ব্যক্তিগত রুপকথা : ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে’ – (শেষ পর্ব)

[রূপকথার তো কোন শেষ নাই…তাই এই ব্যক্তিগত রূপকথাটাও শেষ করবোনা ভাবসিলাম…তবু একটা বিশেষ উপলক্ষ্যে তাড়াহুড়া করে লিখে ফেললাম…এবারো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে :shy: ]

(প্রথম পর্ব)

– “সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ মনে হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা- প্রার্থনার সকল সময়
শূণ্য মনে হয়,
শূণ্য মনে হয়”-

অবারিত ঐশ্বর্য্য নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে সন্ধ্যা নামে…’ডানায় রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলা চিল’ দের সাথে নীড়ে ফিরে যেতে থাকে সৈকতের পথিকেরাও…নির্জন উপকূলে বালক-বালিকা তাদের এযাবত জীবনের সবচেয়ে অর্থবহ সন্ধ্যাটিকে গাঢ় হতে দেখে…হয়তো সন্ধ্যার সাথে সাথে রুদ্ধশ্বাসে গাঢ়তর হতে থাকে তাদের অব্যক্ত কিছু অনুভূতিও…শেষ হেমন্তের হালকা হিম বাতাসে ছোট্ট বালিকা তিরতির করে কাঁপে…বালকও কাঁপে; তবে কেবল হিম বাতাসে নয় বোধহয়…

: জানেন, আমি না কখনো সমুদ্রে নামি নাই…
:: বেচারী! আমি প্রথম নামসিলাম এক্সকারশনের সময় সবার সাথে মিলে …কি মাস্তিটাই না হইসিলো!
: উফ, বেরসিক!
: : মানে বুঝলাম না…
: আমি ঠিক করে রাখসি প্রথম সমুদ্রে নামবো আমার জামাইয়ের সাথে…আপনার মত বেরসিক না যে এক দঙ্গল ছেলের সাথে এমন রোমান্টিক একটা প্রথম অভিজ্ঞতা নষ্ট করবো…
: : আসল কথা বললেই হয় যে, পানিতে নামতে ভয় পাও…কবে যে ঘি যোগাড় হবে, আর কবে যে রাধা নাচবে?
: ধুর, আপনি এতো বাজে কেন?

আরো কিছুক্ষণ চলে তাদের অর্থহীন কথোপকথন…দুজনেই হয়তো মনে মনে অধীরে অপেক্ষা করতে থাকে অনেক অর্থময় কোন সংলাপের জন্য; অযথা খুঁনসুটি দিয়ে বৃথাই তাই ঢেকে রাখতে চায় অপেক্ষার সেই উত্তেজনাকে…

ভাটার টানে প্রশান্ত মহাসাগর একটু একটু করে দূরে সরে যেতে থাকে বালক-বালিকার থেকে…হঠাৎ করেই বালক এগিয়ে যায় সমুদ্রের দিকে, যেন অন্য কারো উপর অভিমানে পিছু নেয় সমুদ্রের…সৈকতে পড়ে থাকে তার চশমা; আর বালিকা, যে এখনো তার নয়…একপা-দুইপা করে যেতে থাকে গভীরে, একবারও পেছন ফিরে তাকায় না…কোমর পেরিয়ে জল বুক ছুঁইছুঁই হলে সে থামে, চশমা ছাড়া ঝাপসা চোখে তাকায় সাগরবেলায়…দূরে বিন্দুর মত বালিকাকে দেখা যায়, বালক রুদ্ধশ্বাসে বুকজলে দাঁড়ায়ে থাকে সরলরেখা হয়ে ওঠার পথে সেই বিন্দুর যাত্রা শুরুর অপেক্ষায়…

ঘড়ির কাঁটা হয়তো সেকেন্ড-মিনিট-ঘন্টা গোণে, বালকের কাছে অপেক্ষার একেকটা মুহুর্ত মহাকালের মত দীর্ঘ লাগে…অবশেষে অনন্তকাল পরে দূরে সেই বিন্দু দুলে উঠে, আস্তে আস্তে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হতে থাকে…ঢেউদের ফসফরাস প্রভাকে ম্লান করে দিয়ে বালকের কাছে এগিয়ে আসে আরো এক অনন্য আলো…কয়েক হাত দূর পর্যন্ত এসে বালিকা এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় কি?…একটি ফেনিল ঢেউ তাকে সেই অবসর দেয়না, মৃদু ধাক্কায় সে টাল হারায়ে ফেলতে নেয়…থৈ হারাবার ঠিক আগমুহুর্তে বালক হাত বাড়িয়ে বালিকার হাত ধরে ফেলে…আরো কিছু দুষ্টু ঢেউ বালককে প্ররোচিত করে সমুদ্রের অবাধ্যতার অজুহাতে বালিকাকে আরেকটু কাছে টেনে নেবার, বালিকাও হয়তো এই অবাধ্যতাকে প্রশ্রয় দেয় অসহায়তার অভিনয়ে…

তারপর, সেই বুকজলে দাঁড়ায়ে হিমবাতাসে কেঁপে কেঁপে বালকের চোখের তারাটির সাথে বালিকার চোখের তারাটির কি যেন কথা হয়…কি যেন কি কথা হয়…

৬,৩০৫ বার দেখা হয়েছে

৭১ টি মন্তব্য : “ব্যক্তিগত রুপকথা : ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে’ – (শেষ পর্ব)”

  1. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    সাকেব, আমার সব গুলা প্রেম জোড়া দিলেও তো তোমারটার নাগাল পাবে না।

    বিশেষ উপলক্ষ্যে

    কেইস কি? বছর গড়াইছে নাকি আরেকটা? কত চলে এখন?


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    সাকেব ভাই, কি বলবো। বেশি রোমান্টিক গল্প পড়লে কেন যেন মন খারাপ হয়।

    তারপর, সেই বুকজলে দাঁড়ায়ে হিমবাতাসে কেঁপে কেঁপে বালকের চোখের তারাটির সাথে বালিকার চোখের তারাটির কি যেন কথা হয়…কি যেন কি কথা হয়…


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. আরিফ (১৯৯৪-২০০০)

    কঠিন হইছে.....................। :boss: :boss: :boss:

    আরো কিছুক্ষণ চলে তাদের অর্থহীন কথোপকথন…দুজনেই হয়তো মনে মনে অধীরে অপেক্ষা করতে থাকে অনেক অর্থময় কোন সংলাপের জন্য; অযথা খুঁনসুটি দিয়ে বৃথাই তাই ঢেকে রাখতে চায় অপেক্ষার সেই উত্তেজনাকে...
    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    দূর, এইটা কি হইল??? 🙁
    এখন আপনারে এই লেখা কবে দিবেন বইলা পঁচামু কেম্নে??? :(( :(( :((

    তয়, যে ফিনিশিং দিলেন... :thumbup: :salute:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. রকিব (০১-০৭)

    সাকেব ভাইইইইইইইইইইইইইইইইইই,
    সিরিজটা শেষ করে দিলেন কেন :(( :(( :(( ?
    তবে শেষটা মনে রাখার মতো করে রাখলেন, অসাধারণ।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সাকেব ভাই, বস লাগলো আপনার লেখাটা পড়ে। রাতে আপনার পোস্ট টা পড়ব বলে বসলাম যখন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়ে ঘুমিয়ে যাই। এখন পড়ে এক রাশ মুগ্ধ ভাল লাগা রেখে গেলাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।