ফারদার ফাইভ ফ্রম ফরেন

অনুচ্ছেদ এক

দুঃখের কাহিনী দিয়েই শুরু করি, ব্লগিং জীবনের বুড়ো কালে এসে প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছি, কে দেবে আশা কে দেবে ভরসা? সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ব্লগিং করি, ইতোমধ্যে লিখে ফেলেছি অর্ধশতাধিক ব্লগ পোস্ট। অথচ আমার কোন লেখা কোন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়নি, ছাপা হয়নি কোন ম্যাগাজিনে, বইমেলায় কোন বই বের হয়নি, এমনকি কোন গল্প চান্স পায়নি বইমেলার কোন গল্প সংকলনে।
এরমধ্যে ক্যাডেট কলেজ ব্লগেই লিখেছি ৪৭ টি ব্লগ, ইহা সহ ৪৮ টি পূর্ন হইবে।

অথচ কতজনের কত বই বের হচ্ছে, ফেসবুকে প্রচ্ছদের ছড়াছড়ি, ভূতের গল্প, কবিতা, কেউ কেউ তো মাশাআল্লাহ উপন্যাস নামিয়ে ফেলেছে। হতাশায় এখন চুল ছিড়বার দশা। এতদিন ব্লগিং করে কোন প্রকাশকের নজর কাড়তে পারলাম না? কি হবে এই ব্লগিং চালু রেখে?

পরক্ষনে মনে পরল বাংলাদেশে কাশেম বিন আবু-বকরের মতো লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক, স্কুল কলেজে এখনো জনপ্রিয় ছাগু সিরিজ “আহমেদ মূসা” মূসা সিরিজের প্রথম বই অপারেশন তেলআবিব। ধর্মকে পুঁজি করে এই লেখক বহু সংখ্যক স্কুল কলেজ পড়ুয়াকে ছাগু মন্ত্রে দীক্ষিত করে, বড় হয়ে তারাই শিবির করে।

এদের মতো লেখক হবার থেকে না হওয়াই শ্রেয়, গত বইমেলায় শুনেছি আহসান হাবীবের উন্মাদ স্টল বরাদ্দ পায়নি, অথচ আমি নিজের চোখে দেখেছি কাশেম বিন আবু বকরের স্টল, শত শত কাশেম বিন আবু বকরের বই। ব্লাউজের উপর থেকে থেজে স্তনের খাঁজ বের হওয়া মার্কা প্রচ্ছদ আর মফস্বলের ছেলের ঢাকা এসে প্রেমে পরার এক গল্প বিভিন্ন ডাইমেনশনে সাজিয়ে প্রকাশিত হয়েছে শতাধিক বই।

আমাকে কেউ একজন বলেছিলেন- আজকাল সুন্দরী বউ, গাড়ি এবং বাড়ির পাশাপাশি বইমেলায় দুটো প্রকাশিত বই না থাকলে স্ট্যাটাস থাকে না।

অনুচ্ছেদ দুই

দুঃখের কথা বলতে গিয়ে চরম ভাবে বেলাইনে চলে গিয়ে গিয়েছি। লাইনে ফিরি, কিভাবে ফরেনে থেকেও প্রতিশোধ নেবেন? প্রতিশোধ নেয়া মানে কানে ধরে চড় দেয়া না, বরং অপদস্ত করা, সুযোগের সদব্যবহার করে। প্রতিশোধের কথায় মনে পরে যায় আমার প্রবাসী বাংলাদেশের ভাইদের কথা। আজকে খবরে পড়লাম সংযুক্ত আরব আমিরাতে জুতোর মালিকানা নিয়ে বিরোধে মারপিট এবং শেষ পর্যন্ত দুই জন খুন। এদিকে নিউইয়র্কে অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশীকে নির্মম ভাবে খুন করে পালিয়ে যাবার সময় বিমানবন্দরে ধরা পরেছেন আরেক প্রতিশোধ প্রবণ প্রবাসী ভাই, আর সবশেষে আমার গর্ব ঘোচু নাফিস ভাইয়ের কথা তো আপনারা সবাই জানেন, প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া বেদনার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে জিহাদি ভাই আমার ফেডারেল ব্যাংক উড়িয়ে দিতে গিয়ে এখন শিকের পেছনে আছেন।
null
চিত্র- আমার গর্ব ঘোচু নাফিস ভাই

প্রবাসে সফল প্রতিশোধ যদি আপনি নিতে চান আপনাকে হতে হবে খুব ধুরন্ধর। খাপে খাপে মিলে গেলেই দিয়ে দেবেন এক চামচ, কেউ বুঝবে না, জানবেও না।

তখন আমি অনেক ছোট, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি, চোখ ভরা স্বপ্ন- ভালো ভালো গ্রেড পাবার। এনাটমি ল্যাবে আমরা কয়েকজন ভাইভাতে উত্তর করতে গিয়েছি, আমাকে বুকের পাজরের হাড়ের কিছু অংশ দেখিয়ে দিলে টিচার একটু বাইরে গেলেন, ফিরে এসে উত্তর শুনবেন, আমি ভালো গ্রেড পাবার জন্য পাশের টেবিলে পরে থাকা এটলাস তুলে নিয়ে দ্রুত ছবি দেখতে লাগলাম, এর কিছুক্ষন পরে এক আফ্রিকান মেয়ে এসে বলল- তুমি আমার এটলাস নিয়েছো কেন? আমি বললাম- এইখানে ছিল, আমার ভাইভা দুই মিনিট পর, জিজ্ঞাসা করবার মতো কাউকে পাইনি, তাই নিয়েছি। সে চিৎকার করে বলল- কাউকে জিজ্ঞাসা না করে তাঁর বই ধরা চুরির পর্যায়ে পরে তুমি জানো না, তোমাকে তোমার বাবা মা শেখায় নি?

লজ্জায় আমার মাথা কাটা গেল, আমি দুঃখিত বলে ল্যাব থেকে বের হয়ে আসলাম, চোখে পানি চলে আসার অবস্থা। আমাদের সকল বই লাইব্রেরী থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়, আর মেয়েটা সামান্য একটা ঘটনার জন্য আমার সাথে এমন করলো। বাবা মা ধরে টান দিলো?

বছরের পর বছর পার হয়ে গিয়েছে, সে আমাকে মনে রাখেনি, আমি তাকে মনে রেখেছি। জেনারেল সার্জারির থিওরি পরীক্ষার সময়ে আমার পাশে তাহার সিট। আমি মিষ্টি হাসি দিলাম। কিছুক্ষন পরে সে আমার সাহায্য চাইলো, আমি প্রশ্ন দেখে বললাম- আরে এইগুলো তো খুব সোজা প্রশ্ন, তোমার কমন পরেনি? সে মুখ কালো করে বলল- না কমন পরেনি, হেল্প মি।

প্রশ্ন ১- এক ব্যাক্তি ভুল করে কনসেন্ট্রেটেড ভিনেগার খেয়ে ফেললেন, বার্নের সংজ্ঞায় কোন ধরনের বার্ন? দ্রুত কি ব্যবস্থা নিয়ে হবে?

আমি তাকে বললাম- এইটা খুব সোজা, ক্লাস এইট-নাইনের বিষয়, দিস ইজ কেমিকাল বার্ন। ব্যপারটা হল প্রশমন বিক্রিয়া, ভিনেগার হল এসিড, এসিডের কার্যকারিতা কমাতে সাথে সাথে তাকে সমপরিমান ক্ষার খাইয়ে দিতে হবে, তবেই এসিড আর ক্ষার বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়ে যাবে।

প্রশ্ন ২- বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে নারীর রিপ্রডাক্টিভ সিস্টেমে কি কি ধরনের সমস্যা এবং লক্ষন দেখা দিতে পারে?

আমি বললাম- নারীর সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে প্রোস্টাট গ্ল্যান্ডে, ইনফেকশন হতে পারে, ফুলে যেতে পারে, প্রসাবের রাস্তা বন্ধ হতে পারে এবং যোনি থেকে রক্ত বের হতে পারে। ( সাথে একটা প্রোস্টাট গ্ল্যান্ডের ছবি একে দিলাম)

সে উত্তর পেয়ে মহাখুশি, ঢং ঢং করতে করতে খাতা নিয়ে উত্তর করতে গেলো, উত্তর দেখে টিচারের চোখ এক হাত নীচে নেমে বুকে এসে ঠেকলো, প্রথমে কিছুক্ষন সে রাগী রাগী চেহারা করে রাখলেও পরে শরীর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো, ডেকে নিয়ে এলো আরো দুই টিচারকে, বলল- দেখেন আমার ছাত্রী কি উত্তর করেছে, কেমিকাল বার্নের পর ক্ষার খাওয়াবে আর নারীর নাকি প্রোস্টেট গ্লান্ড আছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে এরা কি চিকিৎসা করবে? চিকিৎসা করবে নাকি মেডিক্যাল সার্কাস খুলবে। আরো বলল- শোন মেয়ে, তুমি প্রতিদিন একবার করে পরীক্ষা দিতে আসবে, তোমার উত্তর পড়ে অনেক হাসলাম, জীবন্ত রসিকতা একদম। মাঝে মাঝে এমন দরকার আছে।

নারীর প্রোস্টেট গ্লান্ড আছে শুনে হলের কম বেশি সবাই হাসতে লাগলো। আমিও হাসলাম, বিড় বিড় করে বললাম – ইউ স্টার্টেড ইট বেব, নট মাই ফল্ট।

অনুচ্ছেদ তিন

খুব চালাকির উদাহরণ দিয়ে ফেললাম? পাঠক নিশ্চয়ই ভেবে নিচ্ছেন বাপরে কি ধুরন্ধর ছেলে! আসলে তা নয়, আমি বোকাদের দলে পরি, বোকারা বেশি কথা বলে, আমিও প্রচুর কথা বলি, ট্রেনের মতো, কথা একবার শুরু করলে আর থামে না। এরমধ্যে অনেক সময় মুখ ফসকে কটু কথা বের হয়ে যায়, অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দেয়।

বর্তমান রুমমেট সিরিয়ান। আমার কত জাতের মানুষের সাথে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে সেইটা একটু বলি-
রুমমেট ১- ভারতীয় ( ঘুম, চাপাতি আর হিন্দি মুভি)
রুমমেট ২- মঙ্গোলিয়ান ( ঘোড়ার মাংসের সুপ, বাস্কেটবল, পর্ন)
রুমমেট ৩- মরোক্কান ( শীসা, হাম্মুস, ঘুম)
রুমমেট ৪- তাজাকিস্তানী ( বডি বিল্ডিং, গাঁজা, সংগীত চর্চা)
রুমমেট ৫- ইজরায়েলি ( পার্টি এনিমেল)
রুমমেট ৬- মরোক্কান ( পড়াশুনা, নামায)
রুমমেট ৭- চাইনীজ ( নোংরা, কানা)
রুমেমট ৭- সিরিয়ান ( নামায, পড়াশুনা, সিরিয়াস প্রেম ইন সিরিয়া)

চাইনীজ রুমমেটের সাথে প্রথম দিন থেকেই আমার মিলছিল না, তাঁর রুটিন সারা সন্ধ্যা ঘুমানো আর সারা রাত পড়াশুনা করা। সকালে ক্লাসে যাবার জন্য ঘড়িতে এলার্ম দেওয়া থাকতো আমাদের দুইজনেরই। সকাল নয়টায় ক্লাস থাকলে আমার এলার্ম দেওয়া থাকতো, সাড়ে আটটার সময়ে, আর আমার চাইনীজ রুমমেটের সকাল সাতটায়, আর কানাবাবা ঘুম থেকে জাগতেন নয়টার বাজার ১০ মিনিট আগে, দুই ঘন্টা করে আমার কান পচে যেন এলার্ম শুনতে শুনতে। আমি প্রথম দিন তাকে বললাম এই এলার্মের কথা, কে শোনে কার কথা, এলার্ম বাজতেই থাকে। দ্বিতীয় দিন বললাম তবুও এলার্ম বাজে, প্রতি সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমার মেজাজ খিঁচে একাকার হয়ে যায়। তৃতীয় দিন আমি একটা বই ছুঁড়ে মারলাম, এরপর কয়েকদিন এলার্ম বন্ধ ছিল। এরপর আবার শুরু হইল এই এলার্মের যন্ত্রনা। এক সকালে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, জানালা খুলে ঘড়ি ছুঁড়ে ফেলে দিলাম বাইরে, আর এক গ্লাস পানি ঢেলে দিলাম চাইনীজের মাথায়, হুড়মুড় করে চাইনীজ উঠে বসলো, আমার ভয়াবহ চেহারা দেখে কিছু বলার সাহস পেলো না।

একদিন পর হোস্টেল প্রোভোস্টের রুমে সালিশী বসলো। চাইনীজ অনেক কিছু বলল, আমি চুপ করে শুনে গেলাম, প্রোভস্ট বলল সরি বলে মিল করে নিতে এবং এমন আর যেন না হয়। চাইনীজ রেগে গিয়ে বলল
– ঘুমের মধ্যে আমার নাক মুখ দিয়ে পানি ভেতরে ঢুকে যেতে পারতো, আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা পর্যন্ত যেতে পারতাম।
আমি বিড়বিড় করে বললাম- এক দুটো চায়নীজ বাতিল হলে কি হয়, ওদের তো অনেক আছে।

এই কথা শুনে প্রোভোস্ট হতভম্ব, চাইনীজের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আমাকে সেই রুম থেকে তাড়িয়ে অন্য রুমে দেয়া হল। আইন ভঙ্গের জন্য ৫০ ডলার জরিমানা দিলাম, জরিমানার কাগজ ডিন অফিসে পাঠানো হল, এক কপি গেল আমার ব্যক্তিগত ফাইলে।
এইজন্য বলি জিহবা হল ছুরির থেকেও ভয়াবহ, কথা কাটাকাটি থেকে বড় বড় ঘটনার জন্ম হতে পারে। নিজের জিভ সাবধানে রাখবেন।

অনুচ্ছেদ চার

জাতি হিসাবে রাশানরা একটি সতন্ত্র জাতি, এদের আপনি কারো সাথে মেলাতে পারবেন না, যেমন ধরুন কানাডিয়ান আর আমেরিকানদের একটা ফর্মূলায় ফেলা যায়, সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ানদেরও একটা ধাঁচে ফেলা যায়, কিন্তু রাশানরা এক অদ্ভুত জাত। এদের মধ্যে যেমন আছে ইউরোপিয়ান ছোঁয়া ঠিক তেমনি আছে এশিয়ার জলছাপ, যত উত্তরে যাওয়া যায় এশিয়ার ছাপ তত প্রবল, আর যত দক্ষিনে আসা যাবে ইউরোপিয়ান ছোঁয়া তত প্রবল।
তবে সারা দেশ জুড়ে কিছু ট্রাডিশন একই রকম, এই রকম অল্প কিছু ব্যপারে লিখতে চেয়েছিলাম বেশ আগে থেকেই

রাশানরা কখনও কাউকে জোড় সংখ্যক ফুল উপহার দেবে না, জোড় সংখ্যায় ফুল উপহার দেয়া মানে মৃত্যু কামনা করা।

যারা মদ পান করে না, তাদের রাশানরা বিশ্বাস করে না, এরা মনে করে তারা ভিতরে ভয়ঙ্কর জটিল, এবং চাপা শয়তান।

রাশিয়ার পুরুষরা কমপ্লিমেন্ট দিতে ওস্তাদ, লাইব্রেরি, স্কুল কলেজ, অফিস সব যায়গায় নারী কর্মচারী বেশি হবার কারনে এরা খুব সহজে ভালো ভালো কথা বলে নিজের কাজ বাগিয়ে নিতে ওস্তাদ, ৪৫-৪৮ বছরের মহিলাদের এরা ” মেয়ে ” বলে সম্বোধন করে, কাপড়ের প্রশংসা করে, জুতো ব্যাগের প্রশংসা করে, অতপর নিজের কাজ বাগিয়ে নেয়।
রাশিয়াতে কোন মহিলা নেই, আছে মেয়ে আর দাদী।

অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করছেন না এদের এপিকনেসের কথা, আমি আর কিছুই বলব না ছবি বলবে কথা

null
চিত্র- কার ওয়াশিং ইন রাশিয়া ( ফ্রি)

null
চিত্র- এসি রিপেয়ারিং ইন রাশিয়া ( হোম সার্ভিস)

null
চিত্র- বর্ষসেরা রাশান পিতা

null
চিত্র- রাশান ট্রাফিক পেট্রোল এক্সক্লুসিভ

null
চিত্র- সাইবেরিয়ান পিপল গট ট্যালেন্ট

null
চিত্র- সব মেয়ের একই রকম পোজে ছবি দেখে বিরক্ত রাশান

null
চিত্র- কন্ডিশনার কাম ফ্রিজ (সামার ইন রাশিয়া)

সবশেষে ইভান তুর্গিনিয়েভের একটি গল্প থেকে আঁকা একটি পেইন্টিং শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না, এই ছবিতে অনেকটা বোঝা যায়, মুরগি বাড়ি এগুলো এশিয়ার চিত্র বহন করে, পেছনের বড় গীর্জা, আর্কিটেকচার ইউরোপিয়ান কালচারের, ফুল দেয়া, সুন্দরী মেয়ে সব মিলিয়ে এই ছবিতে অনেকটা রাশিয়া বোঝা যায়
null

অনুচ্ছেদ পাঁচ

সামান্য রাজনীতি না পাড়লে এবারের পর্ব পূর্নতা পাচ্ছে না। চেচনিয়ান মুসলিমদের উপরে চালানো অত্যাচারের কথা আমরা সবাই কম বেশি শুনেছি, এবারে আসা যাক বিশ্লেষণে। চেচনিয়া রাশিয়ার একটি প্রদেশ, এইরকম অনেকগুলো প্রদেশ নিয়েই রাশিয়ান ফেডারেশন। এবারে ধরুন আমাদের দেশ থেকে যদি নোয়াখালি আলাদা হয়ে যেতে যায় সরকার কি সেটা মেনে নেবে? আপনি মেনে নেবেন? অবশ্যই মানবেন না। চেচনিয়ান মুসলমানেরা আলাদা রাষ্ট্র চায়, অথচ আদৌ তাদের কিছু নেই সত্য কিছু নেই। আমি যখন চেচনিয়া গিয়েছি তখন ২০১০ সাল। দুটো স্কুল, কয়েকটা হাসপাতাল, আর সরকারী কিছু অফিস ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পরেনি। একটা ভালো মানের রেস্তোরা পর্যন্ত নেই। আমি গিয়েছিলাম এক পাতানো বোনের বিয়ে খেতে, সৌদি আরবের নিয়মনীতিতে বিশ্বাস করা চেচানরা এখনও বোকাই আছে, ককেশাস অঞ্চলের রাজধানী রোস্তভ শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চেচানদের জন্য ২৫ ভাগ আসন সরক্ষিত আছে, হাসপাতালে অনেক চেচান ডাক্তার কাজ করে, যদি চেচনিয়া আলাদা হয়ে যায়, এই সুযোগ কোথায় পাবে তারা? রাশিয়া সরকার থেকে যত সুযোগ সুবিধা তাদের দেয়া হয় এত সুবিধা কোন সরকার তাদের দেবে না আমি হলফ করে বলতে পারি।

সৌদি আরবের লোভ দেখানো আর নিয়ন্ত্রনে গঠিত হয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী, তারা ডিসেম্বর মাসে ৩৪ জনের প্রানহানি করেছে বোমাবাজি করে। চলমান শীতকালীন অলিম্পিকে হুমকি দিয়েছে আবার বোমাবাজি করার।
সৌদি আরবের এই ঘৃণিত রাজনীতি অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত, বসে বসে আদেশ দেয়া যায় বোমাবাজি করার, অথচ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুগছে সমগ্র চেচনিয়া, সাধারণ মানুষ, হচ্ছে সবার ঘৃনার পাত্র।

১,০২৭ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “ফারদার ফাইভ ফ্রম ফরেন”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    এবং গোল ! প্রথম স্থান দখল করে ফেললাম !
    লেখা উপাদেয় হয়েছে। এক নিশ্বাসে পরে গেলাম। এই ধরণের কালচারাল এক্সপেরিয়েন্স পড়তে খুব মজা লাগে। রাশান দের নিয়ে অনেক আগ্রহ। বুঝেন ই তো , আম্রিকা তে রাশা হলো হট টপিক 😛
    আর বই আপনার বের না হইলেও আপনার আম্মা র তো বের হয়েছে। এতেই দিলখুশ থাকেন। 🙂

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    এই লেখায় দ্বিতীয় হইলাম। সিসিবিতে আসলেই খরা যাইতেসে! 🙁

    কালচারাল ডাইভারসিটি নিয়া লেখা পড়তে চরম মজা। প্রতিশোধটা কড়া ছিল কিন্তু পছন্দ হইসে। গডফাদারের কথা মনে পড়ে গেল। মাথা গরম সনি কর্লিওনিকে পিতাজী বলেছিলেন, 'একটা লাথি খেলে তেড়েফুড়ে যাবার কোন দরকার নেই। অপেক্ষা কর ও খেয়াল রাখো, দুটো লাথি দেবার সুযোগ তোমার আসবে।'

    চাইনিজরা নোংরা এই কথাটা এখানেও অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক বন্ধুদের কাছে শুনেছি।

    লেখা চলুক হামীম। কেউ পড়ুক না পড়ুক এখানের লেখা গুলো সংকলন করে একটা ই-বই নামিয়ে ফেলবো। আমি আশাবাদী।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বাক্কার কাসেম নিয়া মনে হয় আগেও হালকা বাকচিত হইছিলো তোমার সাথে খুব সম্ভবত ইসিএফ এ। বাক্কাররে নিয়া এক মজার কাহিনী আছে। ধরো আজ থেকে বছর দশেক আগে, তখন বইমেলায় গেলাম আমরা কয়েক বন্ধু। তার আগেই প্রো জামাতি বাক্কারের যৌন সুড়সুড়ি মূলক কিছু বই পড়া হয়েছিলো মূলত মজা করার জন্য (জোকস কইরা পঁচা জিনিস হজম করার মজা বুঝি ক্যাডেটরা ছাড়া কেউ বুঝবে না।. তো মেলায় ঢুকে এক স্টলের সামনে দাড়িয়ে আমার এক বন্ধুকে বললাম, চল বাক্কারের বই কিনি। সেই স্টলের দোকানি আমাকে বেশ কড়া সুরে ধমকে উঠলেন এই বলে যে, উনি কিছু হলেও লিখেন। এবং উনি ধারে ও ভারে আমার অনেক উপরে। সো আমি তাকে ক্রিটিসাইজ করবার অধিকার রাখি না।
    এই ঝাড়ি খেয়ে আমি দমবার পাত্র না। আমাদের গ্রুপের একজন যে তখন সেখানে ছিলো না তাকে ডামি বাক্কার ভক্ত বানিয়ে সেই ব্যাটার কাছে পাঠানো হলো। তখন জানা গেলো বাকার ঐ ব্যাটার বন্ধুর বাপ। সব শুনে ছদ্মবেশী ভক্ত উনাকে শুনিয়ে আসলো আপনার আঙ্কেল াল লেখেন।
    ======

    দুই নাম্বারটা পড়ে অনেকক্ষণ হাসলাম। ডাক্তারি না বুঝলেও গুগল বাবাজির বদলে টুকটাক ডাক্তারি টার্ম জানি। হবু ডাক্তারনীর দুর্দশা আমোদ দায়ক।

    ======

    পরের টা উপর দিয়া গেছে।
    =======

    চার নাম্বার খুবই মজা লাগলো। ব্লগে পড়বার জন্য খুবই আরাম দায়ক।

    ========

    পাঁচ নাম্বারটা আর কী কমু!! শুধু বলি তুমরা ন্যাস্টিক বোগার 🙂

    জবাব দিন
  4. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    মচমচে ব্লগ। অনেকে নাকি ফেসবুকের দেয়াললিখন বই আকারে বের করে। যার যা ইচ্ছা বের করবে। বাংলাদেশে এখনও ঐ সিস্টেম চালু হয় নাই যে প্রকাশক তোমাকে ডেকে ডেকে বই প্রকাশ করবে এবং বিনিময়ে তোমাকে হাতে কিছু পয়সা গুজে দিবে। অবশ্য অনেকেই উৎসাহ দেখাবে এবং শেষ পর্যন্ত তোমার বাজার পরীক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত পুরো বিষয়টাই চাল আর ডালের ব্যবসা। একবার এক প্রকাশক অবশ্য ফেসবুকে যোগাযোগ করে আমার পূর্ব-পশ্চিমের সিরিজের উপর একটা বই বের করতে চেয়েছিল। আমি বললাম ব্লগের লেখা দিয়ে আপাতত বই করবো না। যারা আমার লেখা পড়ার তারা ব্লগেই পড়ে - সেটা দিয়ে বই বের করে কি হবে? আত্মীয়-স্বজনদের কল্যাণে এখন অবশ্য অবসরপ্রাপ্ত বেশ ভালো সংখ্যক মানুষজন এখন আমার বইয়ের অপেক্ষায় থাকে।
    আর তুমি বক্করকে নিয়ে ফাজলামী করলে - এর দায় অনেকটা কিন্তু আমাদের উপরও এসে পরে। আমি আগে যখন গ্রামে যেতাম (আশির দশক পর্যন্ত) তখন কিন্তু লেখক নিহার রঞ্জন গুপ্ত, বিমল রায়, শরৎচন্দ্রের বইগুলো গ্রামেই খুঁজে পেতাম। নব্বই দশক থেকেই বোধহয় হঠাৎ হুমায়ূন আহমেদ বিরোধিতা এবং অন্যসব মিলিয়ে নতুন লেখকরা গল্প বলা ব্যাপারটা কে প্রাধান্য দিতে ভুলে গেল। স্থান কখনও শূণ্য থাকে না। আর এই শূণ্য স্থান দখল করলেন বক্কর সাহেবরা।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।