কালাইডোস্কোপে বিষ

শীতের রোদ বড্ড পুরুষালী হয়, বিশেষ করে দুপুরের দিকে। এই মুহূর্তে সে কাজরার পিঠের চামড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে। মাটির চুলোয় আগুন ধরিয়ে কাজরা ডালায় রাখা কাঁকড়ার দিকে ঝাঁপিয়ে পরে, দক্ষ হাতে এক এক করে কাঁকড়ার হাত পা গুলো শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে, মোচড় কেটে কেটে তারা নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে। পাতিলে রসুন আর পেঁয়াজ বাটা চড়ায় সে, নৌকার দুলুনীতে চুলা দুলছে, দুলছে পেঁয়াজ আর রসুন বাটাও। একটু বাদামী হয়ে আসলে কাজরা যথেষ্ট পরিমানে মরিচ গুড়ো ঢালে সেখানে, তারপর কাঁকড়া, পোড়া মাটির সরা দিয়ে পাতিল ঢেকে দেয়। কাঁকড়ার শরীর এখন চুষে খাবে মশলা, একফোঁটা ঘ্রানও যদি বাইরে বের হয়ে যায়, কাঁকড়া রাধাই বৃথা গেল।

নীরেন্দ্র ওঝার দ্বিতীয় স্ত্রী কাজরা নৌকার গলুই এর মধ্যে ঢুকে একটু জিরোয়, নীরু এখন এই বহরের সর্দার, রাজার ছেলে যেমন রাজা হয়, সর্দারের ছেলেও সর্দার হয়। তবে সর্দার হবার জন্য কম রক্ত ঝড়েনি। নীরু ওঝার ছোট ভাই বীরু ওঝাও নাম করা বেদে। নীরু ওঝার বাবা মারা যাবার পর বীরু ওঝা সর্দার বনে যায় রাতারাতি, নীরু ওঝা সেটা মানবে কেন? এক রাতে কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি, হাতাহাতি থেকে রক্তারক্তি এরপর বীরু ওঝা ছয় নৌকা নিয়ে আলাদা হয়ে যায়, আর নীরু ওঝার সাথে রয়ে যায় আট নৌকা।

এখন শীতকাল, সাপ ধরার মৌসুম। শীতে সাপেরা পানিতে থাকতে পারে না, মাটিতে উঠে আসতে হয়, নদীর আসে পাশেও থাকতে পারে না, তারা আশ্রয় নেয় বড় পোড়া ফাকির ফোঁকরে, গর্তে। নানা রকম খেল খলিয়ে সাপ ধরা হয়, কখনও ধোয়া দিয়ে, কখনও মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে, কখনও গাছের শিকড়ের গন্ধ দিয়ে। পুরো বিষয়টা একটা শিল্পের স্তরে।

পশুর নদীর অববাহিকা ছেড়ে অনেক দক্ষিণে থেমেছে নীরু ওঝারা, দুই সপ্তাহ হয়ে গেল এইখানে তারা। সেন বাড়ির পিছনের জংলায় প্রচুর কচু, শাক, আর জংলা আলুর প্রাপ্যতার কারণে এখানে তাদের অবস্থান কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হচ্ছে। সাথে আছে মাছ, আর কাঁকড়া। জাল ফেললেই মাছ উঠছে, ফাইসা, চাপা চিংড়ি, ছোট মাছ, ভাগ্য ভালো হলে বড় মাছও।

অনেক রাতে নীরু ওঝা নৌকায় ফেরে, তার মনে খুশি, জাতি সাপ ধরা পরেছে দুটো। জাতি সাপ ছোট হলেও বিষ তীব্র। তবে সেটাও আসল কথা নয়, কাশেম জমিদারের বাড়ির লোক এসেছিল, জমিদারের মেয়ে বড় সাপ দেখেছে নীচ তলার ধানের গোলায়, পদ্মগোখরা না হয়ে যায় না। আগামী দুই দিন ধরে খেলাতে হবে, খেলতে না জানলে সাপ ওঠে না।
– কিরে কি রানছোস?
– কাঁকড়ার তরকারি আর ডাইল
– দে দুইটা খাই ঘুমাই যাই, কালকে কাম আছে
তৃপ্তি করে ভাত খায় নীরু ওঝা, নদীর পানিতে হাত ধুয়ে গলুইয়ের মধ্যে বিছানো বিছানায় আরাম করে শুয়ে পড়ে সে, একটা বিড়ি টানে আর দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে কান খোঁচে। বাসন কোসন ধুয়ে তার পাশে শুয়ে পরে কাজরা, সাবধানে নীরু ওঝার লোমশ বুকে হাত বুলায়, কাছাকাছি চলে আসে নীরু ওঝার
– আরে কি শুরু করলি, সড়, কাইলকার কাম আছে
– কাম তো প্রতিদিন থাকে, আমার দিকে তো একবারও চাইয়া দেখেন না
– সড় মাগী, জালাইস না
– আমারে দেইখা তো আপনের খাঁড়ায় না, আপনার খাড়ায় গায়ের মধ্যে সাপ ডলাডলি করলে
– মাগি তুই বেশি বাড়ছোস, শাউয়া ভাইঙ্গা দিমু
– ভাঙ্গেন, দেখি কেমন ভাঙতে পারেন, শুনছি বাজারে গিয়া বেশ্যারটা খুব ভাঙেন

নির্লিপ্ত ভাবে উঠে বসে নীরু ওঝা, কাজরার কোমর বরাবর একটা লাথি বসায়। ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে কাজরা, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে, সর্দারের বউ জোরে কাঁদলে মানুষ শুনবে, মানুষ শুনলে পরদিন দুই কথা জিজ্ঞাসা করবে, লাথির কথা জানতে পারলে বহরের মেয়েদের মধ্যে তার সম্মান থাকবে না, সয়ে সয়ে কান্নাটা গিলে ফেলে কাজরা, উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পরে, নীরু ওঝা আরেকটা বিড়ি ধরিয়েছে, তামাকের গন্ধের সাথে ঘামের গন্ধ মিলে একটা উৎকট গন্ধ তৈরি হয়েছে, দম বন্ধ হয়ে আসে কাজরার। অনেক কষ্টে দম গিলে সে গুটিসুটি হয়ে পরে থাকে।

সৌরভ অনেকদিন পর একটা চমৎকার বেদে দল খুঁজে পেয়েছে, নীরু ওঝার সাথে তার চমৎকার ভাব হয়েছে, নীরু ওঝাকে এক প্যাকেট সিগারেট দিয়েছে, দুই চুমুক ব্যান্ড্রি খাইয়েছে তাতেই নীরু ওঝা বশ মেনে গেছে, সে বলছে তার বহর সৌরভেরও বহর। সৌরভ মূলত বায়ো- ডাইভার্সিটি নিয়ে পড়ছে, সাথে ছবি তোলে, বেদে দলের কাছে সে দুটো সুবিধাই পাচ্ছে, প্রচুর সাপের ছবি তোলা হয়েছে, বেদে জীবনের এবং সাপ সম্পর্কে জানতে পারছে, থিসিস লেখার সময় এই অভিজ্ঞতা যে কত কাজে দেবে সেটা ভেবেই সৌরভ বড় পুলকিত হয়।

– কাজরা মাসি, বাবুটা কেডায়?
– বিদেশে পড়ে, সাপ গোপের পড়ালেখা
– কি কও না কও, সাপের উপর লেকাপরা
– হ, ছবিও তোলে।
– মাসি, বাবুটা দ্যাখতে সুন্দর
– ঘরে ব্যাডা থুইয়া নোলা বাড়াইতে শরম করে না তোর?
– এইরাম সুন্দর বাবু তোমারে ধরলে তুমি চিক্কইর দিবা মাসি?
– যা ঢেমনা ছেড়ি, দূরে যা, খারাপ কথা কইতে তোর শরম লাগে না!

সৌরভ আনমনে ছবি তুলছে, নীরু ওঝা তার দলবল নিয়ে বেড়িয়ে গেছে সাপের খোঁজে, কাজরার চুল বাঁধার অনেকগুলো ছবি তুলল সে।
– আপনি নৌকার মাথায় একটু বসুন, আমি কয়েকটা ছবি তুলব।
– আমার ছবি তুলবেন ক্যান?
– ছবি অনেক দামে বিক্রি হয়, সেই টাকা দিয়ে আমি ঘর ভাড়া দেই
– আমার ছবিও বেচা হইবে?
– হ্যাঁ হবে, এখন আপনি বসুন, আমার দিকে তাকাবেন না, নদীর দিকে তাকিয়ে থাকবেন

আড়ষ্ট হয়ে বসে কাজরা, সৌরভ ছবি তুলছে। কিন্তু কিছুতেই কম্পোজ মিলছে না, ন্যাচারাল শটটা আসছে না। সে কাজরার দিকে এগিয়ে যায়, নৌকাটা দুলে ওঠে, কাজরার আঁচলটা চিকন করে পেঁচিয়ে এক কাঁধের উপরে রাখে, ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয় কাজরা, তার গায়ে বাবু হাত দেবে সেটা সে ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি। কিন্তু বাবুর কাজে খারাপ মতলব নেই সেটাও সে বুঝতে পারে, নারীরা প্রচণ্ড তীব্র এক ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়ে জন্মায়।
– আপনি পায়ের উপর থেকে শাড়িটা একটু উপরে তুলুন
– বাবু,আমার শরম করে।
– আমি দুটো ছবি তুলব, এভাবে বসলে ছবিটা ভালো আসবে।
– বাবু, শরম করে আমার।
– আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করে তুলছি।
হাটুর নীচ পর্যন্ত শাড়ি গুটায় কাজরা, সৌরভ খুব দ্রুত কয়েকটা ছবি তোলে।
– এবার নামিয়ে নিতে পারেন
– ছবি শ্যাষ?
– হ্যাঁ, শেষ।
সৌরভ বেড়িয়ে যায় নৌকা থেকে, অন্য নৌকায় যাবে এখন, অন্য মেয়েদের ছবি তুলবে। বহরে সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে কাজরা, অন্য মেয়েদের ছবি তোলার কি দরকার বাবুর ভেবে কূল পায়না কাজরা। পুরো নৌকা জুড়ে চমৎকার একটা ঘ্রান আসছে, বাবুর গায়ের গন্ধ, কি সাবান গায়ে মাখে কে জানে, এত সুন্দর ঘ্রানের কাহিনী মোটেও বুঝতে পারে না কাজরা।

সেদিন সন্ধ্যার দিকে সৌরভ হাজির হয় বহরে। পূর্নিমার রাতে নদীর পানি চিতল মাছের পেটের মতো চকচক করছে। নৌকাগুলোকে প্রচণ্ড জীবন্ত মনে হচ্ছে তার। সে এসেছে নীরু ওঝার সাথে গল্প করতে, কিন্তু জানা গেল নীরু ওঝা জমিদার বাড়ি গেছে, কোনভাবেই সাপ বেড়িয়ে আসছে না, এই নিয়ে তিনদিন।
– কাজরা, আপনি আছেন?
– বাবু?
– হ্যাঁ, কেমন আছেন?
– ভালা আছি, আপনি কেমন আছেন? নৌকায় আসেন
– আপনার ছবি এনেছি, শহরে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে প্রিন্ট করে এনেছি।

কাজরার বিশ্বাস হয়না ছবির মানুষটি সে, নদীর দিকে আনমনে সে তাকিয়ে আছে, এত সুন্দর ছবি তার হতেই পারে না, তার চোখ ভরা অবিশ্বাস।
– বাবু, ছবিটা আমারে দেবেন?
– হ্যাঁ, আপনার জন্যই এনেছি
– বাবু, ভাত খাবেন? মাছ ভাজা আছে
– আরে না, এই সন্ধ্যা বেলা ভাত খাবো না।
– আপনে অনেক সুন্দর ছবি উঠান বাবু।
– আপনি দেখতে সুন্দর, তাই ছবিও সুন্দর উঠেছে।
– নৌকা বাইবেন? আইজকা তো চান্নী রাইত, মাঝ নদে চানের ছবি তুলতে পারবেন
– আমি তো নৌকা চালাতে পারি না।
– আমি বামু, আপনি ছবি উঠান চানের।
– আচ্ছা চলুন, মাঝ নদীতে বসে কখনও চাঁদ দেখার সুযোগ হয়নি।

খুটি থেকে নৌকা খুলে ভাসিয়ে দেয় কাজরা, ছপ ছপ শব্দ তুলে বৈঠা মারছে সে, তীর থেকে তারা অনেক দূরে। সৌরভের খুব খারাপ লাগে, কাজরার নিশ্চয় অনেক কষ্ট হচ্ছে।
– আপনি সরুন, আমি চেষ্টা করি একটু চালাতে
– বাবু পারবেন না
– আরে দেখি না কি হয়
কাজরা সরে বসে, সৌরভ বসে নৌকা চালাবার চেষ্টা করে, যা হবার তাই হল, নৌকা যায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সামনে যাবার বদলে দিক পরিবর্তন করছে বার বার। কাজরা হাসিতে ভেঙে পরে, চাঁদের আলোর সাথে হাসি মিশে অদ্ভুত এক কমনীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
– বাবু, আমিও আসি, আপনারে শিখায়ে দেই
– আসুন

সৌরভের দুই পায়ের ফাঁকে বসে কাজরা, তার হাতের উপর দিয়ে বৈঠা ধরে, এবারে ঠিক ঠিক নৌকা সামনে আগায়, বৈঠা সামনে পেছনে করার সময়ে কাজরার পিঠ তার বুকে লাগছে, আর হাত স্তন ছুঁয়ে আসছে। নাকে আসছে কাজরার শরীরের হাজার বছরের পুরানো বেদেনীর সাপ- সাপ গন্ধ। শরীর তো কথা শোনে না, সৌরভের ভেতরের সাপটা ফনা তোলে, বৈঠা বাইবার তালে ছোবল মারে কাজরার কোমরে।
হুট করে বৈঠা ছেড়ে দেয় সৌরভ। হাত দুটো দিয়ে কাজরার শাড়ি উরুতে তুলে দেয়, আট আঙুলের লম্বা আঁচড় পরে কাজরার দুই উরুতে। একটু উপরে উঠতে কাজরার আদ্রতা ঠিক টের পায় সে। মুখ ডুবায় ওর গলার নরম খাঁজে, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে কাজরার, বুকটা ধড়ফড় করে, কোনমতে সে শুধু বলতে পারে
– বাবু এইখানে না, নৌকা ঘাটলায় লই আগে

সৌরভের কানে প্রেমের সিম্ফোনি, শরীরে পাবার লোলুপতা। নিজের শরীরের নীচে নিয়েছে সে কাজরাকে। কানে, গলায়, ঘাড়ে দাঁত বসাচ্ছে, দুই হাতে তার কাজরার স্তন।
– বাবু, দাগ দিও না, দোহাই, নীরু ওঝা আমাকে জবাই করে দেবে
– আচ্ছা দেব না।
নিজের মধ্যে সৌরভকে নিতে প্রচন্ড কষ্ট হয় কাজরার, ছিদ্র করা কানে কানের দুল না পরলে, ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় একসময়। একসময় সৌরভের গন্ধে মিশে যায় কাজরা, বাবুর বিলাতি সাবানের গন্ধ তাকে ঘাম আর বিড়ির গন্ধ ভুলিয়ে দেয়। বাবুকে তার নিজের শরীরের অংশ মনে হয়। সৌরভ পায় প্রকৃতির গন্ধ, মশলা, তেল আর সাপের গন্ধ।

-বাবু উঠবা না?
– হ্যাঁ
– আমার খুব ভয় লাগতেছে বাবু, যদি আমার প্যাটে পোলা-মাইয়া আসে?
– আমি কালকে একটা ওষুধ দেবো, ওইটা খেয়ে নিলে আর সমস্যা থাকবে না।

সৌরভ উঠে বসে, অদ্ভুত একটা ভালো লাগা মেশানো ক্লান্তি শরীরে। মানিব্যাগ বের করে সে একটা পাঁচশো টাকার নোট বের করে কাজরার হাতে দেয়।
– তুমি ভালো কিছু কিনে নিও শহর থেকে
– তুমি আমাকে ট্যাকা দিলা বাবু?
– হ্যাঁ, কেন কি হয়েছে?
– আমারে তোমার বাজারের মাগি মনে হয় বাবু? তুমি আমাকে ট্যাকা দিয়া কিনা নিতে চাও?
– আমি কি তাই বলেছি নাকি? তুমি এভাবে ভাবছো কেন? একটা শাড়ি বা পছন্দের কিছু কিনে নিও
– তুমি আমাকে বেশ্যা ভাবিলা বাবু, বেশ্যা! তোমাকে আমার খুব ভালো লাগতো বাবু, তুমি আমাকে বেশ্যা বানায়ে দিলা বাবু?
– কাজরা, আমি এইরকম কিছুই মনে করিনি, আমি চাই তুমি পছন্দ মতো কিছু একটা কেন, যাতে আমাকে তোমার মনে থাকে
– বাবু আমাকে তুমি শাড়ি দিলে কিছু মনে নিতাম না, তুমি আমাকে ট্যাকা দিলা! আমার ব্যাডা ছাড়া আমাকে কেউ ছোয়নাই বাবু, কেউ না

কান্নায় ভেঙে পরে কাজরা। আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে যায় সৌরভ। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে সে। পানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে।

কাঠের বাক্স থেকে মুঠো করে জাতি সাপটা বের করে কাজরা। আঙ্গুলে জোরে চেপে ধরে সাপের মাথা, সাপের সাথেই যেন কথা বলে সে-
“ শহুরে বাবু আমাকে বেশ্যা বানায়ে দিল রে, আমাকে টাকা দিয়ে কিনতে চায়, আমি কি বাজারের মাগি নাকি? আমি কি শাউয়া বেঁচে খাই রে? তুই-ই আমাকে বলে দে, ব্যাডায় মাগি বলে, কিছু আশা না করে যারে দেলাম, সে বেশ্যা বানায়ে দিল, তুই আমারে একটা চুমা দে, চুমা দিয়া আমারে বিদায় করে দে”

আঙুল থেকে মাথাটা ছেড়ে দেয় কাজরা, পরবর্তী আঘাত পাবার আগেই আঘাত হানে জাতিসাপ, ঠিক বাম চোখের নীচে, কাজরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে, জাতি সাপটা তার শরীর বেয়ে নেমে গিয়ে কাঠের ফাঁকে আশ্রয় নেয়।

পরদিন সকালে নীরু ওঝা এসে মুখে ফেনা ওঠা মৃত কাজরাকে পায়। তার বুঝতে বাকি থাকে না জাতি সাপের বিষ। সে ঠাণ্ডা মাথায় সাপটাকে খুঁজে বের করে কাঠের ফাঁকায়। কোমরের চাকুটা ঠিক মাথা বরাবর গেঁথে দেয় সাপের।

দুপুরে একটা শাড়ি নিয়ে বহরে আসে সৌরভ। রীতি অনুসারে ততক্ষনে কাজরার দেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছ। পুরো বহরে একটা থমথমে পরিবেশ।
– আমার বউটারে সাপে কেটে দিল বাবু, এই তল্লাটে আমি আর থাকবো না, আজকে সন্ধ্যায় উজানে যাবো
– এই শাড়িটা নিয়ে যান, কাজরার খুব শখ ছিল নতুন শাড়ি পরে একটা ছবি তোলার।

সৌরভের প্রথম ছবি এক্সিবিশন চলছে, সে বসে আছে একটা চেয়ারে। একজন ভদ্রলোক এগিয়ে আসলো সৌরভের দিকে
– মিস্টার সৌরভ, নৌকায় বসা মেয়েটির ছবির প্রাইস ট্যাগ নেই, আমি ছবিটি কিনতে চাচ্ছিলাম
– ওটা বিক্রির জন্য নয়।
– কেন?
– কারণ স্মৃতি বেচা-কেনা করা যায়না।

গ্যালারি ছেড়ে বেড়িয়ে যাবার সময় সৌরভ দেখে একজন সাংবাদিক ছবিটির ছবি তুলছে। তার কাছে গিয়ে সৌরভ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল- মেয়েটির নাম ছিল কাজরা, সে একজন অসম্ভব মায়াবতী বেদেনী ছিল।

৩,৪০৪ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “কালাইডোস্কোপে বিষ”

  1. দিবস (২০০২-২০০৮)

    তোর গল্প লেখার হাত অসম্ভব সুন্দর। ব্যতিক্রমি কাহিনী আর উত্তেজনা সব মিলিয়ে একটানে না পড়ে থাকা যায় না। খুব সুন্দর।


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  2. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    কৃতজ্ঞতা সরূপ মন্তব্য করতে আসি নাই যদিও এখন তাই মনে হচ্ছে। আগেও বলেছি তোমার লেখা আমি পড়ি গল্পের মাঝে রোলার কোস্টার অনুভূতি নেবার জন্য। আর থ্রি-ডি গ্লাসের মত গল্পটা দেখার বিষয়তো আছেই। এবারে কোস্টার রাইড হয়তো পাই নাই কিন্তু থ্রি-ডি গ্লাসে ঠিকই দেখা হয়েছে। তোলা ছবিটা, কাঁকড়া রান্নার সময়, প্রদর্শনীর সময়। আর প্রদর্শনী শেষে ক্যামেরা বাইরে নিয়ে এসেছি। এটা আমার সবসময় করতে ভাল লাগে। পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় বসে থাকলাম।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  3. ইমরানুল হক

    :boss: :boss: সাধু সাধু!! অসাধারণ বর্ণনা ভাই। :clap:


    বিশ্ব মেতেছে আজ 'আগুন-ঝরা-ফাগুন'-এর উৎসবে। রক্তস্নানে তুষ্ট হৃদয়। প্রতিটি নিঃশ্বাসে শকুনের আনাগোনা অনবরত।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।