এ ট্রিপ টু রিমেমবার-১

[উৎসর্গ দিহানকে, অনেক দূরে থেকেও যে আমাদের সবার খুব কাছের মানুষ।]

প্রথমে ভেবেছিলাম ভারতের শিলং-দার্জিলিং যাব, কিন্তু ভিসা নিতে গেলে অনেক জটিলতা, অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তারপরও ভিসার কাগজ জমা দিতে পারার নিশ্চয়তা পাওনা যায় না। তাই সবাই মিলে সিদ্বান্ত নিয়ে ফেললাম- উড়াল পথে নেপাল গিয়েই ঘুরে আসি, কি আছে জীবনে! আমি, আরমান (এমসিসি), জহুরুল (এমসিসি)-টুম্পা, রবিন (সিসিসি) আর ইমরান (সিসিআর)- এই ৬ জন রাজী ঘুরে আসতে। শেষ মুহূর্তে সাজ্জাদ (এমসিসি) এসে আমাদের দলটাকে লাকী সেভেনের দল করে ফেলল। বাংলাদেশ বিমানের টিকেট কেটে ফেলা হল- ১৪ই ডিসেম্বর দুপুরে রওনা দিব এখান থেকে, আর ফিরব ১৯ই ডিসেম্বর বিকেলে। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য নেপাল এয়ারপোর্টেই ভিসা নেয়ার ব্যবস্থা আছে, তারপরও আমরা কোন ঝুঁকি নিলাম না। ওয়ান ফাইন মর্নিং নেপাল এমবাসিতে গিয়ে গুটিকয়েক কাগজ আর পাসপোর্ট জমা দিলাম- সবারগুলা দিতে ১৫ মিনিটের বেশি লাগল না। ঐদিনই বিকেলে ভিসা আনতে সময় লাগল সর্বসাকুল্যে ২ মিনিটের মত- সব দেশের ভিসা যদি এত আরামে পাওয়া যেত!!

কোনরকম ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই প্লেনে উঠে গেলাম, আমাদের বিস্মিত করে প্লেন ছেড়ে দিলও সঠিক সময়ে। আমাদের উড়িয়ে নিয়ে প্লেন চলল মেঘেরও উপরে! জানালা দিয়ে দেখা গেল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা হিমালয়ের পর্বতগুলো, অন্যরকম একটা ভালোলাগা নিয়ে দেখতে থাকলাম তাদের। এক ঘন্টার ছোট ভ্রমণ- ঠিক এক ঘন্টায় অবশ্য শেষ হল না। কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্ট ব্যস্ত থাকায় আমাদেরকে আকাশে চক্কর মারতে হয়েছে চারবার। উপর থেকে পাহাড়গুলোকে এতবার দেখতে হয়েছে যে আমাদের একরকম মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। পঞ্চমবারের সময় প্লেন বাবাজী দয়া করে অবতরণ করলেন, আমরাও প্লেন থেকে বের হয়ে কাঠমুন্ডুর শীতল হাওয়ার পরশ পেলাম।

আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত....

আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত....

প্লেন থেকে দেখতে পাওয়া দূরের পর্বতগুলো

প্লেন থেকে দেখতে পাওয়া দূরের পর্বতগুলো

কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে আমরা কয়েকজন.....

কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে আমরা কয়েকজন.....

আরমানের পরিচিত রিয়াজ মামা থামেলের কাছে একটা হোটেল আগে থেকেই ঠিক করা রেখেছিলেন, সেখানে লাগেজ রেখে বের হলাম থামেলে ঘুরতে। পায়ে হেঁটে ঘোরার মজাই আলাদা। ওখানেই একটা রেস্টুরেন্টে সেরে নিলাম রাতের খাবার। বেশ কয়েকটা নাইট ক্লাবও দেখা গেল, তার কোন একটাতে লেখক ঢুঁ মেরেছিলেন কিনা তা অবশ্য আর জানা যায়নি! ফিরে এসে রিয়াজ মামার দোকানের আরেকজনের সাহায্যে পরদিন সকালে পোখরা যাওয়ার বাসের টিকেটও কাটা হয়ে গেল।

পোখরার বাস আমাদের তুলে নেয়ার কথা সকাল ৭টার দিকে, আর আমরা শীতের মধ্যে ৬-৩০ এর দিকে গিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নেপালী জনগনের অভ্যাস তখনও বুঝে উঠতে পারিনি, নাহলে ৭-৩০ এর দিকে যেতাম বাসের জন্য! অপেক্ষার ফাঁকেই হালকা নাস্তা সেরে নেলাম পাশের ছোট্ট দোকান থেকে। অবশেষে বাস এসে আমাদের উঠিয়ে নিয়ে গেল, মোটামুটি ভালো মানের বাস, সামনে ট্যুরিস্ট লিখা। সিট নাম্বার মিলিয়ে বসতেই দেখি আমাদের সামনের সিটে দুই তরুণী, পরে জানতে পেরেছিলাম কানাডিয়ান। এই দুই কানাডিয়ান তন্বীর সাথে ইমরানের কিছু হয়েছিল কিনা জানি না, কিন্তু ইমরান মজায় আছে- এটা নিয়ে কয়েক সিট পেছনে বসা সাজ্জাদকে বেশ আক্ষেপ করতে দেখা গেল।

বাসের অপেক্ষায় আমরা

বাসের অপেক্ষায় আমরা

বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর বাস হঠাৎ থেমে গেল, সামনে গাড়ির বেশ লম্বা একটা লাইন। নেমে গিয়ে খবর নেয়ার চেষ্টা করলাম কি হল জানতে, কিছু জানতে পারলাম না। কি আছে জীবনে, পাশের একটা দোকানে আমরা হামলে পড়ে সকালের নাস্তা শুরু করে দিলাম। ওখানে চা মোটেও সুস্বাদুকর কিছু না, চিনির বদলে লবণ দেয় কিনা মাঝে মধ্যে সেই সন্দেহও জেগে উঠে। তারপর শুরু হল অপেক্ষার পালা। এর মধ্যে টুম্পা খবর নিয়ে আসল যে সামনে মাওবাদীদের সাথে নাকি কোন ড্রাইভারের গন্ডগোল হয়েছে- এজন্য রাস্তা বন্ধ। আমাদের এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই। পাশের দোকানে বসে আমরা শুরু করলাম আড্ডাবাজি আর সাথে ফটো-সেশন তো আছেই।

গাড়ির লম্বা লাইন

গাড়ির লম্বা লাইন


চলছে ফটো-সেশন

চলছে ফটো-সেশন

প্রায় দুই-আড়াই ঘন্টা পর বাস চলা শুরু করল, আমরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। মাঝপথে দুইটা ব্রেক- তারপর বাস আমাদের নিয়ে চলল পোখরায়। আকাবাঁকা পথ, নিচে বয়ে চলা সবুজাভ পানির স্রোতধারা আর পাহাড়ের সবুজ সৌন্দর্য্য- মন ভালো করে দেয়ার মত দৃশ্যগুলো আমাদের সংগী হয়ে রইল সারাটা পথ জুড়ে। পোখরা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। তারপর হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের পোখরাকে দেখতে।

পোখরা যাওয়ার পথের সৌন্দর্য্য

পোখরা যাওয়ার পথের সৌন্দর্য্য

এক দোকানের মহিলা আমাদের জানালেন যে পরের দিন পোখরায় “বন্ধ”, সবকিছু বন্ধ থাকবে, এমনকি খাওয়ার দোকানও! আমরা ভীষন চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আরেক দোকানে বন্ধ-এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে হলেও হতে পারে। কিছুদূর যাওয়ার পর জানলাম যে, বন্ধ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। বেশ খুশি মনেই পোখরার একটা ম্যাপ কিনে আমাদের ম্যাপ প্রিফেক্ট টুম্পা আর আরমান পরের দিনের প্ল্যান করে ফেলল।

(চলবে…..)

৬,৭৭৩ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “এ ট্রিপ টু রিমেমবার-১”

  1. রকিব (০১-০৭)

    😮 😮 😮 কোথাও কোন প্রবলেম হইছে; লেখকের জায়গায় তানভীর ভাইয়ের নাম দেখায় কেন?? রিফ্রেশ দিয়া আসি 😛 😛
    ঐ কানাডিয়ান তন্বীর ফুন নাম্বার নিছিলেন? ;;) :shy:
    লেখা পাথ্রাইছে, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। :thumbup:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    বেশ কয়েকটা নাইট ক্লাবও দেখা গেল, তার কোন একটাতে লেখক ঢুঁ মেরেছিলেন কিনা তা অবশ্য আর জানা যায়নি
    জাতি এই ব্যাপারে চিত্রসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন লেখকের কাছ থেকে পড়তে চায় :grr:

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    নেপালে কি মানুষ জন নাই?? নেপালী ছেলেদের ছবি না হয় নাই দিলি, তাই বলে তন্বী নেপালীনিরা কি দোষ করলো। ভিন্ন জাতি স্তত্বার ভৌগলিক খোমা দেখে কিছু জ্ঞান লাভ করা থেকে এভাবে সবাইকে বঞ্চিত করার কোন মানেই নেই।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. আন্দালিব (৯৬-০২)

    নেপাল যাওনের জন্যে কি বিয়া করা জরুরি? তাইলে অনেক দেরি হইবো যাইতে! 🙁 🙁

    লেখা ভাল্লাগছে তানভীর ভাই। ছবিগুলাও জোশ। পরের পর্ব তাড়াতাড়ি ছাড়েন! 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।