মধূসুদন , রবীন্দ্রনাথ এবং সবশেষে নজরুল

( প্রথমেই বলে নিচ্ছি এই গল্পের পুরোটাই কল্পনাপ্রসূত । এ ধরনের চরিত্র বা ঘটনা বাস্তবে ছিল না ।)

আমার এক ফ্রেন্ডের নিক নাম ছিল – পর্যায়ক্রমে মধূসুদন রবীন্দ্রনাথ এবং সবশেষে নজরুল । আজ সেই নিক নামগুলো হবার পেছনের ঘটনা বর্ণনা করব ।

যখন তার নাম মধূসুদন হলঃ

সেদিন কলেজে নতুন জুনিওর এসেছে । আমরা ক্লাশ এইটে । অর্থাৎ আমরা সিনিওর হয়েছি । নতুন জুনিওর এলে কলেজের ব্যস্ততা বেড়ে যায় । সদ্যই সিনিওর হবার কারণে আমাদের ব্যাস্ততা আরো একধাপ বেশি । সকল ব্যস্ততা শেষ করে
রাতে যখন ঘুমাতে যাব তখন আমার পাশের বেডের ফ্রেন্ড বলল দোস্ত আমি শেষ ।
ক্যান কি হইল ?
একটা জুনিওরকে আমার খুব ভাল লাগছে ।
ভাল লাগছে মানে । কি কইতে চাস ?
একটা জুনিওরকে আমার খুব মনে ধরছে ।
ভং ধরস । এবার বাসায় যাইয়া একটা গালফ্রেন্ড জুটায়া নিস । ভাল লাগা ঠিক হয়ে যাইব ।
না দোস্ত , আমি সিরিয়াস ।
ওই তুই চুপ করতো ।
না দোস্ত ওকে ছাড়া আমি বাচব না । দেখ মাইকেল মধূসুদনের কথাই ধর । উনি ওনার এক বন্ধুর প্রেমে পাগল হইছিলেন । সেইখানে আমি না হয় জুনিওরের প্রেমে পড়ছি ।…………………(রাতভর আরো অনেক কথা)

অনেক বলেও ওকে আমরা ঠিক করতে পারলাম না । এরপর কিছুদিন যেখানে সেখানে ওদেরকে পাওয়া গেল গল্পরত অবস্থায় । কিন্তু তার এই প্রেম বেশিদিন টিকল না । একদিন জুনিওরটার সাথে গল্প করতে গিয়ে ধরা পড়ল হাউস
প্রিফেক্টের হাতে । হাউস প্রিফেক্ট ঐ জুনিওরটাকে দিয়ে ওর কান ধরিয়ে সারা হাউস ঘুরালেন । সেই সাথে প্রেমের ভূতটাও নেমে গেল ওর মাথা থেকে । কিন্তু সেই দিন থেকে ওর নাম হয়ে গেল মধূসুদন ।

যখন ওর নাম রবীন্দ্রনাথ হলঃ

এস এস সির ছুটিতে নতুন প্রেমে পড়ল আমার সেই ফ্রেন্ড । ছুটি শেষ করে কলেজে ফিরেছি । তখনো সে আমার রুমমেট । রাতে বিছানায় শুয়ে গল্প করছি । হঠাৎ ও বলল দোস্ত একটা ঘটনা ঘটছে ।
কি ঘটনা দোস্ত ।
প্রেমে পড়ছি ।
তাই নাকি । কার প্রেমে পড়লি ? এবার ছেলে না মেয়ে ।
মেয়ে দোস্ত ।
কি করে ?
হাউসওয়াইফ ।
হাউসওয়াইফ ! মানে । পরকীয়া করিস নাকি ?
আমার দুঃসম্পর্কের ভাবী হয় । আমার চেয়ে দুই বছরের বড় ।
তুইতো লুইচ একটা । এ জীবনে আর ভাল হইলি না ।
দোস্ত এবার আমি সিরিয়াস । ওনাকে ছাড়া আমি বাচব না ।
শোন , এইসব অসুস্থ চিন্তা বাদ দে ।
দেখ দোস্ত , রবীন্দ্রনাথ কিন্তু তার ভাবীর প্রেমে পড়ছিল । আর আমি আমার ভাবীর প্রেমে পড়লেই দোষ ।
তো আমাদের রবি ঠাকুর আপনি আপনার ভাবীর হাত টাত ধরেছেন ?
হ্যা ।
আর কিছু করেন নাই তো ।
না ।
ভাল । কিন্তু তরে তো আবার বিশ্বাস নাই ।………………………………………(রাতভর আরো অনেক কথা)

আমার ফ্রেন্ডের এই প্রেমটাও বেশিদিন চলেনি । পরের ছুটিতে সে ভাবীর হাত ধরে গল্প করার সময় হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং ঐ বাড়ির দরজা ওর জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় । ওর প্রেম চলে যায় এবং সেই সাথে মধূসুদন নামটা পরিবর্তন হয়ে নাম হয় রবীন্দ্রনাথ ।

যখন ওর নাম নজরুল হলঃ

আমাদের এক হিন্দু স্যার ছিলেন । তার মেয়ে ছিল আমাদের সমবয়সী । কলেজের কোন এক ফাংশনে স্যারের মেয়েকে দেখে আবারো পাগল হল আমার সেই ফ্রেন্ড । দুর্ভাগ্যক্রমে টুয়েলভেও সে আমার রুমমেট । বরাবরের মতই রাতে ঘুমাতে
যাবার সময় বলল দোস্ত আমি শেষ ।
ক্যান দোস্ত ?
অমুক স্যারের মেয়েটাকে খুব ভাল লাগছে ।
তার মানে আবার প্রেমে পড়ছস ।
হ্যা দোস্ত , এবার আমি সত্যি সত্যি খুব সিরিয়াস । ওর জন্য আমি সব করতে রাজি আছি ।
ভন্ডামি ছাড় । ওরা যে হিন্দু এইটা জানস ।
জানবো না ক্যান । তাতে কি হইছে । আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম কি হিন্দু মেয়ে বিয়ে করে নাই ?
আচ্ছা তুই ঐ মেয়েকে বিয়ে করিস ।…………………………………………………………..(রাতভর আরো অনেক কথা )

স্যারকে পাম দিয়ে স্যারের বাসার নাম্বার পেয়েছিল সে । এবং আশ্চর্যজনকভাবে মেয়েটার সাথে ফ্রেন্ডশীপো করেছিল কিছুদিনের মধ্যেই । কিন্তু সেই সময়ই স্যার বদলি হয়ে চলে যান এবং সম্ভবত মোবাইল নাম্বারটাও চেঞ্জ করে ফেলেন ।
এরপর যতবারই আমার ফ্রেন্ড কল দিত , ওপাশ থেকে শোনা যেত সংযোগ দেয়া সম্ভব নয় । এভাবেই তার এই প্রেমটারো ইতি ঘটে । শুধু ওর রবীন্দ্রনাথ নামটা চেঞ্জ হয়ে নতুন নাম হয় কাজী নজরুল ।

৩,৯৩৬ বার দেখা হয়েছে

৬০ টি মন্তব্য : “মধূসুদন , রবীন্দ্রনাথ এবং সবশেষে নজরুল”

  1. শোভন (২০০২-২০০৮)

    কোথায় কমেন্ট করতে চাইলাম আর কোথায় কমেন্ট হইল । এইটা মাসরুফ ভাইয়ের দাবীর
    উত্তরে লিখেছি ।

    মেহরানের কমেন্টের পরথম অংশটারেও সপ্তাহের সেরা মন্তব্যের নমিনেশন দেওইয়া যাইতে পারে :-B
    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।