পিঙ্গলকেশী

অনেক দিন থেকেই দেখা হবে হবে করে হয়নি,আজ হয়ে গেল। দেশ থেকে ফেরার পর এই প্রথম। ওর নাম নিনা।ওর বাবা জর্জিয়ান,মা রাশিয়ান। আমার সাথে দেখা হয়েছিল প্রথম ভার্সিটিতে। ও ডেন্টিস্ট এর ছাত্রী।আমাদের ক্লাস আলাদা আলাদা হয়,তার মধ্যে ও আমার থেকেও ২ কোর্স সিনিয়র।

যাই হোক দেখা হওয়া টা কাকতালীয়। আসলে খুবই কাকতালীয়।আমাদের ফিলসপি(দর্শন) ক্লাস ছিল। এই সব ক্লাস সাধারনত ঘুমাবার জন্য,কিম্বা গল্প করার জন্য। যাই হোক কোন এক কারন বশত আমাদের টিচার অনুপুস্থিত ছিলেন। নিনোদের টিচার আমাদের তার ক্লাসে ঢুকতে বললেন। আমি ঢুকেই অবাক।
পিঙ্গলকেশীকে আমার মনে ধরল এক দেখাতেই। দৌড়ে গিয়ে ওর পিছনের সীটে বসে পড়লাম।ওর পাশে বসল আমার গ্রুপ মেট ইজরাইলের এক মেয়ে। আমি তার সাথে বার বার কথা বলে নিনোর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করতে লাগলাম। বিধি বাম। কিছুক্ষন পর সে কানে হেডফোন লাগিয়ে বসে রইল। যাই হোক অনেক সাহস করে ক্লাস শেষে পরিচয় হবার চেষ্টা করলাম। দরজার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। ভাগ্যদেবী ফিরেও তাকালেন না।আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু এক হাসি দিয়ে সে চলে গেল।

ওর চেহারাটা মনের মধ্যে গেথে রইল।হয়তবা ফিকেও হয়ে গিয়েছিল এক সময়। তখন বসন্ত। গাছের পাতা ধরেছে,সবুজ রঙের আপেল গুলো পুষ্ট হয়ে উঠেছে।
জুন মাসের শেষ দিকে আমি এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মেরে ফিরছি।মেট্রো রেল এ উঠবো,কি জ্বালা দেখি,নিণো বের হচ্ছে। কালচারের পরোয়া না করে,এক লাফে এক্সিট লাইন এ চলে আসলাম, ভিড় ঠেলে ঠিক ওর পেছনে।কি সেই সুন্দর গন্ধ ওর চুলের, স্বর্ণের মত রঙ।

এইবার হল, ও আমাকে চিনতে পারল। আমার মনে তখন বাধ ভাঙা জোয়ার,প্রেমের নয় প্রাপ্তির।এবার পরিচিত হলাম। দুঃখজনক হলেও সত্য,বাংলাদেশ নামক দেশটাকে সে চিনতে পারল না।আমি হাতের তালুতে ম্যাপ একে তাকে দেশ চিনাবার চেষ্টা চালাতে লাগলাম।ও বুঝতে পারল ভারত আর বার্মার মধ্যে লম্বাটে ছোট একটা গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হল বাংলাদেশ।

ও আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমি কোথায় যাবো? আমার হোস্টেল সম্পূর্ণ ওর বিপরীত দিকে। ও কিছুটা অবাক হল। আমি পরিষ্কার বলে দিলাম আমি তোমার সাথে কথা বলার জন্য লাইন বদলেছি।মুখে তার কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। এর পর সে আমাকে বলল ইচ্ছা করলে আমি তার সাথে কিছুক্ষন হাঁটতে পারি।

নাচুনে বুড়ি তার উপরে ঢোলের বাড়ি। আমরা বড় একটা সুপার মার্কেটে ঢুকলাম। দুজনে দুটো আইস ক্রিম কিনলাম, বেড়িয়ে আসলাম, বাস স্টপেজ এর বেঞ্চে বসে গল্প করতে থাকলাম। অনেক কথা অনেক হাসি………………………………

দেশে চলে আসলাম, যোগাযোগ কমতে থাকল। আমাকে প্রথম ১০ দিনে সে মোট ২১ টা মেইল দিল, আমি অপদার্থ জবাব দিলাম না একটার ও। পরে একদিন ফোনে মেসেজ দিলাম,ও উত্তর দিল, টুক টাক কথা চলতে রইল। ঈদ এর সময় আবার বন্ধ হয়ে গেল।

যাই হোক আজ দিনের কথা বলি,
আমি মেট্রো রেল থেকে উপরে উঠতেই দেখি ও দাড়িয়ে আছে। চোখে চশমা পড়েছে।নতুন নিয়েছে মনে হয়, লাল একটা জ্যাকেট, সাদা কেডস আর কালো জিনস। আর অনেক অপরুপা হয়েছে, চুল কেটেছে রঙ বদলায়নি এক ফোটাও। আমি ওকে দেখে হাত নাড়লাম ,ভাবান্তর দেখা গেল না। এর পর আমাদের মাঝের কথা গুলো তুলে দিচ্ছি। হয়েছিল রাশিয়ান ভাশায়,দিচ্ছি বাংলাতে
-২১ টা মেইল দিয়েছিলাম
-তাই নাকি
-জি
-খুব ভাল
-আমাকে লেখ নি কেন?
-সময় পাইনি
-কি করেছ? মেয়েবাজি?
-করতে পারলে ভালই হত
-তার মানে কম করনি
-আমি ফেমিলির সাথেই ছিলাম বেশির ভাগ সময়
-এ জন্য আমাকে লেখা যায় নি?
-বাদ দেয়া যায় এই টপিক?
-অবশ্যই না
-কেন
-কারন তুমি আমাকে অপমান করেছো
-তোমার চুল গুলো আগের থেকে সুন্দর হয়েছে ( কথা বদলাবার উদ্দেশে)
-দেশে গিয়ে চালাক হয়ে এসেছ?
-না তেমন কিছু না
-জবাব দাও
-আরে তোমার নেইল পলিশ গুলো তহ দারুন,একদম গোলাপি রঙের
আমি ওর হাত আমার হাতে তুলে নিলাম,গা শির শির করে উঠল, ওর গন্ধ পেলাম নাকি।কপাল আমার, সামনে এগিয়ে এসেছে এক পা ও। আমি ওর চুলে হাত বুলাতে লাগলাম, বললাম, ওর গা থেকে মিষ্টি গন্ধ আসছে। ও ধন্যবাদ জানাল।
এর পর জানি না কি হল, আমি ওকে কাছে টানলাম। ও বাধা তো দিলই না আমার কলার ধরে আমাকে কাছে টানল।দুই জোড়া ঠোট একদম কাছাকাছি।আমি ওর মুখ থেকে লেবুর গন্ধ পেলাম,নিণো লেবুর গাম চাবাতে খুব পছন্দ করে।
– আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি
-আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি ( মিথ্যা কথাই বললাম)
-লেখ নি কেন?
-সময় পাই নি
ওর ঠোট গুলো উপরে উঠতে থাকল, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম।
ওকে থামিয়ে দিলাম,হাতের বাধন আলগা করলাম। ও বন্ধ চোখ খুলে আমার দিকে তাকাল
– আমি এখনি চাই না।আমাকে আর একটু সময় দাও
-আমি সরি ( প্রচণ্ড লজ্জা পেল ও)
-ভুল বুঝবে না,আবার আমাকে কাপুরুষ ও ভাববে না, ওকে?
হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরল ও,অনেক সময় লাগলো ওর হাসি থামাতে।অনেক ক্ষন ছিলাম ওর সাথে। শেষ দিকে নিজেরই খুব চুমু খেতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু যে কফিনে পেরেক নিজেই মারলাম,তা কেমনে খুলি?

-কল্পনা ও বাস্তব থেকেই লেখা।

৫,৬৩৫ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “পিঙ্গলকেশী”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    এ হামীম তুই সুস্থ্য আছোস তো??? তুই এমন সুজোগ পেয়েও তা নিলি না তাতো বিশ্বাসযোগ্য না.................. :grr: :grr: :grr:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)
    আমি এখনি চাই না।আমাকে আর একটু সময় দাও

    এইটুকু কাল্পনিক , আমি শিওর । :grr:
    লেখা বালু ওইছে ।


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  3. লেখনীটা ভাল ।কিন্তু বানান ভুল করেন কেন?
    অনুভবের জায়গাটা গভীর কিন্তু জায়গায় জায়গায় মনে হয়,কলম ফেলে ট্রেন ধরার জন্য দৌড়াচ্ছিলেন...
    লিখতে থাকুন,শুভকামনা...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হামীম (২০০২-২০০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।