ডেইলি প্যাসেঞ্জার – পর্ব ৪

ইদানিং পাবলিক সবাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেসে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সবাই চিরতার রস খাইয়া বের হয় কিনা কে জানে, তাদের কথাবার্তায় রস কসের বড়ই অভাব ! ভাবছিলাম আমার ডেইলি প্যাসেঞ্জার পর্ব ম্যালাদিন বীর বিক্রমে চালু থাকবে পাবলিকের অবদানে, কিন্তু সেই আশায় গুঁড়ে সুরকি মিশ্রিত বালি ! পাবলিক বাসে উঠলে এখন খালি কাইজ্জা করে, একটুও বিনোদন পাওয়া যায়না ! তারপর ও মাঝে মাঝে আখের মত ছেঁচা দিয়া কিঞ্চিৎ রস বের হয় বৈ কি !

পিচ্চি পাচ্চা আসলেই মারাত্মক। বছর তিনেকের এক বিচ্ছু পিচ্চি ( এইটা আমি হলফ কইরা কইতে পারি জন্মের সময় নিতম্বে দুইখান এক্সট্রা বান্দরের হাড্ডি নিয়া জন্মাইছে ) লাফাইতে লাফাইতে তার মা জননীর হাত ধইরা উঠসে বাসে । সামনের দিকে একটা সিটে বসছে তার মায়ের কোলে । আর পিছে বসা সব যাত্রীদেরকে একে একে সে ভেংচি কাটতে লাগল। নেহায়েত একদম পিচ্চি বলে কেউ আর গোসসা করেনা মনে হয়। আমি বসেছিলাম ঠিক তার পিছের সিটে। মায়ের সিট লাফায়ে পার হয়ে সে আমার ব্যাগ, ক্লিপ হাবিজাবি ধইরা টানাটানি করে এমন অবস্থা। আর কিছুক্ষন পর পর জিহ্বা বের করে বান্দরের সাথে সাদৃশ্য প্রমাণ তো আছেই। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে আমিও আমার জিহ্বা বের করে দেখানো ফরজ মনে করলাম। বেচারা পিচ্চি কতক্ষন ধরে ভাবতেসে আল্লাহর দুনিয়ায় সেই একমাত্র বান্দর যার লেজ পিছনে না থাইকা মুখের ভিতরে আছে ! আমি সহমর্মিতা দেখায়ে আমার জিহবাটাও তাকে বার কয়েক দেখায়ে দিলাম। কিন্তু বেক্কল পিচ্চি একটুও সান্ত্বনা পাইলনা। সে তার মাকে ডেকে আমাকে দেখায়ে দিল, আম্মু , আন্টি মারে !! বাস সুদ্ধা লোক পিচ্চির পিছনের সিটে আমার অবস্থান দেখে এই অভিযোগ সত্যি ভাইবা আমাকেও মনুষ্য সম্প্রদায়ের বহির্ভূত ঠাওরাল নিশ্চিত ! আর পিচ্চির মায়ের অগ্নিদৃষ্টিতে আমি বাসন মাজা ছাই তথা ভস্ম হব কিনা চিন্তা করতে লাগলাম ।

সাপ, ব্যাঙ, তেলাপোকা খাইলে মনে হয় মানুষ স্লিম হয় । এইটা আমার গবেষণা লব্ধ ফল। যে কয়েকটা চায়না বাস বাংলাদেশে আসছে,এইগুলার সিটের সাইজ দেখে আমি এই জ্ঞানার্জনে সক্ষম হইসি । একদিন বাসে উইঠা দেখি দেড়খানা সিট নিয়ে বসা এক মহিলার পাশে আধখানা সিট খালি আছে। আমার নিজেরি সোয়া খানা সিট লাগে। কেমতে আমি আধখানা সিটে বসব এইটা ভাবতেই ভাবতেই দেখি আরেকটা মেয়ে উঠসে বাসে। আমি সাথে সাথেই ওই আধখানা সিট বিশাল বপুর সিকিভাগ দিয়া দখলে নিলাম। তারপর বাকিটুকু খালি ইতিহাস ! এক একবার বাস মোড়া মারে আর না হয় রোলার কোস্টার টাইপ ফীলিংস আসে, আর আমার মনে হয় এই বোধ হয় আমি ভূপাত ধরণীতল থুক্কু বাসের মেঝে ! শেষমেশ আশপাশে চোখের কোণা দিয়ে তাকায়ে আমি পাশের দশাসই মহিলা কে ঠেলতে লাগলাম। কিন্তু তাকে ইঞ্চি খানেক ও নড়াতে না পেরে ক্ষান্ত দিয়ে মুখটা বাংলা পাঁচের মত করে আশপাশে কোন খালি সিটের সম্ভাবনা খুঁজতে থাকলাম। এই সময় ঠিক পিছনের কোণাকুনি একটা চ্যাংড়া পোলা সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল- ‘” মারো ঠেলা হেঁইয়ো ”

নিউ ভিশন বাসটার নাম নিয়া কয়েকদিন ব্যাপক গবেষণা করেও এই নামের সার্থকতা বের করতে পারিনাই। প্রথমে ভাবছিলাম, মনে হয় এই বাসে উঠলেই সবার ‘ভিশন’ নিউ হইয়া যায় ! কিন্তু এই বাসেই সব বাসের মত ক্যাচাল দেইখা এই তাৎপর্যের খেতা পুড়লাম। কিন্তু একদিন যথার্থই ছোটবেলায় বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার সেই ইস্পিশাল উত্তরের শেষ লাইনের মত বুঝলাম যে, “নামকরণ সার্থক” ।  ঘটনা হইল, সামনের চারটা মহিলা সিটের একটাতে আমি উপবিষ্ট হয়ে দেশ ও জাতির কল্যানে আশেপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মাঝামাঝি সিটে বসা এক পোলার দিকে চোখ গেল । হঠাত দেখি ডিপজলের মত ভিলেন হাসি মেরে ওমর সানীর মত এক চোখ টিপ মারল। বার তিনেক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে বুঝলাম,ছেলেটার এটা নতুন দৃষ্টি তথা নিউ ভিশন ! আমার পাশের সুন্দরী তরুণীর সেইদিকে বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ দেখে বুঝলাম ঘটনার শিকার তাইলে এই সুন্দরী। আবেশ প্রক্রিয়ায় কি না বলতে পারিনা, এই নতুন দৃষ্টিতে সেই তরুণীও আবেশিত হইল । এডাম টিজিং নামক উঠতি ফ্যাশানে উদ্বুদ্ধ মাইয়া সেই পোলাকে বাস থেকে নামতে দেখেই জোরেশোরে হাক দিয়ে বলে উঠল, “ট্যারা ভাই ,ট্যারা ভাই, ভাল আছেন তো? ” ওই পোলা তার নিউ ভিশনের এহেন বিচ্ছিরি খেতাব পেয়ে একটু বেশি তাড়াহুড়া করেই নাইমা গেল ।

এই কাহিনী দেইখা চক্ষু সার্থক করার সৌভাগ্য আমার হয়নাই । আমার অতি আদরের অতি বাঁদর বোন ( সরি দিবামনি 😛 )এই কাহিনীর খলনায়িকা । ঢাকা থেকে মেহেরপুর একা একা বিশাল বাসযাত্রায় একবার তার পাশের সিটে অতি ডিস্টারবিং এক পোলা বসার পর পুরো জার্নিটা নাকি তার তামা তামা হয়ে গেসিল। সারা রাস্তা এইটা ওইটা জিজ্ঞেস করে, অং বং বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ লেকচার ছাড়ে আর খালি আজাইরা নিজের গুনগান গায়। ঘুমের ভান করেও নাকি দিবা পার পায়নি। অবশেষে দিবা ঠিক করে, এর বদলা সে নেবেই । পাটুরিয়া ঘাটের কাছাকাছি বাস পৌঁছালে দিবা ব্যাগ থেকে পানি বের করে খাওয়ার চেষ্টার নাম করে ঠিক পারফেক্ট এঙ্গেলে পোলাটার এক্কেরে জায়গা মত পানি ঢেলে প্যান্ট ভিজিয়ে দেয় যাতে কেউ দেখলেই মনে করে পোলাটা এক নম্বর করে ফেলসে ! দিবা নাকি একবার প্রস্তাব দেয়ার কথা চিন্তা করেও থাইমা গেসিল, ” আমি হিসু করিনাই” একটা কাগজে লিখে ওই পোলার গলায় ঝুলায়ে দেবে কিনা ! পোলাটা রাগে গজগজ করলেও বাকি রাস্তা নাকি দিবা শান্তিমত ঘুমাইতে পারসিল।

১,৯৫৭ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “ডেইলি প্যাসেঞ্জার – পর্ব ৪”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    :khekz: :khekz: :khekz:
    প্যাসেঞ্জার আবার ব্যাক করছে দেখে ভাল লাগল, জার্নি চলত থাকুক :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. তপু (৯৯-০৫/ককক)

    :)) আমি বাস এ উঠলে কারো দিকে না তাকায়ে ঘুম দেউআএ স্রেঅ মনে করি। প্রায় এ ভাবি ঘুমাতে ঘুমাতে আবার সাভার চলে যাব না ত? জাই হক একবার নাম্ব ফারমগেটে ছোখ মেইললা দেখি গাজিপুর।

    জবাব দিন
  3. তানভীর (২০০১-২০০৭)

    আপু, চলতে থাউক আপ্নের মুড়ির টিন।
    ব্যাপক মজা পাই =)) =)) =))
    মাঝে মাঝে ভাবি এই মানুষটার এত সুখ ক্যান ;;; ;;; ;;;
    খুব মজা পেলুম।
    পরেরটার অপেক্ষায়।


    তানভীর আহমেদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সুষমা (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।