এক্সট্রা ড্রিল

ব্লগের শুরুতেই ডিসক্লেইমার দেওয়ার স্টাইলটা জমে উঠেছে আর তাই আমিও লোভ সামলাতে পারলাম না
সতর্কীকরণঃ ক্যাডেট কলেজ লাইফে কেউ যদি কোন দিন এক্সট্রা ড্রিল না খেয়ে থাকেন তাহলে ক্রেডিট নেওয়ার জন্য বলার দরকার নাই কেননা তাতে প্রোপার ক্যাডেট হিসেবে টিজ খাওয়ার সম্ভাবনা আছে

আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস টেনে উঠেছি :-B
শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকেই আকাশ যথেষ্ঠ মেঘলা ছিল । অসহনীয় গরমে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ায় প্রেপে বসে থাকা বিরক্তির পর্যায়ে চলে গেল 😡
মাঝরাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামায় কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম :party:
মনে মনে দোয়া করছিলাম যাতে বৃষ্টিটা সকাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়, তাহলেই প্রিন্সিপাল ইন্সপেকশন প্যারেডটা করতে হবে না :just:

যথারীতি ভোর ৬ টার আগেই বৃষ্টি থেমে গিয়ে ঝলমলে রোদ উঠলো :(( :((
কি আর করা, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুবোধ ক্যাডেটের মত প্যারেড করতে হল :bash:
আমি ছিলাম নিচের বক্সে মানে ১ নাম্বার রুমে (মাহমুদ ভাইয়ের বিশেষ পরিচিত) 😀
আমি আর তৌহিদ রুমে এসে গল্প করছিলাম প্যারেড শেষ করে । আমার আরেক রুমমেট গালিব হসপিটালে এডমিট ছিল । তখন আবার ডাইনিং হলে লেট করা নিয়ে কলেজে বেশ কড়াকড়ি চলছে । সিনিয়ররা লেট করলে এক্সট্রা ড্রিল দেওয়া সংক্রান্ত একটি বিল পাশ হলো স্টাফ লাউঞ্জে সর্বসম্মতিক্রমে :gulli2:

যাই হোক অনেকক্ষণ গল্প করে আমি একটু বাইরে বের হয়ে দেখি কোথাও কোন ক্যাডেট নেই 😮
বলে রাখা ভাল আমাদের রুমটা একটু ভিতরের দিকে এবং বাইরের শব্দ খুব একটা শুনা যায় না । ডাইনিং হল থেকে টুং টাং শব্দ ভেসে আসছিল । বুঝতে বাকি রইল না যে ব্রেকফাস্ট শুরু হয়ে গেছে :frontroll: :frontroll:
অন্য কোন স্যার হলে সমস্যা ছিল না, নাম নোট করলেও পরে কলেজ প্রিফেক্টের রিকোয়েস্টে নাম কাটিয়ে নেয়া যেত পরবর্তীতে । কপালটা এতই খারাপ, সেদিন ডিউটি মাস্টার ছিলেন শ্রদ্ধ্যেয় ইকবাল হাসান তালুকদার স্যার (ভাল নাম তাকবাল হাসান ইলুকদার, ডাক নাম পল্টু) ~x( ~x(

ডাইনিং হলে ঢুকেই ডিউটি মাস্টারকে দেখে মেজাজটা ঠান্ডা হয়ে গেল । নিজের কপালকে দোষারুপ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না । মৃদু পায়ে অপরাধীর মত এগিয়ে গেলাম হাই টেবিলের দিকে । নাম নোট করা হলে টেবিলে বসে কিছুই খেতে ইচ্ছা করছিল না । জীবনে প্রথম ইডি খেতে যাচ্ছি । ভয়, আনন্দ, উত্তেজনা কাজ করছিল মনের মধ্যে । সবার কাছ থেকে প্রচুর অভিনন্দন পেলাম ডেব্যু করার বদৌলতে :clap: :clap:

ঐ সময়ে কয়েকজন বড় ভাই ছিলেন (নাম বললাম না) যারা নিয়মিত ইডি খেয়ে যেতেন অথচ তাদের চোখে মুখে কোনদিন ক্লান্তি অথবা বিরক্তির ভাব দেখিনি :salute:
হঠাৎ কখনো গেমস টাইমে তাদের খাকী ড্রেসে না দেখলে সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়তাম :just:
এর আগে কয়েকবার ইডি লিস্টে আমার নাম উঠেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত খাই নি (এক্সট্রা ড্রিল কি আদৌ কোন খাওয়ার জিনিস) :-/ :-/

কাঠের রাইফেলটা কাঁধে নিয়ে গেমস টাইমে যখন প্যারেড গ্রাউন্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখন আশেপাশের সবাই আড়চোখে একটু একটু করে তাকাচ্ছিল আমার দিকে যেন এইমাত্র চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে আসা আজব এক চিড়িয়া আমি 😕
বেশ উপভোগ করেছিলাম পুরো ব্যাপারটি । যদিও প্রেপে গিয়ে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিল । তারপর আর সৌভাগ্য হয় নি এক্সট্রা ড্রিল খাওয়ার :pira: :pira:

৬১ টি মন্তব্য : “এক্সট্রা ড্রিল”

  1. হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    ইডি খাই নাই, ড্রেস রেস্ট্রিকশন খাইছিলাম দুইবার মনে হয়। মাগার একবার এডু স্যার মিল্কব্রেকের শেষে ফর্মে বিয়াপক সাউন্ড পাইয়া ফুল ফর্মরে পাংাইছিলো ক্লাস নাইনে থাকতে। পাংা খায়া এত মজা পাই নাই আর কোনোদিন 😀

    জবাব দিন
  2. আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত খাই নাই ইডি। প্রোপার থাকার ট্রাই করতাম। টেনে খাইছিলাম পুরা ব্যাচের দোষে। ফর্ম লিডার ছিলাম, পোলাপান তখন হটাৎ কেন জানি ফর্মের ডিসপ্লে বোর্ড ছিড়া ফেললো...

    আমি আর আহাদ কারো নাম বলিনাই। ভিপি স্যার সবার দোষ আমাদের উপর দিয়া ইডি দিলেন। সেই আমার শুরু--- তারপর ১২ টা শুধু ইলেভেন-এ।

    এছাড়া দুইবার কলেজ আউট হইতেছিলাম নিশ্চিত-- দুই দৈব ঘটনার বদৌলতে আমি কলেজে ছিলাম--- আর তাই আল্লাহর রহমতে ব্যাপারে আমি সারা জীবনে একটা ক্ষণের জন্যও কিছু মনে হয়না-- জীবনে যা পাইছি! তা দিয়াই আমার চলে যাওয়ার মতো!!

    একটা বন্ড এবং তিন ধাপ বেতন বৃদ্ধি ছিলো নাইন-এ।
    ইলেভেন-এ লাস্ট ওয়ার্নিং ছিলো যেইটা আসলে আউট হইছিলাম -- রফিকুল ইসলাম স্যার আমার নামে সমস্ত দ্বায়িত্ব নেয়ার কথা রাজী হওয়ার পর রেখে দেয়া হইছিল। এই লোকটার প্রতি আমি আজীবনের জন্য ঋণী...

    অনেক কথা মনে পড়ে গেলো............
    থাক।

    জবাব দিন
    • বন্ড থাকলে তো প্যারেন্টস কল থাকেই।
      আর, এই কারণেই কলেজ লাইফে আমার পুরোটাই অনেক শংকা তে কেটেছে। শুধু ইলেভেনে ১০ টা ইডি, জেপি টাইম বাদে।

      আর টুয়েল্ভে তো প্রিফেক্ট ছিলাম-- খুব সাবধানে পা ফেলতাম, আমার আউটের চিঠি রেডি ছিলো এবং আতঙ্কে টাইমিং মেইন্টেইন করতে হতো। আবু সাঈদ বিশ্বাস স্যারের কাছে ধরা এবং আউটের সিচুয়েশন 🙁

      কলেজ থেকে আসার দিন প্রিন্সিপাল স্যার হয়ত এই কারণে দুই পা এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করে বলেছিলেন-- আমি তোমার উপর মুগ্ধ। আশা করি জীবনেও খুব ভালো করবে

      এখন অবশ্য স---ব অতীত। আমার কোন ভয় নাই!! ইচ্ছামত ঘুমাই, ইচ্ছামত খাই, মন মতো ক্লাসে যাই 🙂

      জবাব দিন
    • তাহমিনুল (২০০২-২০০৮)
      আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত খাই নাই ইডি

      ক্রেডিট দিলাম :boss:

      প্রোপার থাকার ট্রাই করতাম

      ট্রাই করতেন না বলেন প্রোপার থাকতেন 😛

      টেনে খাইছিলাম পুরা ব্যাচের দোষে

      সবার উপর কেমনে দোষটা চাপাইয়া দিলেন :khekz:

      ফর্ম লিডার ছিলাম

      সবাইরে জানাইলেন যে আপনি ফর্ম লিডার ছিলেন :dreamy:

      আমি আর আহাদ কারো নাম বলিনাই

      কেন বলবেন :-/
      আর বললে তো সবাই মিলে আপনারে গণ দিত :chup:

      একটা বন্ড এবং তিন ধাপ বেতন বৃদ্ধি ছিলো নাইন-এ

      মাশাআল্লাহ :(( :((

      জবাব দিন
    • দুইন্না থিক্কা লজ্জা উইঠ্যা গেছে ভাই
      :no: :no: :no:

      খাইছে মাত্র একটা-- সেইটা আবার কেমনে গল্প করতাছে :thumbdown: :thumbdown: :thumbdown:

      ব্যাটা তাহমিনুল, লং আপ হয়া থাক শালা প্রপার কুনহানকার x-( x-( x-(

      জবাব দিন
      • আমার নাম কইতাছস ক্যান??
        আমি প্রোপার তাইনা? ১২ টা ইডি, প্যারেন্টস কল, বন্ড সই দিয়া শেষ সুযোগ প্রদান, তিন ধাপ বেতন বৃদ্ধি, অতঃপর শুধুমাত্র একজন শিক্ষকের সাক্ষী হয়ে দ্বায়িত্ব নেয়ায় কলেজে শেষ বছরটা থাকতে পারা (কলেজ আউটের কাগজ ভিপি কর্তৃক সাইন হয়ে ফাইলে যাবার পর) ---------------------------------------------------- কোন পাগলে কইবো আমি প্রোপার??????

        তোরে সামনে পাইয়া নেই। তোরে সুরকির মত পিটায়া গুড়া গুড়া করুম 😡 😡 😡 মাইর কলেজে তোরে কম কইরা দিছিলাম মনে হয় :bash:

        জবাব দিন
  3. তাহমিনুল (২০০২-২০০৮)

    মাহমুদ ভাই আমি গল্প শুরু না করলে তো আপনারা কয়টা করে খাইছেন সেইটা জানতে পারতাম না :no:
    ইডি একটা খাইলেও পল্টু স্যারের কাছে খাইছি, আমি সৌভাগ্যবান :frontroll: :frontroll:

    ব্যাটা তাহমিনুল, লং আপ হয়া থাক শালা প্রপার কুনহানকার

    আমার ডিসক্লেইমার আমারেই দিলেন :bash: :bash:

    জবাব দিন
  4. নাজমুল (০২-০৮)

    তাহলে ফেল কেসের মতো আবার ও আমি নায়ক হতে যাচ্ছি B-)
    কারো মনে সামান্য পরিমাণ দ্বিধা দ্বন্দ থাকলে বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ২৫ তম ব্যাচের সকল ক্যাডেটগণ এবং ত্তকালীন ষ্টাফ কে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যানা যিবে B-)
    আমার অফিসিয়াল ই ডি=২৯ টা B-)
    আনফিসিয়াল ইডি=২ টা B-)
    আনফিসিয়াল ড্রেস রেস্ট্রিকসান=৫ টা
    অফিসিয়াল ড্রেস রেস্ট্রিকসান=৪টা
    বন্ড=৩টা
    জরিমানা=১০ হাজার সাম্থিং+৩ হাজার(কলেজ থেকে আসার পর) B-)
    তাহমিনুল ভাই আমার আর কোনো কিছু লিখিস না যাতে আবার ভাব মারতে পারি B-) যেমন অবৈধ জিনিস খাওয়া টাওয়া ইত্যাদি B-)

    জবাব দিন
  5. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমি ক্লাস টুয়েল্ভ পর্যন্ত মাত্র ৪ টা ইডি আর ৩টা ওয়ার্নিং খাইসিলাম। কিন্তু টুয়েনভে উঠে কি যে হলো ......... কেম্নে কেম্নে জানি আরো ২৫টা খায়া গেলাম, কিছু পেন্ডিং ও আছে মনে হয়। গত বছর যখন সার্টিফিকেট আনতে গেলাম, অ্যাডজুটেন্ট ফাইল সাইন করার সময় ফাইলটা মোটা দেখে ভিতরে পড়ে দেখে বলে, তুমি দেখি তোমার লেট করার ধারা ধরে রাখছো ...... 🙁 🙁 🙁

    জবাব দিন
  6. মাহফুজ (৯২-৯৮)

    মাত্র ২১ টা ইডি খাইছি, প্রথমটা ক্লাস এইটে, ক্লাস সেভেন আসার আগে। একবার টানা সাতদিন ইডি খাইছি প্যারেডে ডজ দেওয়ার জন্য, ক্লাস নাইনের টার্ম ফাইনাল চলতেছিল তখন; আরেকবার টানা ছয়দিন, প্রথম তিনদিন প্রেপে লেট, পরের তিনদিন ডাইনিং এ লেট। এই ছয়দিন আবার ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল চলতেছিল 🙁
    ওয়ার্নিং খাইছি তিনটা, ক্লাস এইটে, টেনে, আর ক্লাস ইলেভেনে। এই তিনবারই বেতন বেড়ে গেছিল।
    প্রিন্সিপ্যাল ইন্সপেকশন হলেই আমার কাবার্ড পুরোটা খালি করে চেক করা হতো ... যন্ত্রণা

    জবাব দিন
  7. সাজিদ (২০০২-২০০৮)

    আহ ইডি, ১২ পর্যন্ত খাই নাই 😕 😕 , আর যখন ১২এ ৬ দাগের যায়গায় ২ দাগ উঠল, ভাবসিলাম প্রপার ক্যাডেটের অপমান নিয়া কলেজ ছারা লাগবে 🙁 🙁 , কিন্তু মানির মান আল্লাহ রাখেন, তাই কলেজ ছারার আগে দিয়ে এক সাথে ৬টা খেয়ে নিসি B-) B-) B-)

    জবাব দিন
  8. মনজুর (৮৯-৯৫)

    পোলাপান কি কয় এইসব :O
    যে রাতে কলেজ থেকে বাইর হইয়া আসলাম, সেই দিন বিকালেও দেখলাম হাউসের নোটিস বোর্ডে- মনজুর (১৪২৯), ২ X ১ ইডি, নোটিশ ঝুলতাসে.. 🙁
    ওই ২টা কমপ্লিট হলে মোট :just: ১৪ টা হইতো.. :no: :no:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।