ফিরে আসার টুকরো গল্প।

১।

ইউরোপের দিক থেকে দুবাইের ফ্লাইটটা একটা নেহাৎ ভদ্র ফ্লাইট। বিমানআপুদের সাথে খুব সাবধানী ইংরেজি বলতে হয়। এ পর্যন্ত যতবার এ পথে দেশে গিয়েছি, যাত্রা পথের এই অংশটুকুকে নিরানন্দ মনে হয়েছে, বলা যায় কিছুটা বিবর্ণও মনে হয়েছে।

রং তাহলে শুরু হয় কোথা থেকে? বলা যায় এই পথের মধ্যপ্রাচ্যের বিমানবন্দরগুলো থেকে। আমার মত মিশ্র গায়ের রং যাদের-তাঁদের দেখে পরিচিত আবহ খুঁজে পাই মনে হয়। তারা যখন বাংলায় কথা বলে, পরিচিত এই আবহটা আরও গাঢ় হয়। দেশ থেকে আমি যে আর খুব বেশি একটা দূরে নেই-এমন অবিছিন্ন ভাললাগার একটা স্বজনীয় অনুভূতি চারপাশে ঘুরেফিরে বেড়ায়। যা দেখি তাই ভাল লাগে। আনন্দের উপলক্ষ তৈরি হতে যে কারণ লাগে না, সেটা খুব ভালভাবে টের পাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে দেখা হয়। কথা হয়। সিলেট, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম আর বরিশাল। গত বার কথা হয়েছিল রফিকের সাথে। রফিককে তার নাম জিজ্ঞেস করার সময়, কেন যেন সে তার পুরো নাম বলেছিল। আবু উসমান মোহাম্মদ রফিকুল আলম। বয়স- ২৯, বাড়ি- চাঁদপুর।

রফিকের গল্পটা আমার আনন্দ যাত্রার একটা ‘না ভাল লাগা’ গল্প। অনেক অনেকদিন পড় দেশে যাচ্ছি। তাই উচ্ছল একটা আনন্দের আবহ থাকবে পুরোটা পথ জুড়ে। রফিকের দুঃখ জাগানিয়া গল্পটা সেখানে না থাকলেও হয়তো পারতো।

লিবিয়ার সাম্প্রতিক গৃহযুদ্ধের পড়ে আলজেরিয়ার দিক থেকে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। আলজেরিয়া থেকে তিউনিশিয়া হয়ে গ্রিস। স্বপ্নের ইউরোপ। সাদা সব মানুষ। সেখানকার বাতাসে বিশুদ্ধ আভিজাত্য ঘুরেফিরে বেড়ায়। এই রুটটা নাকি নতুন। লোকজন নাকি চাইলে হাঁটাপথেই ইউরোপ চলে যেতে পারে। রফিকও চেয়েছিল। সাথে নিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক বছর কাজ করে জমানো টাকার কিছু। ও যখন তিউনিশিয়ার সীমান্তে ধরা পড়ে-তখন কেবল ভোর হচ্ছে। সে সময়টায় সীমান্ত ফাঁকা থাকে। চাইলেই নাকি একটু কষ্ট করে চলে যাওয়া যায় ওপারে। রফিক’রা কেন যেন পারেনি। সামনে থেকে ওদের বুকে লাথি মেরে কারা যেন ফেলে দিয়েছিল। বুট পড়া মানুষেরা কোন দেশের সীমান্তরক্ষী ছিল ওরা শুরুতে বুঝে উঠতে পারেনি। পকেট হাতড়ে যখন শেষ জমানো টাকাগুলো নিয়ে ওরা যখন একটা জিপে তুলে দিচ্ছিল, তখন রফিক’রা বুঝেছে-স্বপ্নটা বুঝি ফিকে হয়ে আসছে। হয়েছিলও তাই। দেয়াল টেনে দেওয়া একটা পৃথিবীর যে মানচিত্রটা হাতড়ে ওদের দলটা ইউরোপে স্বপ্ন খুঁজতে গিয়েছিল, সেই একই মানচিত্রের ফিরতি পথে ওদের ফিরতে হয়েছে। তবে এই ফেরাকে বুঝি ফেরা বলে না। ওদের পিঠের দিকে শক্ত কালচে দাগগুলো যে ঠিক কোন দেশের পুলিশের এঁকে দেওয়া, সেটা ওরা জানে না। ওরা ধরে নিয়েছে, ওদের পিঠে পুরো পৃথিবীর মানচিত্র এঁকে দেওয়া হয়েছে। এক একটা কালো দাগ হচ্ছে একটা দেশের সীমারেখা। বড় কঠিন এই রেখাকে উপেক্ষা করা।

এই গল্পের শেষটা আর শুনতে ইচ্ছে করেনি। দীর্ঘ সাত ঘণ্টার যাত্রার পর, কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম। রফিককে বলেছিলাম, “চলেন কিছু খেয়ে আসি। আমার নিজেরও সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি।“ এলোমেলো উস্কখুস্ক চুল আর লাল চোখের রফিককে কথাটা বলা বোধহয় বোকামি ছিল। চোখেমুখে অন্তরভেদী শুন্য দৃষ্টি নিয়ে যে মানুষগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে,এতো মানুষের ভিড়েও তাদের আলাদা করা যায়, যাদের এলোমেলো চলাফেরা অন্য সবার সচরাচর দৃষ্টিকে কেড়ে নেয়। তাঁরা তো তখন সকল সহানুভূতির ঊর্ধ্বে। তারা আছে, চলছে ফিরছে। কিন্তু বাইরের কেউ কি বুঝতে পারে, স্বপ্নহারা মানুষের পা কতটা ভারী?

২।

গল্পের পরেও কিন্তু গল্প থাকে। ফ্লোরিয়ানের গল্পটা বুঝি তেমনই একটা গল্প। জার্মান যুবক ফ্লোরিয়ান। জার্মানির পশ্চিম দিকের শহর কোলনের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। শুরুতে ভেবছিলাম বাংলাদেশে বুঝি ঘুরতে যাচ্ছে। বিধাতা গোলার্ধের যে অংশটায় সকল আশীর্বাদ দিয়ে রেখেছেন, ফ্লোরিয়ান’রা গোলার্ধের সে অংশের। সুযোগ পেলে, কষ্ট করে গরীব অভাবী মানুষদের দেখতে যাওয়া, তাদের অনেকের কাছেই কিছুটা শিক্ষাসফরের মত। এতে করে নাকি জীবনবোধ বাড়ে।

তবে ফ্লোরিয়ান আমাকে অবাক করেছিল। আমাকে চমকে দিয়ে বলেছিল, “তোমাদের দেশে যাচ্ছি কাজ শিখতে। তোমরা ‘মাইক্রোক্রেডিট’ নামে চমৎকার একটা ব্যাপার দিয়ে কিভাবে পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য নামের দেয়ালটাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছো, সেটা কাছ থেকে দেখতে যাচ্ছি। তিন মাসের একটা ইন্টার্নী করব তোমাদের গ্রামীণ ব্যাংকে।“ আমি অবাক হলাম, বলতে গেলে কিছুটা তুচ্ছ হলাম। সামনের দিনগুলোতে আমাকেও হয়তো এমন কিছু একটা খুঁজতে হবে। আমি বিশ্বের সব বড় বড় নামকরা প্রতিষ্ঠাগুলোর দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়বো। আমার তালিকায় যে গ্রামীণ ব্যাংক থাকবে না-এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

নিজের কাছে নিজের ক্ষুদ্রতাবোধটা আরও বড় হল এটা জেনে যে-ফ্লোরিয়ানদের এই দলটা সংখ্যায় দিন দিন বড় হচ্ছে। মিরপুর ১ এর দিকে প্রচুর বিদেশী ছেলেমেয়েকে দেখা যায়। তারা প্রতিদিন সকাল বেলা দলবেঁধে গ্রামীণ ব্যাংকের বড় ভবনটার দিকে যায়। আবার বিকেলের দিকে চোখমুখে একরাশ উচ্ছলতা নিয়ে ফিরে আসে। তারা খুব কাছ থেকে শিখছে-কিভাবে ধীর পায়ে দারিদ্র্যকে বেঁধে ফেলতে হয়।

লেখার শুরুতে একটা ভদ্র ফ্লাইটের গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। শেষ করবো একটা অভদ্র ফ্লাইটের গল্প দিয়ে। মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে আসা এই ফ্লাইটগুলো মাঝে মাঝে মাছ বাজারের কাছাকাছি চলে যায়। বিমান ডেকের করিডোরটা সবসময় ব্যস্ত থাকে। টয়লেটের কাছে সবসময়ের একটা ভিড় এই ফ্লাইটকে আরও জীবন্ত করে তোলে। মাঝে মাঝেই ‘আপা জুস খাবো, জুস দিয়ে যান’ এমন বিকট হাঁকে বিমানআপুরা আতংকিত হয়। এই ফ্লাইট বিমানআপুদের শরীরের বাড়তি ক্যালরি কমিয়ে দেয়। তারা দৌড়ের উপর থাকে, আরা যারা তাদের দৌড়ের উপর রাখে,সে দলটাকে গোল হয়ে কয়েকটা সিটের মাঝখানে আয়েশ করে তাস খেলেতে দেখা যায়।

এমন একটা ফ্লাইট আর কিছুক্ষণ পড়ে ঢাকার আকাশে ঢুকবে। স্থানীয় সময় ভোর ৫টার কিছু বেশি। সিটের সামনের স্ক্রিনে বিমানের গতি দেখাচ্ছে। ধীরে ধীরে বিমান তার গতি কমিয়ে দিয়ে একটু একটু করে নিচে নামছে। এখন গ্রাউন্ড স্পীড সারে তিনশো কিলোমিটারের কাছাকাছি। বিমানবালারা ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই ল্যান্ডিং এর ঠিক আগের প্রস্তুতি শুরু করবার নির্দেশ পেয়ে গিয়েছে। এতোক্ষণ ধরে এই বিমানে পরিচিত যে গুঞ্জনটা ছিল-সেটা একটু একটু করে অন্য একটা রূপ নিচ্ছে। চাপা একটা আনন্দ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে মনে হয়। সবার চোখ জানলার দিকে। নিচে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মানুষের দেশটাকে কি দেখা যায়?

মেঘের জন্য নিচের দেশটাকে এখনো ঠিকমত দেখা যাচ্ছে না। তবে চাপা গুঞ্জনটা একটু একটু করে বাড়ছে। এ ফ্লাইটের যাত্রী যারা, তাদের চোখমুখের ভাষা বদলাচ্ছে একটু একটু করে। এরা অনেকেই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাতানো রোদে পুড়েছেন। অনেকে হয়তো তার চেয়েও বেশি। এ মানুষগুলো অনেক বছর বৃষ্টি দেখেনি। শীতের শুরুর দিকে শিউলি ফুলের যে গন্ধটা তাদের বাড়ির আঙিনায় ঘুরে ফিরে বেড়ায়, তারা সে গন্ধটাকে অনেকটা বছর খুঁজে পায়নি।

বিমানটা একটু একটু মোড় ঘুরে নিচে নামছে। কিভাবে যেন অদ্ভুত অজানা একটা ব্যস্ততা এই ফ্লাইটের প্রতিটা কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক উপর থেকে বিন্দুর মত দেখতে পাওয়া দেশটার রাজধানীর অবয়ব একটু একটু বড় হয়। অজস্র নিয়ন আলোর দীপাবলির মায়াময় শহরটা ধীরে ধীরে যেন জীবন্ত হচ্ছে। চির কোলাহলের এই নগরীকে উপর থেকে আলতো করে ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য অনেকেই ইতিমধ্যে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। চাঁদপুরের সেই রফিককে আমি দাঁড়িয়ে যাওয়া মানুষদের দলে দেখি। বিমানবালারা তারস্বরে চিৎকার করে এই দলটাকে সিটে বসতে বলছে। কিন্তু ততক্ষণে রফিকদের চোখ আর ঢাকার ঘোলাটে আকাশ মিশে একাকার। অল্প অল্প করে সে চোখ ভারী হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যে শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তারা এই ফ্লাইটে উঠেছিল, সেটা বদলে গিয়ে কি সেখানে স্বপ্নগুলো ফিরে আসতে শুরু করেছে??

আমি খেয়াল করে দেখলাম রফিক খুব ভালমত দাঁড়িয়ে পড়েছে। রফিকদের দলের যারা, ওরা অনেকেই ভূমধ্যসাগরের হিমশীতল পানি সাঁতরে ওপারে যেতে চেয়েছিল-একটা স্বপ্নের খোঁজে। তাঁরা কি জানতো ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মায়াবী এই জনপদ কতটা যত্ন নিয়ে আমাদের চোখে স্বপ্ন এঁকে দিতে পারে? এদেশ থেকে নাকি প্রতিদিন পিপীলিকার মত মানুষ বাইরে পালিয়ে যাচ্ছে। আমাকে প্রায়ই এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা অনেকে রীতিমত জরিপ আকারে দিয়ে থাকেন।

তারা কি জানেন কী সীমাহীন প্রগাঢ় মমতায় এই দেশটা আমাদের কাছে ডাকার ক্ষমতা ধারণ করে??

২,১৭৮ বার দেখা হয়েছে

৫১ টি মন্তব্য : “ফিরে আসার টুকরো গল্প।”

  1. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    মধ্যপ্রাচ্য থেকে ঢাকার ফ্লাইট নিয়ে বলার কিছু নাই। বাঙ্গালী প্লেনের কোণায় কোনায় বাঙ্গালীয়ানা ছড়িয়ে রেখে যায়।
    যাই হোক এক স্বপ্নের অয়ন নিয়ে একটা গল্প পড়লাম। জাতি জানতে চায় এই সুদর্শন অয়ন কে?


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    ইরাম ভাল কেমনে লিখস ভাই ??? :boss:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    একেই মনে হয় বলে "back with a bang" বেশ কিছুদিন পরে তোমার লেখা পেলাম, সবসময়ের মতই দূর্দান্ত :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    এতো সুন্দর মানুষ ক্যাম্নে লিখে ::salute:: ::salute:: ::salute::


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমি খেয়াল করে দেখলাম রফিক খুব ভালমত দাঁড়িয়ে পড়েছে। রফিকদের দলের যারা, ওরা অনেকেই ভূমধ্যসাগরের হিমশীতল পানি সাঁতরে ওপারে যেতে চেয়েছিল-একটা স্বপ্নের খোঁজে। তাঁরা কি জানতো ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মায়াবী এই জনপদ কতটা যত্ন নিয়ে আমাদের চোখে স্বপ্ন এঁকে দিতে পারে? এদেশ থেকে নাকি প্রতিদিন পিপীলিকার মত মানুষ বাইরে পালিয়ে যাচ্ছে। আমাকে প্রায়ই এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা অনেকে রীতিমত জরিপ আকারে দিয়ে থাকেন।

    তারা কি জানেন কী সীমাহীন প্রগাঢ় মমতায় এই দেশটা আমাদের কাছে ডাকার ক্ষমতা ধারণ করে??

    আমি নিজে পালানোর দলে তাই যখন দেখি কেউ কেউ ঘুরে দাড়াচ্ছে (হোক না সে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার পর) বড়ই আশান্বিত হই।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    প্লেনটা নামছে - একটু একটু করে মাটির কাছে পৌঁছে যাচ্ছে - স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অত্যাসন্নতায় সবার চোখ মুখের অভিব্যক্তির এই বর্ণণা অ-সাধারণ।

    স্বপ্নের মৃত্যু নেই।স্বপ্নবাজেরা মরেনা।

    ফিরে এসে ক'দিন আছো?

    জবাব দিন
  7. রেজা তোমাকে আগেও বলেছি, তোমার লেখায় যাদু আছে। নির্মম বাস্তবতাকে আগেবীয় রূপ দিয়ে লেখা খুব কঠিন। বিশেষ করে ভিন্ন মানুষের অনুভূতি নিজের কলমের আগায় এনে ফুটিয়ে তোলা শুধু লেখা নয়, বরং শিল্প। তুমি সেই লেখার যাদুকর, শিল্পী।

    রেজা তুমি খুব সুন্দরভাবে অনেকগুলো সত্যকে তুলে ধরেছ। তোমার প্রথম গল্পের চরিত্র রফিক কিন্তু একা নয়। অনেক, শত, হাজার, লক্ষ। এরা সব সময়, সর্বত্র পিঠে চাবুকের দাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কখনো সেটা পিঠে, কখনো সেটা মনে। সে হয়তো বৈধভাবেই লিবিয়া গিয়েছিল। কিন্তু রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়ে পিছনে ফেরার পথ না থাকায় সে স্বপ্ন দেখছিল ভাল জীবনের আশায় অবৈধভাবে ইউরোপে যাবার। যে পরিস্থিতির জন্য সে নিজে দায়ী নয়, অথচ জমানো সম্পদ হারাল সে। এমনকি নির্মম নির্যাতনেরও শিকার হলো। ঠিক একইভাবে ব্যাক্তিগত শত্রুতার জেরে গ্রামীন ব্যাংক সরকারী রোষানলে পড়ে অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এখানেও ভুক্তভোগী সেই রফিকদের মতো দরিদ্ররা। দ্বন্দ্বের এরা আগেও নেই, পিছেও নেই। তবুও ভুক্তভোগী এরাই।
    তবে সত্যটা কি জান! এই রফিকরা নেতানেত্রীদের ডাকে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়ে। জীবন দেয়। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে কখনো এক হতে পারে না।
    আরেকটি কথা। যারা রফিকের জমানো অর্থ কেড়ে নিয়ে নির্যাতন করেছিল নিজ দেশে রফিকরা কি তারচেয়ে বেশী নিরাপদ???????
    তবুও মায়া দেশের প্রতি! এটা থাকবেই। যতো দূরেই যাই তুমি, আমি, সে। যতো ভাল এবং নিরাপদ থাকি না কেন, দেশ কাছে টানবেই। এ এক অদ্ভুদ মনোজগত!

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)
      এই রফিকরা নেতানেত্রীদের ডাকে রাজপথে ঝাপিয়ে পড়ে। জীবন দেয়। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে কখনো এক হতে পারে না।
      আরেকটি কথা। যারা রফিকের জমানো অর্থ কেড়ে নিয়ে নির্যাতন করেছিল নিজ দেশে রফিকরা কি তারচেয়ে বেশী নিরাপদ???????

      জানি না ভাই আসলে। সে জন্য দোষটা যে কাকে দিব সেটাও জানি না। পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার যে দল টা ,সে দলে আছি তো ভাই। উত্তর জানি না।

      লেখার উচ্ছসিত প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের ছোট এই ব্লগে বাইরের মানুষ খুব বেশি একটা আসে না। আপনাকে দেখে সত্যিই অনেক অনুপ্রাণিত হলাম।

      ভাল থাকবেন মিঠু ভাই। অনেক ভাল লাগলো।

      জবাব দিন
  8. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    তোর ক্যাডেট নেম দেইখা আমোদিত হইলাম।
    ভাবতেছি কে তোরে কিভাবে ডাকতো কলেজে,
    জুনিওর
    ক্লাসমেট
    সিনিওর
    হাউস বেয়ারা
    স্টাফ
    এডজুট্যান্ট
    স্যার
    তুই তো TL ছিলি।
    ধর তুই DHL ছিলি।
    CP তোরে ডাকবো ক্যাডেট সিদ্দিক বি রা রা।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  9. সন্ধি (১৯৯৯-২০০৫)

    লেখা আগেই পড়া হয়েছে...কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি...বরাবরের মতই মন ছুয়ে গেল...তোমার লেখায় সব সময় হতাশার মধ্যে আশার আলোর দিশা পাই...এই আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে যাও...অন্ধকারের যাত্রীদের আলোয় নিয়ে আস... :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  10. দিবস (২০০২-২০০৮)

    ঢাকায় ল্যান্ডিং এর বর্ণনাটা চোখের সামনে ভাসিয়ে তুললেন ভাই।মন চাইছে মোবাইলটা অন করে স্ক্রীণের দিকে তাকিয়ে থাকতে, কত উঁচু থেকে দেশের নেটওয়ার্কটা কাজ করে।

    শীতের আগে শিউলি ফুলের কথাটা বলে তো মনে জ্বালা ধরায় দিলেন। 🙁

    আপনার লেখা নিয়ে মন্তব্য করার সাহস আমার নাই সেটা তো বরাবরই :duel:


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  11. লেখাটা বড্ড ভালো লাগলো!

    হয়তোবা দেশের বাইরে থাকা মানুষগুলোর কাছেই এখন এই ভালোবাসাটুকু জমা রয়ে গেছে। আমরা যারা হরদম দেশের ধূলিমাটি মেখে চলি তাদের আর দেশকে ভালোবাসতে ভালো লাগে না! 🙁

    জবাব দিন
      • মতামততো সবারই ব্যক্তিগত, তাই না!

        ক'দিন আগে আমিও একমত হতাম না, গলার রগ ফুলিয়ে ঝগড়া করতাম দেশ নিয়ে, কিন্তু সত্যি বলছি এখন হাঁপিয়ে উঠছি একেবারেই!

        আজ সকালে কোনও এক ভিয়াইপির কল্যাণে অফিসে পৌছেছি নির্ধারিত সময়ের দুঘন্টা পরে। সাড়ে তিনঘন্টা রাস্তায় গরমে সিদ্ধ হয়েছি, আর ফেরার সময়ে ছ'টার বের হয়ে বাসায় পৌছেছি রাত ন'টায়!

        শুধু রাস্তার কথা আর না বলি, দেশের গাছ থেকে ফজলী আম পেড়ে নিয়ে ইন্ডিয়া কপিরাইট সিল মেরে দিচ্ছে আর আমরা বসে বসে সে খবর শুনছি। আস্তে ধীরে যেমন আমার দেশপ্রেম উবে যাচ্ছে তেমনটা দেখছি আমার আশেপাশের মানুষেরও যাচ্ছে, কারোরই কিছুতে গা নেই... 🙁

        জবাব দিন
        • সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

          দুষ্ট বালিকা,

          রেজার লেখাটা আমার ভাল লেগেছে তাই ফেসবুকের UNITE FOR YUNUS-এর গ্রুপে শেয়ার করেছিলাম তাই আবার এলাম এখানকার মন্তব্য গুলি দেখতে।

          একটা জিনিস আমি বুঝে উঠতে পারিনা - ডঃ ইউনূসের পিছনে এভাবে লেগে হাসিনার কি লাভ হচ্ছে আর দেশের মানুষ বা কেন এর বিরুদ্ধে তেমন প্রতিবাদ করছে না। যে বাংলাদেশ আমি চিনতাম সে কি এতটাই বদলে গেছে?

          জবাব দিন
  12. রেজা শাওন (০১-০৭)

    'আমরা' কথাটা বলেছিলেন তো- সে জন্য সামান্য ভুল বুঝেছিলাম মনে হয়।

    তবে একটা ব্যাপার জানেন, এই সমস্যাগুলো আগেপিছে সব জায়গাতেই। এক এক জায়গায় এক একভাবে ফিল করবেন।

    আশার কথা হচ্ছে-এই বয়স্ক লোকগুলো(ভি আই পি) তো আজীবন থাকবে না। আমরা যখন তাদের মত হব, তখন আমরা যেন তাদের কাছ থেকে এই কুশিক্ষাগুলো না নেই।

    একদিনে হয়তো হবে না, কিন্তু কিন্তু ধীরে ধীরে একটা সময়ে তো নতুন কিছুর জন্য আমরা আশা করতেই পারি।

    ভাল থাকবেন। চমৎকার মন্তব্যের জন্য আবারও একবার ধন্যবাদ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।