পথ নাটক সমূহ( একটি কঠিন রোমাঞ্চকর সিরিজ)

আমার ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় যাত্রা অধিকাংশ সময়ই অশুভ। রাশিফলে ‘যাত্রা শুভ’ কথাটা আমার ক্ষেত্রে বাই ডিফল্ট অশুভ হয়।

২০০৭ সালের এক ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক।বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দুই মাস পিছিয়েছে। বাড়ি ফিরছি। কমলাপুর স্টেশন থেকে রাত পৌনে আটটার আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস। এই সময়ে খুব একটা ভিড় হয় না। আমার সংখ্যায় তিন জন। আমার সাথের দুই জন বন্ধু ইতিমধ্যে তাদের গতি করে ফেলেছে। একজন আবার মেধালিকায় সারা দেশে ফার্স্ট। দুই জনই মেডিকেলে চান্স পেয়ে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে। আমার কাছে যে পৃথিবী অনেকটাই নিষ্ঠুর( তখনও কোথাও চান্স পাই নাই), ঠিক সেই পৃথিবীই তাদের কাছে আনন্দময়। বন্ধুরা আমাকে অগ্রিম টিকেট করতে দেয়নি। তাদের পরিকল্পনা ছিল, টিকেট না পেলে ট্রেনে ছাদে করে যাত্রা হবে। আমি বললাম, “ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আমি কোনভাবেই অপরাধ করতে পারি না। এবং অপরাধীদের সাথে মিশতেও পারি না। আম্মু বলছে, ‘দুষ্ট বন্ধু থেকে সব সময় সাতাত্তুর হাত দূরে থাকবে।”

আমার বন্ধুরা আমার কোথায় প্রচণ্ড মজা পেলো বোধহয়। অনেকক্ষণ পর হাসি থামিয়ে তারা উত্তরে যে কথাগুলো বলে, তার সারমর্ম হল-এমন যে, আমাকে জোর করে কোথাও নিয়ে যাবার জন্য তাদের ঠেকা পড়ে নাই। ব্যস্ত এই পৃথিবীতেতে অন্য সবার মত তাদেরও মেলা কাজ। তাই তাদের সাথে আমার ট্রেনের ছাদে ভ্রমনের ব্যাপারটা পুরোপুরি অপশনাল। আমি চাইলে নাও যেতে পারি এবং আম্মুর বাধ্য ছেলে হয়ে এই মুহূর্ত থেকে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারি। এতে তাদের কোন সমস্যা নেই। শুধু একটা জায়গায় সমস্যা। সেটা হলো তাদের দায়িত্ববোধ। তারা তাদের কড়া দায়িত্ববোধের কাছে তারা বাঁধা পড়ে গেছে।

তারা খুব সুন্দরভাবে আমাকে জানিয়ে দিল যে, বাসে করে নিরাপদে জয়পুরহাট পৌঁছাতে তোমার সময় লাগবে সাত ঘণ্টা। আর তুমি যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফর্মের টাকা মেরে দিয়ে যে, দুইটা ৩০০ টাকা মূল্যের গ্রামীণ ফোনের কার্ড কিনেছিলে, সেই খবর তোমার মার কানে পৌঁছে দিতে আমাদের সময় লাগবে সাত সেকেন্ডেরও কম। আর বন্ধু হিসেবে, এই খবর তোমার মাকে জানানো আমাদের একান্ত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

আমার বন্ধুরা তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে বরাবরই কড়াভাবে সিরিয়াস । আমি দোয়া ইউনুস পড়লাম। কঠিন একটি অশুভ যাত্রা শুরু হলো।

(প্রতি শনিবারে চলবে)

৭৭১ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “পথ নাটক সমূহ( একটি কঠিন রোমাঞ্চকর সিরিজ)”

  1. নাজমুল (০২-০৮)

    আরে নিরঞ্জনদা!!! একি অশুভ কথা বলছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে সব।

    দাদা আপনি যা লিখেন তা আর বলতে।
    তবে বলছিলুম একটু ছোট হয়ে গেলনা ???
    পরের সনিবারের জন্য ওয়েট করছি।
    বড় করে লিখবেন কিন্তু, হ্যা।

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    উফ মাইরি বলচি দাদা যা হয়েচে না এককথায় যাকে বলে ফাটাফাটি :clap:
    তবে সাইজে একটু ছোট হয়েচে এই যা 🙁


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. নাফিজ (০৩-০৯)

    "আজ রবিবার" এর মত আজ শনিবার সিরিজ শুরু করলেন নাকি ? :)) :))

    বেশি ছোট হয়ে গেসে। সাইজ বাড়ান।
    নেক্সট শনিবারের অপেক্ষায় থাকলাম


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।