বিরিশিরি ডায়েরি (১)

ধারণা করেছিলাম বিরিশিরি হবে একটি ছবির মতো সুন্দর শহর, যেখানে ইংরেজি ছবির মতো টুরিস্টরা মাথায় ক্যাপ আর গায়ে হাওয়াই জামা পরে ছবি তুলবে, ঘুরে বেড়াবে ইত্যাদি।
অথচ বিরিশিরি ছবির চেয়েও সুন্দর, বাঁধানো ছবির মতো সুন্দর, তবে সেখানের বাজার নয়, প্রকৃতি, মানুষ, নদী আর পাহাড়।

বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় অবস্থিত একটি ইউনিয়ন, বিরিশিরি দূর্গাপুর উপজেলার অন্তর্গত। ময়মনসিংহ, ভালুকা , ত্রিশাল এরপর নেত্রকোনা পার হয়ে যেতে হবে বিরিশিরি।

প্রথম দিন-
১৫ অক্টোবর

সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতে বাধ্য হলাম অমির ফোনের কারণে, আমার বিরিশিরি যাবার পেছনে এই অমির অনেকখানি ভূমিকা, অমি আমাদের বাড়ির একদম কাছের ছেলে, সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা সহ রাজনীতি করে। যারা রাজনীতি করে না এবং বোঝে না আমার কাছে তাদেরকে “ছ” বিহীন ছাত্র মনে হয়।
অমির সাথে আমার সখ্যতা অনেক ছোটবেলা থেকে, ক্লাস ৬ থেকে। আমরা বরিশালের এক হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করতাম, স্বমেহন করার পর আমি অমির জামা, গেঞ্জি দিয়ে হাত মুছতাম, অমি সেই কথাগুলো এখনও ভোলেনি, তবে বড় হয়েছে তাই এখন এগুলো নিয়ে ফান করে। এরপর আমি ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হয়ে যাওয়াতে আমাদের সম্পর্কে মৃদু ছেদ পরে।
অমির বাবা আওয়ামীলিগের বড় নেতা, তিনি লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কনট্রাক্টর হিসাবে কাজ করেন, আর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকলে খেয়া ঘাঁটের নিজের ফার্মেসীর দোকানে বসে মাছি মারেন।

অমি আর আমি আজিমপুর মোড় থেকে রওনা হলাম ধানমন্ডি ৫ এর দিকে। সেখান থেকে এক বড়লোক পুত্রের গাড়িতে আমরা মহাখালী যাবো।

বড়লোক পুত্রের নাম নাভেদ। তার মাথা থেকেই বিরিশিরি যাত্রার প্লান বের হয়েছে , শহর থেকে দূরে এবং কম খরচে কিছুদিন নির্বাসিত থাকার লক্ষ্য নিয়েই বিরিশিরিকে পছন্দ করা হয়েছে। অবশ্য এই কারনের পেছনেও আর একটি কারন রয়েছে। নাভেদ সম্প্রতি লোক প্রশাশন পড়ুয়া এক রমণীকে নিজের হৃদয় বন্ধক দিয়েছে, রমণী বড় অবহেলায় সে হৃদয় নাড়াচাড়া করছে।

রমণী অতিশয় রূপবতী, সেই সাথে সাথে সে অনেকখানি লম্বাও বটে। নাভেদ মোবাইল থেকে আমাকে রমণীর ছবি দেখিয়ে রূপবতী সনদ আদায় করে নিল।
তবে রমণীর লক্ষ্য বাবা-মার পছন্দের পাত্রের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসার, কিন্তু সেই সাথে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে যোগাযোগ করার লোভও তার অনেকখানি। তাই নাভেদকে সে না পারছে গিলতে না পারছে উগলাতে।
রুপবতীর এই অবহেলার ক্ষত শুকাতেই নাভেদের বিরিশিরি যাত্রা।
মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছেই আমরা টিকেট করে ফেললাম, ২৩০ টাকা করে টিকেট, আমাদের সাথে বাকি একজন উঠবে গাজিপুরা থেকে। বাসের নাম নিশিতা

“ সকালে খাও রাজার মতো
দুপুরে খাও পরিমিত
রাতের খাবার শত্রুকে দিয়ে দাও”
এই তত্ত্বকে সামনে রেখে আমি ৪টা আটার রুটি, ডাল+ভাজি, ৩ টা ডিম, কলা এবং সবশেষে এক বোতল লাবাং দিয়ে নাশতা সারলাম।
আমার খাওয়ার বহর দেখে যার পর নাই বিশালবপু নাভেদ খুব পুলকিত হোল। তবে আমার সম্পর্কে অমির ভালো ধারণা আছে বলে সে মুখ টিপে হাসলো শুধু।

বাসের সামনে একটা টিভির ব্যবস্থা আছে, সেখানে চলছে ভারতীয় বাঙলা ছবি, সব্যসাচী বড়লোক বাবার ভূমিকায় অভিনয় করছেন, তার ছেলে কিছুই পারে না ( আবাল বিশেষ) তবে সে খুব মনযোগ দিয়ে এক বড়লোকের মেয়ের সাথে প্রেম করে, এবং ন্যাকা ন্যাকা ডায়লোগ দেয়, শেষমেষ তার প্রেমতীর ছুটে যায় দীর্ঘ বসনা, মধ্যবিত্ত এক কলেজ ললনার দিকে, আর এরপর সেই মেয়ে ধীরে ধীরে জয় করে নেয় বাড়ির সবার মন ইত্যাদি ইত্যাদি।
বাঙলা এবং হিন্দী ছবিতে সবসময়েই ঘরমুখো, দীর্ঘবসনা, পতি ও পতি পরিবার ভক্ত নায়িকার জয় হয়। আরেকবার আমার অনুসিধান্ত সত্য বলে প্রমানিত হল।

ছবিতে নায়িকা যখন পতি পরিবারের মন জয় করার চেষ্টা করছে তখন আমি ঘুমে হারিয়ে যাই। মাঝে একবার উঠে এক বোতল পানি আর একটা আমড়া খেয়ে আবার ঘুম।
ঘুম যখন ভাঙ্গে তখন আমরা ত্রিশাল। ত্রিশাল কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিজড়িত শহর, এছাড়াও আমার আর কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন একই, তাই ত্রিশালে ঘুম চলে না।
ত্রিশাল পার হবার সময়ে টিভিতে চলছে থ্রিলার+একশন+রোমান্স ধর্মী ছবি। নায়ককে কলকাতা পুলিশের এক অফিসার হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে, নায়ক কোন এক জায়গা থেকে এক নায়িকা জুটিয়ে নিয়েছে, এখন তারা দুজনেই ফেরারী।

এরমধ্যে আমাদের সাথে চলে এসেছে নেওয়াজ, সে এক্স ক্যাডেট। সেই গাজিপুরা থেকে উঠেছে। তার বিরিশিরি যাত্রার কারনটা আরো অদ্ভুত, তার সম্প্রীতি অতি রূপবতী এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়েছে, সেই মেয়েকে আমি চিনি, সে অতীব ভালো মানুষ।
রূপবতী এই মেয়ে ১৮ তারিখ যাচ্ছে বান্দরবন। নেওয়াজ সম্পর্ক জোড়া লাগাতে তাই এই সময়কেই বেছে নিয়েছে। সে বাসায় বলে এসেছে সে বিরিশিরি থাকবে কোন একটা শিক্ষা সফরে, কিন্তু আসলে সে বিরিশিরি থেকে ফিরে তার সাবেক প্রেমিকার সাথে বান্দরবন যাত্রা করবে। নেওয়াজ তার ভুল বুঝতে পেরেছে, হে রূপবতী তুমি নেওয়াজকে গ্রহন করো। নেওয়াজ তোমার জন্য একখানা গারো চাদরও কিনেছে, কালো রঙের, কালো রঙে নাকি তোমায় অপূর্ব লাগে।
যারা লেখাটি পড়ছেন তারাও এই জুটির সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে শুভকামনা জানাবেন।

ট্যুরের বাকি সদস্য আমি, নিতান্তই ভদ্রলোক, গোবেচারা ধরণের মানুষ( মেয়েরা উঠতে বললে উঠবে, বসতে বললে বসবে সেই ধরনের) পাহাড়, পর্বত, প্রকৃতি, নদী সবুজ দেখবো বলে বিরিশিরির পথে যাত্রা করেছি। সাথে চাখতে এসেছি মালাই চা, বালিশ মিষ্টি, দ্রাক্ষারস ইত্যাদি।

নেত্রকোনার পর ভীষণ আশাহত হলাম, রাস্তা ভীষণ খারাপ, ভীষণ ঝাকুনিতে আমি এক হাতে অণ্ডকোষ ধরে স্থির রাখতে বাধ্য হলাম।
দুপুর ১ টার সময়ে পৌঁছে গেলাম বিরিশিরি শহরে। শহর দেখার মতন কিছু নয়, কিছু আলু পিয়াজ, কিছু সবজি, কিছু কয়েল লাকড়ী, দুটো ভাতের হোটেল, একটি ফোন ফ্যাক্স আর একটি ফার্মেসী নিয়ে বিরিশিরি বাজার।
তবে মুদি দোকান, সেলুন এবং মুচিও চোখে পড়েছে।

প্রথমেই আমরা বাংলোর দিকে রওনা দিলাম। চমৎকার ছবির মতো সাজানো দোতলা বাংলো। সামনে বাগান, পুকুর, ডাইনিং। রুম ঠিক করে নিলাম দোতালায়, এক ডাবল রুম ৬৫০ টাকা। একরাত। এছাড়াও যারা স্ত্রী অথবা প্রেমিকাসহ যেতে চান তাদের জন্য রয়েছে এসি রুম। তবে বৃহস্পতিবার রুম খালি থাকে না, শনিবার রাতের পর আবার খালি পাওয়া যাবে। আগে পেতে চাইলে আপনাকে ফোন করে বুক করতে হবে।
বাংলোর নাম YWCA ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ। নীচে হলরুম এবং দোতালায় থাকার ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকতে পারবেন YMCA এর বাংলোতে, তবে সেখানে পাশেই পুকুর আর বাংলো একতলা। যৌক্তিক ভাবে চিন্তা করলে সেখানে প্রচুর মশা থাকার কথা, তাই আমরা YWCA থাকার সিধান্ত নিয়েছি।

এছাড়াও আছে স্বর্ণা গেস্ট হাউজ। সেখানের বাথরুম এবং অবস্থান আমার পছন্দ হয়নি, মেইন রাস্তার উপর হোটেল, যদি এত শব্দ শুনতেই হয় তবে আর ঢাকা ছেড়ে বিরিশিরি কেন?

বিরিশিরিতে রিক্সা ড্রাইভাররাই আপনাদের গাইড। তবে এদের সব কাজে বিশ্বাস করবার দরকার নেই এবং অতিরিক্তি নির্ভর করবারও প্রয়োজন দেখি না। এদের সময়ের টাকা সময়ে মিটিয়ে দিতে হবে, এরা বার বার বলবে একবারে টাকা নেব, সেই ফাঁদে যেন পা দেবেন না।

বিরিশিরি যেতে হবে জোড় সংখ্যায়, বেজোড় সংখ্যায় গেলে আপনার ভীষণ বিপদ, কারন ঘুরতে হবে আপনার রিক্সায়, আর রিক্সায় দুজনের বেশি ওঠা সম্ভব নয়। ছোট এবং হাওয়াই রিক্সা সব বিরিশিরিতে। অতএব যাবেন তবে ২, ৪,৬ ,৮……………n ইত্যাদি সংখ্যায়। নয়ত বেজোড় জনের খরচ হুড়মুড় করে বেড়ে যাবে।

রুম ভীষণ পছন্দ হল আমাদের। গোসল যখন সারলাম তখন সবার পেটে নীল তিমি নাড়াচাড়া করছে। বাজারে গেলাম খেতে, রাস্তায় উপরেই মিখাইল দেবনাথের দোকান “ সঞ্জয়” সঞ্জয়ের আবার দুটি শাখা, একটি ভাত খাবার, একটি সকালের নাশতা+ চা খাবার।

দেশী মুরগীর মাংশ দিয়ে আমি গুনে গুনে তিন প্লেট ভাত খেলাম, রান্না আহামরি কিছু নয়, তবে আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিলাম, মিখাইল দেবনাথের গল্পটাও আপনার ছুঁয়ে যাবে, গত ২২ বছর সে ঢাকা শহরে এখানে সেখানে ব্যবসা, চাকরী করেছে, কিছুই জমাতে পারেনি, গত দুই বছর ধরে মিখাইলের স্ত্রী রাস্তার পাশে একটা চৌকি পেতে সেখানে চিতই পিঠা, নারকেলের পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেছে, মিখাইলও তাকে চার হাত পায়ে সমর্থন জুগিয়ে গেছে, স্বামী-স্ত্রীর কঠিন পরিশ্রমের ফসল বাজারের উপর এই দুইটি দোকান।

খাবার পরেই শরীর ছেড়ে দিল সাথে যাত্রার ক্লান্তি। ঘণ্টা দেড়েক ঘুমিয়ে নিলাম আমরা।

বিকেলের দিকে বের হলাম, টার্গেট গারো পাহাড়, চায়না মোড়, নলুয়াপাড়া বিজিবি ক্যাম্প এবং জিরো পয়েন্ট। রিক্সা নিয়ে যেতে থাকলাম, রাস্তা বড় খারাপ, মাঝে মাঝেই নেমে যেতে হয়, এর মাঝেই পার হলাম সোমেশ্বরী নদী। সে বড় নিরব নদী, বড় মায়াবতী নদী, হাটুর কাপড় গুটিয়ে নদীর মধ্যে যাওয়া যায় অনেকদূর। বুকে তার অনেক ক্ষত, এখানে সেখানে চর জেগেছে। চরগুলোও খাঁ খাঁ করছে। সেতুর উপরে বসে ছিলাম কিছুক্ষন। এরপর নদী পার হয়ে দূর্গাপুর বাজার, বাজার পার হয়ে চায়না মোড় পৌঁছুতে সময় লাগে আরো ৪৫ মিনিটের মত। এরপর আর রিক্সা যাবে না। এবার পাহাড়ের গা চড়ার পালা। ধানক্ষেতের আইল ভেঙে এগিয়ে চললাম পাহাড়ের দিকে, পাহাড়ে পৌঁছে চড়ার পালা, সাথের বন্ধু নাভেদ খুবই বেকায়দায় পরে গেল, তার ভারসাম্য খুব নাজুক। একটুতেই এদিক অদিক গড়িয়ে পরে। এবং মাটির সকল কোনা ওঠার পথে তার বিশাল পায়ের চাপে ভেঙে যায়, তার পরে উঠছিলাম আমি, আমার পা আটকাবার কোণা খুঁজে পেতে খুব কষ্ট হয়েছিল।

শেষ পর্জন্ত আমরা চলে গেলাম পাহাড় চূড়ায়, অদ্ভুত এক রোমান্স। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বিশাল বিশাল গাছের মাথা সব আমাদের পায়ের নীচে। পাহাড়ের নীচের দিকের ঢালে আনারস গাছের সারি, বুনো পাতা কাটা, ছোট ছোট ঝোপ আর সুড়ঙ্গও আছে, পাহাড় থেকে নামলাম বিপরীত পাশের দিক থেকে, এরপর গারো গ্রাম হয়ে বিরিশিরির শেষ পাহাড়ের দিকে যাত্রা।
এবারের পাহাড় চড়তে ঝামেলা হোল না, গারোরা সেখানে ইতোমধ্যে খাজ কেটে সিড়ি তৈরি করে রেখেছে, সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠে গেলাম, মাথায় যখন চড়লাম তখন একদম গোধূলি, দেখা যাচ্ছে জিরো পয়েন্ট, সেখানে কালো কাঁটাতারের বেড়া, একপাশে তার বাংলাদেশ এক পাশে ভারত, ভারত অংশে উচু চৌকি দেখা গেল বিএসএফ এর। বহু নীচে দেখা যায় নালা, আর পায়ে হেটে চলার রাস্তা।

আমার তখন ঘামে গোসল করে ফেলেছি, পানি পান করে কিছুক্ষন জিরিয়ে নিলাম, অইদিকে আবার সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, ফেরার তাড়া।

চায়না মোড়ে এসে খেলাম নারিকেলের পিঠা আর মালাই চা, অসাধারন স্বাদ। এরপর নলুয়াপাড়া ক্যাম্প পার হলাম, দূর্গাপুর বাজারে এসে হামলা করলাম ঘোষের দোকানে। সেখানে ইয়া বড় বড় সাইজের বালিশ মিষ্টি। কোল বালিশের মতো দেখতে বলে এর নাম বালিশ মিষ্টি। তেল ছাড়া পরোটা আর দুটো বালিশ মিস্টি খেলাম আমি, বাকিরা একটা করে। ৩০০ টাকা কেজি, এক কেজিতে ৭-৮ টা মিষ্টি উঠবে। আপনি চাইলে ওরা সুন্দর করে প্যাকেট করে দেবে, আপনি ঢাকা নিয়ে আসতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, বিরিশিরিতে পোকা খুব জ্বালায়, একটা বাতি পেলেই হয়, সেই বাতির আশে পাশে লাখ লাখ পোকা মজমা বসায়, তাই মিষ্টি কেনার আগে দেখে নেবেন হাড়িতে পোকা পরে আছে কিনা।

ফিরে এসেই সবাই গো ধরল তারা দ্রাক্ষারস পান করবে, গারো পল্লীতে তৈরি এলকোহলের নামই দ্রাক্ষারস। আমি বলেছিলাম আমি যাই আনতে, রিক্সাওলা আমাকে ধানাই পানাই বিজিবি, সাদা পোশাকের পুলিশের ভয় দেখালো,বাকিরাও ভয় পেয়ে গেল, এবং আমাকে যেতে দিল না। বিনিময়ে রিক্সাওলা দ্রাক্ষারসের সাথে পানি মিলিয়ে আনলো, এবং সেই পানি টিউবওয়েলের। সেখানের পানিতে আয়রন থাকে প্রচুর, তাই শেষমেষ দ্রাক্ষারসের রং দাঁড়ালো লালচে সাদা। সেই রঙের দ্রাক্ষারসই পান করে নিলাম।
দ্রাক্ষারসের প্রভাবে সবার মনে কথা বেড়িয়ে এলো। এই যেমন অমির বাবার এখন টাকার অভাব নেই, নাভেদ কতবার ফোন করে রমণীকে, কত মিস করে, জীবন উৎসর্গ করতেও তার বাধবে না ইত্যাদি।

বিপরীতে আমি ছিলাম সতর্ক ও সাবধানী। তবে আমারও শরীর ভীষণ গরম হয়ে গিয়েছিল।

এরপরে আমার মাথা থেকে বের হোল সোমেশ্বরী নদীতে জলকেলী করার প্লান, প্রথমে কেউ গুরুত্বনা দিলেও দ্রাক্ষারসের প্রভাব গাড় হয়ে আসার সাথে সাথে রিক্সাওলাকে ফোন করা হল।

সোমেশ্বরীর হাটু পানিতে চলল উৎসব আর জলকেলী। সে বড় মায়াবতী নদী, তার বুক থেকে তোলা হচ্ছে কয়লা, ধরা হচ্ছে মাছ, খননের নামে শুষে নেয়া হচ্ছে বালি, কয়েকজন যুবক তার বুকে নির্মম ভাবে লাফালাফি করছে তবু সে শান্ত। তিরতির করে বয়ে চলছে সে নদী।

( চলবে)
( নিজস্ব ব্লগে মাত্রই প্রকাশিত)

৯৭০ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “বিরিশিরি ডায়েরি (১)”

  1. রায়হান (১৯৯৮-২০০৪)

    বিরিশিরি যাওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের
    অনেক গল্প শুনেছি কিন্তু যাওয়া হয় নি
    লেখা পরে ইচ্ছা বেড়ে গেলো


    একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বিরিশিরি নামটা আমি প্রথমে জানতে পারি কবি রফিক আজাদের কাছ থেকে। 'বিরিশিরি পর্ব' নামে তাঁর একটা কবিতার বই বোধহয় আছে।
    আ হা, নামটা এমন রোমান্টিক! সেখানে এসব দামাল ছেলেদের রোমান্টিক ভ্রমণ।
    ভালো লাগলো এ পর্বটা।
    বর্ণণায় এক দু'বারএকটু অশ্লীশ শব্দ/ক্রিয়াপদ পড়ে পেট ফেটে হাসি পেলো।

    জবাব দিন
  3. রাশেদ (৯৯-০৫)

    লোক প্রশাসনের বালিকারা খ্রাপ, তারা যুগে যুগে দিকে দিকে অনেক ঝড় তুলেছে। অনেকেই সেই ঝড়ে ডুবে মরছে আর কেউ কেউ তীরে তরী ভিড়াতে পারছে 🙂

    লেখা উমদা হইছে, পরেরটা তাড়াতাড়ি দাও (সম্পাদিত)


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লিখেছো হামীম, অনেক দিনের পরিকল্পনা থাকলেও এখনো যাওয়া হয়নি, এবার আর হচ্ছে না, পরের ছুটিতে অবশ্যই যেতে হবে।

    পরের পর্বের অপেক্ষায়...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    কারো কাছে লেখা খারাপ লাগতেই পারে। এই আমার যেমন গল্প পড়ায় বেশ অনীহা রয়েছে। উপন্যাস পড়ায় রয়েছে। এমনকি আনিসুল হকেরও না। হুমায়ুন আজাদ আর আবুল বাশার দুজনা মিলে আমার রুচির (!) বারোটা বাজিয়েছেন।
    তবে দিনলিপি, প্রবন্ধ, আলোচনা পড়তে ভালো লাগে।
    কারো লেখা খারাপ লাগলে ১ তারা দাগায়ে আসি, কিনবা ২ তারা। এবং বলেই আসি কেনো পছন্দ হয় নাই। অন্তত ফন্দি ফিকির করিনা।
    যা বলতে চাচ্ছিলাম কারো কাছে এতো সুন্দর (!), ঝাকিবহুল, কলকাতার সিনেমা সহযোগে ভ্রমণ খারাপ লাগতেই পারে। বিশেষ করে এই লেখক আবার অসলীল লেখক। এই ব্লগটি সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও তারা তোরা কিন্তু ক্যাডেটরাই দিতে পারে। সো কারো খারাপ লাগলে আইসা সমালোচনা করেন। টুক কইরা এক তারা দুই তারা দাগাইয়া যাবেন এইটা তো ভদ্রতা হইলো না।
    বুঝছিস রে বদ পুলা কাহিনী ভালো হইছে। অসলীল বর্ণনাও ভালো হইছে। আমি তো তোর উপর খেইপা ছিলাম যে ফেসবুকে ছবি দিয়া বেড়াইতেছো মিষ্টির আর মিষ্টি মেয়েদের সাথে ভ্রমণের অথচ লিখা নাই! (সম্পাদিত)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হামীম (২০০২-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।