ক্রিকেট

১৯৮৯ সালে আমার বয়স ১০ ছুই ছুই করছে।পাড়ার আর সব ছোটোদের মত হাফ প্যান্ট পরে আমিও আউটার স্টেডিয়ামে বল টুকিয়ে দিতে যেতাম।দুর্দান্ত গতিতে ছুটে আসা বল টি পা দিয়ে ঠেকাতে যেতেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঠক করে একটা সব্দ শূনতাম।আর একটু পরেই বুঝতে পারতাম বলটি আমার পায়ের গোড়ালিটিকে থেতলে দিয়ে গেছে।বড় রা ছুটে এসে আমায় প্রথমে বকা দিত,তারপর বল ধরার টেকনিক(লং বেরিয়ার) টা শিখিয়ে দিত।ব্যাথা পেলেও ক্রিকেট বলটির প্রতি একটা দুর্দান্ত আকর্ষন কাজ করত।মনে মনে ভাবতাম জীবনদার মত আমিও কি কোনদিন পারব এই বলটিকে মেরে স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে ফেলতে।
সেইবছর টাঙ্গাইল জেলা ক্রিকেট ফাইনাল খেলা দেখার সৌভাগ্য হল।মুসলিম রেনেসা বনাম থানাপাড়া ক্লাব। শুনেছি শ্রীলঙ্কা এবং ঢাকা থেকে বড় বড় প্লেয়ার এসেছে। অশোকা ডি সিল্ভা(বর্তমানে icc আম্পায়ার)ললিত সাগর,রডরিগ,গামাগি এরা খেলতে এসেছে। এই গেইমটাই ছিল আমার ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগের হাতেখড়ি।উত্তেজনাপুর্ন একটি খেলা দেখার পর থেকে মনে মনে শপথ নিলাম ‘খেলাটা ভাল করে সিখতে চাই’।
বড় ভাই তখনি ক্রিকেটে ঢাকা-টাঙ্গাইলে বেশ নাম কামিয়ে নিয়েছে।কিন্তু বাবার সহযোগিতা পায়নি কোনদিনই। দাদার এই মেধাটাকে সবাই disappreciate করল।্সবার ধারনা ‘খেলাধুলা করে কি হবে?’ তাই আমার মনে সুপ্ত বাসনা থাকলেও তা বাস্তবে রুপ দেবার জন্য মুখ ফুটে বলিনি কোনদিনই।
কিন্তু মনে মনে ভালবেসে গেলাম খেলাটাকে।পেশা নয়,অন্তত ক্রিকেটি হোক আমার নেশা।পেশাগত ক্রিকেট নয়,নেশাগত ক্রিকেট হলেও ক্রিকেট ত ক্রিকেটই, যার পরিচয় রেজাল্টে।দিন শেষে কে ম্যাচ জিতল এখানে সেটারি হিসেব করা হয়।
আসলে এই কথাগুলো বললাম এই বয়সে নিজেকে প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে মেলে ধরার জন্য নয়,বরং ক্রিকেটের কিছু নিজস্ব সৌন্দর্য আছে যা আমি কাছ থেকে দেখেছি তারই ছোট্ট কিছু বর্ননা তুলে ধরার জন্য।
প্রথমত,দলগত সৌন্দর্য।ক্রিকেটের একটা বড় দিক আমি দেখেছি যেটার উপর একটি গেমের জয় পরাজয় নির্ভর করে তা হল দলের ভাবমুর্তি।দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে তার সহযোগীর প্রতি দৃস্টিপুর্ন,যত্নশীল এবং সহনশীল হতে হবে।অনান্য খেলায় মাথাগরম ভাল খেলোয়ড় সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে,কিন্তু ক্রিকেটে মাথা গরম,উন্নাসিকতার স্থান আস্তাকুরেতে।মাথা গরম প্লেয়ার ক্রিকেট খেলতে পারে না যার সঙ্গে টিমমেটদের ভাল সম্পর্ক নেই।উদাহরন,ধরুন খেলার আগেরদিন আপনি্ টিমমেট কিম্বা পরিবারের কার সঙ্গে ঝগড়া করলেন।খেলাটা ফুটবল হলে হয়ত মাথা গরম করে একটা শট খেলে একটা গোলও করে বসতে পারেন।কিন্তু ক্রিকেটে no way.বল ধরার জন্য মাজাই নামাতে পারবে না যত ভাল ফিটনেসই থাকুক না কেন।

দ্বীতিয়ত,পার্সনাল ক্রিকেট।নিজস্ব ক্রিকেটকে খুরধার করতে হলে চাই অনুশীলন যার কোন বিকল্প নেই।নিজের ক্রিকেটকে শানিত এবং খুরধার করার জন্য জুনিয়র ক্রিকেটারের কাছ থেকেও ভাল টিপস নিতে দ্বিধা করা উচিত নয়।কিন্তু আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের মাঝে আমি এই ব্যাপারটা দেখিনি।একজন একদিন ভাল খেল্লেই মনে করে সে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার,যেটা মনে করার বাস্তবিকি কোন কারন নেই।
তৃতিয়ত,নিজের ডিপার্টমেণ্টের উপর আস্থা স্থাপন।যে বল টাকে মারবেন বলে ঠীক করেছেন সেখানে কোণোরুপ দ্বিধা করলেই ক্যাচ আউট নিশ্চিত।তার মানে আপনি জানেন কোন বলটাকে আপনি ছক্কা মারছেন।

চতুর্থত,খেলয়ারদের চিন্তাশীল এবং খেলয়াড়ী মনোভাব এ দুএর পাসাপাসি অবস্থান।খেলা নিয়ে চিন্তা করার কোন বিকল্প নেই।একটি ৫০ অভার গেমে নতুন নতুন পরিস্থিতি আসছে প্রতি নিয়ত।ম্যাচ হেরে যাবার জন্য একটি ওভারি যথেস্ট।সেই ওভারটি হতে পারে ৪০ তম ওভার কিম্বা ৫০ তম ওভার,কিম্বা ১০ ম ওভার।তাই সেই ওভারটিকে চেক দেবার জন্য আানাকে থাকতে হবে সদা প্রস্তুত,যেন যেকোন সময়ি চলে আস্তে পারে সেই হেরে যাওয়া ৫ অভার।আবার যখন ব্যাটসম্যান রা প্রেসারে থাকে তখন আরও খুরধার বলিং করে বের করে নিয়ে যান আরও ৫ অভার।এর নাম মস্তিস্ক প্রসুত ক্রিকেট,যেখানে গায়ের জোড় খাটে না।

পঞ্চমত,স্ট্রাটেজিক ক্রিকেট।অফ স্টিক প্যাক্ট বলিংয়ের বিকল্প নেই।maximum ফিল্ডারদের অফ সাইডে সাজিয়ে বলার কে অফ স্টিকে বল করার জন্য সাজেস্ট করুন।দেখবেন জয়ের পথ সহজ হবে।

সর্বোপরি,no politics.দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের রাজনিতির মনমানসিকতা আজ রাজনিতিবিদদের গন্ডি ছাড়িয়ে খেলয়াড়দের মাঝে চলে এসেছে।মনে করুন কেউ একজন রাজশাহীর বড় ক্রিকেটার।ঢাকায় বড় টিমে খেলছে।সে চাচ্ছে ্রাজশাহীর কোন প্লেয়ার তার দলে ভিরুক।সে করবে কি অন্য জেলার একজন উদীয়মান ক্রিকেটারকে রান নিতে গিয়ে ইচ্ছে করে একটা রং কল দিয়ে আউট করিয়ে দেবে।এ চালচিত্র আমাদের ঢাকার ক্রিকেটে হরহামেশাই হচ্ছে।কিন্তু প্রতিবাদ করার কেউ নেই।আমাদের উচিত এসব ভন্ডদের খুজে বার করা।

এগুলো ছাড়াও আরো অনেক অনেক পয়েন্ট আছে যা লিখে শেষ করা সমভব না।তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে,ভাবতে ভালই লাগে।৫০ অভার গেমের যুগের পর এল পাওয়ার ৫০ ওভার গেম যার অর্থ সব বলকেই চার্জ কর।এখন চলছে ২০/২০ র যুগ।আরও দিন যাবে আর টেকনিক্যালিটী আসবে খেলাটিতে কিন্তু ব্যাসিক ক্রিকেটের বাইরে কেউই যেতে পারবে না।যে বল টা গুড লেন্থের মিডল স্টিকের বল সেটা যেমন গলির ক্রিকেটার ডিফেন্স করে ঠীক তেমন শচীন টেন্ডুল্কারও সমিহ করতে বাধ্য।a good bowl is alaways a good bowl…..

১,৩৭১ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “ক্রিকেট”

  1. রকিব (০১-০৭)

    :thumbup:

    a good bowl is alaways a good bowl…..

    কথাগুলো ভালো লাগলো :tuski: :hatsoff: :hatsoff:
    ঘটনা কি, নববর্ষের প্রথম ১ম কি আমি নাকি B-)


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. আমাদের বন্ধুমহলের অনেক কথা,আড্ডা,আরো অনেক কিছুই ক্রিকেটীয় ভাষায় বলি।
    একটা উদাহরন দেইঃআজ ১লা বৈশাখ হবার কারনে অনেক ঘুরাঘুরি হল......আমাদের বাসার কাছে ঢাকেস্বরী মন্দির।তো আমি আমার এক হিন্দু বন্ধুকে(আমার কলেজমেট,বর্তমানে বুয়েটে)নিয়ে মন্দিরে গেলাম।মন্দিরে গেলে যা হয়!!আমার হিন্দু বন্ধুর এক মেয়েকে দেখে মনে ধরে গেল।তখন সে আমাকে মেয়েটিকে দেখিয়ে বলে 'দোস...একটা নতুন বল!!!'
    আমি তখন বললাম......'পিচে নেমে পড়।'

    ও বলল,'যদি প্রথম বলেই আউট হই???'......মানে হল প্রথম বারেই ঝারী খায় আর কি...

    আমি তখন ওকে আবার বলি,'তুই যদি ফ্রন্টপুটে না যাস...এই দেশে মারার কোন বল পাবি না'...তার মানে হল,এদেশে মেয়েদের সাথে মিশতে হলে প্রথমে গিয়ে নিজেই কথা বলতেই হবে।

    শেষমেষ ও গেল,উইকেটে টিকেও থাকল ভালই......মেয়েটি মারার বল দেবার চেষ্ঠায় ছিল(কথা বলার জন্য সু্যোগ খুজঁছিল,তাই নির্জন জায়গা চাচ্ছিল),সবচে মজার ব্যাপার হল 'ফ্রি হিট' হিসাবে মেয়েটা তার নম্বরও দিল।

    আমি বাসায় যাবার সময় আমার বন্ধুকে বলে আসলাম,'মামা!!!!!পাওয়ার-প্লে টা ভালো খেল!!!তাইলেই এই ম্যাচ পাবি'।

    জবাব দিন
  3. আমাদের বন্ধুমহলের অনেক কথা,আড্ডা,আরো অনেক কিছুই ক্রিকেটীয় ভাষায় বলি।
    একটা উদাহরন দেইঃআজ ১লা বৈশাখ হবার কারনে অনেক ঘুরাঘুরি হল......আমাদের বাসার কাছে ঢাকেস্বরী মন্দির।তো আমি আমার এক হিন্দু বন্ধুকে(আমার কলেজমেট,বর্তমানে বুয়েটে)নিয়ে মন্দিরে গেলাম।মন্দিরে গেলে যা হয়!!আমার হিন্দু বন্ধুর এক মেয়েকে দেখে মনে ধরে গেল।তখন সে আমাকে মেয়েটিকে দেখিয়ে বলে 'দোস...একটা নতুন বল!!!'
    আমি তখন বললাম......'পিচে নেমে পড়।'

    ও বলল,'যদি প্রথম বলেই আউট হই???'......মানে হল প্রথম বারেই ঝারী খায় আর কি...

    আমি তখন ওকে আবার বলি,'তুই যদি ফ্রন্টপুটে না যাস...এই দেশে মারার কোন বল পাবি না'...তার মানে হল,এদেশে মেয়েদের সাথে মিশতে হলে প্রথমে গিয়ে নিজেই কথা বলতেই হবে।

    শেষমেষ ও গেল,উইকেটে টিকেও থাকল ভালই......মেয়েটি মারার বল দেবার চেষ্ঠায় ছিল(কথা বলার জন্য সু্যোগ খুজঁছিল,তাই নির্জন জায়গা চাচ্ছিল),সবচে মজার ব্যাপার হল 'ফ্রি হিট' হিসাবে মেয়েটা তার নম্বরও দিল।

    আমি বাসায় যাবার সময় আমার বন্ধুকে বলে আসলাম,'মামা!!!!!পাওয়ার-প্লে টা ভালো খেল!!!তাইলেই এই ম্যাচ পাবি'।

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    সব বুঝলাম, কিন্তু এইটা কি কইছ বুঝলাম না.........।

    ১৯৮৯ সালে আমার বয়স ১০ ছুই ছুই করছে

    ক্যাম্নে? কলেজের ভর্তি হইছো কত তে? 😀


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জাহিদ (১৯৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।