ব্যক্তিগত রুপকথা : ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে’ – (প্রথম পর্ব)

[সামহোয়্যারইনব্লগ এ প্রকাশিত…১৯ শে জানুয়ারি, ২০০৭]
আমার ব্যক্তিগত এই রূপকথার শেষ পর্বটা ‘সামহোয়্যার’ এর পাতা থেকে হারায়ে গেছে…দোষটা আমারই, কোন ব্যাকআপ রাখা হয় নাই…যাইহোক, আপাততঃ পুরান চোথা দিয়াই সিসিবিতে ডেব্যু করি! ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে 😀 …

‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’

ছোট্ট স্টেশন।বালক ট্রেন থেকে নামে; দ্যাখে -প্ল্যাটফর্মের এককোণের বেঞ্চিতে বালিকা বসে আছে..

:পথে কষ্ট হলো?
::তেমন না;তবে আপনি অনেক দেরী করলেন..
:সরি! আরে,তুমি দেখি সত্যিসত্যি কলাবেণী করে আসছো! খুকী-খুকী লাগতেসে..
::হাসবেন না, প্লীজ! আপনিই না এভাবে চুল বাঁধতে বললেন..আমার বেণী শুধু খুলে যায়..
:আবার দেখি নেইল-পালিশ ও দিসো?
::উফ! আপনি না বড্ড জালান!
:পায়ের এই রুপার আঙটিটা আমি কিনে দিসিলাম না? হাতে পরে আছো কেন?
::কি করবো? হাতের আঙটি কিনে দেয়ার মতো তো কেউ নাই..

বালক-বালিকা পাহাড়ী রাস্তার ঢাল বেয়ে বেয়ে সমুদ্রের দিকে নেমে যায়..কেউ কাউকে ছোঁয়না কিন্তু..সমুদ্রের পারে বাঁধানো উঁচু পাথরে তারা বসে..বালক পা ঝুলায়ে দিয়ে সমুদ্রের জলে ভিজায়ে বসে থাকে..বালিকার ছোট্ট পা প্রশান্ত মহাসাগরের নাগাল পায়না..সে তার নরম হাতে ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে পা দিয়ে জল ছোঁয়ার চেষ্টা করতে থাকে..

:নাও,তোমার জন্য এইটা আনছি..
::ওমা,চকলেট! আমি ভাবসিলাম,আপনি আমার জন্য হাতে বানানো কিছু আনবেন..(কপট রাগত: স্বরে)
:তুমি কি আনছো?

বালিকা হলুদ রঙের একটা খাম আগায়ে দ্যায় বালকের দিকে..তারপর একটু দূরে বসে চকলেটে কুটুস-কুটুস কামড় দিতে থাকে..বালক দুরুদুরু বুকে জীবনের প্রথম সুগন্ধী খামটা খুলে..সূর্যমুখী ফুল আঁকা একটা ছোট্ট হলুদ চিঠি, গোটা গোটা মেয়েলী অক্ষরে লেখা..
‘..রাজপুত্র,আমি কি আপনার চুলে একটুছুঁয়ে দেখতে পারি?..’
বালক এক মূহুর্তের জন্য নি:শ্বাস নিতে ভুলে যায় কি?

আবার দু’জনের ছোট ছোট গল্প,ছোট ছোট খুনসুটি চলতে থাকে..বালক অন্যমনষ্ক ভঙ্গিতে একথা-সেকথায় সায় দিয়ে যায়..অনেকদিন আগে হলুদ শাড়ি পরা বালিকার ছবি দেখে ‘মুনিয়া পাখি’ বলে ভ্রম হওয়ার কথা মনে পড়ে..চিম্বুক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কার জন্য যেন বুকে মোচড় দেয়া কষ্টের কথা মনে পড়ে..একজোড়া সস্তা রুপার নূপুর মনে পড়ে..একটা নিতান্ত সাধারণ,কিন্ত সাহসী প্রথম গোলাপ মনে পড়ে..

হঠাৎ বালিকার উচ্ছল চিৎকারে সম্বিত ফিরে পায়..

:দ্যাখেন,দ্যাখেন! রঙধনু..আমি দেশের বাইরে আসার পরে এই প্রথম রঙধনু দেখলাম..আপনি?
::আমিও।এই দেশের বৃষ্টির দেবতা বোধহয় খুব কৃপণ! বৃষ্টিই দ্যায় ভিক্ষার মতন, রঙধনু তো দূরের কথা..
:আজকে তাইলে একটা অদ্ভুত বিকাল, তাইনা?
::হমম।কিন্তু বেগুনীর চাপে আসমানীটা তো দ্যাখাই যাচ্ছেনা..
:রঙধনুর সব রঙ দেখতে হলে সেরকম চোখ লাগে..
::আমি তো ভাই ছোটবেলা থেকেই চশমাওয়ালা। কোনদিন না জানি পুরা কানা হয়ে যাই..
:সত্যিই! সো এক্সাইটিং! আপনি আসলেই শুভ্রের মত কানাবাবা হয়ে যাবেন?
::কেন?হইলে তুমি খুশি হও নাকি?
: অবশ্যই! শুভ্র যখন একদম অন্ধ হয়ে যায়,তখন সে চশমা খুলে রেখে রুপার হাত ধরে সমুদ্রে নেমে পড়ে..কি রোমান্টিক না, বলেন?
::বিশ্বাস করো, আমি না চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিনা..মনে হয় এখনি অন্ধ হয়ে গেলাম..
:ধুর! ঢং করবেন না তো..

বালক-বালিকা প্রশান্ত মহাসাগরের পাড়ে কিছুক্ষণ এলোমেলো হাঁটাহাঁটি করে..আসলেই সে এক অদ্ভূত বিকেল!কন্যাসুন্দর আলোর(নাকি আলোসুন্দর কন্যার) প্রভাবে চারদিক বড় মোহময়, বড় প্রগলভ লাগে..বালক ব্যাকুল হয়ে সন্ধ্যার জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকে.. নিজের অনিবার্য অন্ধত্বের জন্য মনে মনে প্রার্থনা করতে করতে..

৬,২৩০ বার দেখা হয়েছে

৬১ টি মন্তব্য : “ব্যক্তিগত রুপকথা : ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে’ – (প্রথম পর্ব)”

  1. রকিব (০১-০৭)

    ১ম হয়ে গেলাম নাকি!!!! হে হে হে এইবার বন্য ভাইকে হারায় দিছি 😀 😀
    সাকেব ভাই চরম হচ্ছে। পরের সিরিজ আজকেই দেয়া যায় না???? :bash: :bash: :bash:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    এইটার শেষ পর্ব আমি হারিকেন দিয়া খুঁজছি সাম ইন এ। x-(

    যাউকগা, সাকেব ভাই নতুন পুরান যাই হোক কিসু একটা দিসে সেই আনন্দেই কয়েকটা :frontroll: দিয়া নেই। :awesome: :awesome:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. রহমান (৯২-৯৮)

    😮 😮 😮

    "ছিদ্রান্বেসী সাকেব" পোষ্ট লিখছে?

    কিন্তু বাসি পোষ্ট দিয়ে ডেব্যু করলা, এই কাজটা কি ঠিক করলা? সিসিবির জন্য ফ্রেশ কিছু ছাড়ো ভাই। তবে, এইটা পড়ে ভাল লাগছে :thumbup:

    লেখক হিসেবে নতুনভাবে স্বাগতম :hatsoff:

    জবাব দিন
  4. আলম (৯৭--০৩)

    ওফ্‌ শিট্‌, কতদিন ধইরা প্ল্যান করে আছি, ব্লগে একটা রুপকথা লিখে পোস্ট করবো, নাম হবে "স্বামীর খোঁজে স্যামঝ্যাং", তার আগেই আপনি লিখে ফেললেন। যাহোক, ব্যাপার না, আমারটা আসছে খুব শিগগির। 😀

    জবাব দিন
  5. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)
    “স্বামীর খোঁজে স্যামঝ্যাং"

    :khekz: :khekz: :khekz:

    সিরাম রূপকথা হবে বইলা মনে হইতেসে...তাড়াতাড়ি নামায়া ফেলো. 😀 ..

    আর আমারটার টাইটেল ই শুধু রূপকথা...আসলে কিন্তু সত্য ঘটনা অবলম্বনে...তাই, সিসিবির প্রথম রূপকথার লেখক তুমিই হবা...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  6. তাইফুর (৯২-৯৮)

    সাকেব,
    ভাল ভাল লেখা গুলা সামু'তেই লেখিস ... ওইখানে পিঠ চাপড়াচাপড়ি শেষ হইলে এইখানে দিস। তাও যদি কষ্ট হয় ... লিংক দিস। আমি সামু'তে যাই না ... এইখানেই থাকি।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  7. তানভীর (৯৪-০০)

    সাকেব ভাই, আগে থেকেই জানতাম আপনি ভালো লেখেন। কিন্তু এত ভালো লিখেন তা বুঝিনাই!! ভাগ্যিস, লেখাটা সিসিবিতে দিয়েছিলেন, নাহলে কখনও আপনার লেখা পড়াই হতনা!

    খুব ভালো লাগল ভাইয়া। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

    জবাব দিন
  8. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    পরের পার্টের কি দরকার? "শেষ হইয়াও হইলো না শেষ" - ছোটগল্পের মতই কিছু একটা ধরে নিলেই তো হয়।

    গল্প হারায় গেছে বেচারা সাকেব ভাই-এর; উনারে আর পেইন না দেই!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।