ব্যালেন্স ট্রান্সফার

১৬ অক্টোবর ২০০৮
আমি তখন ঢাকাতে নাখালপাড়া কমিউনিটি সেন্টার এর সামনের বিল্ডিংয়ে সাত তলায় থাকি । রেটিনাতে মেডিকেল কোচিং করছিলাম ।
রাত তখন প্রায় পৌনে একটা, , ,
আমার বন্ধু নওফেল এর কাছ থেকে একটি এসএমএস আসলো ।
“দোস্ত একটু কল করতে পারবি ?”
আমি কল করে কি ব্যাপার জানতে চাইলাম ।
নওফেলঃ “তোর মোবাইল থেকে দশ টাকা পাঠাতে পারবি ?”
আমিঃ “দশ টাকা দিয়ে কি হবে ?”
নওফেলঃ “মোবাইলে ইন্টারনেট করে মডেম হিসাবে পিসিতে ব্রাউজ করব, আমার জান্ চ্যাটরুমে অপেক্ষা করছে ।”
গ্রামীণফোনের পি ফোর প্যাকেজ অনুযায়ী সারাদিন ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে ৭২ টাকা লাগে ভ্যাট সহ ।
নওফেলঃ “আমার মোবাইলে ৬৬ টাকা আছে, তুই প্লিজ দশ টাকা পাঠিয়ে দে”
আমি ভাবলাম, জানের সাথে চ্যাট করবে, সাহায্য করা উচিত ।
কিন্তু সমস্যা হল ব্যালেন্স ট্রান্সফারের পিন কোডটা মনে ছিল না ।
আমিঃ “বাসায় ছোট ভাইকে ফোন করবো ?”
“না থাক, এত রাতে !”
“তার চেয়ে বরং ফ্লেক্সিলোড করে পাঠাই”
সাত তলা বেয়ে নিচে নামলাম কিন্তু কোন দোকান খোলা ছিল না । আবার উপরে উঠে গেলাম । নওফেলকে বললাম,
“দোস্ত তোর জন্য সাত সাত চৌদ্দতলা উঠানামা করলাম কিন্তু কাজ হল না, একটু আগে বলবি না ?”
তবুও সে নাছোড়বান্দা :no:
নওফেলঃ “দেখ্ না একটু পিন কোডটা পাওয়া যায় কিনা”
তারপর আমি গ্রামীণফোন হটলাইনে কল দিলাম,
“হ্যালো গ্রামীণফোন থেকে সাজ্জাদ বলছি”
আমি খেয়াল করলাম এত রাতে কল করায় উনার কন্ঠে বিরক্তির ছাপ ।
আমিঃ “হ্যা সাজ্জাদ ভাইয়া আমার ব্যালেন্স ট্রান্সফারের পিনকোডটা বলবেন ?”
তারপর শুরু হল আমার ভাইভা,
“আপনার বাবার নাম ?”
“আপনার এফএনএফ নাম্বারগুলো বলুন”
“সিমটা কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা ?”
“সর্বশেষ কত টাকা রিচার্জ করেছেন ?”
প্রশ্নগুলোর যথাযথ জবাব দিলাম মনে হল ।
“ঠিক আছে স্যার আপনার পিন কোড পাঠাচ্ছি”
আমার মোবাইলে তখন ৫৩ টাকা ছিল । তারপর জানতে পারলাম ৫০ টাকার নিচে ব্যালেন্স ট্রান্সফার করা যায় না ।
আর এদিকে হটলাইনে ৪ মিনিট কথা বলার পর আমার ব্যালেন্স হয়ে গেল ৪৯ টাকা ।
রাত দেড়টা, , ,
নওফেলকে কল করে বিস্তারিত বললাম । সব শুনে ও তো আকাশ থেকে পড়লো ।
যা হোক আমি ফোন রেখে দেওয়ার কিছুক্ষন পর ও আবার আমাকে ফোন করল ।
নওফেলঃ “আমার কাছে আরেকটা সিম আছে যেটাতে দশ টাকা আছে, আমি বরং একটা কাজ করি , ৬৬ টাকা, যে সিমে ১০ টাকা আছে সেটাতে ট্রান্সফার করি কিন্তু পিন কোড তো জানি না ।”
আমি ওকে হটলাইনে কল করতে বললাম । রাত দুইটার দিকে আবার কল করলাম অবস্থা জানার জন্য ।
ব্যালেন্স ট্রান্সফারের নিয়ম হল এসএমএস চার্জ আড়াই টাকা মোবাইলে রেখে বাকি টাকা পাঠাতে হয় । যেমন ৬৬ টাকা থাকলে ৬৩ টাকা পাঠানো যাবে ।
কিন্তু নওফেল পুরো ৬৬ টাকাই পাঠানোর চেষ্টা করছিল । যার ফলে বারবার শুধু এসএমএস চার্জ কাটা যাচ্ছিল ।
অবশেষে ৬৬ টাকা ৫৮ টাকা হয়ে গেল । আমি তখন ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললাম ।
যাই হোক নওফেল ৫৬ টাকা পাঠানোর পর আগের ১০ টাকা নিয়ে আবারো ঘুরেফিরে যখন সেই ৬৬ টাকাই ব্যালেন্স হল তখন রাত সোয়া দুইটা বেজে গেছে ।
যেহেতু ব্যালেন্স ট্রান্সফার নিয়ে এত কাহিনী হওয়ার পরও সেই পুরনো ৬৬ টাকাই অপরিবর্তিত রয়ে গেল এবং টাকা ব্যবস্থা করার আর কোন রাস্তা নেই সেহেতু ইন্টারনেট আর হল না সেই রাতে ।
আমি দুঃখ প্রকাশ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পন্ডশ্রমের কথা ভেবে একটু হাসলাম, , , :goragori:

২০ টি মন্তব্য : “ব্যালেন্স ট্রান্সফার”

  1. আরে তাহমিনুল নাকি !!!

    শুভ ব্লগিং......
    নওফেল এর চ্যাট করার গল্প শুনে মজা পেলাম।
    লিখতে থাক...

    সি সি বি -এর পাঠকেরা উন্নত মানের। লেখক যেমন হোক, তারা তাদের অ্যাপ্যায়ন করে পূর্ণোদ্যমে...।
    :hug: :hug:

    জবাব দিন
  2. মরতুজা (৯১-৯৭)

    বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, ব্লগে নতুন আসলে বেশ কিছু নিয়ম কানুন আছে, এই যেমন খাওয়ানো 😀 । তবে আপাতত ফ্রন্টরোল চালু কর এডু স্যার আসার আগ পর্যন্ত। উনি আইসা মর্জি হইলে আরো কিছু লাগাইতে পারেন। B-)

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    শুভ ব্লগিং এবং সিসিবি পরিবারে স্বাগতম।
    চ্যাটিং কাহিনীটা গ্রামীণের চক্করে পড়ে শুরুই হতে পারলো না x-( ।
    ভালো ছিল। :thumbup: :thumbup:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।