লুলা কাহিনী

আমাদের ব্যাচটা এমনিতেই অদ্ভূত। আর কিছু ব্যাপার এমনই অদ্ভূত যার কোনো ব্যাখ্যা নাই। একজনের জ্বর হলো তো টানা বিশ ত্রিশজনের একসাথে জ্বর, হসপিটালে জায়গা নাই, শেষ পর্যন্ত বিশেষ ব্যাবস্থায় রুমে রাখতে হল। হাম, লুলা, এপেন্ডিসাইটিস সব ক্ষেত্রেই তাই।

লুলা কাহিনীর স্টার্টিং আমাদের বিখ্যাত সামিয়া বিবির, আমাদের তখন ওয়াল ম্যাগাজিনের কাজ চলতেসিল। শীতকালে প্রায় সারারাত জেগে কাজ করসি। যতটুকু সম্ভব বেশি ঘুমানো যায় সেজন্য সে নাইটির উপর কার্ডিগ্যান, তারো উপর ট্র্যাকসুট গায়ে দিয়ে ঘুমায় গেসে। যেন সকালে উঠে ঐভাবেই গ্রাউন্ডে নেমে যাওয়া যায়। তখন আবার শীত শেষের দিকে।
এমনেই সে নামত সবার লেটে। আমরা ততক্ষণে সবাই গ্রাউন্ডে নেমে গেছি। তিনতলা থেকে কয়েকটা সিঁড়ি লাফ দিয়ে দিয়ে নামতে গিয়ে হঠাৎ ভূপাতধরণীতল (চার হাত পা ছড়িয়ে)। কোনমতে উঠে একটু খোঁড়াইতে খোঁড়াইতে গ্রাউন্ডে ফলিনে দাঁড়াইসে, এক রাউন্ড প্যারেড করে এসে হঠাৎ চোখে আন্ধার, পুনরায় চিৎপটাং (এর কারণ অবশ্য তিন রাউন্ড ছালা)। ওকে হাসপাতালে নিতে আমাদের অবস্থা …(কল্পনা করে নিন)

এবার নূরা পাগলা। এডজুটেন্টের দাবড়ানিতে কাব্য চিন্তা বাদ দিয়ে কবি নূরা পাগলা গেছে টেনিস খেলতে। প্রচন্ড ভালো (!!!) খেলার দরূণ টেনিস বলটা বাউন্স করে বাউন্ডারী তো বটেই, মাঠের বাইরে। নূরা পাগলা গেছে বল কুড়াইতে, বল তোলার জন্য নীচু হয়ে কেমনে জানি বসছে, আর হঠাৎ ওর ঠ্যাং বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করে হ্যাং করসে। জিনিয়ারা খাণিক্ষণ ডাকাডাকি করে বিরক্ত হয়ে ব্যাট দিয়ে ওকে মারতে আসছে, এসে ওর করূণ মুখ দেখে বুঝছে কাহিনী খারাপ। হসপিটালে নেয়ার পরে দেখা গেলো ফ্র্যাকচার হয়ে গেছে।

এরপর শৈলী। পহেলা বৈশাখে পারফর্মারদের স্টেজেই আসনপিঁড়ি হয়ে বসে থাকতে হত, যতক্ষণ না সব ভ্যাজর ভ্যাজর শেষ না হয়। অনুষ্ঠান শেষে যখন সে উঠতে যাবে, মনে হল পায়ে শিকড় গজায় গেছে, সে আর উঠতে পারে না। তাকেও ধরাধরি করে হসপিটালে নেয়ার পর দেখা গেলো, একই কাহিনী, ফ্র্যাকচার।

এভাবে জুঁই, সুমি এবং আরও কয়েকজন (স্পেসিফিকালী মনেও নেই এতদিনে) নাম লেখালো লুলা কন্টিজেন্টে।

এবং এক সময় নটে গাছটিও মুড়োল, লুলা কাহিনী ফুরোল।

৩,১১৮ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “লুলা কাহিনী”

    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      😀 , আমাদের কলেজের শেষ জীবনের প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের সংগে ফুটবল খেলতেন, স্যারের ষ্টামিনা ছিল দুর্দান্ত, আমরা কোন ছাড় দিতাম না স্যারকে খেলার সময়, ল্যাং ট্যাং ও মারতাম মাঝে মাঝে।

      হঠাৎ একদিন খেলার মাঝখানে দেখি স্যার খেলা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বাসায়। ঘটনা কি? স্যার চলে যাচ্ছেন কেন?

      প্রচন্ড স্মার্ট স্যার বললেন, তার প্যান্টের সিলাই ছিড়ে গেছে, এখন তিনি আর কনটিনিউ করতে পারবেন না।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  1. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    যাক গায়েব হস নাই। 😀
    লেখা ভাল লাগছে। :gulti: :gulti:

    ওকে হাসপাতালে নিতে আমাদের অবস্থা …(কল্পনা করে নিন)

    সবচে ভয় পাইতাম 'চোখ উঠারে'।। যতবার চোখ উঠার মৌসুম শুরু হইত কলেজে, আমারে কেন জানি 'চোখ উঠা' খুব ভালা পাইত। 🙁

    লিখতে থাক।। নো গায়েবানা :grr: :grr:

    জবাব দিন
  2. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    আমাদের মামুন একবার স্বপ্নে দেখলো ও রোলানদিনহো হয়ে গেছে। তারপর একটা ফ্রি কিক নিতে যাইয়া বিছানার পাশে টেবিলরে দিলো লাথি...তারপর তিন মাস... :grr: :grr:

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমাদের একজন ই কলেজ লাইফ এ তিনবার হাত/কব্জি ভেংগেছিল। বলাই বাহুল্য, ওর নামই হয়ে গিয়েছিল ভাংগা ...... (এখন সে হবু ডাক্তার)


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।