ঘুরে এলাম পাহাড়ের দেশ

লেখিকা হিসেবে এটা আমার প্রথম প্রচেষ্টা হলেও সিসিবি’র পাঠিকা হিসেবে আমি বেশ পুরনো। নিজে ক্যাডেট নই, কিন্তু প্রথমে বন্ধু-বান্ধব, তারপর ভাই এবং সবশেষে স্বামীর কাছ থেকে ক্যাডেট কলেজের গল্প শুনতে শুনতে আমি যেন হাফ-ক্যাডেট হয়ে উঠেছি। তাই বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সিসিবি’র মাধ্যমে এর লেখকদের সাথে আমার হৃদ্যতা একেবারেই অকৃত্রিম. সিসিবি’র প্রতি আমার এই টান দেখে আমার হাসবেন্ড মাহমুদ (১৯৯০-৯৬) আমাকে প্রায়শই এখানে যোগ দিতে বলে। তার অনুপ্রেরণা থেকেই সাহস করে লিখে ফেললাম অতিসম্প্রতি ঘুরে আসা একটা ভ্রমণের গল্প।

আমেরিকার ব্যস্ত জীবনে মানুষ নিঃশ্বাসও নেয় গুনে গুনে। এই ব্যস্ততার মাঝে টানা কয়েক সপ্তাহের ছুটি পেলে সব কিছু ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে ছুটে যাওয়াতেই যেন সকল প্রশান্তি এবং তৃপ্তি। এই ক্রিসমাসের ছুটিতে আমরাও ঘুরতে গিয়েছিলাম লস এঞ্জেলস শহর থেকে দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এক শান্ত-নির্জন শহরে। এ যেন এক স্বপ্নের দেশ, পাহাড়ের দেশ। খাড়া পাহাড়ের গা’ বেয়ে এঁকেবেঁকে চলা পথ ধরে উঠে যেতে হয় অনেক উঁচুতে। দূর থেকে দেখা কুয়াশাগুলো যতই কাছে আসতে থাকে, ততই ভ্রম ভাংতে থাকে; এগুলো আসলে পেঁজা তুলোর মতো সাদা সাদা মেঘ, পাহাড়ের চূড়া থেকে ভেসে ভেসে নামছে। পাহাড় আর মেঘের এতো গভীর সখ্যতা এর আগে এমন করে দেখা হয়ে ওঠেনি। আমার ছেলেবেলা কেটেছে যশোর শহরে। পাহাড়-নদী-সমুদ্রর সাথে তাই সেভাবে পরিচয় হয়নি। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখেছি কেবল ক্যালেন্ডার আর পোস্টকার্ডে। তাই এইসবের মাঝে বেড়াতে যাওয়া ছিল আমার জন্য এক বিরল অভিজ্ঞতা।

আমরা যাচ্ছিলাম এক বড়ভাইয়ের গাড়ীতে করে। গাড়ী যতই উপরে উঠছিল, ততই ছোটবেলায় দেখা ক্যালেন্ডার আর পোস্টারের ছবিগুলো চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে দেখা দিচ্ছিল। আমার এইসব কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে কখন যে তিন হাজার ফুট উপরে উঠে এসেছি তা’ খেয়ালই করিনি। সম্বিৎ ফিরে পেলাম ব্যাক-গ্লাসে দূরের গাড়িগুলোকে খেলনার মতো দেখে। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। কোন কোনটার উপরে সাদা বরফ জমে আছে। সূর্যের আলোয় সেই শ্বেতশুভ্র রঙ ঠিকরে পড়ছে চারিদিকে। মনে হচ্ছিল কেউ যেন সাদা চাদরে ঢেকে দিয়েছে পাহাড়গুলোকে। একটু নিচু পাহাড়গুলো ব্যস্ত মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলায়। কোনটা নতুন বউয়ের মতো মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়ে রেখেছে, কোনটা আবার উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে।

ছোটবেলায় দাদীর মুখে গল্পে শুনেছিলাম আল্লাহ তায়ালা নাকি পাহাড়গুলো দিয়ে পেরেক ঠুকে পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। দাদির কথা কতখানি সত্যমিথ্যা সেই বিচারে না গিয়েও সেদিন উপলব্ধি করলাম প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়-পর্বতের অসামান্য অবদান। কয়েক হাজার ফুট উঁচুতে এমন পরিবেশে বেশ কিছু বাড়ী দেখে আরো অবাক হলাম। শুধু বাড়ী বললে ভুল হবে, রীতিমত প্রাসাদ একেকটা। এইসব বাড়ির মাসিক ব্যবস্থাপনা খরচ আমাদের দেশের  যে কোনো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বার্ষিক বাজেটের থেকেও বেশি। সত্যিই আল্লাহ যাদের দিয়েছেন, তাদেরকে যে কত দিয়েছেন তা বোঝার জন্য এর থেকে ভালো উদাহরণ আর কি হতে পারে?

বাংলাদেশের এক ছোট্ট শহরে জন্ম নেওয়া এই আমি আজ ভাগ্যক্রমে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে বাস করার সুযোগ পেয়েছি ভেবে আনন্দিত হই। কিন্তু পরমুহূর্তেই কষ্টে বুকটা ভরে ওঠে যখন দেশের অভাবী-জরাজীর্ণ মানুষগুলোর মুখ মনে ভেসে ওঠে।

৬৯ টি মন্তব্য : “ঘুরে এলাম পাহাড়ের দেশ”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম ভাবী... লেখা দারুন লাগল, ছবি গুলোও।

    শুভ ব্লগিং 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    আরে কলেজ ভাবী নাকি।। হ্যাপ্পি ব্লগিং।
    ছবি গুলা দেখেতো এই দুনিয়ার মনে হয় না।। 😕

    লেখা দারুন লাগল 😀 :clap:


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সিসিবিতে স্বাগতম ভাবী...
    লেখা দেখে মোটেই মনে হচ্ছেনা যে এইটা আপনার প্রথম প্রচেষ্টা! সাথে ছবি দিয়াতো আফসোস আরো বাড়িয়ে দিলেন, এখন আম্রিকা যাইতে মঞ্চাইতেছে 😀

    একটু পরেই আমাদের চাওয়ালা আইসা চা দিবে। মাহমুদ ভাইতো সময় পেলে নিয়মিতই লিখছেন, আশা করি আপনাকেও নিয়মিত লেখালেখিতে দেখবো সিসিবিতে।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি)

    কাইয়ুম ভাই অনেক ধন্যবাদ।লেখালেখির ইচ্ছটা আসলে মাহমুদ কে দেখেই শুরু।আফসোস না রেখে একবার সময় নিয়ে এদিকে ঘুরে যান।দেখবেন অনেক ভালো লাগবে।

    জবাব দিন
  5. রকিব (০১-০৭)

    সিসিবিতে শুভেচ্ছা ভাবী। আমি রকিব, যদিও ঐ নামে আজকাল কেউই আমাকে আর চেনে না; আড়ালে আবডালে জুনিয়র পোলাপাইনও শুনছি চাওয়ালা রকিব ভাই বলে ডাকে x-( x-( ।
    কী-বোর্ড কাপিয়ে লিখতে থাকুন ভাবী, আপাতত এই নিন এক কাপ :teacup: , আচ্ছা না থাক দুই কাপ :teacup: :teacup: । একটা আপনার, আরেকটা শেষের ছবিতে আপনার সাথে যেই ভদ্রলোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে উনার জন্য। 😛
    হ্যাপি ব্লগিং !!!


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  6. মুহিব (৯৬-০২)

    সালাম ভাবী সাব। ভালা আছুইন নি? ব্লগে স্বাগতম। :teacup: লিখতে থাকুন। আপনার লিখা পড়তে পড়তে আর ছবিগুলো দেখত দেখতে আমিও মনে হয় ওখানে চলে গেছিলাম। তবে আপাতত ক্যালেণ্ডার এর ছবি ভেবে নিচ্ছি, নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য যদি কখনও হয় তখন সত্যি মনে করে নিব। কি বলেন???????? :hatsoff: :thumbup:

    জবাব দিন
  7. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    ব্লগে স্বাগতম ভাবি 😀
    লেখা অতিব সুস্বাদু হয়েছে 😛 ক্ষিধে বেড়ে গেল, আরও চাই :grr:
    হ্যাপী ব্লগিং ::salute::
    অফটপিকঃ রিবিন ভি এর সাথে যদি আমার জন্যও একটা টিকেট পাঠাইতেন.... :shy:

    জবাব দিন
  8. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    ভাবী ক্লাশে ছিলাম। তাই সারাদিন সেল থেকে কেবল আপনার লেখা, ছবি আর কমেন্ট দেখে হাত নিশপশ করছিল কখন কমেন্টাব। আপনার লেখা যেমন ভাল লাগল ছবিগুলোও অসাধারন। ব্লগে স্বাগতম। এখন কী-বোর্ডে ঝর তোলা স্টার্ট করে দেন।
    অঃটঃ ভাবী বইলা কিন্তু প্রথম ব্লগের নিয়ম থেকে মাফ পাবেন না! :grr:


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  9. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    কানিজ ফাতিমা সুমাইয়া (অতিথি) ওরে বাপরে কতো বড় নাম!! তোমাকে অতিথি নামেই ডাকবো কিনা দুই তিন মাস পর বোঝা যাবে!

    সুস্বাগতম ছোট বোন। ফৌজি ভাইদের কায়দায় ভাবী শব্দটা আমার তেমন আসেনা। প্রথম পোস্টে নতুনদের স্বাগত জানায় অ্যাডজুটেন্ট। কিন্তু সিসিবিতে এই পদটা অনেকদিন ধরে একরকম খালি। তাই কারে দিয়া যে কাজটা করাই! ওহ্‌ হো......... ফয়েজ আছে না!

    লেখা এবং ছবি সবই দারুণ উপাদেয় হয়েছে। আর মন্তব্য যা করছো, তাতে কে বলবে সিসিবিতে তুমি নতুন!! দারুণ........... লিখতে লিখতে কি-বোর্ড ভেঙ্গে ফেল।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  10. তৌফিক (৯৬-০২)

    পায়ে হাত দিয়া সালাম ভাবী। সালামি দিতে হবে না, সালামির টাকা দিয়া একটা টিকিট কিনা দেন, আম্রিকা আসুম, পাহাড়ের দেশ দেখুম ;;)

    হ্যাপি ব্লগিং... 🙂
    সিসিবি পরিবারে স্বাগতম... ::salute::

    জবাব দিন
  11. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আর কাম পাইলা না তুমি, বিয়া করলা ফুকোরে, তোমার জীবন তো ত্যানা হই যাইবো দুই বছর পরে, 🙂

    মাহমুদ রে কইও আমার কথায় যেন মাইন্ড না খায়, খাইলেই পাংগা


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  12. মনজুর (৮৯-৯৫)

    খুবই সাবলিল লেখা... ঝরঝরে.. পড়তে ভালো লাগলো. .
    মাহমুদ বই বাদ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে.. 😮 এতো সময় পায় কই :-/

    যাউগ্গা.. শুভ ঘোরাঘুরি.. প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন ছুটি থাকুক...

    জবাব দিন
  13. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    সুন্দর লেখা সুমাইয়া। ছবিগুলোও খুব সুন্দর। আমারও খুব ঘুরে বেরানো হচ্ছে। তোমাদের ওদিকে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাথে বিশাল পরিবার ছিলো। তাই আর ফোন করিনি।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  14. আরিফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ভাবিরা প্রথম ব্লগ লেখলে আমাদেরকে কাচ্চি খাওয়াইতে পারে,
    যারা যারা পক্ষে আছেন, হাত তুলেন।
    সুস্বাগতম ভাবী, আমাদের ছন্নছাড়া জগতে।


    মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা
    অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রবিন (৯৪-০০/ককক)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।