ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল

(১)
কলেজ থেকে বের হবার পর কোচিং করার জন্য ঢাকায় এলাম । একটা ফ্লাট ভাড়া করে আটজন থাকি । সবাই ক্যাডেট । ক্যাডেটরা একসাথে থাকলে যা হয় । রাতভরা আড্ডা , তাস পেটানো , সারা সকাল ঘুম । পড়াশোনা লাটে উঠল । সপ্তাহে তিনদিন লোকাল বাসে ঝুলে ঝুলে কোচিং এ যাই । এই যাওয়া আসাতেই শেষ । বই আর খুলে দেখা হয় না । এভাবেই চলছিল দিনকাল । একদিন ডিনারের পর তাস নিয়ে বসেছি । হঠাৎ রাশেদের (ছদ্মনাম) কল এল । ওপাশ থেকে বলল , ভাইয়া আমি সাঈম (ছদ্মনাম) ,কলেজ থেকে ফোন করেছি ।ভাইয়া প্লীজ আমাকে এই নাম্বারে ১০০ টাকা ফ্লেক্সি করে দিন , খুব আর্জেন্ট দরকার । দুদিন পর প্যারেন্টস ডে তে টাকা ব্যাক করে দেব । রাসেল হয়ত তখনি ফ্লেক্সি করার জন্য দোকানে ছুটত ।কিন্তু ছেলেটার কন্ঠ শুনে ওর সন্দেহ হল । প্রত্যেক ছুটিতেই সাঈমের সাথে
কথা হয় রাশেদের । ওর কন্ঠের সাথে রাশেদ খুব ভালোভাবেই পরিচিত ।রাশেদের দৃঢ় বিশ্বাস এই কন্ঠ সাঈমের নয় । সে তাই সন্দেহ দূর করার জন্য বলল তুমি কোন ক্লাশের । ওপাশ থেকে উত্তর এল ভাইয়া আমি ক্লাশ টুয়েলভের সাঈম । এবার বোঝা গেল ছেলেটি সাঈমের নাম নিয়ে রাসেলের কাছ থেকে ফ্লেক্সি চাইছে । কারণ ক্লাশ টুয়েলভে সাঈম নামে কেউ নেই । সাঈম আছে ক্লাশ ইলেভেনে । রাসেল জিজ্ঞেস করল সত্যি করে বলতো তুমি কে ? ততক্ষনে সেই বেচারা ধরা পড়ার ভয়ে লাইন কেটে দিয়েছে । আমরা সহজেই ঝটনা আচ করতে পারলাম । সাঈমকে নিয়ে রাশেদকে কত টিজ করেছি । কলেজে ওরা ছিল বিখ্যাত জুটি । কলেজেরই কেউ হয়ত সাঈমের নাম নিয়ে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়েছিল রাশেদকে ।

এর কয়েকদিন পর জাহিদের (ছদ্মনাম) মেসে ঘুরতে গিয়েছি ।একসাথে কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলাম । আড্ডার এক পর্যায়ে জাহিদ বলল দোস্তএকটা ঘটনা ঘটছে । আমি বললাম কি ঘটনা । সে বলল ‘এক জুনিওর সেদিন আমিরের (ছদ্মনাম) নাম বলে ১০০ টাকা ফ্লেক্সি চাইল । আমিও সরল বিশ্বাসে পাঠাইলাম । জুনিওরটা বলেছিল প্যারেন্টস ডেতে টাকা ব্যাক করে দিবে কিন্তু এখন ফোন দিলে ফোন ধরে না । এইরকম ফাজলামি করার তো কোন মানে হয় না । কলেজের জুনিওর হেল্প চাইলে করব না কেন ? কিন্তু আরেকজনের নাম ভাংগাইয়া চিটিং করার মানে কি ? জুনিওরটা
আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছে ।’ বুঝলাম বন্ধুটা খুব ক্ষেপে আছে ।হয়ত প্রিয় জুনিওরের নাম ভাংগিয়ে বোকা বানিয়েছে এজন্যই ।

পুনশ্চঃ সেদিনই ফোন করে বের করেছিলাম কে এই জুনিওর । কিন্তু কলেজের জুনিওর বলে কিছু আর বলতে ইচ্ছে হল না । বরং অর অভিনব পদ্ধতির তারিফ করে ওকে ধন্যবাদ দিলাম । যখন ফোন রাখব তখন ও বলল , ভাইয়া ৫০ টা টাকা ফ্লেক্সি করে দেন না , খুবই আর্জেন্ট দরকার ।

(২)
তখন প্রথম প্রথম ইয়াহু মেসেঙ্গার ইউস শুরু করেছি । প্রায়ই বাংলাদেশের রুমে ঢুকি । দেখি রুম ভর্তি ছেলেরা গিজ গিজ করে । চ্যাট করতে গিয়ে বুঝতে পারি ছেলেরা ছেলেদের সাথে চ্যাট করতে চায় না । তোমার এ এস এল দাও , হাও আর ইউ , হায় , হ্যালো এরপর আর কথা আগায় না । মেজাজটাই খারাপ হয় ।চ্যাট করব টাইম পাসের জন্য । বিপরীত লিংগ আমার কাছে মুখ্য নয় বরং মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক হবে এই বিশ্বাস নিয়ে চ্যাট করতে বসি ।এ কারণে একটু খারাপই লাগে । হঠাৎ মাথায় এল একটা মেয়ের আইডি খুলে রুমে ঢুকি । দেখা যাক কি হয় । তৎক্ষণাৎ রিয়ানাম নিয়ে একটা আইডি খুলে ফেললাম । রুমে ঢুকতেই একসাথে অনেকগুলো মেসেজ এল । আমার আবার টাইপিং স্পীড খুব স্লো । একসাথে এতজনের সাথে চ্যাট করা সম্ভব নয় । ঠিক করলাম একজনের সাথে চ্যাট করব ।
এজন্য নাম চয়েচ করা শুরু করলাম । একটা নামে চোখ আটকে গেল । যেহেতু ছেলেটির আইডি আমার নামে । সে আমাকে হাই পাঠিয়ে আমার এ এস এল জানতে চেয়েছে । ভাবলাম এর সাথেই চ্যাট করি । শোভন নামের ছেলেরা কেমন হয় জানার ইচ্ছা হল । এরপর অনেকক্ষণ চ্যাট চলল । চ্যাটের এক পর্যায়ে সে আমাকে বন্ধুত্বের অফার দিল । আমি গ্রহন করলাম কিন্তু ফোন নাম্বার চাইলে সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানালাম । সে আমার ফোন নাম্বার পাবার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দিল । আমি বললাম আমারটা পরে দেব তবে তোমার নাম্বারটা পাঠাও । সে নাম্বার পাঠালো কিন্তু আমার নাম্বার পাবার জন্য পাগল হয়ে উঠল । নানাভাবে আমাকে বোঝাতে লাগল সে । এক পর্যায়ে বলল আমি গরীব বলে কোন মেয়ে আমার সাথে চ্যাট করে না । আজ তুমিই প্রথম একটি মেয়ে যে আমার সাথে বন্ধুত্ব করলে কিন্তু নাম্বার দিচ্ছ না । প্লীজ আমার নাম্বারে একটা কল দ্দাও । আমি বললাম তুমি নেট ইউজ কর আর তুমি বলছ তুমি গরীব । সে বলল আমি সত্যিই গরীব , আমি আমার ফ্রেন্ডের নেট ইউজ করছি । যে নাম্বারটা
তোমাকে দিয়েছি সেটাও আমার ফ্রেন্ডের । আমার নিজের মোবাইল নেই । তুমি নাম্বার দিলে আজ হয়ত কিছুক্ষণ কথা বলতে পারতাম । এভাবে আরো অনেক কিছুই বলল সে । একবার মনে হল সে সত্যিই বলছে কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল সে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাক্মেইল করার চেষ্টা করছে । তবে একটু খারাপই লাগল আমার । তাই সত্যি কথা স্বীকার করে ক্ষমা চাইলাম তার কাছে ।

৩,৬৪৭ বার দেখা হয়েছে

৭১ টি মন্তব্য : “ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল”

  1. শাওন (৯৫-০১)

    এটা ও সত্যিকারের শোভন তো?? 😀 😀


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন
  2. জুলহাস (৮৮-৯৪)

    লেখা ভাল হয়েছে... :clap:
    ওয়েল, সত্যিকারের লেখা তো??? 😛 😛
    লেখক সত্যি তো??? 🙁 🙁
    সত্যি সত্যি লেখা ভাল হয়েছে তো??? B-) B-)
    আমি সত্যি তো??? 😕 😕
    ধুর্‌..., লেখক...পাঠক...আমি...আপনি...সবডিরে ভ্যাঞ্চাই...!!!!!!!!!!! :grr: :grr: :chup: :chup: :bash: :bash:


    Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

    জবাব দিন
  3. শোভন (২০০২-২০০৮)

    @মাস্রুফ ভাইঃ
    বিরিক্ষ নিয়া কেডা কি কইব । পাগলেও জানে গাছের অনুভূতি নাই ।
    ভাইজান তো চতুষ্পদী জন্তু ক্যামনে চলে কইলেন কিন্তু দ্বীপদী জন্তু ক্যামনে চলে কইলেন না ।

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    পড়লাম পুরাটা।
    সেকেণ্ড ঘটনার ওি পুলার ইমিশিনাল ব্ল্যাকমেইলে ভোলা উচিত হয় নাই। যেসব পুলাপান ইন্টারনেটে মাইয়ার লগে ফস্টি নস্টি করতে ঢুকে ওদেরকে উল্টা খসানো উচিত। তোমার উচিত ছিল ঐ পুলারে তুমার নাম্বারে ফ্লেক্সি করতে বইলা, ওর টাকায় ফুন কইরা ওরে সত্যটা বলা।
    ফান পোস্টে আতলামি মার্কা কথা কওন থিক না তারপরেও ইন্টারনেটে লুইচ্চামির ব্যাপারটা আজকের তরুণ সমাজের প্রধান ব্যাধি।
    আর প্রথমটার ব্যাপারে কিছু কইলাম না। আমি তোমার কলেজের নাম শুনলেই বয় পাই।

    জবাব দিন
    • শোভন (২০০২-২০০৮)

      এখন সার্চ করলে ক্লাশ টুয়েলভে কমসে কম ১৫ টা মোবাইল পাওয়া যাইব । এমনকি নাইন টেনের কাছেও
      মোবাইল পাইবেন । তবে গোপনে নিতে হয় । অথরিটি জানলে খবর আছে ।
      আমার এক ফ্রেন্ড ক্লাশ টুয়েলভে থাকতে দুইবার মোবাইল নিয়ে ধরা খাইছিল । দুইটাই ছিজ হইছে ।
      সম্প্রতি কলেজ থেকে মোবাইলে বাসায় কথা বলার একটা সিস্টেম চালু হইছে । সপ্তাহে একদিন ৫ মিনিট
      ওই মোবাইল দিয়ে বাসায় কথা বলা যায় । তবে নির্দিষ্ট সময়ে স্যারের সামনে বসে কথা বলতে হয় ।

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শোভন (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।