এলোমেলো-৭: সাদা-কালো

[সিসিবিতে লিখা হয় না অনেকদিন। এমন না যে লিখতে ইচ্ছে করে না- কিন্তু লিখতে বসলেই শব্দেরা কোথায় যেন উড়ে যায়, ভাবনারাও চলে যায় এলোমেলো পায়ে; শূন্য পাতার দিকে তাকিয়ে আমায় বসে থাকতে হয় চুপচাপ!]

আমাদের অফিসের স্থান বদলের কথা হচ্ছিল অনেকদিন ধরেই, নিজেদের একটা বিল্ডিং-এ যাওয়ার ইচ্ছা ম্যানেজমেন্টের। এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার সময়সীমা বেশি বলেই খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছিলাম না। এখন হঠাৎ করেই সেই মুহূর্তটি চলে আসল, পরশু আমরা চলে যাচ্ছি নতুন বিল্ডিংটাতে। তারও আবার অনেক হ্যাপা, একটা ল্যাপটপ ছাড়া আর কিছুই সাথে নেয়া যাবে না (পেপারলেস অর্গানাইজেশনের বুদ্ধি যে কার মাথা থেকে আসল!!)। এতদিন ধরে ব্যবহার করা স্টেশনারী সব জিনিসপত্র সব জমা দিয়ে দিতে হবে, ট্রেনিং-এর সব বই সরিয়ে ফেলতে হবে, যত প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে সব সরিয়ে ফেলতে হবে, মোদ্দা কথা- ডেস্কের সব কিছুই খালি করে ফেলতে হবে। একেবারে শেষ মুহূর্তে কাজ করার কলেজীয় অভ্যাসটা এখনও বিসর্জন দিতে পারিনি, তাই তড়িঘড়ি করে শুরু করলাম ডেস্ক খালি করা। জিনিসপত্র গুছাতে গিয়ে হঠাৎ কলেজের শেষ দিনের কথা মনে পড়ে গেল। কি অদ্ভুত! মনে হয়, এই তো সেদিন কলেজ ছেড়ে চলে এলাম। রুম খালি করতে গিয়ে হৃদয়টাকেও যে খালি করে ফেলেছিলাম- ইচ্ছে করছিল না প্রিয় রুমটাকে, প্রিয় কলেজটাকে ছেড়ে কোথাও যেতে! ঠিক এরকম আরেকটা অনুভূতি হয়েছিল ভার্সিটির হল ছাড়তে গিয়ে। রুমের নিজের জায়গাটার জন্য খুব খারাপ লাগছিল, একদমই ইচ্ছে করছিল না চলে যেতে! বের হয়ে পিছন ফিরে হলটার দিকে একবার তাকিয়েওছিলাম। ইস্‌, আমায় যদি কেউ ডাক দিয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেত সোহরাওয়ার্দী রুমের ২০০৪ নং রুমটাতে, ফিরিয়ে দিত বন্ধুদের সাথের সেই স্বর্ণালী মুহূর্তগুলোকে! আমরা খুব সহজেই শিকড় গেড়ে ফেলি, তাই শিকড় উপড়ানোর কষ্ট পেতে হয় বারবার।

দিন-দিন যেন একটা যন্ত্রের মত হয়ে যাচ্ছি- সকালে এলার্মে ঘুম ভাঙ্গা, তড়িঘড়ি করে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করা, পায়ে হেঁটে বড় রাস্তা পর্যন্ত যাওয়া, সেখান থেকে অফিসের গাড়িতে অফিসে পৌঁছানো, বিষন্ন মনে সারাদিন অফিস করা, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বিশ্রাম, রাতের খাওয়া, ঘুম, আবার পরের দিন সকালে এলার্মে ঘুম ভাঙ্গা…যেন একটা অবিচ্ছেদ্য চক্র, যে চক্র থেকে মুক্তি নেই। তাও ভালো তার মধ্যে বন্ধুদের উপস্থিতি আছে, আছে আত্মীয়-স্বজনেরা, উচ্ছ্বল কিছু সহকর্মী, ব্লগ, মুভি, ফুটবল কিংবা একান্ত মন খারাপ সময়ের গানেরা। মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তাদের আদান-প্রদান আছে, আছে প্রিয় মানুষদের সাথে মনের কথা বলার সৌভাগ্য! আচ্ছা, একটা রাতের জন্য ৭ ঘন্টা ২ মিনিট কি খুব বড় একটা সময়??

কিছু কিছু সময় আসে যখন ক্লান্তি চারদিক থেকে ভর করে, তখন উৎসাহের খুব দরকার হয়ে পড়ে। সে সময় দিগ্‌ভ্রান্ত হয়ে যাই, কি করব বুঝে উঠতে পারি না। ‘দীপ নেভার আগে’ ছবির ‘সাদা-কালো’ গানটা প্রথম শোনার পর মনে হল এই সময়গুলোতে এই গানটা যেন একেবারে পারফেক্ট! তারপর থেকে টানা শুনে গেছি গানটা, বুঝলাম যে আমি মনে হয় বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি। যারা গানটা এখনও শুনেননি,তারা শুনে নিতে পারেন এখান থেকেই।

ভালো থাকুন সবাই, খুব ভালো।

৫,৭০৯ বার দেখা হয়েছে

৭৬ টি মন্তব্য : “এলোমেলো-৭: সাদা-কালো”

  1. সামিয়া (৯৯-০৫)
    আমরা খুব সহজেই শিকড় গেড়ে ফেলি, তাই শিকড় উপড়ানোর কষ্ট পেতে হয় বারবার।

    চমৎকার!!

    আচ্ছা, একটা রাতের জন্য ৭ ঘন্টা ২ মিনিট কি খুব বড় একটা সময়??

    আহেম, দিহানাপ্পু, তানভীর ভাইয়ের টাইম আসছে 😀

    কি চমৎকার একটানে পড়ে গেলাম ভাইয়া...আপনারা বসুন্ধরায় চলে যাবেন? একদিন আমাকে আপনার অফিসে ঘুরায় নিয়ে আসবেন?? আমার ওই বিল্ডিংটা দেখার খুব ইচ্ছা, ফয়েজ স্যারের ডিজাইন করা 🙂

    জবাব দিন
  2. আন্দালিব (৯৬-০২)

    অনেক দিন বাদে আপনার লেখা পড়ে আবার বিষণ্ণ হইলাম, তানভীর ভাই। যদিও লেখাটা অনেক ভালো লাগছে। কারণ অনেক কিছুই মিলে গেলো। যে কথাগুলো লিখে লিখে ক্লান্ত এবং একঘেঁয়ে হয়ে উঠছি, সেগুলো এখন বলতেও অনীহা হয় মাঝে মাঝে...

    ভালো থাকেন, খুব খুব ভালো। 🙂

    জবাব দিন
    • তানভীর (৯৪-০০)

      আন্দালিব,, আমার লেখাগুলো কেমন যেন বিষন্ন টাইপ হয়ে যায়, কি যে করি! 🙁
      অনেক ধন্যবাদ তোমার মন্তব্যের জন্য।
      যে কথাগুলো লিখে লিখে ক্লান্ত এবং একঘেঁয়ে হয়ে উঠেছ- সেই লেখাগুলো কিন্তু সবসময় আমার পড়তে ভালো লাগে। 🙂

      জবাব দিন
  3. রাশেদ (৯৯-০৫)

    এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া আসলেই কষ্টের। ছোটকালে বাবার বদলির চাকরীর কারণে এই জিনিসটা এত দেখেছি যে মাঝে বিরক্তিই লাগত। সম্ভবত ক্যাডেট কলেজ একমাত্র জায়গা যেখানে আমি এক নাগাড়ে ছয় বছর (সব থেকে বেশী সময়) থেকেছি, তাই খারাপটাও বেশী লেগেছিল।


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    শুনলাম তোর জন্যে নাকি আন্টি মেয়ে দেখতেছে? 😉


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  5. তানভীর ভাইয়া,বুঝতে পারলাম তা কেন,এটাই আমার পড়া আপনার প্রথম ব্লগ,আগের গুলো কি করে মিস হল বলতে পারছি না।
    লেখা এক কথাই অসাধারণ।আমি শিকড় গেড়ে ফেলাকে খুব ভয় পাই,কিন্তু তারপর ও জানিনা কি করে আমি মায়াই পড়ে যাই ।যেমন এই সিসিবি।কোথা থেকে এসে যেন এখানে শিকড় গেড়ে বসে গেছি!

    দীপ নেভার আগে সিনেমাটার সব কটা গান এ অসাধারণ,এর মধ্যে তুই নেই তাই গানটাই বেশি ভালো লাগে 🙂

    জবাব দিন
  6. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    সবার একই রোগ হলে কেমনে হবে ? কারোই লিখতে ইচ্ছা করে না.........
    লিখা বালা ওইছে


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  7. রকিব (০১-০৭)

    আপনেও শেকড় গাড়েন 😕 😕 , দুইন্যাটা বিরিক্ষে ভইরা যাইতেছে :grr: ।
    গানটার জন্য কইষ্যা পেলাস; আর চেলিবেরেটি ব্লগারদের লেখা পড়লেই মনটা কেমন ভালো হয়ে যায়।
    এইবার সিরিয়াস কথা কই, আজকাল আর বিষণ্নতায় ছোঁয় না, একটু ভয়েই আছি... এটাই হয়তো বিষণ্নতার অন্য রূপ। ধুর নিজেই বুঝতেছি না কি বলতেছি। ভালো থাকবেন তানভীর ভাই; সিথি আপু থুক্কু ভাবী আর রুমকীকে শুভেচ্ছা দিয়েন।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  8. "আমি মোটামুটি ভালো আছি, সুখে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সবসময়!"...... :salute:

    তানভীর ভাই, ভালো বলেছেন। রুম ২০০৪ এ কেউ ডেকেছিল কিনা জানি না, তবে রুম ২০০২ কিন্তু আপনাদের খুব মিস করত এতটুকু বলতে পারি।

    জবাব দিন
  9. ফয়েজ (৮৭-৯৩)
    তাও ভালো তার মধ্যে বন্ধুদের উপস্থিতি আছে, আছে আত্মীয়-স্বজনেরা, উচ্ছ্বল কিছু সহকর্মী, ব্লগ, মুভি, ফুটবল কিংবা একান্ত মন খারাপ সময়ের গানেরা।

    এক সময় এগুলোও চক্রের অংশ হয়ে যাবে, তখন জমবে খেলা।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  10. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    এই রকম লেখা পড়তে সব সময়ই দারুণ লাগে আরো তো তোর লেখা..... :hatsoff:
    নতুন অফিস বিল্ডিং এর মতো ব্লগও নতুন নতুন লেখায় ভরিয়ে দে..... :thumbup:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  11. টুম্পা (অতিথি)

    রুমকীর আব্বু,
    তোমার তো মাস্তি ই মাস্তি, হুদাই বিষন্নতার ভাব ধরো ক্যান?? আমি শিওর, নতুন বিল্ডিং তোমার জন্য অন্যরকম সুফল বয়ে আনবে ;;)
    এক গান বেশিদিন শুনা ভাল না,বুঝলা??
    রুমকীর আম্মুর জন্য শুভেচ্ছা আর রুমকীরে অনেক আদর 😀

    জবাব দিন
    • তানভীর (৯৪-০০)

      কথা সত্য, আমার তো মাস্তি, এখনও বিয়ে করি নাই যে তাই! 😀 তাই বলে মাঝে মাঝে বিষন্ন হতেও খারাপ লাগে না! 😛
      অভাগা যেদিকে তাকায় সেদিকে সমুদ্র শুকায়ে যায়। আমি শিউর আমরা যেই ফ্লো্রে বসব সেই ফ্লোর মরুভূমি হয়ে যাবে, মৎস্যকন্যা থাকবে না একটাও ..... 😐
      এক গান বেশিদিন শুনতে ভালো লাগলে কি করা, ভাল না যেনেও শুনতে হয় বারবার.. 🙂
      রুমকী আর রুমকীর আম্মুকে যথাক্রমে তোমার আদর আর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেয়া হবে 😀

      জবাব দিন
  12. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    রেগুলার অফিস বদলাইতে বদলাইতে টায়ার্ড হয়ে অফিস বাদ ই দিয়া দিলাম 🙁 কি হবে অফিস কইরা, মরতে একদিন হবেই।
    এফসিসি ছাইড়া আসতে কষ্ট হইছে। মনে আছে, বলাবলি করছিলাম ক্যাডেট কলেজে মাস্টার্স পর্যন্ত চালু করলে কী এমন সমস্যা হয়! 😛

    যাইহোক, সিসিবি'র অন্যতম তারকা ব্লগার হে তানভীর, কেমন আছিস? 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
      • মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

        দেশে থাকতে অনেক প্রেম কাহিনী শোনা হতো। কিন্তু এখন তো আর সেটা হচ্ছে না। প্রেমের গল্পের আইডিয়া পাওয়া যাচ্ছে না দেখে লেখা হচ্ছে না। তুমি বরং কারোটা নিজের বলে চালিয়ে একটা লিখে ফেলো।

        জবাব দিন
        • রকিব (০১-০৭)

          টেনশনের কিছু নাই তানভীর ভাই; আপনার আর সিথি আপুর প্রেম কাহিনীটা তুলে দিলেই পারেন। মাঝে মধ্যে একটু আধটু টুইস্ট, একটু ক্ল্যাইমেক্স; চাইলে কাহিনী জমাতে মাঝখানে ভিলেইন হিসেবে রিবিনভিরেও নিয়ে আসতে পারেন। তবে শেষতক যাতে আপনাকেই রুমকীর আব্বা হিসেবে দেখা যায়...... নাইলে আবার পাবলিক ক্ষেইপা যাইতে পারে। :grr:
          সিরাম একটা প্রেমের গল্প হইবেক। :thumbup:


          আমি তবু বলি:
          এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

          জবাব দিন
  13. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    অনেক নস্টালজিক একটা লেখা তানভীর।
    নিয়মতান্ত্রিক জীবিকার পেছনে ছোটা জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে স্পষ্ট হয়ে।

    মাঝে মাঝে মনে হয় - ধূর -কি লাভ !
    চকিতে ভাবনায় ছেদ পড়ে। নড়ে চড়ে বসি।
    তখন ভ্রম ভাঙ্গে যে - না এখনও গাছ হতে পারিনি।

    ভাল থেকো তুমিও।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।