১০ টাকা,১টি ফোন নাম্বার এবং অন্যান্য

পরদিন পরীক্ষা। এই চিন্তায় কিনা জানি না,রাত ১২ টায় যখন ফেসবুক ব্রাউজ করছিলাম দেখলাম-পরীক্ষার হলে অ্যাডমিট কার্ড ছাড়াও যাবতীয় অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে হবে এবং তাও সত্যায়িত করে। মাথায় যথারীতি আকাশ ভেঙ্গে পড়ল এবং নিজে পরীক্ষার নোটিশ না দেখলেও সমস্ত দোষ প্রথমেই আর্মির প্রতিষ্ঠান (BUP) কে দিলাম তারপর মার সাথে রাগারাগি করে বাসা থেকে বের হলাম যদি কাগজ গুলার ফটোকপি করা যায়। বাসা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেয়ে (জানি যে সব বন্ধ) ক্ষীণ আশা টা দূর হোলে বাসায় ফিরলাম।
পরীক্ষার হলে বসে আছি। কাগজপত্র না আনায় কী কী দৃশ্যের অবতারণা হতে পারে তা নিয়ে যখন নানা কাহিনী চিন্তা করছিলাম তখন কারও “excuse me” শুনে চমকে উঠে তাকিয়ে অবাক হলাম। এত্ত সুন্দর একটা মানুষ কিভাবে হয়?তাও আবার মেয়েটির সিট আমার পাশে। তুমি কি সব documents এনেছ? সে জিজ্ঞেস করল। মনে মনে বললাম যাক বাবা বাঁচা গেল। একটা company তো পেলাম। আমার না আনার কথায় ও খুশি হল। কথা বললাম,ভালই লাগলো। পরিক্ষার শেষে তার বাবার সাথে পরিচিতও হলাম। আর্মি অফিসারের মেয়ে। বাস এ উঠে মনে পড়ল এই যাহ ফোন নাম্বার তা নেওয়া হয় নি।

পরদিন documents গুলো জমা দিতে গেলাম। প্রায় এক ঘণ্টা বসে থেকে বিরক্ত হবার পর একজন NCO যখন বললো,আজকেতো শনিবার,আজকে কোন কাগজ নেয়া হবে না। তখন তাকে বললাম দেখেন staff আমার medical আছে আগামীকাল,কাল তো আসতে পারব না। তার প্রশ্নবোধক চেহারা দেখে বললাম আমি ISSB টা পাশ করেছি(মিথ্যা কথা)। এ কথায় ম্যাজিকের মত কাজ হল। উনি নিজ দায়িত্তে আমার ফোন নাম্বার এবং কাগজগুলো রেখে আমার সময় বাঁচালেন। বের হবার সময় আবারও সেই মেয়েটার সাথে দেখা। ওর হাস্যজ্জল মুখ দেখেই বুঝলাম সেও খুশি। ওর বাবা অফিসার তাই ওর কাগজ ও জমা রাখা হল। দু’ জনে একসাথে কথা বলতে বলতে এগতেই দেখলাম ওর গাড়ি এসে পড়েছে। নিজ থেকেই একটা কাগজ দিল আমাকে একটা কার্ড। তাও ওর বাবার। জিজ্ঞাস করলাম তোমার নাম্বার? ও বলল মোবাইল হারিয়ে ফেলেছি,নতুন নাম্বার নেয়া হয় নি। মনে মনে খুশি হয়ে কার্ডটা মানিব্যাগ এ রেখে দিলাম।

বাস এর জন্য অপেক্ষা করছি,কি মনে করে পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগ নেই। বাসায় যেতে প্রয়োজন ১০ টাকা,তাও নেই। বাবা নাম্বার টা গেল সাথে আমার বাস ভাড়া ও।
মিরপুর এলাকার friend দের ফোন দিয়ে একজন কে বললাম- দোস্ত মিরপুর ১১ তে আয়,দরকার। ও বলল আমি ব্যাস্ত। কিন্তু যখন বললাম আমার টাকা হারিয়ে এতিম হওয়ার কথা ও বলল আরেহ আমি ব্যস্ত না,গেম খেলতেছিলাম। তুই দাঁড়া আমি আসতেছি।এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর friend এর দেখা মিললে,ওর কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাসায় ফিরলাম। শুধু একটাই চিন্তা মেয়েটা নিজে থেকে নাম্বার দিলেও ফোন তো করতে পারলামই না,কারণ টাও জানাতে পারলাম না। বৃথাই নাম্বার নেয়া।

২,৩৮৪ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “১০ টাকা,১টি ফোন নাম্বার এবং অন্যান্য”

মওন্তব্য করুন : hridoyrakin

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।