ফোরলান-সুয়ারেযদের দেশে

১৫ই জুলাই ২০১০

দীর্ঘ এক মাসের ভয়েজ শেষে আমরা পৌঁছলাম মন্টিভিডিও বন্দর -এ। সিঙ্গাপুর থেকে মন্টিভিডিও কয়েক হাজার মাইল পথ। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে ল্যাটিন অ্যামেরিকা। ভ্রমণ ক্লান্তি  আমাদের সকলকে জেঁকে ধরেছিল। যদিও কেপটাউন এ একদিন এর যাত্রা বিরতি ছিল কিন্তু সেটা  শুধু জ্বালানী ও প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহের জন্য।

দক্ষিণ  অ্যামেরিকা মহাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের ছোট্ট দেশ উরুগুয়ে। এই  মহাদেশে তার চেয়ে ছোট  দেশ কেবল সুরিনাম-ই আছে।  অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের কোলে অবস্থিত দেশটির একপাশে আছে বিশাল দেশ ব্রাজিল। দেশটির রাজধানী ও পোর্ট সিটি  মন্টিভিডিও ।সর্বমোট ৩.৩  মিলিয়ন লোকের প্রায় ২ মিলিয়নের বাস মন্টিভিডিও শহরে। আজ থেকে দুশো বছর আগেও এরা স্প্যানিয়ার্ড কলোনি  ছিল। বিভিন্ন সময়ে পর্তুগীজ ও ইংরেজরাও শাসন করেছে এখানে। কিন্তু এখন স্বাধীন দেশ। ওদের স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক JOSE GERVASIO ARTIGUS। মন্টিভিডিওর সর্বত্র ভদ্রলোকের ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়। শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে তার শেষকৃত্য করা হয়েছে যেখানে নয়নাভিরাম একটি  চত্বর তৈরি করা আছে। যার নাম  PLAZA INDEPENDICEA। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় সর্বদা লেগেই আছে এখানে।

আমরা যখন এখানে এসেছি ঠিক তার কয়েকদিন আগে শেষ হল বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১০। কিন্তু বিশ্বকাপের আমেজ  এখানে এখনও রয়ে গিয়েছে। কারণ ফুটবল বিশ্বে তাদের পুনরুত্থান। দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ফুটবল পিপাসা অনেক দিন বাদে ফোরলানরা কিছুটা হলেও পূরণ করেছে। শেষ চারে এর আগে জায়গা করেছিল সেই ১৯৭০ সালে। চল্লিশটা বছর পেরিয়ে গেছে। তাই ফোরলানদের দেশে এত আনন্দের পসরা। তাদের জাতিও টিভি চ্যানেল এ দেখছিলাম তাদেরকে  সংবর্ধনা  দেয়া হচ্ছে। মন্টিভিডিওর রাজপথে ভিক্টরি মিছিল এ দূর থেকে ফোরলানদের এক পলক দেখার সৌভাগ্য ও হয়েছিল আমার। উরুগুইয়ানদের আনন্দ দেখে মনে হল, আসলেই ফোরলান-সুয়ারেযরা যেন আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করেছে বহুদিন পর।

এখানকার লোকজন ১০০% স্প্যানিশ ভাষায় কাঁথা বলে। তাদেরকে কোন কাঁথা ইংরেজিতে  বোঝান দায়। কিন্তু যখন ফোরলান বা সুয়ারেয বা সকার এর কাঁথা বলি তখন খুব খুশি হয়। আমি গত ১০-১২ দিনে প্রচুর ঘুরেছি এখানে।অনেক এর সাথে কথা বলে এদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি । সবচেয়ে ভাল দিক এরা খুবই হেল্পফুল। অন্য দেশের লোকদেরকে ওরা ওদের গেস্ট মনে করে। এবং টোটালি নো চিটিং। দেশে যখন সকাল এখানে তখন আগের দিন রাত ১১টা বা ১২ টা। বাসাতে কথা বলে বা ব্রাউজ করে যখন ফিরি তখন রাত ১টা-২টা বেজে যায় , কিন্তু এখানে কোন ভয় নেই  কেউ তোমার দিকে তাকাবেও না। দেখা হলে সুমিষ্ট কণ্ঠে বলবে, “ROLLA!”। যার অর্থ, “HALLO!”। আর যদি তুমি তার সাথে কথা বল তাহলে তোমাকে ,“AMIGO”। অর্থ,“FRIEND”।

উরুগুইয়ানরা যে তাদের দেশ কে খুব ভালবাসে তার নজির সর্বত্র পাওয়া যায় । মার্কেট বা দোকানগুলোতে TRADITIONAL জিনিসের পসরা। তাদের জাতীয় পতাকা বা নিজদেশের মানচিত্র খচিত চামড়া ও হাড়ের তৈরি জিনিস পত্রে ভরা বিপণী কেন্দ্রগুলো । এরা পশ্চিমা সংস্কৃতির ধারধারেনা। এমন কি সাধারণ লোকজন ইংরেজিটাও  শিখতে চায়না। অফিস আদালতে অবশ্য ইংরেজি  ও স্প্যানিশ দুটোই চলে।

পোর্ট সিটি মন্টিভিডিওর সৌন্দর্য কয়েকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে RIO DE LA PLATA. এটি  এই শহরের প্রধান আকর্ষণ। এখানকার ভবন গুলোর নির্মাণ শিল্প আপনাকে চোখ সরাতে দিবে না । এ ছাড়া PUNTA DEL ESTE( বিনোদন কেন্দ্র ),ZABALA SQUARE এর  প্রতিটি রাস্তা, ভবন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জাদুঘর, থিয়েটারগুলো যেন নিজের দেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য কে স্বগৌরবে জানান দিচ্ছে সর্বদা।

ছোট্ট বেলায় নানা কে দেখতাম হুক্কা খেতে কিন্তু তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই  পরখ করে দেখা হয়নাই !!!! আমার হুক্কা খাওয়ার সাধ  কিছুটা মিটেছিল উরুগুয়ে যেয়ে। আমাদের দেশে দাদা- নানারা যেমন হুঁকাতে অভ্যস্ত ছিল এখানে  এরা এখনও আছে। কিন্তু এদের টা একটু ভিন্ন। এদের হুক্কার নাম ,“CHARRUA MATE”. একটা কাঠের পাত্র যেটা আমাদের হুক্কার মতো নারিকেলর মালা বা অন্য  কিছু দিয়ে তৈরি । সাথে থাকে একটা নল (STRAW).আমরা যেখানে তামাক আর আগুণ  ব্যাবহার করি ওড়া সেখানে একটি  গাছের পাতা ও গরম পানি ব্যাবহার করে। তবে এটা অনেক স্বাস্থ্যকর। আমরা পান করি ধোঁয়া আর ওরা বাষ্প।

অবশেষে ২৭  শে জুলাই আমাদের  ফোরলানদের দেশ ছাড়ার সময় হল। এবার গন্তব্য ইরান। বন্দর ইমাম খোমিনী।মাজিদ মাজিদীর দেশের রূপ কথার হারেমদের সাথে দেখা করতে হয়ত পারবনা কিন্তু দূর থেকে পারস্যের গোলাপ এর সুগন্ধ  তো নিতে পারবো!!!!!!!

( দিনলিপির  সম্পাদিত অংশ )

১,০৯১ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “ফোরলান-সুয়ারেযদের দেশে”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    উরুগুয়ে ভাল লাগলো, সাথে কিছু ছবি হলে আরো ভাল লাগতো 🙂

    নিয়মিত লিখতে থাক :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    হে রোমিও
    নিয়মিত লেখো তুমি
    সিসিবিকে জমিও 😛

    তোর এই ভ্রমণ লগগুলো নিয়মিত একটা সিরিজ হিসেবে লিখিস। আমরা না হয় সারেং মিয়ার ( 😛 ) চোখে আরেকবার ভ্রমণালাপ পড়বো।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. তানভীর (২০০১-২০০৭)

    দোস্ত চেষ্টা করবো ভ্রমণ লগ গুলো সিরিজ হিসেবে প্রকাশ করার কিন্তু তার জন্য তো সারেং বাড়ির বউ দারকার :)) :)) :))
    বয়সতো কম হলনা কিন্তু বাপ মা তো কিছুই বলে না 😛 😛 😛 😛


    তানভীর আহমেদ

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    সাগরে সাগরে ঘুরার খুব শখ ছিল, কিন্তু আফসোস, সাতারটাই শিখা হয় নাই এখনো।

    লিখতে থাক বিভিন্ন দেশের কথা, মনের দুঃখ যদি কিছুটা হইলেও কমে তোমার লেখা পইড়া 🙁


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  5. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    উরুগুয়ের জাতীয় পতাকা দেখলে ভালো লাগা কাজ করে। ভালো লাগে ওদের ফুটবল টিমকেও। তবে সেদেশের মানুষের কাছ থেকে দেখার অনুভূতির বয়ান আগের দুই ভালো লাগাকেই আরো বাড়িয়ে দিলো।
    আড়ো আসুক এমন ভ্রমন কাহিনী।

    জবাব দিন
  6. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ব্লগের নাম দেখেই আকৃষ্ট হতে বাধ্য। আর ভ্রমণ কাহিনি আমার খুব পছন্দের ।
    তবে বানান ভুলগুলো খুব চোখে পড়ছে। আশা করি পরবর্তী ব্লগ থেকে এব্যাপারে আরো সচেতন হবে।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (২০০১-২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।