চাপাবাজি

(ক্যাডেট কলেজ ব্লগে এটা আমার প্রথম পোস্ট, এই পোস্টটা আসলে আমার পুরনো একটা ব্লগের কপি-পেস্ট।)

আজকের ব্লগের বিষয়ঃ চাপাবাজি। চাপাবাজি জিনিসটাকে অনেকেই খারাপ চোখে দেখে, আমার মনে হয় চাপাবাজি জিনিসটা এতটা খারাপ না। চাপাবাজি অবশ্যই অনেক বড় একটা আর্ট, আবীরের কথাই ধরি। আমাদের ক্লাসের ভাল চাপাবাজদের মধ্যে আবীর একজন। তার সব চাপাবাজি হচ্ছে হাই ক্লাস রিলেটেড। গুলশানের প্রতিটা ক্লাবে থার্টি ফাস্ট নাইটে কি হয় না হয় আবীর তার নাড়িনক্ষত্র জানে। কারন এই সব কর্মকান্ড করে তার বাচ্চা কালের বন্ধু আর বান্ধবীরা কলেজের সীমাবদ্ধ গন্ডীর মধ্যে থাকায় আবীরের এই সব চাপাবাজি আমরা বেশ সহজেই বিশ্বাস করতাম। অবশ্য আবীর যে মাঝে মধ্যে ধরা খেত না তা নয়, একদিনের কথা বলি।

আমরা তখন ক্লাস টেন এ। কোন একটা অফ পিরিয়ডে লনটেনিস নিয়ে কথা হচ্ছে। খুব সম্ভবত মার্টিনা হিংগিস এর ফিগার নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ক্যাডেট কলেজের ছেলেদের এই সব ব্যাপারে উৎসাহ অসম্ভব। যথারীতি আবীর তার চাপাবাজি নিয়ে উপস্থিত।

: আরে মানুষ যে কেন পিট সাম্প্রাস পিট সাম্প্রাস করে বুঝিনা! আন্দ্রে আগাসির খেলা দেখসিস? এক্সিলেন্ট একটা প্লেয়ার। তার ফোর হ্যান্ড শট গুলা দেখছিস। মাইন্ড ব্লোইং । জাস্ট unimaginable. ১৬০ কিলোমিটার বেগে এক একটা গোলা আসে। পিট সাম্প্রাস এর সাথে একবার সেমি ফাইনালে দেখা হইছিল, ১৯৯২ এর ফ্রেঞ্চ ওপেনে। গু হারা হারছে।
: তাই নাকি?
: আরে নইলে আর কি বলতেছি, অবশ্য পিট সাম্প্রাস, টমি মাগুয়ে, স্টিফেন আরলং এদের খেলা ও ভাল ছিল।

হঠাৎ পাশ থেকে মিনহাজ জিজ্ঞেস করলঃ আবীর, অস্ট্রেলিয়ার প্লেয়ার জহানমির খেলা দেখছিস? দারুন খেলে না!
: ওফ ভাল কথা মনে করছিস, অসাধারন একটা প্লেয়ার। কি যে খেলত।
মিনহাজ হঠাৎ করে হা হা করে হাসতে লাগল।
: আবীর, শালা চাপাবাজ, মিনহাজ কে উল্টাইলে জহানমি হয়, আর তুই ওর খেলা দেখছিস, না?

আমরা আবীরের এহেন caught এ হো হো করে হেসে উঠি। আবীর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়, but only for few seconds. তারপরই বলে উঠে,
: মিনহাজ, তুই বিশ্বাস করবি না, কিন্তু আসলেই অস্ট্রেলিয়াতে জহানমি নামের একজন লন টেনিস প্লেয়ার আছে, তুই বিশ্বাস না করলে আগামি সপ্তাহে আমি sports week এ তোকে ওই লোকের নাম দেখাব, দেখিস…

এই তো গেল কলেজের এক বন্ধুর কথা। আমাদের এলাকার এক কাকা ছিল। সেলিম কাক্কু। বিরাট চাপাবাজ। তার চাপাবাজির নমুনা শুনুন।

সেলিম কাকার সব চাপাবাজি ছিল আব্বুর সাথে। বারান্দাতে চায়ের কাপ হাতে শুরু হতো তার গল্প।
: স্যার, সউদি থেকে যখন চলে আসি তখনকার ঘটনা। অন্যান্য জিনিসের সাথে আমার একটা শখের হারমনিয়াম আসে, বেশ বড় হারমনিয়াম… ওই যে টিভিতে শিল্পীরা গান গায় যে ওই গুলা। তো এয়ারপোর্টে কাস্টমস এর অফিসার আটকাল। বলল, “স্যার এই হারমনিয়াম এর ট্যাক্স এর কাগজ কই?”
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বললাম, “ট্যাক্স এর কাগজ মানে! আপনি কি বাসায় টিভি দেখেন না নাকি, আমার গান কি আপনি টিভিতে শুনেন নাই? আশ্চর্য্য, কি বলছেন আপনি এসব?”
ভদ্রলোক কিছুটা হতচকিয়ে গেল।
: না স্যার, ওই খুব busy থাকি তো, টিভি খুব একটা দেখা হয় না…
: ওহ তাই বলেন, শিল্পীদের আবার কখনো ইন্সট্রুমেন্টের জন্য কাগজ দেখাতে হয় নাকি…

সেবার নাকি তাকে আর কোন কাগজ দেখাতে হয়নি। চাপাবাজির কথা যখন আসল তখন আরো কয়েকজনের কথা বলা উচিত… আচ্ছা থাক, আজকে এ পর্যন্তই, বাকিটা অন্য কোন একদিন বলব।

৩,৫৩৩ বার দেখা হয়েছে

৫৪ টি মন্তব্য : “চাপাবাজি”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ভাইয়া কেমন আছেন? কলেজের সিনিয়রদের লেখা দেখলে ভাল লাগে। সিলেট খুব শীঘ্রই ১ম হবে । ( সাম্প্রদায়িক কথার জন্য আমার ব্যঞ্ছাই)। নিয়মিত লেখেন ভাইয়া। পরিচিত মানুষের অপরিচিত রূপ দেখতে পাইলে মজা লাগে।

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    পুরান লেখার কপিপেস্ট দেয়ার জন্য নির্দ্বিধায় তো ব্যান চাই... 😛 😀

    দোস্ত, ব্লগে স্বাগতম... :clap:
    '৯৫-'০১ রক্স... :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।