অভিবাদন বাংলাদেশ…

‘মিডিয়া এক্সপ্লোরেশন’ নামে আমাদের একটা বিষয় পড়ানো হয়। পড়তে খুবই বিরক্তিকর। এবং ঘুমবান্ধব। বড় একটা গ্যালারীতে তিন সেকশনের একসাথে ক্লাস হয়। শীতের দিন সকাল বেলা এই ক্লাসে গিয়ে ঘুমানোর আনন্দ সীমাহীন। গত ব্লক ঘুম দিয়ে বেশ ভালভাবেই পার করেছি। সমস্যা হয়েছে এই ব্লকে এসে।

‘ডরিক গ্রিট’ নামের এক ভদ্রলোক এই বিষয় পড়ান। চমৎকার একজন মানুষ। একদিন কী মনে করে এই লোক আমাকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে বলেন,’তোমার দেশের খবরের ধরনের সাথে এই দেশের(হল্যান্ড) খবরের ধরনের পার্থক্য বল’।

ঘুমের ভিতরে ছিলাম। হঠাৎ করে মাথা শুন্য মনে হলো। কিন্তু শুন্য মাথায় মনে হয় মাঝে মাঝে দামি উত্তর বের হয়ে আসে। আমি উত্তর দিলাম,


“আমার দেশের অধিকাংশ খবরই চাঞ্চল্যকর। আর এই দেশের অধিকাংশ খবরই খুবই বিরক্তিকর…’

ক্লাস জুড়ে হো হো, হা হা রব উঠলো। পরে সবাই ঠাণ্ডা হলে ব্যাপারটা আমাকে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। ডাচদের আবার ইগো একটু বেশি। আমার দেশের তুলনায় তাদের দেশের খবর কেন বিরক্তিকর, সেই ব্যাপারটা তাদের বুঝানোর জন্য ওই দিনে( ১৭ অক্টোবর ২০১১) বাংলাদেশের প্রধান তিনটা খবর তাদের পড়ে শোনালাম।

খবর ১

“শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। এবং দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এতে তাদের সংগতি প্রকাশ করেছে। “

খবর ২

“বেসরকারি খাতে পরিচালিত দেশের সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা সরকারী টেলিযোগাযোগ কমিশনের দাবি করা অর্থ পরিশোধ করবে না। “

খবর ৩

“দেশের ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদ তার এলাকার একটি স্কুলে তালা দিয়ে রেখেছেন। বাচ্চারা ৩৮দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না।(ছবি সহ প্রতিবেদন)”

নানাবিধ আলোচনার পরে তারা সবাই মাথা নাড়িয়ে একমত হয় যে,প্রথম খবরটা বেশি চাঞ্চল্যকর। অনেকগুলো মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা মরে যাবে। চোখ বড় বড় করে অনেকেই বিভিন্ন ইমো দিতে লাগলো। আহারে!!

এর পরে সপ্তাহ খানেক গিয়েছে। লাইব্রেরী করিডোরে ডরিকের সাথে দেখা। কফি হাতে কোথায় যেন যাচ্ছে। দৌড়ের উপর আছে, বোঝা যায়। আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি। ডরিক পিছন থেকে ডাক দিল।

– হাই…!! রেজা কেমন আছো?
– ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
-এইতো ভাল আছি। আচ্ছা তোমার দেশের ওই মানুষগুলোর কি খবর? যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা মরে যাবে। আমি কয়দিন ধরে খুব ব্যস্ত। খবরটা ঠিক মত ফলো করতে পারি নি।

আমি একটু অবাক হলাম। তৃতীয় বিশ্বের গরীব একটা দেশের কিছু মানুষ মরে যাওয়ার খবর,এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। ডাচরা বরাবরই ‘বিজনেস পিপল’ ধরনের। নিজের দরকার না থাকলে, সচরাচর যেচে পড়ে কারো খবর এরা নেয় না। ডরিক আমাকে কফি অফার করলো। কফি খেতে খেতে সেদিন ডরিকের সাথে আমার কিছু চাঞ্চল্যকর বিষয়ে আলোচনা হলো।

ডরিকের নয় বছর বয়সী ছেলে স্তিভান একজন বাংলাদেশী হতে চায়। আমি ডরিকের কথা শুনে চোখ কপালে তুললাম। এবং অনেকক্ষণ সে চোখ কপালেই থাকলো। ডরিক পুরো ব্যাপার ব্যাখ্যা করলো। স্তিভানের পছন্দের টিভি প্রোগ্রাম হলো “Bangla Bangers “

যেখানে লিপু নামের এক বাংলাদেশী, বার্নি নামের এক ব্রিটিশ মেকানিককে নিয়ে বিস্ময়কর সব সুপার কার বানায়। মজার ব্যাপার হলো, লিপু কোন ইনিঞ্জিনিয়ার নয়। লিপুর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এবং সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে, লিপু গাড়ির পুরো ডিজাইনটা রাখে তার মাথায়। তার কোন ড্রয়িং লাগে না। মোটামুটি আবর্জনা ধরনের গাড়িকে সুপার কার বানাতে লিপুর লাগে চার সপ্তাহ। লিপুর কথা আমিও জানতাম। বাংলাদেশের কোন জানি টিভি চ্যানেল লিপুকে নিয়ে একবার কী জানি একটা প্রতিবেদন করেছিল। এর পর লিপুকে দেখেছি ডিসকভারি চ্যানেলে। লিপুর সম্পর্কে আমার জ্ঞান ওই পর্যন্তই।

ডরিক আমাকে জানালো, অধিকাংশ ইউরোপিয়ান টিনেজার লিপুর নাম জানে। লিপুর নাম শুনলে ক্লাসে আড্ডা জমে যায়। এরা চোখ বড় বড় করে লিপু নামের এক বাংলাদেশী কিভাবে একের পর এক সুপার কার বানিয়ে ফেলে,সেই সব গল্প করে। লিপু গাড়ি বানানো শেষ হলে, দুই হাত তুলে ঢেউ তোলার মত একটা ভঙ্গি করেন। লিপু হয়তো জানেন না, বঙ্গোপসাগর থেকে তার তোলা ঢেউ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আছড়ে পড়েছে ইউরোপে। এখানকার বাচ্চারা লিপুকে তারা ডাকে, “ক্রেইজি ডুউড” বলে।

দূরে থাকার একটা অসুবিধা আছে। সাত হাজার মাইল দূরে ফেলে আসা গরিব এই দেশটার কথা শুনলেই অনেক সময় চোখে পানি চলে আসে। এর জন্য খুব একটা দেশপ্রেমিক হতে হয় না। এটা একান্তই মানবীয় একটা অনুভূতি। হঠাৎ করে আবেগতাড়িত হলাম বোধ হয়। খেয়াল করলাম, চোখ ভিজে আসছে। ডরিক বোধহয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো। ডরিক আরও কিছু তথ্য আমাকে দিল।

অধিকাংশ ডাচ লোকজনদের ধারণা, বাংলাদেশের লোক জন বাড়াবাড়ি রকমের সাহসী। বন্যা-খরা তাদের কাছে কোন ব্যাপার না। এবং আমাদের এই সাহসী মানসিকতা দেখে তারা প্রতি মুহূর্তে অবাক হয়। একটা ব্যাপার বলে রাখা ভাল,নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে একই ঘরনার দেশ। ১৯৫৩ সালের এক বন্যায় এই দেশের সব বাঁধ ভেঙে যায়। উত্তর সাগরের আকস্মিক ঢেউ ১৮০০ জন মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই দুঃসহ স্মৃতি ডাচরা এখনো ভুলতে পারে নি। তারা সমুদ্রের বুকে পৃথিবীর সেরা সব বাঁধ বানিয়েছে, তারপরও তাদের ধারণা তাদের সাহস কম। সাহস বেশি বাংলাদেশীদের। ১৯৭০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে বন্যায় যত মানুষ মারা গিয়েছে, সারা পৃথিবীতে বন্যায় এতো মানুষ আর কোথাও মারা যায়নি। তারপরও এই দেশের মানুষরা বন্যা নিয়ে খুব একটা দুঃখিত না। প্রতিবছর নিয়ম করে বন্যা আসে, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ কিন্তু থেমে থাকে না।

ডরিক আমাকে জানালো, বর্ষায় বাংলাদেশের একটা ছবি দেখেছিল সে। আকাশের অনেক উপর থেকে তোলা একটা ছবি। উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, পুরো দেশটা সমুদ্র হয়ে গেছে। শুধু বিন্দুর মত ছোট ছোট কিছু সবুজ জেগে আছে।

আমি বললাম, ওই সবুজটুকু থাকলেই হবে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ওইটুকু সবুজই যথেষ্ট।

১২,২৭৬ বার দেখা হয়েছে

১২২ টি মন্তব্য : “অভিবাদন বাংলাদেশ…”

  1. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    ::salute::


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন লিখেছ রেজা,পড়তে গিয়ে চোখে পানি চলে আসল। :boss:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    খুব বেশী ঝিমিয়ে পরেছিলাম রেজা। তোমার লেখা পড়ে আবার নড়ে চড়ে গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠার প্রেরনা পাচ্ছি। ছিটেফোটা সবুজ আকড়ে ধরে ঘুরে দাড়াতে হবে। "ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ওইটুকু সবুজই যথেষ্ট।"


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  4. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    রেজা, আমরা চল্লিশ বছর আগে যে জয় ছিনিয়ে এনে দিয়েছি, সেই সূর্যের সোনালি দাহন আসবে তোমাদেরই ঘিরে। বিজয় দিবসের শুভ লগ্নে, তোমায় অভিবাদন।- আজিজ


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  5. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    অসাধারন ::salute:: ::salute:: ::salute::


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  6. অনেকদিন থেকেই ব্লগ পড়ি - হরেক ব্লগার, হরেক স্বাদ। এই প্রথম, জানিনা কেন, মন্তব্য দিতে ইচ্ছা হল। লেখার সম্পর্কে কিচ্ছু বলবনা, শুধু এটুকু জানাতে ইচ্ছা করছে যে, প্রাণ স্পর্শ করে গেছে।
    ভালো থাকবেন।

    জবাব দিন
  7. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    শাওন,

    আমরা সবাই ওই সবুজটুকুই আঁকড়ে ধরে রেখেছি। তোমাদের প্রজন্মই পারবে দেশটাকে আরো উঁচুতে তুলতে। এগিয়ে এসো নতুন। অভিবাদন তোমাদের।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  8. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    এর আগেও তোমার লেখা পড়েছি। আগে বোধহয় বলা হয়নি - তোমার লেখনী অসম্ভব হৃদয়ছোঁয়া। জানতে ইচ্ছা করছে যে বিষয়ে পড়ছো তা নিয়ে আপাতত ভবিষৎ ইচ্ছা কি?


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      আপু অনেক ভাল লাগলো। ভীষণ অনুপ্রাণিত হলাম। ধন্যবাদ।

      যদিও সাংবাদিকতা পড়ছি, কিন্তু সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা নাই আপু। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছু হতে ইচ্ছে করে।

      দোয়া করবেন আপু, যাতে কয়দিন পরে হলেও আপনার প্রশ্নের খুব ভাল আর গোছানো একটা উত্তর যেন দিয়ে যেতে পারি।

      জবাব দিন
  9. সাব্বির (৯৫-০১)

    শুধু একটা কথাই বলার আছে, অসাধারন!!!!
    প্রতি টা লাইন উপলব্ধি করতে পারছি, আর তাকিয়ে আছি ঐ সবুজ টুকুর দিকে।
    তোমার লেখার ক্ষমতা দুর্দান্ত। চালিয়ে যাও :thumbup:

    জবাব দিন
  10. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    অসাধারণ লেখা! বাংলাদেশীরা আসলেই সাহসী। তবে সুপরিকল্পিতভাবে বারবার আমাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হয়। তোমার লেখাটি সবার জন্য খুব উৎসাহব্যন্জক হবে।

    জবাব দিন
  11. সামিয়া (৯৯-০৫)

    চমৎকার লেখা ভাই, চোখে পানি এসে গেলো লেখাটা পড়ে। অসাধারণ লেখো তুমি। সাথে মনে হলো,ঠিক কবে আসলে আমরা ঘুরে দাঁড়াবো? বাংলাদেশীদের টলারেন্স লিমিট খুব বেশি, আমি মনে করি এটা কোন সুস্থতা হতে পারে না। জীবন যাপনের জন্য এটা একেবারেই আদর্শ না। তোমার লেখাটাই ধরো, ডাচেরা তাদের ১৮০০জনকে হারিয়ে সেই স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেনি, আর আমরা প্রতি বছরই হারাচ্ছি, বন্যায়, মঙ্গায়, দুর্ভিক্ষে, গরমে। আমরা কিন্তু এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। এই অসাধারণ টলারেন্স লেভেলে এসে এই সকল মৃত্যু, দুঃখ, কষ্ট সব লোপ পেয়ে যায়। এটা কি কোন সুস্থতা হতে পারে? বা সাহসিকতা?

    আমরা আবেগে এত চলি, যে কাজ করতে ভুলে যাই। লিপুর কথা শুনেছিলাম। এত বিস্তারিত জানিনা বলে এখন লজ্জা হচ্ছে। ইউটিউবে ঘুরে দেখতে হবে।

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      আপু অনেক ধন্যবাদ।

      আমরা কিন্তু এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। এই অসাধারণ টলারেন্স লেভেলে এসে এই সকল মৃত্যু, দুঃখ, কষ্ট সব লোপ পেয়ে যায়। এটা কি কোন সুস্থতা হতে পারে? বা সাহসিকতা?

      আপু আমাদের দুর্বলতা এখানেই। এই দুর্বলতাকেই পুঁজি করে, সবাই ব্যবসা করছে। আর দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসা রাজনীতি। সর্বচ্চো সংখ্যক মানুষ এই ব্যবসার সাথে জড়িত।

      জবাব দিন
  12. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    খুব ভাল লাগল লেখাটা পড়ে। আরও ভাল লাগল কারণ ডাচদের নিয়ে আমারও কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। আমার কেন জানি মনে হয় ইউরোপে ডাচরা সবচেয়ে বিশ্বসচেতন জাতি, কতোটা বিশ্বসচেতন বলতে পারব না কিন্তু সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ সচেতন এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

    আমার প্রথম এক ডাচ মহিলার সাথে পরিচয় হয়ে জার্মানির গ্যটিঙেনে, নৃবিজ্ঞানের এক কনফারেন্সে। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, নাম এলেন বল। কথা শুরু হয় বাংলা দিয়ে কারণ তিনি বেশ ভাল বাংলা বলতে পারেন, পিএইচডি থিসিস করেছেন আমার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহে। বিষয় ছিল ময়মনসিংহের গারোদের ইতিহাস। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের প্রতি তার যে ভালবাসা সেটা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। তিনি এখনও নিয়মিত দেশে যান, কাজ করেন মূলত আদিবাসী এবং বিদেশ আসতে বেপরোয়া বাঙালি তরুণদের নিয়ে। আমাকে দেখে বললেন, বাংলাদেশের যেসব তরুণ বিদেশ আসতে চায় তাদের উপর তিনি একটি পরিসাংখ্যিক জরিপ করেছিলেন, আমাকে তার সেই তরুণদের একজনই মনে হচ্ছে। তিনি মূলত তাদের মনঃস্তত্ত্ব নিয়ে ভেবেছিলেন। এই ফেব্রুয়ারিতেও তিনি দেশে গেছেন, বান্দরবানে গিয়ে দেখা করেছেন আমাদের পরিচিত একজনের সাথে। ২০১০ সালে আমরা ক্যাডেট কলেজ ব্লগ থেকে ওঠানো টাকায় কম্বল কিনে বান্দরবান গিয়েছিলাম বিতরণ করতে, আমাদেরকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল দা, এবার এলেনকেও সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়েছেন তিনি।

    দ্বিতীয় ডাচের সাথে পরিচয় জার্মানির হাইডেলবার্গে। হাইডেলবার্গের ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায় লাঞ্চ করছি এমন সময় এক ডাচ অধ্যাপক এসে পাশে বসলেন। কথায় কথায় জানলেন আমি বাংলাদেশের। সাথে সাথেই তার মুখ অন্যরকম হয়ে গেল। তার মতে বাংলাদেশ আর হল্যান্ডের মধ্যে জলবায়ুগত দিক থেকে অনেক মিল। হল্যান্ড ইউরোপের নিম্নভূমি আর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নিম্নভূমি, বড় বড় নদী এই দেশ দুটি হয়েই সাগরে মেশে। বাংলাদেশের মত হল্যান্ডকেও ইউরোপের বড় বড় সব দেশের কৃপায় বাঁচতে হয়, বাংলাদেশের মত এখানেও বন্যা, জলোচ্ছাস আসে। তিনি যে বাংলাদেশীদের সাহসী মনে করেন সেই ধারণাটাও পেয়েছিলাম, এখন বুঝলাম এটা সুশিক্ষিত ডাচদের সাধারণ ধারণা। ভারত যে নদীসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদীগুলোর বারোটা বাজাতে যাচ্ছে সেটাও বললাম উনাকে, তিনি বললেন সেটা জানতেন না, খুব আগ্রহও দেখালেন ব্যাপারটাতে।

    ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখেছিলাম যাতে স্পষ্টভাবে বলাও হচ্ছে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডের অবস্থা কিভাবে খুব কাছাকাছি। নদীসংযোগ নিয়ে করা এই প্রামাণ্য চিত্রে দিল্লীর একজন অধ্যাপকের সাক্ষাৎকারও আছে যিনি ভারতের হওয়া সত্ত্বেও স্পষ্টভাবে বলেছেন ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অনেক নদী ধ্বংস হয়ে যাবে। লিংকটা দিচ্ছি:
    - http://www.facebook.com/photo.php?v=2166037388845

    সবশেষে কথা: নেদারল্যান্ডের কোথায় থাক তুমি? কারণ আমিও এই অক্টোবর মাসে নেদারল্যান্ড যাচ্ছি ৪ বছরের জন্য, আমি থাকব খ্রোনিঙেনে।

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      মুহাম্মদ ভাই ধন্যবাদ। চমৎকার একটা মন্তব্যের জন্য। অনেক চমৎকার কিছু ব্যাপার উঠে এসেছে। আর ডাচ লোকজন আসলেই নানাভাবে আমাদের হেল্প করে এসেছে। আমাদের পাবলিক হেলথ সেক্টরে ওদের প্রচুর টাকা অনুদান আছে।

      আমি ইউটরেক্ট থাকি ভাইয়া। এটা আমস্টাডাম থেকে ট্রেনে ২০ মিনিট। আপনি খ্রোনিঙেনে যেতে চাইলে, এখানে আপনাকে ট্রেন বদল করতে হবে।

      আপনি আসবেন শুনে খুব ভাল লাগছে। হল্যান্ডে ক্যাডেট নাই। একা পড়ে গেছিলাম। আমার ফেসবুক আইডি নিচে। ইনসাল্লাহ যোগাযোগ থাকবে। ভাল থাকবেন ভাইয়া।

      https://www.facebook.com/reza.shaown?ref=tn_tnmn

      জবাব দিন
  13. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের নদী ধ্বংস নিয়ে হওয়া টিভি নিউজটা ফেসবুক থেকে নিয়ে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। এখানে এমবেড করলাম:

    জবাব দিন
  14. রায়েদ (২০০২-২০০৮)

    আরও একবার পড়লাম। আবারো অসাধারণ লাগলো।
    আমার মনে একটা কথা এসেছে। লিপুরাতো আসলেও বাংলাদেশের। আমি ধোলাইখালের কিছু কথা শুনেছি। তাতে মনে হয়েছে ওখানে যারা কাজ করে তারাও তো লিপুর মতই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তবুও এইসব জটিল কাজ সহজেই করে ফেলে।

    জবাব দিন
  15. শাহাদাত মান্না (৯৪-০০)

    রেজা :clap:
    দারুন লিখেছিস। আমি লিপু ভাইকে চিনি ওনার মত খ্যাপাটে লোক আমি খুব কমই দেখেছি। উনি ভীষণ স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। কপাল মন্দ দেশটা তার হীরাগুলোকে কখনোই চিনলোনা। লিপু ভাই প্রকৌশলী নন, তিনি শিল্পী।

    যাই হোক তোর লেখাটা দেরীতে হলেও চোখে পড়ল। খোমাখাতায় শেয়ার দিলাম।

    জবাব দিন
  16. রেজা শাওন (০১-০৭)

    মান্না ভাই অনেক ধন্যবাদ।

    লিপু ভাইকে আমার নিজের কাছেও প্রকৌশলী মনে হয়নি। বরং শিল্পীই মনে হয়েছে।

    আর আমাদের যে কপাল খারাপ, এই ব্যাপারেও সন্দেহ নাই।

    জবাব দিন
  17. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এই লেখাটা ডজনখানেক বার পড়ার পর খেয়াল করলাম এখানে আমার কোন কমেন্ট নাই।রেজা,তোর ভাষার ব্লগেও যেইটা বলিনাই কিন্তু ফেসবুকে বলেছি সেইটা এইখানে আরেকবার বলিঃ আমি গরীব দেশের গরীব অফিসার,কিন্তু আমার যদি সামর্থ থাকতো তাহলে যেই হাত দিয়ে এই লেখা লিখেছিস সেই হাত আমি সোনা দিয়া বান্ধায়ে দিতাম।বুকে আয় ভাই!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেজা শাওন (২০০১-২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।