ছয়মিশালী নাইট প্রেপ

কলেজ থেকে চলে আসার পর এখনো প্রেপ টাইমটা প্রচন্ড মিস করি ।
তার মানে এই নয় যে আমি প্রচুর পড়াশুনা করতাম । আসলে তিন হাউসের সব বন্ধুরা এই প্রেপ টাইমেই একসাথে হতাম । আলোচনা হত সারাদিনের এবং পরদিনের কার্যক্রম নিয়ে । প্রাণখুলে টিজ হত এই সময় । আর যদি কোন ইন্টার হাউস কম্পিটিশন থাকত তাহলে তো পুরো প্রেপ কোন দিক দিয়ে পার হত টেরই পেতাম না । একেক ক্লাসে একেক ধরনের মজা ।

সেভেন-
এই ক্লাসটি পুরো অদ্ভুত । মাগরিবের নামাজের পর হাউসে আসবো সবার পরে কিন্তু একাডেমী ব্লকে যেতে হবে সবার আগে । মসজিদ থেকে হাউস পর্যন্ত প্রতিদিন দৌড়ে আসার সময় খালিদ হাউসের গার্ডেনের উপর আমরা স্টিম রোলার চালাতাম ।
ঝড়ের বেগে ড্রেস চেঞ্জ করে বিদ্যুতের বেগে ফল-ইনে দাড়াঁতে হত । ক্লাস এইটের ভাই যদি আমাদের কারো আগে ফল-ইনে গেছেন তো সেদিন পুরো ক্লাস :frontroll:

এইট-
কেবল মাত্র একটু সিনিয়র হলাম কিন্তু তাও কেমন যেন জুনিয়র ভাবটা সহজে যেতে চায় না । যেদিন ডিউটি ক্যাডেট থাকতাম সেদিন তো টয়লেটের ভিতরে সু পালিশ করতে হত ।
প্রেপ গাইড তো নয় যেন যমদূত আসত :grr:

নাইন-
এই ক্লাসটি না জুনিয়র, না সিনিয়র, একেবারে মাঝামাঝি । পড়াশুনার তেমন বালাই ছিল না । মনে হত যে ক্লাস টেনে উঠে এমন পড়া দেব :-B
চুপ করে বসে থাকতাম কারণ প্রেপ গাইড ছিলেন । লাইব্রেরী থেকে বই ইস্যু করে লুকিয়ে পড়ে যেতাম ডিনারের আগে ও পরে ।

টেন-
বুঝতে শুরু করলাম ক্লাস নাইনে ডজ মেরে আসলে তেমন লাভ হয়নি । এই ক্লাসে সাধারণত প্রেপ গাইড আসত না, কিন্তু দারুণ পড়া হত । সামনে এসএসসি আর তাই জিপিএ ৫ তো সবারই পাওয়া দরকার । জোর করেই পড়তে হত এই ক্লাসে ।

ইলেভেন-
বেশির ভাগ প্রেপ কেটেছে ফর্মের সামনে অথবা টয়লেটের পাশে গল্প করে ।
“ফার্স্ট ইয়ার ড্যাম কেয়ার”-এই নীতিতে হঠাৎ করেই কেমন যেন প্রবল বিশ্বাসী হয়ে উঠলাম । মন খারাপ হোক কিংবা ভাল থাকুক গল্প চালিয়ে যেতাম । আর গল্পের ফাঁকেই একটু সময় বের করতাম পড়ার জন্য কারণ পাক্ষিক লেগেই থাকত ।

টুয়েলভ-
বুঝতে পারলাম প্রেপ গল্প করার জন্য নয় । আর তাই ফর্ম ছেড়ে নিরিবিলিতে পড়ার জন্য পাড়ি জমালাম বায়োলোজী গ্যালারীতে । আমি এবং ইমতিয়াজ প্রায়ই পাশাপাশি বসতাম আর এজন্য পড়ার চেয়ে গল্পই বেশি হত । পরীক্ষা ছাড়া পড়তে তো বসতামই না বরং পরীক্ষা থাকলে আসরটা আরো জমে উঠতো । ফার্স্ট প্রেপ যাও পরতাম, ডিনারের পর সেকেন্ড প্রেপ আর খবর নেই । এই হল প্রেপের নমুনা ।

২০ মে ২০০৮
শেষবারের মত নাইট প্রেপ করলাম । হাউসে থাকার পারমিশন হয়ে গেল । সেই ফর্ম, টয়লেট ছেড়ে চলে আসলাম :bash:

১২ টি মন্তব্য : “ছয়মিশালী নাইট প্রেপ”

    • :grr:

      প্রেপ গাইড তো নয় যেন যমদূত আসত

      আমারে কইসছ নাকি? এইটে তো আমি তোদের ফর্মে মেলা দিন গেছিলাম মনে হইতাছে...

      যাউকগা... ভালা লিখছস। চালায়া যা
      :guitar: :guitar:

      জবাব দিন
  1. হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    পরীক্ষা থাকলে আসরটা আরো জমে উঠতো

    ঠিক কথা।

    কলেজে আমি এত বেশি আড্ডাবাজ ছিলাম যে ক্যান্ডিডেটস হওয়ার পর যখন গ্রুপ রুম হল, সবাই মিলে ঠিক করল আমাকে গ্রুপ রুমে রাখা হবে না। তাতে খুব একটা লাভ হয় নাই, আমি ঠিকই ওই রুমে যেয়ে বসে থাকতাম এবং রুম ক্রিকেট খেলতে উদ্বুদ্ব করতাম সবাইকে। শুধু ঘুমাইতাম আমার রুমে।

    জবাব দিন
  2. শাওন (৯৫-০১)

    আসলেই পুরানো কথা মনে পরে গেলো। লেখাটা দারুন হইছে।


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মরতুজা (৯১-৯৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।