একজন পর্দা নিয়ন্ত্রকের পারফর্মার হয়ে ওঠা

মূলতঃ ক্লাস সেভেনের ট্যালেন্ট শো থেকেই শুরু হয় ক্যাডেটদের ষ্টেজ পারফর্মেন্স। ওই সময় থেকেই প্রায় নির্দিষ্ট হয়ে যায় ব্যাচের কালচারাল প্রোগ্রাম হলে কোন দায়িত্ব কাকে নিতে হবে। দায়িত্ব ভাগাভাগির সেই মাহেন্দ্রক্ষণ থেকেই আমার বন্ধু ‘পর্দা নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে ব্যাপক নাম করে ফেলল। প্রায় সব শাখায় জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেও বিফল আর ওয়াশ-আউট হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘পর্দা নিয়ন্ত্রন’কে সে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গেল। কিন্তু অবস্থার উন্নয়নের চিন্তা যেহেতু সার্বজনীন, তাই বন্ধুটিরও বড় সাধ হয় পর্দার অন্তরালে শুধু পর্দা নিয়ন্ত্রক হয়ে না থেকে ষ্টেজে উঠে সর্ব সম্মুখে কিছু করে দেখাবার। নাম, যশ, খ্যাতি … শুরু হল বন্ধুর ষ্টেজে উঠে আসার পিলার অফ সাকসেস তৈরীর কারখানা।

প্রথমেই শুরু গান দিয়ে । নোভা’র “স্কুল পলাতক মেয়ে” গানটা অনুশীলনের সময় ‘তুমি নাই, তুমি নাই’ চিৎকারে বেরসিক প্রিন্সিপ্যাল স্বয়ং অডিটরিয়ামে উপস্থিত হলেন। নিষেধাজ্ঞা জারী করলেন “ও তো গান গাইবেই না, এই কালচারাল প্রোগ্রামে কোন তুমি-আমি, আমি-তুমি টাইপ গানই হবে না”। অগত্যা ‘স্কুল খুইলাছেরে মওলা’ আর ‘ইব্লিশ শয়তান তার আশা পুরাইল’ টাইপ গান দিয়ে সাজাতে হল প্রোগ্রাম। কিন্তু বন্ধু’র ষ্টেজে উঠা নিয়া কথা …

ওই দিনগুলোতে ‘ইলোকিউশান’ বা ‘বাগ্মীতা’ শিক্ষকদের খুব প্রিয় ব্যাপার ছিল। যদিও ব্যাচের কালচারাল প্রোগ্রামে ইলোকিউশান জুড়ে দেয়াতে আমাদের কারও সায় ছিল না, তবুও ফর্ম মাষ্টারের জোড়াজুড়িতে … জুলিয়াস সিজারের ফিউনারেলে ব্রুটাসকে কটাক্ষ করে মার্ক এ্যান্টোনি’র সেই বিখ্যাত “Friends, Romans, countrymen, lend me your ears” জুড়ে দেয়া হল। ‘when imminent, better enjoy’ তাই হয়ত রসিক এক ক্লাসমেট পুরো ব্যাপারটাতে ভিন্ন রকমের রস আনতে প্রস্তাব করল, পুরো ফিউনারেলটা এ্যারেঞ্জ করতে, জুলিয়াস সিজারের মরদেহ সহ। মরদেহ কে হবে ?? অবস্থার উন্নয়নে উৎসুক সেই ‘পর্দা নিয়ন্ত্রক’ এইবার পেল “জন্মদিনের সিনে, হিরোর পেছনে আউট অফ ফোকাসে কোথাও” টাইপ একটা ‘চান্স’, একটা ‘ব্রেক’।

কোন প্র্যাক্টিস ছাড়াই ষ্টেজে উঠলেন তিনি। কলেজের ‘গ্রামীন চেক’ টাইপ কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলেন ষ্টেজে … শুধু শেষ দুই লাইন মুখস্ত করে গেলেন, কখন তার অভিনয় (!) শেষ হবে সেইটা নিশ্চিত হবার জন্য। বাগ্মী শুরু করলেন …

Friends, Romans, countrymen, lend me your ears;
I come to bury Caesar, not to praise him.

আঙ্গুল তাক করে সিজার রূপী বন্ধুটিকে দেখালেন, বন্ধুটি তখন কম্বলের তলায় এক্সপ্রেশান দিতে ব্যস্ত … বাগ্মী এবার শেষ লাইন দুটি পাঞ্চ করলেন

My heart is in the coffin there with Caesar,
And I must pause till it come back to me.

মুখস্ত লাইন দুইটা শোনার সাথে সাথে বিদ্যুৎ খেলে গেল তার শরীরে। পর্দা নামা দুরের কথা, লাইট অফ হবার আগেই, সাদা প্যান্ট সাদা সার্ট আর কলেজ টাই পরা সিজার উঠে পরলেন, কম্বল ভাজ করলেন, তারপর ভাজ করা কম্বল বগলে নিয়ে হাটা দিলেন উইংসের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ খেয়াল করলেন, লাইট তখনো বন্ধ হয়নি … থমকে দাঁড়িয়ে দর্শক-শ্রোতাদের দিকে আলতো ‘নড’ করলেন :boss: :boss: :boss: ।
মুহুর্মুহু করতালিতে উদ্ভাসিত হল একজন ষ্টেজ পারফর্মারের অভিষেক।

৮২ টি মন্তব্য : “একজন পর্দা নিয়ন্ত্রকের পারফর্মার হয়ে ওঠা”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    =)) =)) =))
    তাইফুর ভাই, এইটা কোন ক্লাসের ঘটনা...
    মানে 'অভিষেক ম্যাচেই অবসরে চলে গেলেন'...টাইপ ছিল না তো??? :-B


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    এই জাঁদরেল পারফর্মারকে তো মনে পরছে না । গানের পারফর্মারদের তো মনে আছে । বস হিন্টস দিবেন নাকি 😀 । আর লেখাটা নিজস্ব ধারা বজায় রেখে আবারো সিরাম হয়েছে :clap: ।

    জবাব দিন
  3. এরকম একটা ঘটনা আমার কারেন্ট এফেয়ার্স ডিস্পলেতে হয়েছিলো।
    ৯৮'র বন্যা ছিলো টপিক। বন্যার মৃত মানুষের লাশ দেখানো হবে। একটা জুনিয়রকে লাশ সাজিয়ে তাকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো। তার বাবা সাজলো আরেকজন। তার কাজ হচ্ছে লাশের মাথার পাশের বসে বলবে 'ও বাপধন! একটা কথা ক বাপধন! '
    তো স্টেজে উঠে বাপ ভুলে লাশের মাথার কাছে না বসে পায়ের কাছে বসে বললো 'ও বাপধন! একটা কথা ক বাপধন! ' বুদ্ধিমান লাশ তখন সাদা কাপড়ের নিচ থেকে বললো, 'আব্বা মাথা এইখানে !' :))

    তাইফুর ভাই হেভি মজার লেখা হইছে। জটিল। :khekz:

    জবাব দিন
  4. জিহাদ (৯৯-০৫)

    মাত্র সাতচারা খেইলা আইসা একটু বইসি রেস্ট নিবার। এখনো হাপাইতেসি। আপনের পোস্ট পইড়া মনে হইতেসে হাসতে হাসতে হৃদপিন্ড গলার কাছে চইলা আসছে :khekz: :khekz:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বস, ঘাটাইলে সানঝু সহ অন্যান্য পারফরমেন্সের কথা মনে পইড়া গেল... ব্যাপক মজা পাইছিলাম


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    হঠাৎ খেয়াল করলেন, লাইট তখনো বন্ধ হয়নি … থমকে দাঁড়িয়ে দর্শক-শ্রোতাদের দিকে আলতো ‘নড’ করলেন

    উনার উপস্থিত এ্যাক্টিং-টাই তো প্রশংসার দাবিদার! :clap:
    ছিনলো না, ঝাতি ছিনলো না ... আক্ষেপ!!! 🙁

    জবাব দিন
  7. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    মুহুর্মুহু করতালিতে উদ্ভাসিত হল একজন ষ্টেজ পারফর্মারের অভিষেক।

    ফাট্টাফাট্টি লেখছিস মামা, আই এম প্রাঊড অফ ইউ দোস্ত, বুখে আয় :hug: :hug:
    সেরকম মজা করে লেখা, চরম চরম :salute: :salute:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  8. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    when imminent, better enjoy

    কই যেন পড়ছিলাম :grr:

    হঠাৎ খেয়াল করলেন, লাইট তখনো বন্ধ হয়নি … থমকে দাঁড়িয়ে দর্শক-শ্রোতাদের দিকে আলতো ‘নড’ করলেন

    ব্রিলিয়ান্ট নিঃসন্দেহে :hatsoff: :boss: সেইরকম লেখা।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।