গণ সমাচার

এই পোস্টটি দেয়ার আগে গণ শব্দটি নিয়ে অনেকক্ষণ ভাবলাম :-B
সিনিয়র ক্লাসের সব ক্যাডেট যখন জুনিয়র ক্লাসের সব ক্যাডেটকে একটি নির্দিষ্ট কারণে ধোলাই করে তখন তাকে আমাদের কলেজে গণ বলে :chup:
অন্য কলেজে এটাকে কি বলে সেটা নিয়েই চিন্তা করছিলাম :-/
নাম যেটাই হোক কাজ তো একটাই । গণ হল গণধোলাই এর সংক্ষিপ্ত রুপ ।

সবেমাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছি আর তাই রক্ত গরম । আস্তে আস্তে পাখা গজানো কেবল শুরু হবে । ভাবলাম দুঃখের দিন মনে হয় শেষ হতে চলেছে কারন সেভেন এইটে তো আমাদের উপর দিয়ে সিডর বয়ে গেছে । সবাই কেমন যেন মাস্তান মাস্তান হয়ে উঠে এই সময়টাতে :gulli:
আমার মনে হয় এটা ক্যাডেটদের সিনিয়রসন্ধিকাল । অনেক গণ খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে ক্যাডেট কলেজের বদৌলতে । কারনে-অকারনে, সময়ে-অসময়ে গণ খেয়ে একেবারে টমেটো কেচাপ হয়ে যেতাম :no:

শুক্রবার ব্রেকফাস্টের পর কিংবা কোন ছুটির দিন পেলেই হল, আর রক্ষা নেই, জীবনটা তামা তামা করে দিত ভাইজানেরা । সেভেন এইটে তো সিগারেট খাওয়ার কোন সুব্যবস্থা নেই কলেজে ( বিঃদ্রঃ- আমি এখনো সিগারেট খাই নি, ভাল ছেলে ) 😀
ক্লাস নাইন থেকেই মুলত চুপিসারে কোন এক ড্যামকেয়ার ক্যাডেট সিগারেট খেয়ে এমন ভাব নেয়ার চেষ্টা করে যে পারলে মহাবীর আলেকজান্ডার সাহেব নিজেই লজ্জা পায় :party:

শুভ দিন দেখে ক্লাস ইলেভেন আমাদের পুরো ক্লাস ডাকলেন ৫ নাম্বার রুমে । আমরা মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না কারন সাম্প্রতিক কোন ফল্ট নেই আমাদের । আগে ক্লাস ইলেভেন ছয় এবং সাত নাম্বার রুমে থাকত কিন্তু সেভেনকে নাকি এইট গণ দেয় আর তাই সেভেন চলে এল ছয় সাতে, হাউস মাস্টার অফিসের সমান্তরাল ।

যাই হোক ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকলাম সবাই । ঢুকে দেখি সব কেয়ামতের আলামত । টেবিল, চেয়ার, বেড, সব সরানো হচ্ছে আর অস্ত্রশস্ত্র রেডী প্রায় । অপরাধ হল আমাদের কেউ কেউ নাকি লুকিয়ে স্মোকিং করে, হাউস বেয়ারা কমপ্লেইন করেছে । অথচ এসব কিছুই হয় নি । আয়োজনটা ছিল মুলত পরিকল্পিত এবং অনেকটা বাসর রাতে বিড়াল মারার মত যাতে করে ভবিষ্যতে কোন নাইনের ক্যাডেট স্মোকিং করার সাহস না পায় ।

আমাদের হাউস গার্ডেনে একটি সুন্দর মাঝারী সাইজের গাছ ছিল যেটাতে শুধু ডালপালা হত এবং গণ দেয়ার জন্য একদম পারফেক্ট । কিছু ডাল ভেঙ্গে আনা হল এবং দেখলাম সবার হাতেই মোটামুটি অস্ত্র চলে এসেছে । কিছুক্ষনের মধ্যেই যুদ্ধ শুরু হবে :gulli2:
চারদিকে টান টান উত্তেজনা । আমরা ১৬ জন সেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মত লাইনে দাঁড়ালাম আর আমি পড়লাম একেবারে মাঝখানে :bash:

গাছের ডাল, টেবিলের পাদানি, ফ্ল্যাশ চেইন, বেল্ট, লকার স্টিক, হ্যাঙ্গার ইত্যাদি ছিল একেকজনের হাতে । আমাদের সবাইকে হ্যান্ডস ডাউন করানো হল । ক্লাস ইলেভেন দুই ব্যাটালিয়নে ভাগ হয়ে গেল এবং দুই প্রান্তের দায়িত্বে রইলেন আরাফাত এবং নাদিম ভাই ।
মহাতান্ডব শুরু হয়ে গেল আর আমাদের বারোটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকী ।
আরাফাত আর নাদিম ভাইয়ের নেতৃত্বে আস্তে আস্তে দুই প্রান্ত থেকে মারতে মারতে এগুতে লাগল ।
আমার বাম পাশে ইকবাল, ডান পাশে গালিব । আরাফাত ভাই ইকবাল পর্যন্ত এসে ওকে মারার সুবিধার জন্য আমাকে ডান দিকে চাপতে বললেন । ইকবালকে মারা শেষ হলে উনি ভাবলেন যে আমি নাদিম ভাইয়ের কাছে মার খেয়েছি :khekz:
আর এদিকে নাদিম ভাই গালিব পর্যন্ত মেরে থেমে গেলেন কারণ উনি মনে করেছিলেন যে আমি আরাফাত ভাইয়ের কাছে ধোলাই খেয়ে ফেলেছি :))

হঠাৎ খবর আসল হাউস বেয়ারা আসছে । হাউস বেয়ারার উপস্থিতিতে মারা নিষেধ । কমপ্লেইন করে দেয়, স্বভাব খারাপ । ৫ নাম্বার রুম থেকে সবাই বের হয়ে উপরে আমাদের রুমে চলে এলাম । তারপর আবিস্কার করলাম এত বিশাল একটা গণ হয়ে গেল অথচ একটা থাপ্পর পর্যন্ত খেলাম না :tuski:
এটা তো আর কাউকে বলা যায় না কারণ সবার অবস্থা খুবই খারাপ 😕
এখন যদি বলি তাহলে সবাই মিলে আমাকে গণ দিবে । এখনো কাউকে বলি নি :pira:

৭০ টি মন্তব্য : “গণ সমাচার”

  1. সামি হক (৯০-৯৬)

    কোন হাউস? হাউস বেয়ারা কে ছিল? হাউস বেয়ারারা বাইরে থেকে খালি চিল্লাতো কিন্তু পানিসমেন্ট দেওয়া নিয়ে কোন কম্পলেইন করতে দেখি নাই।

    ক্লাস নাইন আর ক্লাস ইলেভেনের মধ্যে সবসময় লেগে থাকে আবার এরাই যখন এক্সামিনী হয় তখন এক টয়লেটে দাড়ায়ে সিগারেট ফুকে 😀 😀 ...

    মিয়া তোমরা ছয় সাত রুম পাও নাই ক্লাস ইলেভেনে থাকতে? তাইলে তো কলেজে কিচ্ছু পাও নাই...

    আরো বেশি করে লিখো ব্লগ কলেজ প্রচন্ড মিস করি।

    জবাব দিন
    • তাহমিনুল (২০০২-২০০৮)

      সামি ভাই আমি তারিক হাউসে ছিলাম আর হাউস বেয়ারা ছিল আলাউদ্দিন ভাই ।
      ভাই কলেজ অনেক বদলে গেছে আর এখন যা শুনবেন সেটাই অবাক লাগবে ।
      চিল্লাচিল্লির দিন শেষ । দিন বদলাইয়া গেছে ।
      কি করব বলেন ছয় সাত নিয়া যে কাহিনী হইছে 😕
      সেই কলেজ আর নাই রে ভাই ।
      কলেজ এখন মিউজিয়াম হওয়ার পথে ।
      কয়েকদিন আগে কলেজে গেছিলাম সেই কথা আর কইলাম না 🙁

      জবাব দিন
      • সামি হক (৯০-৯৬)

        মিয়া তুমি তারিক হাউসের আগে বলবাতো ব্লগে তাহলে তারিক হাউসরেও ট্যাগ করতা... 😀

        হ্যা রে ভাই কলেজ বদলাবেই আমরাও শুনতাম সিনিয়রদের কাছে যে তারা যা দেখছে তার থেকে কলেজ বদলায়ে গেছে অনেক... আসলে সময়টা বদলাচ্ছে কিন্তু আমরা আমাদের সময়ে দেখা কলেজের স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকি, আর এর জন্যই পরিবর্তনটা আমাদের অবাক করে।

        তোমার আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

        জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    অনেক কথা মনে করায়া দিলা ভাই ...... :dreamy: :dreamy: :dreamy:

    নাইনে থাকতে ইলেভেন (৯০-৯৬) আর টুয়েল্ভের (৮৯-৯৫) ভাইয়েরা মিলে একবার আগাছা বাছাইয়ের মতন সার্চ এন্ড ডেস্ট্রয় টাইপের অপারেশন চালায়সিলো। আমার কাছে কিছু পায়নাই আর যারা ধরা খাইসিলো তারা কেউই আমার নাম বলে নাই।

    পরে পরিক্ষার্থী সময়ে ৯০-৯৬ ব্যাচের কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট সিগারেট খাইতে দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু কেনো জানি উনি লজ্জা পেয়ে চলে গিয়েছিলেন। এতো করে ডেকেছিলাম, ভাইয়া আমি চলে যাচ্ছি, আপনি ধরান। শুনলই না। :)) :)) :)) :)) :))

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    আমরা ভাই সিনিয়রদের কাছে যেইটা খাইতাম সেইটারে বলতাম পাঙ্গা। আর দোস্তরা আদর করে যেইটা দিত সেটারে বলতাম গণ।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. গণ খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নাই, কিন্তু বহুবার দিছি, আমাদের একজন ক্লাসমেটকে ক্লাস নাইনে গণ দেওয়ার সৌভাগ্য হইছিল, বেচারা রাগের চোটে পুরা ব্যাচের সাথে ইন্টারএকশন বন্ধ কইরা দিছিল, অবশ্য দুইতিনদিনের মধ্যেই আবার আগের ফর্মে.... 😀 😀 😀

    জবাব দিন
  5. ওই ব্যাটা,...

    আবার হাজির হইছিস??
    ভালো লিখছিস। কিন্তু আমরা তো গণ বলতাম ব্যাচের পোলাপাইন ধইরা লাগাইলে 😀

    তোরা আমরা চলে আসার এক বছর এর মধ্যে কি সংজ্ঞা পাল্টায়া ফেলছিলি?

    জবাব দিন
  6. কামরুলতপু (৯৬-০২)
    আমরা ভাই সিনিয়রদের কাছে যেইটা খাইতাম সেইটারে বলতাম পাঙ্গা। আর দোস্তরা আদর করে যেইটা দিত সেটারে বলতাম গণ।

    আমরাও একই রকম। সিনিয়র রা জুনিয়র দের একদিন ছাড়া কখনোই গণ দিত না। তাও কোন ফল্ট নিয়ে না। আমাদের নিয়ম ছিল এথলেটিক্স ফাইনালের দিন ৩ গ্রুপে যারা বেস্ট এথলেট হয় তাদের ক্লাস ১১ গণ দেয়। আমি একবার এই সৌভাগ্য অর্জন করছিলাম। ওরে নারে ফুয়াদভাই,নাজিমভাই,রাব্বানিভাই এরা মিলা গণ দিছিল। গণ এর নিয়ম হইল ডাকা হইলে গিয়ে ভালয় ভালয় পিঠ পেতে দিতে হবে যা হবে সব পিঠে পড়বে। তো সেদিন ডাকা হইলে কেউ যাইত না সিনিয়র ব্লকে কারন সেইদিন পার হয়ে গেলে আর গণ দেওয়া হইত না। কিন্তু খুব টেকনিক্যালি ফাঁদ পাতা হইত। আমারে আমার হাউসের হাউস প্রিফেক্ট ডেকে কি একটা শাহজালাল হাউসে গিয়ে দিয়ে আসতে বলল । গেলাম , সিনিয়র ব্লকে ঢুকার সাথে সাথে দেখি পিছন দিকে এক দল আসছে আর সামনে একদল দাঁড়ায় আছে বুঝে ফেললাম কি হবে। কি আর করা।

    জবাব দিন
  7. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    কতবার যে জুনিয়রদের পাংগাইলাম! তাহমিনুল, তোমাদের সিনিয়র ব্যাচ বেশি মাইর খেয়েছে আমাদের হাউসে। তোমাদের ব্যাচ আমাদের কাছে ততটা মাইর খায় নাই।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।