মুক্তিযুদ্ধে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ

১৯৭১ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের অনেক প্রাক্তন ক্যাডেট স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যাদের অনেকেই ছিলেন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা। এদের মধ্যে আছেন মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম, যার ওপর ভিত্তি করে হুমায়ুন আহমেদ ” আগুনের পরশমণি ” চলচ্চিত্র নর্মাণ করেন। এ কলেজের আটজন ক্যাডেট মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। নিচে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

লেফট্যানেন্ট মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেইন, বীর উত্তম : তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদাতিক কোরের কর্মকর্তা। ১৯৭১ এর মার্চে বিদ্রোহ করেন যখন তিনি যশোর সেনানিবাসে বদলি হন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনিই প্রথম শহীদ সেনা কর্মকর্তা যিনি ১৯৭১ এর মার্চ মাসে সম্মুখ সমরে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি মরনোত্তর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীর উত্তম উপাধি লাভ করেন। ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ লে: আনোয়ার গার্লস স্কুলের নামকরণ তাঁর সম্মানেই করা হয়েছে।

বদিউল আলম (বদি), বীর বিক্রম : মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন যখন তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ঢাকার বিখ্যাত CRACK PLATOON এর সদস্য ছিলেন। তাঁকে মরণোত্তর বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়। তাঁর ওপর ভিত্তি করেই হুমায়ুন আহমেদ ” আগুনের পরশমণি ” চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

মুফতি মুহাম্মদ কাসেদ : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (BUET) তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭১ এর জুন মাসে ময়মনসিংহের একটি রেলস্টেশনে সম্মুখ সমরে শহীদ হন। এই সাহসী মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সম্মান দেখিয়ে বুয়েটে প্রতিবছর ‘মুফতি কাসেদ দাবা প্রতিযোগিতা’ আয়োজন করা হয়।

ক্যাপ্টেন মো. শামসুল হুদা : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পদাতিক কোরের কর্মকর্তা ছিলেন। যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি ছুটিতে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়ে দেশের জন্য লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭১ এর নভেম্বরে পূর্ব রণাংগনে শাহাদাত বরণ করেন। চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও সিতাকুন্ডের শহীদ ক্যাপ্টেন শামসুল হুদা উচ্চ বিদ্যালয় তাঁর নামেই নামকরণ করা হয়েছে।

মেজর মো. আবদুল খালেক : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরের কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিককার শহীদদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৭১ এর মার্চে কুমিল্লা সেনানিবাসে একটি গোয়েন্দা ইউনিটে কর্মরত অবস্থায় শহীদ হন।

ক্যাপ্টেন এ কে এম নুরুল আবসার : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর EME কোরে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৮ মে রংপুর সেনানিবাসে শহীদ হন। সৈয়দপুর সেনানিবাসের EME প্যারেড গ্রাউন্ডের নামকরণ তাঁর সম্মানার্থেই শহীদ ক্যাপ্টেন নুরুল আবসার প্যারেড গ্রাউন্ড রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের নামকরণও এ শহীদের নামে করা হয়েছে।

মো. মোশাররফ হোসেইন : তিনি ছিলেন কর্ণফুলী পেপার মিলের সহকারী পরিচালক। ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে শহীদ হন।

সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট রফিক আহমেদ সরকার : ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেংগল রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি রংপুরে বদলি হন। তিনি হলেন ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের সর্বকনিষ্ঠ শহীদ।

এ ছাড়া ফৌজদারহাটের নিম্নোক্ত ক্যাডেটরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন যাদের অনেকেই খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। নিচে ব্যাচ অনুসারে তাঁদের নাম উল্লেখ করা হলো —

১। Wing Commander (Retd.) M. Waliullah, 1st batch

২। Md. Abdur Rob, 2nd batch

৩। Colonel (Retd.) Abu Taher Salauddin, 4th batch

৪। Dr. M Mujibur Rahman, Ph.D, 4th batch

৫। Lieutenant General (Retd.) Abu Saleh M Nasim, 5th batch

৬। Major Md. Rawshan Yazdani Bhuiyan, Deceased, 6th batch

৭। Major General (Retd.) Md. Ashraf Hossain, Deceased, 6th batch

৮। Quamrul Haq, Bir Bikram, 7th batch

৯। Quazi Muhammad Ali Anwar, 8th batch

১০। S M Iqbal Rashid, 8th batch

১১। Brigadier General (Retd.) A M Syeed Ahmed, Bir Protik, 8th batch

১২। Major General (Retd.) Syed Muhammad Ibrahim, 9th batch

১৩। Lt. Colonel (Retd.) Mir Mukhlesur Rahman, 9th batch

১৪। Syed Abdur Rashed, 9th batch

১৫। Dr. Azadul Islam, Ph.D., 10th batch

১৬। Dr. Kaiser M. Hamidul Haq, Ph.D., 10th batch

১৭। Capt. (Retd.) Humayun Kabir, Bir Protik, 10th batch

১৮। Major General (Retd.) Imamuz Zaman, Bir Bikram, 10th btach

১৯। Ishraq Ahmed, 10th batch

২০। Major (Retd.) Hasmi Mustafa Kamal, 10th batch

২১। Lt. Colonel (Retd.) Quazi Sajjad A Zahir, Bir Protik, 10th batch

২২। A F M A Harris, 11th batch

২৩। Major (Retd.) Syed Munibur Rahman, 11th batch

২৪। Major (Retd.) Didar Atwar Hussain, 11th batch

২৫। Major (Retd.) Syed Mizanur Rahman, 11th batch

২৬। Shahriar Huda, Ph.D., 11th batch

২৭। Capt. (Retd.) Ahsan Aziz Shelley, 12th batch

২৮। Brigadier General (Retd.) Md. Abdur Rahim, 12th batch

২৯। M. Ibrahim Adil Khan, 12th batch

৩০। Anis Quadri, 13th batch

৩১। Nazrul Kamal, 13th batch

৩২। A K M Showkat Amin, 13th batch

৩৩। Belal Uddin, 13th batch

৩৪। Muhammad Abdur Rahim, 14th batch

৩৫। Colonel (Retd.) Mahmud Rahman Chowdhury, 15th batch

৩৬। Brigadier General Mollah Fazle Akbar, 15th batch

তথ্যসূত্র: 1. OFA Directory 2005
2. Wikipedia

৩,৩৭৯ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “মুক্তিযুদ্ধে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ”

  1. রাশেদ (৯৯-০৫)

    সশ্রদ্ধ সালাম রইল সকল শহীদ এবং বীর মুক্তিযুদ্ধাদের প্রতি।

    ভাইয়া এইখানে একটা প্রশ্ন আছে। শহীদ বদিউল আলম (বদি) কি করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন? কারণ বলা হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনএসফের প্রথম দিককার একজন ক্যাডার ছিলেন বদিউল আলম।


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    খুব গুরুত্বপূর্ন লেখা।
    ১৯৮৫ সালে ক্লাস সেভেনে ছয় মাসের জন্য শহীদ লে: আনোয়ার গার্লস স্কুলে পড়েছিলাম। তখনই প্রথম জানতে পারি লেফট্যানেন্ট মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেইন, বীর উত্তম আমার চাচাতো ভাই - আব্বার চাচাতো বোনের ছেলে। আজ জানলাম উনি ক্যাডেট ছিলেন।
    সকল শহীদদের শ্রদ্ধা সেই সাথে এরকম একটা লেখার জন্য তোমাকে অজস্র ধন্যবাদ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জাহিদ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।