এই সব দিন-রাত্রি পর্ব-২

পর্ব-১
বহুজাতিক কোম্পানীর এই একটা জিনিষ আমার ভালই লাগে, এরা সেইফ্‌টির ব্যাপারে কোনও ছাড় দেয়না। ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়া-আসা অফিসের ট্রান্সপোর্টেই হয়। প্রতিটা জার্নির জন্য আলাদা জার্নি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান সংক্ষেপে জেএমপি তৈরী করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইমেইল করে দেওয়া হয়। জেএমপি ছাড়া কোনও জার্নি হবেনা। ঢাকা ছাড়ার পর তিনটা কী-পয়েন্ট থেকে ফিল্ড সেইফটি অফিসারকে ফোন করে গাড়ির কারেন্ট লোকেশান ইনফর্ম করতে হয়। তেমনি ফিল্ড থেকে ঢাকা যাবার সময়ও একই নিয়মে ফোন করে নিজের অবস্থান জানাতে হয়। গাড়িতে চরলে সীট বেল্ট বাধ্যতামুলক (যেটা বাংলাদেশে কেউ মেনে চলেনা বলেই আমার বিশ্বাস)। প্রতিটা গাড়িতে জিপিএস মোডেম লাগানো যাতে করে ভেহিক্যাল ট্রাকিং সিস্টেমে গাড়ির তাৎক্ষনিক লোকেশান জানা যায়। গাড়িগুলোতে আরেকটা ডিভাইস লাগানো, নাম ‘ড্রাইভ রাইট’। চালানোর সময় গাড়ি নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলে এলার্ম বিপ্‌ বিপ্‌ করতে থাকে আর একটা নির্ধারিত নম্বরে এসএমএস চলে যায়। গাড়ি হঠাৎ ব্রেক্‌ করলে বা হঠাৎ এক্‌সিলারেট করলেও সেটা ডেটাবেইজে রেকর্ডেড থাকে যা পরবর্তিতে আমরা ডাউনলোড করে ড্রাইভারদের পারফর্মেন্স এভালুয়েশান করতে ব্যবহার করি। যে ড্রাইভার ডিফেন্সিভ ড্রাইভিং রুল্‌স যতবেশী কমপ্লাই করে এ্যানুয়াল এসেস্‌মেন্টে তার গ্রেড তত ভাল।

ফিল্ডে এলেই অনেক সেইফ্‌টি রুল্‌স সবাইকে মেনে চলতে হয়। প্রথম রুল হচ্ছে প্রসেসিং এরিয়ায় যেতে হলে পিপিই (পারসনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরা বাধ্যতামুলক। পিপিই হল কাভারঅল, বুট, হার্ড হ্যাট, প্রোটেকশান গ্লাস। ঠিক যেমন ছবিতে আমরা দেখি যে মাইনে বা রিগে কেউ কাজ করছে তেমন।

Me and my colleague in PPE

দেশী কোম্পানিগুলায় কাজ করার সময় দেখেছি ওখানে আমলাতান্ত্রিক ওভারহেড অনেক বেশী। একটা অফিসিয়াল ইন্‌ফরমেশান সবাইকে ডেলিগেট করতে দেশি কোম্পানিগুলায় নানান ফ্যাঁকড়া। ড্রাফট করো, প্রিন্ট করো, অফিস অর্ডার কর, ডিভিশান/ডিপার্টমেন্টগুলায় সার্কুলেট কর আরও কত কি। সাদা চামড়ারা বেশীর ভাগ কাজ ইমেইলে ই সেরে নেয়, ওদের সময় নষ্ট করার মত এত সময় নাই। যে কোনও অফিসিয়াল করেসপন্ডেন্স্‌ বেশীরভাগই ই-মেইলেই হয়। ই-মেইল ওদের কাছে অনেকটা লিখিত রেকর্ড, যা ভবিষ্যৎ কোনও রেফারেন্সের জন্য ওরা ব্যবহার করে। ই-মেইলের এমন বহুবিধ ব্যবহার আমি এখানেই প্রথম দেখলাম, দেশী কোম্পানিতে এইসব চর্চা এখনও অনুপস্থিত। তাই সকালে অফিসে ঢুকে কম্পিউটার অন করে আমাদের প্রথম কাজই হল আউটলুক ওপেন করে সিস্টেম ট্রে-তে মিনিমাইজ করে রাখা, যাতে কোনও মেইল পেলেই আমরা সাথে সাথে রেসপন্স করতে পারি। অফিসের বাইরে থাকলে পাম থেকে ইমেইল আপডেট পেয়ে রেসপন্স করতে হয়। যদিও এটুকু সুবিধা শুধুমাত্র কী-রেসপন্সিবল পার্সনদের জন্য… (চলবে)

২,০২৯ বার দেখা হয়েছে

২৪ টি মন্তব্য : “এই সব দিন-রাত্রি পর্ব-২”

  1. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    প্রতিটা গাড়িতে জিপিএস মোডেম লাগানো যাতে করে ভেহিক্যাল ট্রাকিং সিস্টেমে গাড়ির তাৎক্ষনিক লোকেশান জানা যায়। গাড়িগুলোতে আরেকটা ডিভাইস লাগানো, নাম ‘ড্রাইভ রাইট’। চালানোর সময় গাড়ি নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলে এলার্ম বিপ্‌ বিপ্‌ করতে থাকে আর একটা নির্ধারিত নম্বরে এসএমএস চলে যায়।

    এখানে এসে এই জিনিস আমি প্রথম দেখলাম। দেশেও যে আছে জানতাম না।
    ভালো লাগছে :clap: :clap: ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    শফি ভাই চলুক।
    আপনার কম্পানির কথা শুনতে ভালো লাগতেছে।
    আলাদা আলাদা পেশাগুলোর কাজের পরিবেশ, ধরণ এইসব শুনতে অন্যরকম লাগছে বস্ । :boss: :boss:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শফি (১৯৮৬-৯২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।