ক্যাডেট কলেজ ট্রাজিডিজ

ক্যাডেট কলেজ ট্রাজিডিজ(১)
আমাদের ইসলাম ধর্মের শিক্ষক ছিলেন আব্দুর রব স্যার( স্যার এর নাতি স্যার এর ছোট ছেলের থেকে বড়),খুবই দয়াশীল শিক্ষক। যত পাতা উত্তর,ঠিক তত নাম্বার। তবে ধর্ম ক্লাস ছিল খুবই বিরক্তিকর। তাই আমরা সেই সব বিরক্তিকর ক্লাসে টয়লেটে গিয়ে তাশ খেলতাম। আমি আর ইফতি Master Shifu ,আর অইদিকে মামুন Mamun Xbcc আর নাজমুল Lumzan Hasan
তেমনি এক আনন্দঘন ক্লাসে সমানে হরতন,রুইতন,ইশকাপন পিটাচ্ছি,আর মুস্তাকিম Mustakim Zanzibar মাসুদ রানা পড়ছে। ঝড়ের মতো টয়লেটে প্রবেশ করলেন রব স্যার।
সবাইকে ক্লাসের বাইরে নিয়ে হ্যান্ডস ডাউন করিয়ে রাখলেন,স্টিলের স্কেলের বাড়ি পড়ল নিতম্বে,আর সাথে সাথে বলতে থাকলেন-
” আমি টয়লেটে পেচ্ছাবের গন্ধে যেতে পারি না,আর তোমরা সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকো,একজন বই পড়ে,অন্যরা দেয়ালে পেচ্ছাব করো,পেচ্ছাব দিয়ে কাটাকাটি খেলার প্রতিযোগিতা করো,পেচ্ছাব দিয়ে শুকনো দেয়ালে নিজের নাম লেখার চেষ্টা করো……………”

ক্যাডেট কলেজ ট্রাজিডিজ(২)
আমি তখন নবম শ্রেণীতে,তখন মাত্রই এসএসসি পরীক্ষার লম্বা ছুটি কাটিয়ে কলেজে ফিরেছেন রাব্বি ভাই Zappy Sunny – বাপ্পি ভাই Shahriar Bappy- মুকুল ভাইদের ব্যাচ।
এই লম্বা ছুটিতে সাধারণত সবাই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে,বড় চুল রাখে,গীটার শেখে,এবং বড়দের উপন্যাসখ্যাত মোটা উপন্যাসগুলো পড়ে (লোটা কম্বল,গর্ভধারিণী ইত্যাদি)
আমি তখন ৩ নাম্বার টেবিলে বসি,একাদশ শ্রেণীর আরও তিন জন পড়ল আমার সাথে,নাদির ভাই,হাসান ভাই আর জিহাদ ভাই।
নাদির ভাই খুব স্মার্ট লোক,অনেক পড়াশুনা জানা,গীটার বাজানো বড়ভাই। গলা উচু করে সবাইকে গল্প বলতে লাগলেন ডিনার টাইমে।
সবাইকে বললেন, গর্ভধারিণী,কালপুরুষ,আট কুঠুরি নয় দরজা আর যুগ যুগ জীয়ে এই তিনটি বই সমরেশ মজুমদারের লেখা সেরা বই,এবং এই বইগুলো পড়তে হলে অনেক ধৈর্য এবং বাংলার উপর ভালো দখল থাকা প্রয়োজন।
আমি উদাস হয়ে ডালের মধ্যে ডিমের কুসুম পেস্ট করতে করতে বললাম ” যুগ যুগ জীয়ে,সমরেশ বসুর লেখা,সমরেশ মজুমদারের নয়।”
পিন পতন নীরবতা নেমে এল টেবিলে,সবাই খাওয়াতে মন দিল।
আর ডিনারের শেষ অংশে নাদির ভাই বললেন ” হামীম ডিনারের পর আমার রুমের সামনে দেখা করবা”

ক্যাডেট কলেজ ট্রাজিডিজ ৩-
সহসা সিধান্ত হোল,শুধু কারেন্ট এফেইয়ার্স শো হলে চলবে না,এক বছর কারেন্ট এফেয়ার্স শোঁ এবং পরের বছর নাটক প্রতিযোগিতা। এবং এভাবেই চলতে থাকবে।
আমাদের হাউজের জন্য ঠিক করা হোল মামুনুর রশিদের একটা নাটক। আমাকে একদিন ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হোল,চোখ ডলতে ডলতে তৎকালীন কলেজ অধিনায়ক মাসুদ ভাই Masud Rahman এর সামনে গিয়ে দাড়াতেই মাসুদ ভাই বললেন ” নাটকে অভিনয় করতে হবে”
এর আগের বছর কারেন্ট এফেইয়ার্স শোঁ তে করেছিলাম ক্যানভাসার এর একটা রোল ( সিভিল ক্যাট)। শ্রদ্ধেয় মোয়াজ্জেম স্যার Moazzem Hossain Tareq বললেন ” হামিম এবারে তুমি মলমওলা”
একটু গাইগুই করার চেষ্টা করলাম,মাসুদ ভাই এর ভয়ঙ্কর চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছুই বললাম না।
শুরু হোল রিহার্সেল। বড় ভাইদের তৃতীয় শ্রেণীর অভিনয় দেখে আমার খালি ঘুমে ধরে, সব ডায়লগ তারা মুখস্থ বলে,তাই হয় সেটা নিকৃষ্ট অভিনয়। আমার মলম বেচা পার্টটুকু আমি খুব খুব মজা করে করি ( আগা মোটা গোঁড়া চিকন টাইপ ডায়লগ দেবার ইচ্ছা থাকলেও স্যারদের কারনে দিতে পারি না,তাই শুধু চুলকানির ডায়লগ দেই)
প্রত্যাশা মতই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হোল আমার দল। তবে লাল হাউজ জঘন্য অভিনয় না করলে ৩ নাম্বার পজিশন আমাদেরই জুটতো।
সবার মন খারাপ,তাই আমিও মুখ ভার করে বসে থাকলাম। রাতে হাউজ অফিসে গেলাম কি একটা কাজে,গিয়ে দেখি এক স্যার বসা। আমি একটু চালাকি করে জিজ্ঞাসা করলাম
“স্যার আমার অভিনয় কেমন হয়েছে?”
তিনি বললেন ” আরে দারুন হয়েছে,জীবনে কিছু করতে না পারলেও তুমি মলম বেচে পার হয়ে যাবে,তুমি কোন চিন্তাই করো না। এমন ন্যাচারাল ক্যানভাসার কখনও দেখিনাই”
এই ধরনের একটা বাক্য শুনে বিষম খেলাম ভীষণভাবে। বড় নেতা হতে আগ্রহী আমি হতাশ হয়ে হাউজ অফিস ছাড়লাম।
আগ্রহীদের জন্য ক্লু-
স্যার উচ্চতর গনিত পড়াতেন। বলতে হবে স্যার এর নাম কি?

৩,২১৭ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট কলেজ ট্রাজিডিজ”

  1. দিবস (২০০২-২০০৮)
    আমি টয়লেটে পেচ্ছাবের গন্ধে যেতে পারি না,আর তোমরা সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকো,একজন বই পড়ে,অন্যরা দেয়ালে পেচ্ছাব করো,পেচ্ছাব দিয়ে কাটাকাটি খেলার প্রতিযোগিতা করো,পেচ্ছাব দিয়ে শুকনো দেয়ালে নিজের নাম লেখার চেষ্টা করো……………

    :)) :)) :))
    ক্যাডেটদের কাছে টয়লেট জিনিসটা পুরাই অন্যরকম এইটা তো আর স্যাররা বা অন্য কেউ বুঝবে না। 🙁


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    প্রথম দুটো ফেসবুকে আগে পড়েছিলাম। ৩য়টা পড়েও মজা পেলাম। আমরা কলেজে থাকতে দুবার নাটক কম্পিটিশন পেয়েছিলাম, আর দুবার হয়েছিল কলেজ নাটক তবে এর কারনে সিএডি বাদ যায় নাই। মলমওয়ালা মনে হয় কদম আলীর কাহিনী, প্রতিবার কেউ না কেউ এই নাটকটা করতো।

    ** ফেসবুকে থেকে কপি করায় ট্যাগের ইংরেজী নামগুলো লেখায় রয়ে গিয়েছে। ওগুলো মনে হয় এখানে না থাকলেও হয়।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. নাজমুল (০২-০৮)

    আর সিনিয়রদের জঘন্য অভিনয় এর কথাটা কেমন যেন লাগলো, তোডের হাউজের সবার অভিনয় ভাল ছিল। তাছাড়া ওইটা অনেক বছর পর কলেজে নাটক কম্পিটিশন ছিল। পরের নাটকে তিন হাউজের অভিনয় দেখার মত ছিল কোন হাউজ প্রথম হবে কারা রানার্স আপ হবে সেটা ঠিক করতে সমস্যা হইসিলো 🙂

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    সমরেশ বসু - সমরেশ মজুমদার
    বুদ্ধদেব বসু - বুদ্ধদেব গুহ
    কাজী ইমদাদুল হক - ইমদাদুল হক মিলন
    এরকম আরো কতো..

    একটা জিনিস খেয়াল কইরা ম্যান ইজ মরটাল


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    তাও তো ভালো কাটাকুটি খেলার কথা কৈছে। আমাগো সময় এক স্যার ছিল, বাথরুমে একসাথে পাইলে বা কাধে হাত দিয়া হাটতে দেখলে ডাইকা জিগাইতো,
    কি? তোমাদের মধ্যে অন্যরকম সম্পর্ক আছে নাকি !


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হামীম (২০০২-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।