অবচেতন মনের অসচেতন প্রার্থনা …

পড়ে আছে বাবা, মাথার ক্ষত দিয়ে রক্ত গড়িয়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে মেঝে। ক্ষতটা ডানহাতে চেপে ধরে বাবার নিথর দেহটা কোলে নিয়ে বসল সামী। বাবাকে হত্যা’র দায় কাঁধে নিয়ে …

বাবা মা কে সামী কখনই কম ভালবাসেনি, বাসেও না। তাদের কষ্টের সময়ে, অসুস্থতার সময়ে রাতের পর রাত মাথার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছে, আদর্শ সন্তানের মত সামলে নিয়েছে সব। অথচ সেই সামী’রই ইদানিং আর বাবাকে, মাকে সময় দেয়ার মত সময় হয়না । সারাদিন অফিস শেষে জ্যাম পেরিয়ে বাসায় ফিরে ক্লান্ত কন্ঠে কেমন আছ, ভাল আছি রকমের কথা। তারপর নিজের কামরা, স্ত্রী আর সন্তান। খাবার টেবিলে বাবার মুখে নিজের ছেলেবেলার গল্প শুনতেও ইদানিং ক্লান্ত লাগে। একজন মানুষ সামী, ভালবাসার অংশীদার চার, হাঁফ ধরে যায়।

বাবাকে দেখে নিজের বার্ধক্যের কথা ভাবে সামী। ব্রেইন স্ট্রোক আর হাড়ের ক্যান্সার নিয়ে এইযে শুয়ে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে মানুষটা মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছে, তারও কি এমনই হবে ?? ছেলে আরীব কে নিয়ে তার এখন যেই উচ্ছ্বাস আরীবও তার ছেলেকে নিয়ে এমনই উচ্ছ্বাসে হয়ত বাবাকে ভুলে থাকবে। সামীর মতই আরীবও হয়ত ইচ্ছা থাকলেও বাবাকে সময় দেবার মত সময় পাবে না।

তোমাকে আমার আর প্রয়োজন নেই। আসলে একটা সময়ে সবারই প্রয়োজন ফুরায়। সরকারের কাছে প্রয়োজন ফুরায় ৬০ বছর বয়সে, সন্তানের কাছে প্রয়োজন ফুরায় সন্তানের ৩০ বছর বয়সে। সামী ভাবে, সেই হিসেবে বাবার সবধরনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে বছর চারেক হল।

নামাজে দাঁড়িয়েও চিন্তাটা মাথা থেকে দূর হয় না। প্রয়োজন ফুরিয়েছে … প্রয়োজন ফুরিয়েছে … ঘুরতে থাকে শব্দ গুলো। নামাজ শেষে মোনাজাত, সেখানেও প্রয়োজন ফুরিয়েছে … প্রয়োজন ফুরিয়েছে … নিজেকে বড্ড অকৃতজ্ঞ, প্রচন্ড স্বার্থপর মনে হয় তবুও ঘুরতে থাকে শব্দগুলো মনের অজান্তেই … প্রয়োজন ফুরিয়েছে … প্রয়োজন ফুরিয়েছে …

ধুপধাপ শব্দ আর স্ত্রী’র চিৎকারে সম্বিত ফেরে সামী’র। দৌড়ে গিয়ে খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে পরে আছেন বাবা। ঔষধ খেয়ে পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন নি, মাথা ঘুরিয়ে পরে গেছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে …

প্রার্থণা মঞ্জুর করেও ঈশ্বর কোন কৃতজ্ঞতা পেলেন না পিতৃহন্তা সামী’র কাছ থেকে …

২,০৮৯ বার দেখা হয়েছে

২৩ টি মন্তব্য : “অবচেতন মনের অসচেতন প্রার্থনা …”

  1. রকিব (০১-০৭)

    ওরে খাইছে রে। সব তারকা ব্লগার আজকে এক সাথে সিসিবির আকাশে!!!!
    গল্প ভালো লাগলো তাইফুর্ভাই।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
      • রকিব (০১-০৭)

        স্যরি উস্তাদ, এই নেন :teacup:
        আচ্ছা, তাইলে একটু লেখার সমালোচনা করিঃ গল্প আসলেই ভালো হয়েছে, তবে খুব ভালো বলবো না। এই প্লটেয় গল্পটায় হয়তো আরেকটু রং জড়ানো যেন। হয়তো গল্পে আরো কিছু ডিটেইলিংস আসতে পারতো; কিছু ফ্ল্যশব্যাক ডিটেইলিংসও হয়তো মন্দ হতো না। সর্বোপরি, কথা একটাই, লেখক কেবল পাঠকের জন্যই লিখেন না, নিজের জন্যও লিখেন। অতএব, আপনার লেখনীতে দুর্বার লিখুন; নিজের জন্য, আমাদের জন্যও ........................নিয়মিত


        আমি তবু বলি:
        এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

        জবাব দিন
        • তাইফুর (৯২-৯৮)

          ছোট্ট একটা প্লটে তাড়াহুড়া করে হাজিরা টাইপ লেখা ...
          কংকালে আরেকটু মাংস চামড়া জড়ানোর চাইতে দ্রুত লেখা জমা দেওয়া কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে এই অবস্থা ...
          ধণ্যবাদ রকিব্যা ...


          পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
          মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

          জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তাইফুর - তোমাকে সবসময় দেখি দুষ্টামী করতে। লেখাটা পড়ে নামটা আবার মিলিয়ে নিলাম। হ্যা তাইফুরই তো মনে হচ্ছে। বাস্তবতা এভাবেই আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে, তাই না।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।