দ্বিতীয় পর্ব

নোটঃ এই গল্পটা আগেরটার মত অত বড় না, অনেক ছোট, পড়তে তেমন একটা কস্ট হওয়ার কথা না। যারা আগের গল্পটা জানেন না, তারা জাস্ট হ্যাড এ ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স অন লাইফ থেকে পড়ে নিতে পারেন।

আজকে দুপুরের আগে লোকটার বাবা ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন), আল্লাহ তার যাবতীয় ভুল ভ্রান্তি মাফ করে তাকে চিরশান্তিতে রাখুক, এছাড়া চাওয়ার মত আর কিছু নেই।

গতকাল বিকালে আমি তাকে ফোন করে জানতে পারি সে ততক্ষণে গ্রামের মাতব্বরের কাছে জমি বিক্রির কথা চুড়ান্ত করে ৮০ হাজার টাকার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি খুব ভালোভাবেই জানি বিপদের সময় জমির দাম নিয়ে মানুষ মানুষকে কিভাবে ঠকায়। তার বাবার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিলো ২০ হাজার টাকার। আমার মনে হলো আমি জাস্ট ১৫ মিনিটের জন্য তার ভিটে বিক্রি করা আটকাতে পেরেছি, ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১৪ তে জার্মানিরও মনে হয় এত ভালো লাগে নাই। বিশ হাজার টাকা যোগাড়ও হয়ে গিয়েছে, we just lost against time! আপনারা যারা মানুষ তারা জেনে গর্ববোধ করবেন আরেকজন মানুষ হাজার হাজার মাইল দূর থেকে তার বাবার চিকিৎসার সম্পুর্ন খরচ বহন করতে চেয়েছেন সেচ্ছায়, তাকে আমার নক করতে হয় নি, তাকে আমার কিছু বোঝাতেও হয় নি। আপনারা যারা ক্যাডেট কলেজের মানুষ, তাদের আরো বেশী গর্ববোধ করা উচিৎ, আর যারা FCC এর মানুষ তারা জানবেন অন্তত একজন হলেও সৃষ্টির সেরা জীব আপনাদের মাঝে আছেন। আমি সঙ্গত কারনেই তার নামটা এখানে প্রকাশ করলাম না কারন আমি ব্যাপারটাকে নাটকের পর্যায়ে নিতে চাইনা। এমন একজন সাহায্য করেছেন যিনি প্রতিদিন তার সিগারেট খাওয়া কমিয়ে অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন এমন একটা কাজ করার জন্য। এমন একজন সাহায্য করেছেন যিনি নিজেই শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে শয্যাশায়ী। এমন সব মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাদের সাহায্য করার নূন্যতম প্রয়োজনও ছিলো না। আমি এখানে হিসাব দিচ্ছি না, কারও কাছে হিসাব দেয়ার আমার প্রয়োজনও নেই, আমি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই মানুষগুলোর প্রতি।

যেটুকু সামর্থ্য হয়েছে, লোকটাকে তা দিয়ে দেবো, আমি জানি তার বাবার চিকিৎসা করার সামর্থ্য আমাদের আর কোনদিনও হবে না, I failed like hell! গল্পটা শেষ করবো আরেকটা কথা বলে, ঠিক পাচ মিনিট আগে আমি যখন তার সাথে ফোনে কথা বললাম, সে তখন বাবার মরদেহ নিয়ে বাড়িতে, যা যা করতে হয় তার ব্যাবস্থা করতে ব্যাস্ত। আমি যখন তাকে বললাম আমি তাকে কিছু টাকা পাঠাচ্ছি, সে যেন তার দেনাগুলো আগে সব মিটিয়ে ফেলে, প্রয়োজনে তার সম্পুর্ন দেনা মিটিয়ে দেয়ার চেস্টা করবো, সে আমাকে বললো “আমি আপনার এই ধার কিভাবে শোধ করবো? আমি তো এক বছরের আগে এই ধার শোধ করতে পারবো না! আমি যদি হঠাত করে মরে যায় আপনি তো আমার কাছে দাবীদার থাকবেন!”। তাকে আমার যা বলার ছিলো আমি বলেছি, কিন্তু এখানে আর কিছু বলার নেই। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুক।

৯১৩ বার দেখা হয়েছে

২ টি মন্তব্য : “দ্বিতীয় পর্ব”

মওন্তব্য করুন : মাহমুদুল (২০০০-০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।