তোমার নেমন্তন রইল প্রিয়তমা

প্রিয়তমা
চিঠি লিখতে বসে বুঝতে পারছি আমার বাংলা শব্দের ভাণ্ডার কত নিকৃষ্ট মানের। আঙ্গুলের মাথায় শুধু শরীরী শব্দের গড়াগড়ি। জীবন লেখার আগেই যোনি চলে আসে,বিরহ লেখার আগেই আসে বীর্য।
কেমন আছো তুমি? গত কয়েক সপ্তাহে তোমায় বড্ড মিস করেছি। মিস শব্দটির বাংলা আমি জানি না,মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম মা বলেছিল অনুপুস্থিতিতে অনুভব করা। এত কঠিন শব্দ আমার আঙ্গুলে আসে না,যখন লিখছি তখন গিলছি আলু সেদ্ধ,গোল মরিচ,আর রসুনে সেদ্ধ মুরগীর টুকরো করা বুক। তবু কেন যেন আধা পেটা লাগে,চুলো ধরিয়ে এসেছি,দুটো ডিম খেলেই না,ভাবছিলাম খয়েরি ব্রেডগুলোও সেঁকে নেব কিনা পরে এর বিরুদ্ধে আলসেমিই জয়ী হোল। ইদানীং রাক্ষসের মতো খাই,চা খাই কয়েক দফা চিনি ঢেলে,দুই লিটারের একটা টমেটো জুস নিঃশেষ হয়ে যায় হিমুর বইয়ের মতো।

প্রিয়তমা এক বন্ধুর বিদায়ে সেদিন একটা আস্ত মুরগী গ্রিল করেছিলাম,অথিতি হাত বসানোর আগেই মুরগী আধা আমার পেটে। শেষে ইচ্ছা করেছিল এলুমুনিয়ামের ফয়েলটাও চেটে খাই,ইজ্জতের ভয়ে চাটিনি। কিন্তু জিহবা সন্তুষ্ট হয় না প্রিয়তমা,সায়েন্স ল্যাব এর মার্কেটে পিছন থেকে ঢোকার একটা জায়গা আছে,সেখানে রাস্তার পাশে দোকানে দোকানে বিক্রি হয় কাবাব,চিকেন সুপ আর রকমারী আইটেম,কিন্তু আমার পছন্দের হোল গরুর ভুঁড়ি ভাজি,ভুঁড়ি ভাজি কখন স্বাদ হয় জানো প্রিয়তমা? পুরানো হয়ে গেলে,অনেক বার ভাজার পর। সাথে পেয়াজ কুঁচির স্তূপ। আমার ইচ্ছা করে তোমাকে পাশে বসিয়ে হলুদ,নীল রঙের মেলামাইনের বাটিতে করে একগাদা ভুঁড়ি ভাজি খেতে,তুমি না হয় ভদ্রলোকের চিকেন সুপই খেলে।

প্রিয়তমা,তবু ভালো লাগে না,তবু তৃপ্তি হয় না। বেগুন ভাজি আর গরুর মাংস দিয়ে একগাদা শাদা ভাত খেতে ইচ্ছা করে। গরুর মাংশ আবার তাড়াতাড়ি জমে যায়,একটা ফ্রাইয়িং প্যানে একটু কড়া গরম করে পরিবেশন করলে স্বাদ বাড়ে আরো কয়েকগুন।
তোমার কখনও সুযোগ হলে নেমন্তন খেতে এসো প্রিয়তমা,আমি তোমায় রকমারি সালাদ বানিয়ে খাওয়াবো,শিখে নেব একটু ঝাজের বোরহানী কিভাবে বানানো যায়।

জানো,আগে এটা সেটা ছিটিয়ে ফেলতাম,এটা খাবো না,সেটা খাবো না,এখন আর বাছি না,সামনে এক প্লেট শাদা ভাত এখন স্বর্গের শান্তি।
একটা বিয়ের দাওয়াত খেতে ইচ্ছা করে প্রিয়তমা,মানুষ বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ছবি তোলে,এর সাথে ওর সাথে পরিচিত হয়। আমি তাদের বোকার দলেই ফেলি। আরো খেতে ইচ্ছা ভর্তা,বেশি করে সেদ্ধ টমেটো ভর্তা,আর মৌসিম ভর্তা,ডাল ভর্তা আর কাচামরিচের পেস্ট।

প্রিয়তমা কখনও কাঁকড়া খেয়ছ? মাছ বাজার থেকে দাঁড় বাধা জীবন্ত কাঁকড়া কিনে এনে এক বন্ধুর বড় বোনের কাছে দিতাম,উনি লাল মরিচের গুঁড়ো দিয়ে রেধে দিতেন,স্বর্গীয় সেই স্বাদ এক বছরেও মুখ থেকে সরে না। তুমি খেতে চাইলে আমি জোগাড় করে দেব সেই কাঁকড়া রান্না।
প্রিয়তমা তুমি হয়ত অনেক আধুনিক,মুর্গির রান ভাজা,বার্গার,শর্মা ইত্যাদি ইত্যাদি………
আমায় কেন যেন এগুলো টানে না প্রিয়তমা,জানো বড় মেজবানের রান্না যখন হয়,তখন বাবুর্চিরা কলিজা ভুনা করে নিজেরা খাবার জন্য। বড় পাতিলে রান্না করে ঢেকে রাখে,ঢাকনার উপরে একগাদা কয়লা দিয়ে রাখে যাতে গরম থাকে পাতিল। প্রিয়তমা আমি কোথাও দাওয়াত খেতে গেলেই আমার কেন যেন বাবুর্চির সাথে খাতির হয়ে যায়,তুমি চাইলে আমি তোমার জন্যও এনে দিতে পারবো সেই কালা ভুনা। খেয়ে বলবে প্রিয়তমা,দেখবে এরপর তুমিও টেবিল ছেড়ে বাবুর্চি ঘরের দিকে ছুটবে।

যাই হোক অনেক বড় হয়ে গেল চিঠি,তুমি কেমন আছো জানিয়ো,উত্তর দিয়ো চিঠিতে। জানো প্রিয়তমা মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে গেলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে এইসব খাবার।
তোমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
তোমার চোখের বালি
তাওসীফ হামীম
পুনশ্চ- মৌচাকে এক ভাতের হোটেলের সন্ধান পেয়েছি,১৯ পদের ভর্তা,ভাজি,ডাল দিয়ে ভাত খাবার সুযোগ থাকছে সেখানে। তোমার নেমন্তন রইল প্রিয়তমা।

৬৫৪ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “তোমার নেমন্তন রইল প্রিয়তমা”

  1. সামীউর (৯৭-০৩)

    লেখককে যে "রোজায় ধরসে" সেটা পরিষ্কার, তাই চোখে ঝাপসা দেখায় বেশ কিছু বানান অশুদ্ধ রয়ে গেছে। পারলে ঠিক করে দাও হামীম। মৌচাকের হোটেলটা আমার বাসার কাছেই, সাদ বা স্বাদ গোছের নাম। বেশ ভালো, তবে প্রিয়তমা কে বলো দুপুরের দাওয়াতে একটু আগে আসতে। ওদের ভর্তা-ভাজি গুলো বেশ দ্রুত ফুরিয়ে যায়।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আহারে, কতদিন কাঁকড়া খাই না 🙁 (বাকি সব আইটেমই কম বেশি খাচ্ছি বলে কাঁকড়াটাই চোখে পড়ল 😛 )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।