দিনবদলের হাওয়াঃ ক্যাডেট কলেজে প্রেমপত্র

আমি তখন ক্লাস সেভেনে । এক ফ্রেন্ডের কাছে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স দেখে কি মনে করে যেন স্কুল কুইজটা পুরণ করে পাঠিয়ে দিলাম :-B
একরাতে প্রেপের পর সানি ভাই আমাকে বললেন যে আমার একটি পার্সেল আছে । পার্সেল খুলে দেখলাম কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ২০০২ সালের আগস্ট সংখ্যা । প্রথমে ভেবেছিলাম আব্বু হয়ত বাসা থেকে পাঠিয়েছে । পরবর্তীতে ১০ জন কুইজ বিজয়ীদের তালিকায় নিজের নামটি ১ নাম্বারে দেখে কতটা আনন্দিত এবং বিস্মিত হয়েছিলাম সেটা আমার স্পষ্ট মনে আছে :dreamy:
ক্লাস সেভেন থেকে টেন পর্যন্ত মোট ২৯ বার কুইজ বিজয়ী হয়েছি :clap:
এর মধ্যে ২০০৪ সাল মানে ক্লাস নাইন খুবই ভাল কেটেছে :hug:
যেহেতু প্রায় মাসেই একটি কমন নাম কুইজ বিজয়ীদের তালিকায় থাকত সেহেতু আমি বেশ পরিচিতি লাভ করেছিলাম অচিরেই :shy:
তারপর থেকে শুরু হল আমার চিঠি আসা :chup:

দিনবদলের হাওয়ায় এখন তো সব কলেজেই মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে । অথচ কিছুদিন আগেও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি । চিঠি পেলে আনন্দিত হত না এমন ক্যাডেট খুব কমই আছে । কলেজ অথরিটি হঠাৎ করে সেভেন থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত সবাইকে প্রতি শুক্রবারে চিঠি লেখা বাধ্যতামূলক করে দিল ~x(
সিনিয়ররা স্বভাবতই চিঠি লেখাকে একটি বাড়তি ঝামেলা মনে করে থাকি । বড় ভাইদের খাম সাপ্লাই করতে করতে ডিউটি ক্যাডেটের মাথা গরম হয়ে যেত 😡
কুপনের অর্ধেক টাকা দিয়ে জুনিয়ররা খাম কিনত ভাইদের জন্য ।
সেই সময়ে চিঠি লিখার মাঝে একটা আনন্দ ছিল । সেই দিন আর নাই :no:

যাই হোক আমার কুইজ জয়ের সাফল্যে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে আমার জনৈক এক বন্ধু ( নাম বললাম না ) কুইজ পাঠালো এবং বিজয়ীও হল :clap:
আমার কাছে অন্য ক্যাডেট কলেজ এবং বাইরে থেকে যে চিঠিগুলো এসেছিল সেগুলো সবই ছিল ছেলেদের পাঠানো ।
আমরা সবাই জানি যে ক্যাডেটদের চিঠির কুমারীত্ব ঘুচান হাউস ডিউটি মাস্টার কারণ তিনিই সবার আগে ফ্রেশ চিঠিখানা পড়েন 😛
আমার সেই বন্ধুকে একরাতে প্রেপের পর রশীদ স্যার হাউস অফিসে ডাকলেন কারণ তার কাছে একজন মেয়ে চিঠি লিখেছে 😮
স্যার ধারণা করেছিলেন সেটা প্রেমপত্র কিন্তু আসলে মেয়েটা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সে আমার বন্ধুর নাম দেখে পেন ফ্রেন্ড হওয়ার উদ্দেশ্যে চিঠিখানা পাঠিয়েছিল =((
হাউস অফিসে কিছুক্ষণ ধুম ধারাক্কা চলল কারন তখন হাউস মাস্টার ছিলেন গণিতের হুমায়ুন কবির স্যার (বিপদজনক) :chup:

ক্লাস এইটে বার্ষিক বনভোজনে কলেজের সবাই গেলাম নাটোরের উত্তরা গণভবন । বিকেলে জুনিয়রদের আগে পাঠিয়ে দেয়া হল কলেজে কারণ সিনিয়রদের আগে পাঠালে কলেজ উল্টাপাল্টা করে দিত যেহেতু কোন টীচার ছিল না :gulti:
হাউসে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছি এমন সময় হাউস বেয়ারা এসে আমার টেবিলের উপর একটি চিঠি রেখে চলে গেল :-/
আমি খেয়াল করলাম চিঠিটা এখনো খোলা হয় নি । প্রেরকের নাম দেখে মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল 😡
আফরোজা তাসনীম আশা
জীবনে নাম শুনি নাই, এইটা আবার কে, আমি চিন্তা করছি !
চিঠি খুলতেই অনেকগুলো গোলাপের পাপড়ি বেড়িয়ে এলো ভেতর থেকে আর পোলাপান সব টিজ শুরু করে দিল :bash:
চিঠিটা ছিল এরকম…

প্রিয় তাহমিনুল
আশা করি ভাল আছ । আমার চিঠি পেয়ে তুমি খুব অবাক হয়েছ, তাই না ?
অবশ্য অবাক হবারই কথা কারণ তুমি আমাকে চেন না ।
আমার নাম আশা । আমি মাঝে মধ্যে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ি ।
গত কুইজের ২ নাম্বার প্রশ্নটার উত্তর কি হবে বুঝতে পারছিলাম না ।
তুমি তো উত্তর দিতে পেরেছ তাই ইচ্ছা হল তোমাকে চিঠি লিখতে ।
অনেকেই অবশ্য পুরস্কার পেয়েছে কিন্তু তোমার নাম দেখে মনে হল যেন তোমাকে চিঠি লিখলে তুমিও আমাকে চিঠি লিখবে, কি লিখবে তো ?
আশায় জগৎ টিকে আছে । আমি কিন্তু তোমার চিঠি অপেক্ষায় থাকলাম । আমাকে নিরাশ করো না ।
ইতি
আশা

এই চিঠি যদি হাউস ডিউটি মাস্টারের হাতে পড়ত তাহলে আমার কি অবস্থা হত সেটা খানিকক্ষণ বসে চিন্তা করলাম :frontroll:
এমন একটা দিনে চিঠিটা আসল যেদিন কলেজে কোন টীচার নাই, কি অদ্ভুত এবং জটিল টাইমিং :tuski:
মেয়েটির সৌজন্যে একটি চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু আজো সেটা পোস্ট করা হয় নি =((

৭৩ টি মন্তব্য : “দিনবদলের হাওয়াঃ ক্যাডেট কলেজে প্রেমপত্র”

  1. তাহমিনুল রে... ...

    দারুণ লিখছিস :clap: :clap:

    মেয়েটির সৌজন্যে একটি চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু আজো সেটা পোস্ট করা হয় নি

    কেন? কেন? কেন??
    এইটা তুই ঠিক করিস নাই ব্যাটা 😡 😡

    রবীঠাকুরের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ তে শুনিস নাই?

    ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি

    😛 😛

    জবাব দিন
  2. আমরা সবাই জানি যে ক্যাডেটদের চিঠির কুমারীত্ব ঘুচান হাউস ডিউটি মাস্টার কারণ তিনিই সবার আগে ফ্রেশ চিঠিখানা পড়েন 😛

    ভাষাশৈলী তো অসাধারণ। এইভাবে কখনো ভাবি নাই।

    জবাব দিন
  3. আমাদের শাহদাত সাপ্তাহিক ২০০০ এর কি একটা সংখ্যায় গল্প লিখে এইরকম কিছু একটা হইছিল। তারপর থেকে ওর কাছে চিঠির বন্যা। চল্লিশোর্ধ আন্টি থেকে শুরু করে ক্লাস এইটের বালিকাদের চিঠির যন্ত্রণায় বেচারা অতিষ্ঠ হয়ে গেছিল। বেশিরভাগই বন্ধুত্ব, কিছু প্রেম নিবেদন।

    এর মধ্যে একটা ছিল বরিশালের মেয়ে। টানা ৩ টা চিঠি লিখেও শাহদাতের কাছ থেকে কোন উত্তর পায় নি। তাই চার নম্বরটা ছিল থ্রেড দিয়ে,
    সব মনে নাই, কয়েকটা লাইন ছিল এই রকম ইচ্ছা করেই আঞ্চলিক ভাষায় লেখা,
    "... উত্তর দাও না ক্যান অ্যা? মুই কইলাম মেন্দিগঞ্জের মাইয়া, মুই টাংগাইল আইতে আছি, তোমারে খুইজ্জা বাইর করতে মোর দেরি অইবে না..."

    জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)

    তাহমিনুল ভাইডি, আশা পরম আশা নিয়ে বসে থেকে তোমার যে চিঠিটা পেয়েছিল ঐটা ব্লগ আকারে কবে দিচ্ছো?
    ভালো লাগলো :hatsoff: ।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  5. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    তাহমিনুলের এই ইমো দিয়া কম্পোজ করা পোস্টগুলা দারুন লাগে :thumbup:
    কিছুটা কমেন্ট কমেন্ট ভাব আছে 😀 , নিজে সারাদিন খালি কমেন্টই করি দেইখা হয়তো আরো ভাল্লাগে :clap: :clap:
    যদিও আশা আফারে রিপ্লাই দেওনাই দেইখা তোমার ব্যাঞ্চাই :)) :))


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাহমিনুল (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।