অনেকটা পথ

অগাস্টের কোন এক ভোর রাতে জাতির রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লাশ পরে থাকবে সিঁড়িতে, কয়েকজন খুনি মেজররা দেশ দখল করে ফেলবেন, একজন মেজর ডালিমের গলা ভেসে আসবে বেতারে। দেশের ভেতরে আলীম বেশে লুকিয়ে থাকা রাজাকার, আল-বদরেরা উঁকি মেরে তখন গলা উঁচু করবে, স্লোগান বানিয়ে গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসবে-
“আলীম মারলো জালিম
জালিম মারলো ডালিম”

সকালের খাবার খাবার সময়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হবেন মুক্তিযুদ্ধের একটি স্তম্ভ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ, ভন ভন করে মাছি উড়বে বীর বিক্রম কর্নেল হুদার লাশের উপরে, সেই দিনকে আমাদের চিনতে হবে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে।

আমরা দেখি পাক হানাদার বাহিনীর যম, রাজাকার বাহিনীর ত্রাস বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি একদিন বিনামূল্যে বিক্রি হয়ে যান রাজাকারের দলটির কাছে, মিন মিন করে এখানে ওখানে বক্তৃতা দিয়ে রাজনীতির প্লাটফর্ম খুঁজে বেড়ান।

আমাদের আম্মাজান “জাহানারা ইমাম” সারাটা জীবন, সন্তান দিয়ে দেশের জন্যে লড়ে একদিন মাথায় দেশাদ্রোহী মামলা নিয়ে আমাদের চীরদিনের জন্য ছেড়ে চলে যাবেন, শাহবাগের আম্মাজানের বিশাল ছবির আশে পাশে এখনও নীরব কান্নারা উড়বে, আমরা মাথা নীচু করে কিছুই না দেখার ভান করবো।

আমরা একদিন দেখতে পাই বামপন্থী এক্টিভিস্টরা – বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭ জন সেনাবাহিনীর অফিসারকে নির্মম ভাবে হত্যা, জ্বালাও, পোড়াও এবং লাশ-গুমকে বুর্জুয়াবাদের বিপরীতে জোয়ানদের বিপ্লব হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন।

আমাদের একমাত্র নোবেল লরিয়েট একদিন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার পথ সুগম করতে রাজাকার দলের লালন-পালনকারী দলের পক্ষে ভোট ভিক্ষে করে ফেলেন। আমরা সবাই একবার করে কিডনির উপরে হাত বুলিয়ে নিশ্চিন্ত হই, এরপরে চুপ করে বিবৃতি শুনে যাই।

স্কুল ও কলেজ থেকে চমৎকার নাম্বার পেয়ে পাশ করা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা ছেলেটি একদিন হেফাজতি ইসলামের দাবীকে সমর্থন করে বসে, একজন নারী সাংবাদিককে রাজপথে মারধোর করার বিষয়টি এড়িয়ে যাবে, তাদের নেতা শফির বক্তব্য ভূলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করবে। আমরা পচা-গলা- নোংরা মস্তিষ্কের গন্ধ পেয়েও এড়িয়ে যাবার ভান করবো।

জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হয়ত হরতালের আগুনে পুড়ে জ্বলন্ত অঙ্গার হওয়া মনির হোসেনের কবরের উপরের বেলী ফুলের গাছে কলি আসবে, লুঙ্গির কুঁচি ধরে সেই কবরের পথ ধরেই- মনির হোসেনের এলাকার লোকেরা গিয়ে দাড়িপাল্লায় ছাপ মেরে আসবে, বাংলাদেশের একমাত্র ইসলামী দল(!) জামাতে ইসলামীকে জয়ী করার চেষ্টা করবে দেশের শান্তির আশায়।

আমরা কিছুই করতে পারবো না, আমরা নিজেদের বিভক্ত করে চিরদিন দূর্বল করে ফেলেছি। এই পঙ্গু অস্তিত্ব নিয়ে প্রতিদিন কুঁকড়ে যাই, তবু আক্ষেপ করি না – আমার তো তবু লেখার সাহস আছে, অনেকের তো ততটুকুও নেই।

প্রিয় বাংলাদেশ, অনেকটা পথ এখনো হাটতে হবে, সে পথ বন্ধুর আর দুর্গম

৯৭০ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “অনেকটা পথ”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    কেউ চায় হরতালে মানুষ পোড়ানোর অধিকার।
    কেউ চায় বাবুর বাবা হইতে।
    কেউ চায় শক্ত করতে বা শক্ত হইতে।
    কেউ আবার নিয়মিত গুণে দেখে হাতের আঙুল কয়টা।
    কেউ চায় নাস্তিক বলগারদের ফাসি।
    কেউ আবার বলগ দিয়া ইন্টারনেট চালানোর কৃতিত্ব স্বরূপ নোবেল পুরষ্কার।
    কেউ চায় দেশপ্রেমী রাজাকারদের মুক্তি।
    কেউ খায় লইট্টা ফিস।
    কেউ আবার হাজার হাজার লাশের খোয়াব দেখে।

    গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড মেম্বাররা চায় শুধু ইউনূসকে।
    (ভিডিওটি বছরখানেক আগের, বাট দাবি চাই চাই, ইউনূস সাহেবকে চাই। )


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।