এই সব দিন-রাত্রি

সন্ধ্যা থেকে কম্পিউটারের সামনে বসা। ব্রাউজারে উদ্দেশ্যহীন ঘুরাঘুরি, পরিচিত কেউ অনলাইন হলে একটু কথা-বার্তা, মুভি দেখা এই সব আর কি।
গত রবিবার থেকে আমি কুমিল্লায়, আমার ফিল্ড অফিসে। এখানে আসলে আগে থাকতে হত কন্টেইনারে, এখন একটা স্থায়ী লিভিং কোয়ার্টার হয়েছে। নতুন এই একোমোডেশানের করিডোর ধরে হাঁটলে ঠিক কলেজের দিনগুলো ফিরে ফিরে আসেField Accommodation মনে হয় যদি সবাইকে আবার একসাথে এখানে পাওয়া যেত! কি জম্পেস আড্ডাটাই না বসত। এখানে সকালে উঠতে হয় সকাল সাড়ে পাঁচটায়, ব্রেকফাস্ট ছয়টায়। সাড়ে ছয়টায় মর্নিং মিটিং। মিটিং এ ঐ দিনের লুক এহেড প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয় এবং তার সারসংক্ষেপ সবাইকে ইমেইল করে দেয়া হয়। টি-টাইম হচ্ছে বেলা নয়টায়, লাঞ্চ দুপুর বারোটায়। অফিসিয়ালি আমার পোস্টিং ঢাকা অফিসে, কিন্তু মাসে এক সপ্তাহের জন্যে এখানে তদারকি করতে আসতে হয়। এখানে আমাদের একটা ভিস্যাট আর পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট রেডিও লিঙ্ক আছে যা দিয়ে ঢাকা এবং দেশের বাইরে কোম্পানীর অন্যান্য অপারেশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ছোট্র একটা ল্যানও আছে। আর আছে অটোমেটেড গ্যাস প্লান্টের হার্ট যার নাম পিএলসি। এর দেখভালও আইটি’র ঘাড়ে। কাজের চাপ কখনও একেবারেই থাকেনা, কখনও ঠিক উলটো – দম ফেলার সময় থাকেনা। এমনও হয়েছে, রাত একটায় পিএলসি তে সমস্যা হওয়ায় আমাকে ঘুম থেকে উঠে যেতে হয়েছে সমস্যার সমাধান দিতে। x-(

বেলা তিনটায় আবার টি-ব্রেক। ফিল্ডের অফিস আওয়ার শেষ হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। আর ডিনার সন্ধ্যা সারে ছয়টায়। এরপর অখন্ড অবসর। টিভি দেখ, ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াও, জিমে যাও – ঠিক অনেকটা যেমন খুশী তেমন সাজ টাইপ। সারাটা দিন একভাবে কেটে গেলেও সন্ধ্যার পরে সময় যেন আর এগুতেই চায়না। ডিনারের পর যদিও সহকর্মীদের নিয়ে আধাঘন্টার একটা আড্ডা জমে চায়ের কাপ হাতে সেটা আর বেশি দূর এগোয়না। তারপর যে যার যার ডর্মে ঢূকে যায়। যার ফরেইনার ওরা রুমের মধ্যে সুরা নিয়ে বসে যায়। আমরা বাঙ্গালীরা হয় টিভি দেখি, নয়তো রুমে গল্প করি আর নয়তো এই যে এখন বসে কম্পিঊটার নিয়ে গুঁতোগুতি করছি। ফিল্ড অফিসের ক্যাম্পাসের চারিদিকে একেবারে গ্রাম। ধানক্ষেত। তবে ভোরের প্রথম সূর্যটা আর রাতের আকাশটা দেখতে অসাধারন, ঢাকায় বসে যেটা কখনই সম্ভব না। সকালে উঠে যখন অফিসের দিকে মর্নিং মিটিং এটেন্ড করতে যাই চারদিক থাকে কুয়াশার চাদরে মোড়া আধো আলো আধো অন্ধকার। অনেক বক, মাছরাঙ্গা, ফিঙ্গে আরও অনেক নাম না জানা পাখি এক জায়গা থেকে উড়ে আরেক জায়গায় যেয়ে বসছে। সূর্যটা গোলাপী একটা আভা নিয়ে পূব আকাশে উঁকি দিচ্ছে, অসাধারন সুন্দর একটা দৃশ্য, দেখলেই মনটা ভাল হয়ে যায় …….

রাত বাড়ছে, সকাল সাড়ে পাঁচটায় উঠতে হবে, আরেকদিন এখানকার অন্য প্রসংগ নিয়ে লিখব। শুভরাত্রি।
পর্ব-২

২,০০১ বার দেখা হয়েছে

২৩ টি মন্তব্য : “এই সব দিন-রাত্রি”

  1. তানভীর (৯৪-০০)
    সকালে উঠে যখন অফিসের দিকে মর্নিং মিটিং এটেন্ড করতে যাই চারদিক থাকে কুয়াশার চাদরে মোড়া আধো আলো আধো অন্ধকার।

    শফি ভাই, কলেজে শীতের সকালের পিটির কথা মনে করায়ে দিলেন। দৌড়াইতে দৌড়াইতে সূর্য উঠা দেখতাম।
    ইসসসশ! আবার যদি কলেজে থাকতে পারতাম! 🙁

    লেখাটা ভাল হয়েছে ভাইয়া। পরের লিখাটার অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  2. আলম (৯৭--০৩)

    লাঞ্চ করেন না?

    সারাটা দিন একভাবে কেটে গেলেও সন্ধ্যার পরে সময় যেন আর এগুতেই চায়না। ডিনারের পর যদিও সহকর্মীদের নিয়ে আধাঘন্টার একটা আড্ডা জমে চায়ের কাপ হাতে সেটা আর বেশি দূর এগোয়না। তারপর যে যার যার ডর্মে ঢূকে যায়।

    তাইলেতো আপনার থেকে আরো বেশি লেখা পাওয়া উচিত।

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    অনেকদিন পর শফি ভাই লিখলেন :clap: :clap:
    বস্ যেহেতু রেগুলার কুমিল্লায় আসতেছেন তাইলে সুরা প্লাস টিভি পর্ব শেষে সিসিবিতে দিনলিপি দিয়া দিয়েন। মজাই লাগে পড়তে 🙂 :boss: :boss:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর(৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।