শেষ প্রান্তে

বছর তিনেক আগে কোনো একটা কোরিয়ান মুভি থেকে alzheimer’s symptom সম্পর্কে জেনেছিলাম। যথারীতি অন্যান্য সিনেমার মত সিনেমাটিক রোগ ই মনে হইছিল।পরে অবশ্য অল্প বিস্তর পত্রিকা আর অন্য সিনেমা দেখে জানলাম আসলেই এই রোগের অস্তিত্ব আছে আর এরকম রোগির সংখ্যা ও নেহাত কম নয়।

অফিস এ প্রথম দিন এক কলিগ এর সাথে পরিচয় হল যার বয়স চুরাশি।উনি আমাকে নাম,ধাম,কই থাকি ইত্যাদি সাত সতের জিজ্ঞেস করলেন… মিনিট পনের পর উনি আমাকে আবার এক ই সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন।আমি ভাবলাম,উনার বয়স হয়েছে,হয়তবা মনে নাই। ও মা ,ঘণ্টা খানেক পর আবার……পরে অন্যান্য কলিগ রা বললেন উনি সবকিছু ভুলে যান। উনা কে মানবিক দিক বিবেচনা করে এখনও অফিস এ রাখা হয়েছে ।উনি নতুন কোন কিছু মনে রাখতে পারেন না কিন্তু বছর পাঁচেক আগের সব কিছুই তার মনে আছে, তার মানে alzheimer’s.

পরে লাঞ্চ এর পর আমি খাইছি কি না তা উনি কম পক্ষে ৫ বার জানতে চাইলেন……উনি অফিস থেকে বের হওয়ার আগে আমার ডেস্কের সামনে এসে হাউমাউ কান্না…।।কাহিনি হল উনার আমার বয়সী এক মেয়ে মারা গেছে,আমাকে দেখে উনার আবার সব কথা মনে পড়ে গেছে…কখন যে আমিও কেদে দিয়েছি বুঝি নাই

পরদিন অফিস এ খেয়াল করলাম অন্যান্য কলিগ রা উনাকে নিয়ে ঠাট্টা করে।আমার খুব মন খারাপ হল,কারন স্বাভাবিক ভাবেই এই বৃদ্ধ মানুষটার প্রতি সহানুভুতি হওয়ার কথা …কিন্তু কয়দিন  যেতে ই বুঝলাম আমি ও আস্তে আস্তে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি ।প্রতিদিন ৩-৪ বার আমার ডেস্কের সামনে কান্নাকাটি করা আর বারবার এক ই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার ভাল লাগছেনা…।

আসলে বুড়ো মানুষদের প্রতি আমরা খুব সহজেই বিরক্ত হয়ে যাই ,আমরা  খুব অস্থির জাতি হয়ে যাচ্ছি…মানবিকতার ঊর্ধ্বে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য ই কেন যেন মুখ্য হয়ে ওঠে বারবার।

 

কয়েকদিন ধরে বাবা আমার উপর রাগ করে আছেন,আমি নাকি তাকে কল করিনা, অভিযোগ একেবারে মিথ্যে বলবনা, অধিকাংশ দিন বাবা ই কল দেন,দুইদিন ধরে বাবা আর কল দেননি, রাত ৯ টায়  সারাদিন অফিসের ঝক্কি সেরে বাসায় ফিরে আমার ও আর মনে পড়েনি কল দেয়ার কথা।আমার  বাবা অভিমান এ আর আমাকে কল দেননি…।।

কি নিষ্ঠুর আমরা, আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের বাবা রা কি অফিস করেন নি ?কখনো  মনে পড়েনা কোনদিন আমাদের আবদার মেটাতে তার কোন আপত্তি, যত রকম উদ্ভট  খেয়াল এর সঙ্গী হয়েছেন নির্দ্বিধায় ,রাত বিরেতে আমাদের যত  খামখেয়ালিপানা  প্রশ্রয় দিয়েছেন …।আর আজ যখন আমাদের পালা,তখন আমাদের অজুহাতের যেন কোন শেষ নাই…

সরি বাবা,কোন মুখে যে বলি, তোমাকে অনেক ভালবাসি… লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে…কিছুই চাও না  তুমি, আমি জানি……।শুধু আমাদের ভালবাসা ছাড়া……দোয়া করো, তাতে ও যেন কার্পণ্য না করি……।।

১,৫০৭ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “শেষ প্রান্তে”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেখা ভাল লেগেছে... ব্লগে স্বাগতম 🙂 (একটু কষ্ট করে নামটা বাংলা করে দাও আর সাথে কলেজের অবস্থান কালটা জুড়ে দাও)

    শুভ ব্লগিং 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    হ্যাঁ অফিস জিনিষটা আমাদের সব কেড়ে নিচ্ছে। আবার অনেকে আছে অফিসের কাজে সারাক্ষণই ব্যস্ত আছি বলতে পছন্দ করে। গবেষণা বা নিজের ব্যবসা হলে কিছু বলি না কিন্তু কামলা খাটা কাজ হলে তাকে বলি - তুমি কি ক্রীতদাস নাকি সারাক্ষণই অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকবে? বাস্তবতা হলো এই যে বর্তমান যুগের প্রতিযোগিতা এবং প্রয়োজন আমাদের সবটুকু কেড়ে নিচ্ছে। আমরা নিজেরাও তা বুঝতে পারছি না।

    লেখা ভালো লাগলো। শুভ ব্লগিং।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)
    আমরা খুব অস্থির জাতি হয়ে যাচ্ছি…মানবিকতার ঊর্ধ্বে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য ই কেন যেন মুখ্য হয়ে ওঠে বারবার।

    কারন আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি, চাওয়া আর চাওয়া। কি চাই আমরা নিজেরাই জানিনা... 🙁

    জবাব দিন
  4. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আমিতো ব্লগ পড়ে ভাবলাম নতুন মানুষ। লিখেও ফেলছিলাম "শুভ লেখালিখি!" কমেন্ট পড়ে বুঝলাম, পাসওয়ার্ড ভুলে নতুন ব্লগার। কি আর করা - এ্যালজেইমার বলে কথা!


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  5. ব্লগ এডজুট্যান্ট

    প্রিয় সদস্য,
    আপনি যে আইডি'র মাধ্যমে সিক রিপোর্ট করেছিলেন, সিসিবির ডাটাবেইজে সেই মেইল আইডি'র সাথে সংশ্লিষ্ট একাউন্টটিই আপনার অনুরোধে সক্রিয় করতে সহায়তা করা হয়েছিলো। এরপর মন্তব্য অনুসরণ করে আমরা আমাদের ডাটাবেইজে আপনার আরও একটি একাউন্টের উপস্থিতি পেয়েছি, যেটিতে আপনার পূর্বের ৪টি পোস্টও রয়েছে। ভিন্ন সময়ে দুটি আইডি খোলাতেই এই বিড়ম্বনা।

    আপনি যদি contactএটcadetcollegeblog.com এই আইডি'তে আপনার কাঙ্খিত ব্লগ আইডিটি নিশ্চিত করেন তবে সেটিই সক্রিয় করে দেয়া হবে।
    -ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  6. মীম (২০০৬-২০১১)

    আসলেই ছোটো বেলা থেকে বাবা যে কোন চাহিদা পুরণ করেন নাই তা মনে করতে পারছি না.....আপু নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে......এমন ১টা realization দরকার ছিল...... ধন্যবাদ আপু...... :boss: :boss: ::salute:: ::salute::

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সুষমা (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।