একজন আপু ১

হঠাৎ করে সন্ধানীতে গিয়ে চমকে গেছিলাম। ডেস্কের সামনে হাতলওয়ালা চেয়ারটিতে সুন্দরী এক আপু বসে আছে  যাকে আমি চিনিনা ।কি  আ‌শ্চর্য্য ঘটনা ।আপনারা মনে করতে পারেন  এতে আশ্চর্য্য হবার কি আছে ? একজন সুন্দরী আপুকে আমি নাই চিনতে পারি।কিন্তু আমাদের ৮জনের গ্রুপ টির কাহিনী শুনলে আপনি বুঝবেন এটি আশ্চর্য্য হবার মত ঘটনা বটে। আমরা মেডিকেল এ ৮জন বন্ধু ছিলাম। ১ম এই বলে রাখি ছাত্র হিসেবে আমরা ছিলাম যারপরনাই ব্রিলিয়ান্ট।আমাদের ১৫৫ জনের ক্লাস টিতে আমাদের মত ব্রিলিয়ান্ট কেউ ছিলনা ।১ম পরীক্ষা ছিল anatomyএর  superior extrimity । সেটিতে ৯জন ফেল করেছিল ,যার মধ্যে ৮জনই ছিলাম আমরা। আমরা সবাই মিলে বাকি একজনকে সান্তনা দিতে গেলাম। আহা বেচারা । আমরা যতোই সান্তনা দেই বেচারা ততই কাদে।আমাদের সান্ত্বনাগুলোকে বেচারার মনে হয় তেমন পছন্দ  হয়নি ।এরপর ও আমরা থেমে থাকলাম না ।নিয়মমতো ফেল করতে থাকলাম ।মাঝে মধ্যে ২-১জন যে পাস করতনা তানা। কিন্তু তার দুঃখের সীমা থাকত না। এরপর এমন হত আমরা পরীক্ষার ফল দেখতে যেতাম না। কাউকে জিজ্ঞাসা করে নিতাম এই পরীক্ষায় কতজন ফেল করেছে। যদি দেখতাম ৮-১০জন , তাহলে মনে করতাম সবাই আছি। যদি দেখতাম ৪-৫জন তবে দেখতে যেতাম  কে পাস করেছে।সে তখন আমাদের সবাইকে খাওয়াত ।

তবে আমাদের কি কোনও ভাল গুন ছিলনা? অবশ্যই ছিল। আমরা সুন্দরী আপুদের অনেক সম্মান করতাম। ভোটাভুটির মাধ্যমে আমরা একজন আপুকে সর্বাধিক সুন্দরী নির্বাচিত করেছিলাম।  ঠিক করেছিলাম তাকে দেবির আসনে বসাব ।দেবিকে তো  শুধু আসনে বসালেই হয়না  তাকে পুজাও করতে হয়।কিভাবে করা যায়? উদ্ধার করল, আমার এক  ক্যাডেট বন্ধু   আশিক । তার পরামর্শমত যখনই আপুটি ক্যান্টিন এ প্রবেশ করত আমরা ৮জন সটান হয়ে তাকে পুজা দিতে
লাগলাম ।আপুটি ১ম দিকে কিছু বুঝতে পারতনা। কিন্তু প্রতিদিন এই একই ঘটনা আপুটির কোমলমতি মন সইতে পারলনা।সে ক্যান্টিন এ আসাই ছেড়ে দিল । এখন কি করা যায়? আবার ও উদ্ধারকর্তা আসিক। ঠিক হল তাকে না পাই তার ব্যবহার করা যেকোনো জিনিস পেলেই হল তাকে পুজা দিব। জিনিস জোগাড়ের দায়িত্ব পরল আবার আশিকের উপর। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে আপুর ব্যবহার করা একটি গ্লাস  উদ্ধার  করল।আপুটি নাকি ভয়ে ভয়ে ক্যান্টিন এ বসে চা খাচ্ছিল।আশিককে দেখে তাড়াতাড়ি চা খাওয়া বাদ দেয়া চলে গেছে। আশিক সেই গ্লাসটিকে( চা সহ )নিয়ে  এসেছে। আমরা তখন গ্লাসটিকে(চাসহ) পুজা দিতে লাগলাম ক্যান্টিন  এ বসে। এরপর অনেকদিন পার হয়েছে।। আমাদের আপুটি শুনেছিএখন দুই বাচ্চার মা। বোরখার কারনে সকলেই নাকি এখন তার রুপ দেখা দেখে বঞ্ছিত হচ্ছে। কিন্তু এই ৭ বছর পরও গ্লাসটি নাকি  বন্ধু রাকিব এর কাছে সঞ্চিত আছে। চা শুকিয়ে গেছে। কিন্তু গ্লাসটিতে আপুর লিপস্টিক আর দাগ আজ ও নাকি   আছে।

(চলবে)

১৮ টি মন্তব্য : “একজন আপু ১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আরে তুই!!! ব্লগে স্বাগতম দোস্ত :hug: , চালায়া যা 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    ঐ তুমি শেরে বাংলা হাউজের সেই পিচ্চি পোলাটা না ? মেয়েদের পুজাও দিয়ে ফেলছো এর মধ্যে ? B-)

    লেখা উপাদেয় হয়েছে । চালায়ে যাও


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬ - ০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।