বর্ষাকাল মানেই একটা প্রেম প্রেম ব্যাপার থাকবে। এই কথা আমি যেমন জানি, শাহ্বাগের ফুলওয়ালা মামারা আমার চাইতেও ভাল জানে। বেলী ফুল খুঁজতে আমাকে খুব বেশি একটা দৌড়াতে হয় না। নয়টার আগে শাহবাগ মোড়েই বেলীফুল পেলাম। ১০ টাকা বেশি দিয়ে দুইটা বেলীফুলের মালা কিনে পকেটে ভরলাম। এতক্ষণে অনুপমার ঘুম ভেঙেছে বোধ হয়। কতটা শৈল্পিক ভাবে ওকে ফুলগুলো দিব, ওর হিব্রু ভাষা আঁকানো চেহারাটা তখন দেখতে কেমন হবে- ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে বারডেমের দিকে হাঁটা দিই।
গতরাতের বৃষ্টিস্নাত ঢাকা। আর চার পাশ ঘিরে থাকা ভেজা বাতাস। কোন উজবুক যেন বলেছিল, “এই শহরে নাকি ভালোবাসা নাই!! সবই ঢং” !! উজবুকটারে পাইলে, মিরপুর চিড়িয়াখানায় নির্বাসন দিতাম। এই যে ভালোবাসা আছে। বেলীফুল আছে। বুকের মাঝে ক্ষণে ক্ষণে একটা ধাক্কা আছে। আর ধাক্কাটা অল্প অল্প করে বেপরোয়া হচ্ছে। আচ্ছা আমার কি ভয় পাওয়া উচিত? বেয়াদপ মেয়েটা যদি মুখের উপর না বল দেয়!! এই মেয়ে যেমন!! আরে ধুর!! না বললে বলুক। কত দিন আর এইভাবে থাকা যায়?
মেয়ের ঘুম ভেঙ্গেছে। হাসপাতালে ফিরে দেখি, বিছানায় বসা। একটু লজ্জা লজ্জা ভাব। এর আগে কখনো হাসপাতালে থাকেনি মনে হয়। পরে কোন এক সময় ওর অভিজ্ঞতাটা শুনে নিতে হবে। আমার দুলাভাই ওর বিছানার পাশে চেয়ারটায় বসা। দুলাভাই দেখি হাত-টাত নাড়িয়ে সীমাহীন ভাব নিয়ে কথা-বার্তা বলছে। আমার বোনটাও না আমার মতই হালকা গাধা আছে। দুলাভাই যে ‘মেয়ে দেখলেই আমি হিরো হয়ে যাই’ এই জাতীয় সমস্যায় প্রবলভাবে আক্রান্ত, আমার বোন এই খবরটা একবারেই জানে না। ব্যাপার না। কোনও এক শুভক্ষণে আপার কানে দিয়ে দিব। আপাতত দুলাভাই এর দিকে কড়া একটা লুক দিলাম। যার মানে, ‘এই মিয়া, বান্ধবীটা আমার। আপনি বিদায় হন। মেলা সার্কাস করছেন’।
দুলাভাই ঠিক বুঝলো কি না জানিনা। কিন্তু আজকের দিনটা আমার। সেটা আরেকবার বুঝলাম। দুলাভাই দশ মিনিটের মাথায় অফিসের কথা বলে বের হয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে বেশ একটা ইঙ্গিতপূর্ণ স্বরে বলে গেলেন, ‘ভালভাবে দেখে রাখিস’।
ভালভাবে দেখেতো রাখতেই হবে। দুলাভাই চলে যাওয়ার পর অত্র এলাকায় আমিই একমাত্র মুরুব্বি। একটা দায়িত্ব আছে না! চোখের কোনা দিয়ে অনুপমার দিকে একটা চোরা দৃষ্টি দিলাম। ক্যাডেট কলেজে পাক্ষিক পরীক্ষার দুর্যোগের সময়টাতে যখন চার পাশে হাহাকার রব উঠত তখন এই ‘চোরা দৃষ্টি’ কত বার যে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বহুদিন প্র্যাকটিস না থাকলে খুব অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরাও ফুলটস বলকে ইয়র্কার বানিয়ে ফেলে। এবং সে বলে আউট হয়। আমিও হলাম। অনুপমার চোখে চোখ পড়ে গেল। খুব বাজে ভাবে ধরা খেলাম। এবং দুঃখজনক ভাবে চোখ সরিয়ে নিতে পারলাম না। গতরাতের ধকল ওর উপর দিয়ে ভালই গেছে। ‘এখনই উড়াল দিব’ সেই ভাবটা আর নেই। এমনিতেই ছোটখাটো মানুষ। তার উপর লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জা পাওয়ায় ওকে আরও ছোট্ট দেখাচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমাকেই কথা শুরু করতে হল।
-কী রে, কী খবর এখন? কেমন লাগছে?
-এইতো, এখন ভাল আছি।(এইটুকু বলতে গিয়েই ও মনে হয় লজ্জায় মারা যাচ্ছে, এমন অবস্থা)
আমি ভাবলাম, যাক! মেলা দিন পর পাখি ফাঁদে পড়েছে। এতো দিন ও আমাদের যা পেইন দিছে, আজকে সেই হিসাবটা ক্লিয়ার করতে হবে।
-কাল রাতে তুই যে কাহিনী করলি!! আমিতো ভাবলাম,এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে করে তোরে সিঙ্গাপুর-টিঙ্গাপুর পাঠাতে হবে!!
-তোদের খুব ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি, তাই না?(মাথা নিচু করে অনুপমা উত্তর দেয়)
-তোদের আবার কি রে? শুধু আমাকে ঝালেমায় ফেলে দিয়েছিস। সারা রাত ঘুম বিসর্জন দিলাম। বৃহত্তর রমনা এলাকার মশক সমাজ “অবাধে রক্তপান দিবস” পালন করেছে গত রাতে। এদের আগামি দুই দিন কিছু খেতে হবে না।
-কি বলিস? তুই সারা রাত জেগে ছিলি?(বালিকার চোখে লজ্জা মাখানো বিস্ময়)
-সারা রাত তোর জন্য জেগে ছিলাম, এমনটা ভাবার দরকার নাই। সুমি আর তিশার সাথে ফোনে একটা শিফট ছিল। বারটা থেকে দুইটা সুমি এরপর তিশা।
অনুপমা হাসে। কালরাতের পর এই প্রথম হাসলো ও। আবার সেই পরিচিত ধাক্কাটা!! বলা যায়, এবার একটু বেশ জোরেসোরেই খেলাম।
-তোর সাথে আবার কে কথা কয়? আমিতো জানতাম, ঢাকা শহরে আমিই একমাত্র মেয়ে যে তোরে একটু পাত্তা দেয়!!
-অফ যাও!! আমি কি ঢেউটিন নাকি? খালি একটা ডাক দিলে, আমার বান্ধবীরা সব স্রোতের মত আসবে। শাহবাগের রাস্তা ব্লক করা আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না। ‘উইমেন পাওয়ার’ হেভি কড়া জিনিষ।
অনুপমা আবারও ঘর কাঁপিয়ে হাসে। অনেকটা সময় নিয়ে আমি বাতাসে ওর হাসির রেশ খুঁজি। তাৎক্ষণিকভাবে আমার মনে হয়,এই বেয়াদপ মেয়েটার জন্য সার্কাসের ভাঁড় হতে আমার একদমই খারাপ লাগবে না। অনুপমার হাসি মুখটা বার বার দেখার একটা নেশা আমাকে পেয়ে বসে।
এগারটার দিকে আম্মাকে কেবিনে আনা হয়। খুব বড় কোনো অপারেশন ছিল না। আম্মা তাই অনেকটাই স্বাভাবিক। অনুপমা তখন হলে ফিরবে। আম্মার সাথে টুকটাক কথা বলার পর আমি ওকে হলে নামিয়ে দিতে যাই।
শাহবাগ থেকে রিকশা নিলাম। এর আগেও ‘N’ সংখ্যক বার ওর সাথে রিকশায় নীলক্ষেত গিয়েছি। কখনো নিজেকে আমার ওর অভিভাবক মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে। হঠাৎ করে কাউকে খুব কাছের মনে হওয়ার একটা বেপরোয়া অনুভূতিকে আমি খুব কষ্টে সামলাচ্ছি। পুরো সময়টুকুতে আমাদের কোন কথাই হলনা। অনুপমাকে খুব স্বাভাবিক দেখে, আমিও কেন জানি কিছু বলতে পারলাম না। এক ইঞ্চিরও কম দূরত্বে বসে থাকা মানুষটার ভেতরের ঝড় কি এই মেয়ে একটুও বুঝতে পারছে না?
শাহবাগ থেকে ওর হল খুব বেশি দূরের পথ না। হলের সামনে এসে রিকসা ছেড়ে দিলাম। হাতে কিন্তু তখনও সময় ছিল। চাইলেই কিছুটা সময় আটকে রেখে, ওকে আমি আমার বেলী ফুলের গল্পটা শোনাতে পারতাম। কেন জানি সেটা আর করা হল না। ওকে খুব সাধারন ভাবে বিদায় দিয়ে আমি বাসায় ফিরি। ফেরার পথে আমার সকালে কেনা বেলিফুলগুলোর কথা মনে হয়। ১৩ নম্বর বাসের অসাধ্য ভিড় আর ঠেলাঠেলিকে মোটামুটিভাবে অগ্রাহ্য করে আমি পকেট থেকে বেলীফুলের মালাটা দুটো বের করলাম। শাহবাগ থেকে মোহাম্মাদপুর পর্যন্ত বাকী পথটুকুতে লোকজন খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সেদিন আমি বেলিফুলের মালা গলায় পরে বাসায় ফিরলাম।
এর পরের কয়টা দিন আমার আর ক্লাসে যাওয়া হলনা। কেন জানি মনে হচ্ছিল, অনুপমার সামনে দাঁড়ালে ও ব্যাপার সব বুঝে যাবে। মানুষ প্রেমে পড়বে এবং আমার মত যারা ছোটকাল থেকেই নারী নিষিদ্ধ একটা পরিবেশে বড় হয়েছে, তারা চাইলে দিনে দশবারও পড়তে পারে। আমি এর আগে কার কার প্রেমে পড়েছিলাম তার একটা লিস্ট বানাতে থাকি। লিস্টে সবার আগে থাকে বাংলার লাকী ম্যাডাম। আর একেবারে শেষে এসে অনুপমা।
এর মধ্যে অনুপমা অসংখ্য বার ফোন করেছে। একে ওকে দিয়ে ফোন করিয়েছে। কারও ফোনই আমার আর ধরা হয়ে ওঠেনি। আমি প্রায় সারা দিনই ঘুমাই। খুব একঘেয়ে লাগলে মাঝে মাঝে ছাদে যাই। আকাশ দেখি। জুন মাসের ওই সময়টায় কেন জানি সেদিনের পর অনেক দিন আর বৃষ্টি হল না।
আমার শামুকদশা ভালই চলছিল। এর মধ্যে একদিন একটা মেইল আসে। বাইরের একটা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করেছিলাম অনেক আগে। ওরা মেইল পাঠিয়েছে। মেইলের সাথে ওদের কনফার্মেশন লেটার। মেইলের মানে যা বুঝলাম, সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে, ওরা আমার ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করবে। হেনতেন হাবিজাবি। আমি যে আসলেই বাইরে চলে যাব, ব্যাপারটা তখনও মনে হয়নি। এরা এই ধরনের মেইল সবাইকেই পাঠায়। এই সব খুব সিরিয়াসলি নেওয়ার মত কোনো ব্যাপার না। কিন্তু খুব আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম মেইলটা পাওয়ার পর থেকে অনুপমার জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। বিকেল ৪টার দিকে ওই মেইলটা পেয়েছি। তারপর থেকেই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলাম। নিজের সাথে এতো দিন ধরে আমি যে নাটকটা করে এসেছি তার শেষ অঙ্কে এসে নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। সাড়ে ছয়টার পর থেকে ঢাকার আকাশের দক্ষিনদিকটায় কিছু মেঘের আনাগোনা দেখলাম। আমি একটা বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। ঘোর লাগা বৃষ্টি। আজ ঢাকা শহরে বান ডাকুক। আমি তাই চাই।
সন্ধ্যা সাতটার পর বৃষ্টি শুরু হল। আমি আমার জীবনে এই রকম বৃষ্টি খুব কমই দেখেছি। এই বৃষ্টিকে হিংস্র বললে খুব একটা ভুল হবে না। বড় বড় ফোঁটার লাগামহীন বৃষ্টি। সেই সাথে দলছুট বাতাস। বেশিরভাগ সময় বৃষ্টির সাথে বাতাসের দিকের একটা সম্পর্ক থাকে। আজকে সেটা নেই। বাতাস পারলে মোটামুটিভাবে সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যায় এমন অবস্থা।
আমি বাসা থেকে বের হলাম। ওজনটা একটু বেশি বলেই মনে হয় বাতাস আমাকে উড়াতে পারলো না। কিন্তু চেষ্টা অব্যাহত থাকল। চার পাশ খুব কষ্ট করে দেখতে হচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটার জন্য চোখ খোলা রাখা দায় এমন অবস্থা। কপাল ভাল ছিল, এর মধ্যে একটা রিকশাও পেয়ে গেলাম। বৃষ্টি হলে রিকশা ভাড়া এমনিতেই দ্বিগুণ হয়ে যায়, আমি তিনগুন ভাড়ায় রিকশা নিলাম। সাতমসজিদ রোড আজকে একবারেই ফাঁকা। এই রকম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আজকে আর কেউ বের হবেনা । বৃষ্টি ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে আমার কাঁপুনি। শাহবাগের কাছাকাছি এসে ফুলের দোকানগুলোতে দাঁড়ালাম। অনেক খুঁজেও বেলীফুল পেলাম না। অথচ আজকে আমার বেলিফুল খুব দরকার। খুউব…
অনুপমার হলের সামনে এসে ওকে ফোন দিলাম। অনুপমা ফোন ধরে না। কত বার ওকে ফোন করেছি জানিনা। মনে হয় তেইশতম বারে অনুপমা ফোন ধরলো।
-হ্যালো অনুপমা, তুই কি হলে?
-তুই কই থেকে? এতো দিন আমার ফোন ধরিসনি কেন?
-সব বলছি, তুই একটু বাইরে আয়।
-বাইরে আসব মানে? বাইরে কি অবস্থা দেখছিস? এর মধ্যে কিভাবে? হলের সামনে পানি জমে গেছে।
-জানিনা কিভাবে আসবি। কিন্তু প্লিজ আয়। খুব দরকার।
অনুপমা ফোন রেখে দেয়। আমি পৃথিবীর সব উত্তেজনা বুকে নিয়ে বাইরে দাড়িয়ে ভিজছি। কোন কিছুই আমার মাথায় নেই। ও আসলে কী বলব, তাও জানিনা। শুধু জানি, আজকে আমাকে এই নাটকের শেষটা দেখতে হবে। চার পাশ কাঁপন তুলে বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু এর মাঝেও অনুপমার জন্য আমার বুকে যে কাঁপনটুকু, সেটুকু আমি ঠিকই বুঝতে পারছি।
মিনিট দশেক পরে দূরে দেখলাম ছাতা মাথায় পানি ভেঙ্গে অনুপমা হল গেট থেকে বের হচ্ছে। সাড়ে আটটার মত বাজে। চার পাশে অন্ধকার। বৃষ্টি যেন বেগ বাড়িয়ে দিল। সেই সাথে বাতাস। এই মেয়ের ছাতা না উড়ে যায় আজকে!
অনুপমা সামনে দাড়িয়ে। কিছু ক্ষণের জন্য আমার মনে হল, পৃথিবীটা হঠাৎ করেই শব্দহীন হয়ে গেছে। আসে পাশের কোন শব্দই আমার কানে পৌছায় না। কতক্ষণ ওভাবে ছিলাম জানিনা। আমার হাতে সময় খুবই কম। আমি শেষ পর্যন্ত বলে ফেলি…
-অনুপমা, আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবি?
অনুপমা কিছু বলে না। আমি আবার বলি,
-চল বৃষ্টিতে ভিজি।
কথা গুলো বলেছিলাম মাটির দিকে তাকিয়ে, ওর মুখের দিকে তাকানো হয়নি। অনুপমা মুখ নিচু করে দাঁড়িয়েছিল। একটা সময় ও কথা বলে ওঠে…
-বাসায় যা। মেলা ভিজেছিস।
ওর কথায় কেন জানি আমার কোন কিছু মনে হল না। অনুভূতি মাঝে মাঝে মরে যায়। সে রাতে আমার অনুভূতির শেষ বিন্দুটুকুও যেন মরে গেল। সারা পৃথিবীর নির্লিপ্ততা তখন আমার স্বরে।
-চলে যাব?
-হুম, চলে যাবি।
আমি আর পেছন ফিরে তাকাইনি। সে সুযোগও আমার ছিল না বোধহয়। এলোমেলো পায়ে অনেকটা পথ হেঁটে এসে বাংলা মোটরের কাছে এসে দাঁড়ালাম। বৃষ্টি সেই আগের মতই। বিরামহীন ভাবে তার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে গেছে অনেক আগেই। নেহাৎ প্রয়োজনে বের হওয়া গাড়িগুলো সেই পানিতে স্রোত তুলে চলে যায় । কোথায় যে যাব, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। রাস্তা পার হয়ে ইস্কাটনের দিকে হাঁটা দিলাম।
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় নাটকের বোধহয় তখনও কিছু বাকী ছিল।
হঠাৎ করে ফোনের এসএমএস টোনে,আমার এলোমেলো হাঁটায় ছেদ পড়ে। নেহাৎ নিরলিপ্ততায় এসএমএসটা খুলব না ভেবে ফোন পকেটে রেখে দিলাম। এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজে আমার ফোন প্রায় যায় যায় অবস্থা।
মাঝে মাঝে অনেকে ‘কু’ ডাক শোনে। আমি মনে হয় সে রাতে ‘সু’ ডাক শুনেছিলাম। কী মনে করে যেন, ম্যাসেজটা পড়ে ফেললাম। কয়েকটা লাইনের এলোমেলো এক বার্তা ছিল সেখানে।
“তুই একটানা ৯ দিন আমার ফোন ধরিসনি। ক্লাসে সারাটা সময় দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তুই ক্লাসেও আসিস নি। আর আজকে হঠাৎ এসে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলি!! এতো সাহস কেন তোর??
তোকে এই শাস্তিটুকু দিয়ে হলে ফিরে অনেক কেঁদেছি। অনেক”।(সমাপ্ত)
শেষের কিছু কথাঃ
যাকে নিয়ে এই গল্পটা, তাকে নিয়ে একটু বলি। গল্পের নায়ক আমার এই বন্ধুটির নাম ‘কামরুল’।
কামরুলের গল্পটাকে নিজের অনুভূতি থেকে কতটা লিখতে পেরেছি জানিনা। মজার ব্যাপার হল-আমাদের কামরুল গল্পের নায়কের চেয়েও ছিল আরও কয়েক গুন ভীতু। শেষ অবধি গাধাটা অনুপমাকে কিছু বলতে পারেনি। আমরা খুব চাইতাম ও একদিন বলুক। আমাদের চাওয়াটা কামরুল রাখেনি। ২০০৯ এর অগাস্টে আমরা শুনলাম কামরুল অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে। আমরা সবাই খুব খুশি হয়েছিলাম। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে প্রথম কেউ বাইরে যাচ্ছে! ও যাওয়ার পর শুরুর কয়দিন আমার সাথে ওর মেইলে যোগাযোগ হত। পরের দিকে ওর নানা ব্যস্ততায় সে যোগাযোগটুকুও অনেকটা কমে যায়। সুরটুকু কেটে গিয়েছিল। তারপরও আমরা নিশ্চিত ছিলাম, মুখচোরা অনেকটা লাজুক আমাদের এই বন্ধুটি ঠিকই আমাদের কথা মনে করে, মাঝে মাঝে রাত জেগে কাঁদে। ২০১০ এর ডিসেম্বরে, শনিবারের কোন এক রাতে ব্রিসবেনের রাস্তায় কামরুলকে পাওয়া যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায়। কামরুল মারা যায় ২১শে ডিসেম্বর সকালে।
আমার এই বন্ধুর মৃত্যুর খবরটা আমি পাই ও মারা যাওয়ার আরও মাসখানেক পরে। আমি এখনও বিশ্বাস করি না যে ও আমাদের মাঝে নেই। ডিসেম্বরের সকাল গুলোতে যখন চার পাশ কুয়াশায় ঢেকে যায়,তখন সে কুয়াশার কিছু অংশ আমাদের চোখেও ভর করে। আমরা ঘোরলাগা চোখে চার পাশে কামরুলকে খুঁজি।
দারুন লিখেছ :hatsoff:
বিরতি বেশি হয়ে যাওয়াতে প্রথম পর্বের কাহিনি ভুলে গিয়েছিলাম, তাই আবার পড়ে আসলাম। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে লেখার শুরুতে আগের পর্বের লিঙ্ক দিয়ে দিলে পাঠকের সুবিধা হয়।
তোমার পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
লিঙ্কটা দিয়ে দিব ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ ব্যাপারটা নজরে দেওয়ার জন্য।
শ্যাষ কইরা দিলি ক্যান x-( !!!
কইষা মাইনাস।
তুই ভালো লিখিস ব্যাটা; আরেকটা সিরিজ শুরু করে দে।
অফটপিকঃ পরের সিরিজে নিজেই নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হইস। 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
বন্ধু অভিজ্ঞতাহীনতায় বানিয়ে বানিয়ে আর কত? কিছু অর্জন কইরা নিই, তারপর নাহয় সিরিজ ছাড়া হবে।
কিংবা বন্ধুদের এজাতীয় অভিজ্ঞতা থাকলে "জয়েন্ট ভেঞ্চারে" একটা সিরিজ বের করা যেতে পারে। বন্ধুদের জন্য শুভকামনা।
অভিজ্ঞতাহীনতা !!!! ভালো বলেছিস !!! কিছু কইলাম না।
রঞ্জনা আমি আর আসবো না...
ভাই ধন্যবাদ... 😛 😛
যাক হ্যাপি এন্ডিং হইছে। আই লাইক ইট।
তোমার লেখার মোটামুটি মার্কা ভক্ত হই গেলাম। মাঝখানে ঝুলে গিয়েছে একটু, নাহলে পুরাই ভক্ত হইতাম। (সম্পাদিত)
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই অনেক ধন্যবাদ। ধন্য হলাম... 😛 😛 😛
আগের পার্ট এবার ক্লিয়ার হইলো।
হ্যাপি এন্ডিং 🙂
জি ভাই...হ্যাপি এন্ডিং।অতঃপর সবার সুখে শান্তিতে বসবাস..
:just: সিরাম হৈছে। :boss: :boss:
পুলাপান ক্যাম্নে লেখে এইসব ?
ধন্যবাদ ফরিদ ভাই
৫ তারা
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
😀 😀
খুব্বি খুব্বি সোন্দর হইছে। হ্যাপি এন্ডিং আমার খুব পছন্দ 😀
জী আপা আমদেরও... 😀 😀
বর্ণনা আর কাহিনী দুইটাই ভালো লাগছে 🙂 হ্যাপি এন্ডিং এর জন্য থ্যাংকস 😀
ধন্যবাদ হাসান ভাই।
কবে লিখেছ এই লেখাটা?যদি আজ/কালের মধ্যে হয়ে থাকে,তবে প্রথম পর্ব কবে লিখেছিলে?
প্রথমটা লিখেছিলাম মেলা আগে ভাইয়া। তবে লিঙ্ক দিয়ে দিয়েছি উপরে...
ভাইয়া প্রথম পর্বের লিঙ্ক এর জন্য ধন্যবাদ 😀
তোরেও ধন্যবাদ এই বিদ্যা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য...
বেশ ভাল্লাগসে। লেখায় বেপক matrity. আর চাই :clap: :clap:
ভাই ধন্যবাদ।
:clap:
কিছু বলার নেই।
গত পর্ব - শেষ পর্ব।
নিজ গলায় বেলী ফুলের মালা পড়া থেকে ম্যাসেজ টোন এর সু-ডাক পর্যন্ত।
:boss:
সৈয়দ সাফী
ওবায়দুল্লাহ ভাই ধন্যবাদ। এতো কিছু মনে রেখেছেন। 😀 😀
বৃষ্টিটা সেদিন পথে ছিল, হলে ছিল,আর ছিল কারো বুকে।
জলের, অনুতাপের আর সুখের!
আমাদের ভাল লাগাটাও বৃষ্টি্র মত নি্রন্তর,তবে মুষলধারে না,ঝি্রিঝি্রি...............
ভাই জটিল লিখেছেন...। ::salute::
হুম, বেশ বেশ... :boss:
চমৎকার হয়েছে, চালিয়ে যাও :dreamy:
বেশ লাগল :clap:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:thumbup: :thumbup: :thumbup: :tuski: :tuski: :tuski: :shy: :boss: :boss: :boss: ::salute::
তোর এই বেলীফুলের মতন কতো ফুল যে কি্নে রেখে দিলাম নিজের কাছে এই জীবনে.........শুধু ফোন এর মেসেজ টোনটা বাজল না এখনও.....আফসোস......বাই দি ওয়ে......আবারও ভাল লাগলো......
লা-জওয়াব... :clap: :clap: :clap:
ভালো লাগলো গল্পটা। কিন্তু কামরুল এর অ্যাক্সিডেন্ট এর কথা জেনে খুব খারাপ লাগলো...
কিছু আর না বলি 😛 (সম্পাদিত)
ভাইয়া । খুব মন খারাপ হয়ে গেল । প্রচণ্ড খারাপ লাগছে...এখন যদি একটু বৃষ্টি হত...খুব কাদতাম ভিজতে ভিজতে...কিন্তু আমি হয়তো অত লাকি না... :'(
@Asif@
reza tumi sundor tomar lekha o sundor.
x-(