টর্চ লাইট । কো্থায় কে , সব মুহুরতে উধাও , এক গাছের মাথার বানর ছাড়া । স্যার ও কাছে এসে অবাক , এত গলার আওয়াজ মুহুরতে কৈ গেল । দুই তিন মিনিট খুজে স্যার চলেই যাছ্ছিলেন , কি মনে করে হঠাতই ” এই মেগা ( স্যার তাকে আসল নামেই ডেকেছিলেন ) তুমি কোথায় ” । গাছের বানরের প্রছেসর এম্নিতেই অনেক প্লাস মাইনাস করে ফেলেছিল , আর পারলনা , ঘন অন্ধকারে ২০ ফিট গাছের উপর থেকেই সে কিচ কিচ করলো ” স্যার আমি এইখানে…” ।

১,৮৫৫ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “ক্যাডেটলাউঞ্জ !!”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    =)) =)) ইমানে কইতাছি তৌহিদ ভাই,আপনের ছবি দেখলে এখনো সেভেন যেমুন ১১ রে ডরায় এমন ডর লাগে কেন জানি...একটা গম্ভীর ভাবের কারণে...সেই আপনের মুখ থিকা এই কাহিনি!!!হাসতে আছি, হাসতেই আছি =)) =)) =))

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আবারও লেখার স্টাইলের (শব্দ নির্বাচন, বাক্য গঠন ইত্যাদি 🙂 ) প্রশংসা না করে পারছি না।

    এই অভুত দৃশ্য দেখে আমাদের মুন আর ঠিক থাকতে পারলনা , কয়েক জোড়া দাঁত আর হাড়কিপটের মত অল্প কিছু ফিক ফিক শব্দ উত্পাদন করেছিল

    অনবদ্য :))


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    ভাল কুন উপায় না পেয়ে এতোদিনের অবদমিতো কামনা চরিতার্থ করিতেছি আর কি…।

    আচ্ছা খালি কি আমার মাথাতেই কুচিন্তা আসে?তাইলে তো সমস্যা...কি করা যায় কন ছাই দেখি!! :((

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    আপনাদের মেগার মত আমাদের একজন ছিল। আমাদের কলেজে ওর নাম ছিল ancient.. এখানেও আরেক রহস্য। এই নাম কেন। আমরা তখন কলেজে ১১ এ ancient mariner পড়লাম। ওই নাবিকের কাহিনী পড়ে আমাদের ডিকশনারীই চেঞ্জ হয়ে গেল। এরপর থেকে ancient mariner এর বংগানুবাদ আমাদের কাছে হল অপয়া নাবিক। আর আমাদের ঐ বন্ধুও আপনাদের মেগার মতই অপয়া তাই ওর নাম ancient.

    জবাব দিন
  5. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    তৌহিদ,

    অদ্ভুত সুন্দর এবং সুখপাঠ্য লেখা...।
    খুবই ভালো লেগেছে...। অনেক হেসেছিও...।
    সায়েদ'র সাথে আমিও একমত...

    আবারও লেখার স্টাইলের (শব্দ নির্বাচন, বাক্য গঠন ইত্যাদি ) প্রশংসা না করে পারছি না।

    আরো লেখা চাই।

    ভালো থেকো।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহ্সান (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।