বিজয় দেখছি,আবারো দেখতে চাই

অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে দিনটি। অনেকগুলো মাইল ফলক,অনেক গুলো ইতিহাস আর সব শেষে একটি দুর্দান্ত বিজয়।
এশিয়া কাপে ছিটকে পড়তে না চাইলে আজকের ম্যাচে বিজয় ছিল অনিবার্য। আজ ম্যাচ হারলেই সব শেষ সহজ সমীকরণ। টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম।
ধারা ভাষ্যকারদের মধ্যে কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করেন। বাংলাদেশের দুর্বল দিক হোল ব্যাটিং আর ভারতের বোলিং। তাই আজ ম্যাচে বাংলাদেশ বল করার সিধান্ত নিয়ে ফেলে আগে। অর্থাৎ ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং এর সামনে কোন রকম টার্গেট দিতে চায়নি বাংলাদেশ দল।

Bangladesh had asked India to bat knowing that chasing has been easier on the Mirpur pitch in this tournament than batting first. Though the strategy had not worked against Pakistan, India did not have an Umar Gul or a Saeed Ajmal to stop a side hungrier than they were for success.

পাকিস্তানের সাথে খুব ক্লোজ ম্যাচের পর জয়ের ক্ষুধা ছিল সবার। কিন্তু বোলিং খুব একটা ভালো শুরু হয়নি। শচিন প্রথম থেকেই খুব সহজ স্বাভাবিক এবং দৃঢ় বোলিং করেছেন। প্রথম ১০ ওভারে সাফল্য বলতে একটি গৌতম গাম্ভির এর উইকেট শফিউলের হাত ধরে।

এর পর ভিরাট কোলি এবং শচিন ম্যাচ টেনে নিয়ে যান বহুদুর। দুজনেই অর্ধশতক করেন।


কোলি আউট হয়ে ফিরলেও শচিন সামনে এগিয়ে যান মসৃণভাবে। শেষ পর্যন্ত শচিন বাংলাদেশকে বেছে নেন তার শততম শতক পূর্ণ করতে। তার প্রাপ্তির মুকুটে আরও একটি পালক যোগ হোল আজ। ক্রিকেট ইতিহাসে আর কেউ শত শতক করতে পারবে না বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে।
শেষ অংশে বাংলাদেশ ব্রেক চেপে ধরে। টপাটপ বেশ কয়েকটা উইকেট ফেলে রানের গতি আটকে দেয়। ভারতের চাকা থামে ২৮৯ রানে।

ব্রেকের সময় দুটি কথা বার বার মনে হয়েছে। এক ভারতীয় বোলাররা ৩০০ এর কম রান হলে প্রতিপক্ষকে আটকে রাখতে পারে না,দুই শচিন শতক করলে ভারত ম্যাচ হারে।
এর পরে বাংলাদেশ উপাখ্যান। ভারতের বিপক্ষে সবসময় ভালো ব্যাট করে বাংলাদেশ। কিন্তু মাত্র ৫ রান করে নাজিমুদ্দিন বিলাসী শট খেলতে গিয়ে ধরা পরেন। এর পর জহুরুল। বিপিএল এ ভালো খেলে দলে ফিরেছেন। ৮ বছর খেলেছেন জাতীয় লীগ। নিজের জাত চেনালেন এই ঝানু ক্রিকেটার। উইকেটের চারদিকে রান নিয়ে নিজের প্রথম ৫০ রান পূর্ণ করেন,তামিম অন্যদিকে ছিলেন হিসাবী ও একটু ধীর গতির,তামিম ও ৫০ রান পূর্ণ করেন। জহিরুল আউট হন চার মারতে গিয়ে।

এর পরের ড্রেসিং রুমের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সহসা নাসিরকে ৪ নাম্বারে পাঠিয়ে একটা জুয়া জিতে নিয়েছেন অধিনায়ক আর কোচ। প্রথম থেকেই মারমুখি নাসির। সমানে ৪ মেরেছেন আর ধোনির মুখ কালো করেছেন। একটা ভালো ক্যাচের বলি হন তামিম ইকবাল ততক্ষণে করে ফেলেছেন ৭০ রান।

বাংলাদেশের জন্য তৈরি করেছেন জয়ের ভিত। শুধুই দরকার ছিল একটি নিখুত সমাপ্তির যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হয়ে ওঠেনি।
সাকিব আসার পর ম্যাচের পট পাল্টে যায়,নো বলের মাশুল তুলে নেন একটি ৪ মেরে,তারপর ধমাধম মেরে সেই ওভারে ১৮ রান উঠিয়ে নেন সাকিব।
এর পরের ওভার গুলোতেও আক্রমণ। মার চলতে থাকে দু পাশ থেকেই।
৪৯ রানে স্ট্যাম্পিং এর ফাদে পরেন সাকিব। আউট টা না দিলেও পারতেন টিভি আম্পায়ার। ৫০-৫০ সিধান্তগুলো সাধারণত ব্যাটসম্যান এর পক্ষেই যায়।

এর পরে ম্যাচের সব থেকে আকর্ষণীয় মুহূর্ত। মাঠে আসেন পকেট ডাইনামাইট মুশফিক। মানুষ তখন সবাই প্রার্থনায় বসেছে। কেউ মাঠে কেউ টিভির সামনে,কেউ দেশে কেউ বিদেশে।
প্রত্যেকটি রান দর্শকরা বরন করে নিয়েছেন তুমুল চিৎকারে।
শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ৩৭ রান দরকার। খেলা জমে ওঠে শেষ ৩ ওভারে। টান টান উত্তেজনা। ইরফান পাঠানের বলে পর পর দুই ৬ মারেন মুশফিক। ম্যাচটা মূলত তখনই বের হয়ে আসে বাংলাদেশের হাতে।
১২ বলে ১৬ রান দরকার তখন। বোলার প্রভিন কুমার।

With 16 needed off 12, Praveen began the 49th over with a waist-high no-ball. Sliced over point for four. A length delivery followed. Mushfiqur wound up and dispatched it over long-on. Game over. Mushfiqur roared on the field; Shakib did an encore in the dressing room. Bangladesh had only their third ODI win over their big neighbours.


শেষ ৪ মারেন রিয়াদ। জয়ের উল্লাসে ফেটে পরে সারা গ্যালারী। সে এক অভিনব দৃশ্য। পৃথিবীর অন্য কোন দেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি এত ক্রেজ নেই।
দর্শক তখন উম্মাদ। আনন্দে ভাসছে সারা বাংলাদেশ। সারা দেশে ছড়িয়ে পরে টুকরো টুকরো মিছিল। টিএসসি চত্বরে হয় বিশাল উদযাপন।
ক্রিকেট সারা বাংলাদেশকে এক সুতোয় গেথে ফেলেছে। সেখানে কোন বিভেদ নেই,রাজনীতি নেই রয়েছে দেশের জন্য জয়ের কামনা আর দলের প্রতি তীব্র ভালোবাসা।


পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ম্যান অফ দি ম্যাচ হন সাকিব আল হাসান,আর সলিড প্লেয়ার অফ দি ম্যাচ মুশফিকুর রহিম। সেই সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষে থেকে কালজয়ী ক্রিকেটার শচিনকে দেয়া হোক ক্রেস্ট। সেখানে ছিল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বাক্য।

এই ভালোবাসা জীয়ে থাকুক হাজার বছর ধরে। ক্রিকেট থাকুক আমাদের হৃদয়ে। ক্রিকেটের মতো আমরা যেন জয় করতে পারি আমাদের অন্য সব উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট টীমকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। বিজয় দেখছি আরও দেখতে চাই। এশিয়া কাপ ঘরে তুলতে চাই।

৩,০১৭ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “বিজয় দেখছি,আবারো দেখতে চাই”

মওন্তব্য করুন : হামীম (২০০২-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।