প্রহর শেষের আলোয় রাঙা…(একটি ছবিব্লগ)

দেশে আসবো, সারা দিনই টিকেট দেখি। কিন্তু টিকেটের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ একদিন দেখলাম, রাইন এয়ার বেশ অল্প দামে ইতালির রিটার্ন টিকেট বিক্রি করছে। রাইন এয়ার আকাশ হচ্ছে, আকাশ পথের ঢাকা টু মাওনা’র লোকাল বাস বিশেষ। এরা শুধু আকাশপথে যায়, এই যা পার্থক্য। তাদের বিমানবালারাও খুব অদ্ভুত। তাঁরা সারা পথ সীমাহীন পেইন দেয়। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে জিনিষপত্র ফেরি করে বেচা বিক্রির প্রানান্তকর চেষ্টা চালায়। এবং তাদের হাসি মোটেও সুন্দর না।

তবে সস্তায় যাচ্ছি এই হল ব্যাপার। যথা সময়ে পিসা পৌঁছালাম। আমরা তিনজন। সাথের বাকী দুজন বড়ভাইেয়ের কাজ হচ্ছে, জায়গার নাম মনে রাখা। এই দায়িত্বটা চাইলেও আমি নিতে পারি না। নিজের নামের বানানই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে লিখি। নামে এবং ধামে আমার আজন্ম সমস্যা। তবে পুরো ইতালি ট্যুরে একটা জায়গার নাম মনে আছে- লা স্পেজিয়া। ‘লা স্পেজিয়া’ দক্ষিন ইতালির পাহাড় ঘেরা একটা এলাকা। এক পাশে পাহাড় অন্য পাশে ভূমধ্যসাগর। জীবনের সেরা সূর্যাস্তটা এখানে দেখলাম বোধহয়। পাহাড়ের নিচে, জনবিচ্ছিন্ন এক রেলস্টেশন। আর সামনে ভূমধ্যসাগরের নীল জলরাশি। সূর্যাস্তেরও যে অনেক রং হতে পারে, সেটা এই রেলস্টেশনে বসে সূর্যাস্ত না দেখলে বুঝতাম না। সূর্য ডোবার ঠিক আগে আগে নীল- চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দিল।

কিছু ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। ফটোগ্রাফীর ফ’ও জানিনা। আর এই সীমাহীন সৌন্দর্য চোখে ধরে রাখতে হয়। ক্যামেরায় ধরা যায় কি না- জানা নেই।

সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে তোলা কিছু ছবি, নিচে দিয়ে দিলাম।

এই ছবিটা মনট্রেসো রেলস্টেশনের। পাহাড়ের উপর থেকে বিকেলের দিকে তোলা।


এখানে কিছু দূর পর পরই একটা করে পাহাড়ি গ্রাম আছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য পাহাড়ি একটা ট্রেইল আছে। এই ছবিটা সেই ট্রেইল থেকে তোলা।

পাথুরে ট্রেইলের এই জায়গাগুলোতে দাড়িয়ে বিড়ি টানতে খুব সুখ…

চিকা মেরে প্রেমপ্রকাশের সংস্কৃতি বিশ্ব জুড়ে। এই নির্জন পাহাড়ি এলাকাতেও সেটা আবার দেখে আপ্লুত হলাম।

নিঃসঙ্গ রেলপথ,আজীবন সমান্তরাল চলিয়াও পরস্পরের সহিত মিলিতে পারে না, আফসোস!…!!

নিঃসঙ্গ পক্ষী…

নিঃসঙ্গ পক্ষী-২

বাতাসে পড়ে আসা রোদের গন্ধ মুছে ফেলে গাংচিল…

নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে…

ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় লিখ।…

আসর ভাঙ্গার গান…

শেষর দিন ঝটিকা সফরে ফ্লোরেন্স গিয়েছিলাম। ফ্লোরেন্সে সূর্যাস্তের এই মুহূর্তটুকুও চোখে লেগে আছে।

কিছু কিছু ব্যাপার একা দেখতে হয়। দলবল নিয়ে গেলে ঝামেলা। সূর্যাস্তও এমন, একা দেখার বিষয়। আর দিনশেষে তো আমরা সবাই একা। জীবনানন্দ সাহেব এই ব্যাপারে চমৎকার কিছু কথা বলে গিয়েছেন-

“একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি;
হৃদয়ের পথ চলা শেষ হল সেই দিন — গিয়েছে যে শান — হিম ঘরে,
অথবা সান্ত্বনা পেতে দেরি হবে কিছু কাল — পৃথিবীর এই মাঠখানি
ভুলিতে বিলম্ব হবে কিছু দিন, এ মাঠের কয়েকটি শালিকের তরে।”

১,৯০৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “প্রহর শেষের আলোয় রাঙা…(একটি ছবিব্লগ)”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দারুন সব ছবি, ক্যাপশনগুলোও ভাল লেগেছে :thumbup:

    অফটপিকঃ পোস্টের নাম দেখে চমকে উঠে ছিলাম, ভাবলাম তানভীর ভাই তার বিখ্যাত সিরিজ নিয়ে আবার ফিরে আসলো নাকি, কতদিন উনাকে ব্লগে দেখি না 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাজমুল (০২-০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।