আমার বন্ধু ভাগ্য

এই ব্লগের একটা লেখা নতুন আরো কয়েকটা লেখার উপজীব্য বলেই বোধহয় ব্লগটি মন্ত্রমূগ্ধতায় পুর্ণ। একেকটা লেখা পড়ি আর নিজের অজস্র স্মৃতির মধ্যে ডুবে যাই। অমোঘ এক চক্রে ঘুরপাক খাই, লেখা পড়লেই লিখতে ইচ্ছে হয়। রেডবুকের ‘কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটি’ নীতি আর মাথায়ই থাকে না।

যারা অসাধারণ বন্ধু ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে, তারাই ক্যাডেট কলেজে উত্তীর্ণ হয় বলে আমার ধারণা। নইলে কি আর সিনিয়র, জুনিয়র, বিভিন্ন কলেজ ভেদেও এত সুন্দর বন্ধুত্ত্ব গড়ে তুলতে পারতাম ?? আর নিজের কলেজের ক্লাসমেটদের সাথে যেই বন্ধুত্ত্ব, তার যে কোন তুলনাই নাই, যত দিন যাচ্ছে আরও আরও পরিষ্কার হচ্ছে সেটা।

আমি টাংগাইল আর আমার দোস্ত মুমিনসিং, আমি এক রুমে আর দোস্ত পাশের রুমে, আমি ‘বি’ ফর্ম আর দোস্ত ‘এ’, তারপরও ক্লাস সেভেনের নতুন চেনাদের মাঝে আমরা ‘বেষ্ট ফ্রেন্ডস’ হয়ে গেলাম। দোস্তের কাছ থেকে শিখেছি অনেক। ‘স্বপ্নত্রুটি’-তে যে রক্ত পানি হয়ে যায় এটা তার কাছ থেকেই শেখা। স্বপ্নত্রুটির মানচিত্র আকতে যে ‘কালি’ ব্যবহৃত হয় তা নাকি রক্তরশের সব মূল উপাদানে তিল তিল করে গড়া। ঘুম থেকে উঠে ‘আমার রক্ত পানি হয়া গেল’ হাহাকার শুনে আমি যা বোঝার বুঝে নিতাম।

দ্বন্দ-সঙ্ঘাৎ ছাড়া বন্ধুত্ত্ব বাড়ে না। সেরকমই এক দ্বন্দের পর মিমাংসার সুজোগ না দিয়েই আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাই। পরদিন সকালে সিক রিপোর্টে দোস্ত হাজির। আগডুম বাগডুম কি সব অসুখের কথা বলে দোস্তও ভর্তি, মিমাংসা যে করতেই হবে। ঔষধ হিসেবে তাকে দেয়া হল ‘গ্লিসারিন সাপোজিটরি’। সাপোজিটরি শব্দটি ‘সাপোজ ইটিং’ শব্দ হতে উৎপত্তি বিধায় উহা মুখে খাওয়ার নিয়ম ছিল না, অন্য উপায়ে ‘খেতে’ হত। দোস্তের যেহেতু পাতানো অসুখ, সে আর সেই ঔষধ না ‘খেয়ে’ কমোডে ফেলে এসে আমার সাথে মিমাংসায় ব্যাস্ত হয়ে পরল। বহুদিন ‘ডিস্পেন্সারি’ ‘ফার্মেসি’ চালাতে চালাতে যেমন লোকে ডাক্তার হয়ে উঠে, তেমনি হাসপাতালের স্যুইপারও ঔষধ চিনতে পারার কৌশল রপ্ত করে ফেলায় যা হবার তাই হল। ভাসমান ‘গ্লিসারিন সাপোজিটরি’ দেখে আর্কিমিডিসের মত উদ্ভ্রান্ত ভংগিতে স্যুইপার ছুটলেন ‘ক্ষিতীশ বাবু’র কাছে। ফলাফল, একহাতে কালো কম্বল আর অন্যহাতে টু ইন্টু ‘গ্লিসারিন সাপোজিটরি’ নিয়ে ওয়ার্ডে প্রবেশ করলেন মূর্তিমান ক্ষিতীশ দা। কম্বল দিয়ে দোস্তকে ঢেকে নিজ হাতে অস্ত্রপচার চালায়ে পর পর দুইটা ‘খাওয়ায়ে দিলেন’। রোগে যে ঔষধ কাজ করে না, স্যুস্থতায় সে নাকি দ্বিগুন ফল দেয়। শুরু হল দোস্তের আগডুম বাগডুম বলা ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া’ রোগের উপশম পর্ব … খুলে গেল দ্বার। আমাদের আর মিমাংসা করা হল না।

৫,১৯২ বার দেখা হয়েছে

৭৫ টি মন্তব্য : “আমার বন্ধু ভাগ্য”

  1. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    একহাতে কালো কম্বল আর অন্যহাতে টু ইন্টু ‘গ্লিসারিন সাপোজিটরি’ নিয়ে ওয়ার্ডে প্রবেশ করলেন মূর্তিমান ক্ষিতীশ দা। কম্বল দিয়ে দোস্তকে ঢেকে নিজ হাতে অস্ত্রপচার চালায়ে পর পর দুইটা ‘খাওয়ায়ে দিলেন’।

    :khekz: :khekz: :khekz: :khekz:
    :gulli: :gulli2:

    জবাব দিন
      • তাইফুর (৯২-৯৮)

        ভালই ছিলাম এতদিন। নিশ্চিন্তে গাজাখুড়ী লেইখা 'মনরাখা','উৎসাহ' দেয়া কমেন্ট আর 'সাবাশী' নিয়া লেখক লেখক ভাব হইতেছিল।
        ধুরররর।
        'নিমন্ত্রন' আর 'সমান্তরাল' না পড়লেই বোধহয় ভাল ছিল।
        (তোরা এত সুন্দর লেখস ক্যামনে??)


        পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
        মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

        জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    তাইফুর ভাই, একটাও উল্টা পাল্টা শব্দ ব্যবহার না কইরাও কিভাবে সূক্ষ্ণ ভাষার ব্যবহার কইরা গল্পের পুরা রস বজায় রাখা যায়-সেইটা কেউ শিখতে চাইলে আপনের এই লিখাটা পড়ুক।পুরাই পাঙ্খা মামু!!!

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    =)) =)) =))

    দোস্তের কাছ থেকে শিখেছি অনেক। ‘স্বপ্নত্রুটি’-তে যে রক্ত পানি হয়ে যায় এটা তার কাছ থেকেই শেখা। স্বপ্নত্রুটির মানচিত্র আকতে যে ‘কালি’ ব্যবহৃত হয় তা নাকি রক্তরশের সব মূল উপাদানে তিল তিল করে গড়া। ঘুম থেকে উঠে ‘আমার রক্ত পানি হয়া গেল’ হাহাকার শুনে আমি যা বোঝার বুঝে নিতাম।

    তাইফুর ভাই পুরা গুল্লি :gulli2: :gulli2: :gulli2:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  4. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    তাইফুর মামা, একটু নাহয় লেইটেই সিসিবি'তে আইসিলি, তাই বইলা এইরকম টুয়েন্টি টুয়েন্টি শুরু করবি! :boss: :boss:

    মামা, ইনিংস থামলে খবর আছে কিন্তু তোর। :grr:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  5. সাপোজিটরি নিয়ে আমাদের ব্যাচেও কাহিনি হয়েছিল।আমি একবার নাইনে থাকতে সাপোজিটরের এপ্লিকেশন আমার ক্লাশমেটদের কাছে বর্ণনা করেছিলাম,অনেকেই এই জিনিষটার গুনাগুন তখনও জানত না।
    পরে আমাদের একজনের নিকনাম হয়ে যায় 'সাপোজিটর'।এই নামতা সুপারহিট হউয়াতে সেই বন্ধুটি সকল দোষ আমার ঘাড়ে চাপায়।এ নিয়ে ক্লাস টেনে তার সাথে অনেক মারামারি,ঝগড়া,মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল।

    জবাব দিন
  6. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    হুম্‌ম।
    অনেক দিন পর এলাম আজ আবার এলাম ব্লগে।

    এখানে বন্ধু ভাগ্য পড়লাম।
    তোর বাকি গুলিও পড়তেছি।
    চলুক...চলুক লাগাতার।

    শুভ কামনা।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।