ফিরে দেখা (পর্ব-৫)

(১৬)
ক্লাশ নাইনের সবচেয়ে ভদ্র ছেলেটি ইডি খাচ্ছে । ব্যাপার কি ? সবাই অবাক । পরে জানলাম সে এক ম্যাডামকে বলেছিল “ম্যাডাম এই টপিকটা খুব কঠিন , যদি দু দুবার করে বোঝান তবে খুব ভাল হয়” । ম্যাডাম ‘দু দুবার’ শব্দটিকে
অন্যভাবে মিন করেছিলেন । ফলে ভদ্র ছেলেটির ৩ টা এক্সট্রা দ্রিল ।
(১৭)
ছুটিতে আমরা কয়েক ফ্রেন্ড একটা ফাস্টফুডের দোকানে ঢুকেছি হালকা নাস্তা করার জন্য । ওয়েটার যখন ওর্ডার নিতে এলো তখন ইরফান তার জন্য ওর্ডার দিল এক প্লেট গরম ভাত ।
(১৮)
বায়োলজী পরীক্ষা চলছে___
রুহানঃ সোয়েব রক্ত সঞালন কে আবিষ্কার করছে রে ।
সোয়েবঃ দোস্ত মনে নাই ।
কিছুক্ষণ পর
রুহানঃ সোয়েব তোর রাবারটা দে তো ।
সোয়েবঃ দোস্ত এটাও পারি না ।
(১৯)
আমাদের আকাশ (ছদ্মনাম) ছিল অনেকটা ফুলবাবু টাইপের । সবসময় সেজে গুজে থাকতে পছন্দ করত । ছেলেদের কসমেটিকস অর্থাৎ স্নো, পাউডার , ফেচ ওয়াশ ইত্যাদি বস্তু ছিল তার নিত্য ব্যবহার্য জিনিস । আর সে স্নো পাউডার
শুধু মুখেই মাখত না , হাতে পায়ে এবং শরীরেও মাখত । একবার অডিটোরিয়ামে বড় ভাইয়াদের একটা অনুষ্ঠান ছিল । আমরা ক্লাশ সেভেন তাড়াতাড়ি অডিটোরিয়ামে গিয়ে উপস্থিত হলাম । চেয়ারে বসে আবিষ্কার করলাম কোথা থেকে যেন একটা বিশ্রী গন্ধ আসছে । পরে বুঝতে পারলাম গন্ধটা আসছে আকাশের শরীর থেকে । আমরা জিজ্ঞাসা করলাম দোস্ত শরীরে কি ক্রীম মেখেছিস ? ও বলল ” কি ক্রীম মাখছি বলতে পারতেছি না , মাসুদের টেবিলে ছিল -তাড়াতাড়ি করে আসার সময় মাখছি , নাম দেখা হয় নাই” । আমরা ভাবলাম বিদেশী কোন ক্রীম হবে হয়ত । কিন্তু রাতে হাউসে গিয়ে জানতে পারলাম ওটা ছিল হেয়ার রিমোভার । আমাদের মাসুদ (ছদ্মনাম) বিশেষ কাজের জন্য ওটা ব্যবহার করতো ।
(২০)
নতুন সেভেন এসেছে কলেজে । আমরা ইমিডিয়েট সিনিওর । জুনিওরদেরকে শিখিয়ে দিলাম যে কোন সমস্যা হলে প্রথমেই যেন গাইড ভাইয়ার কাছে চলে আসে । প্রথম দিনই মাগরীবের নামাজের পর এক জুনিওর উপস্থিত তার সমস্যা নিয়ে ।
জুনিওরটি তার গাইডকে ডেকে বলল “ভাইয়া নামাজ পড়ার সময় পাজামার ফিতা খুলে গেছে , বাধতে পারছি না-বেধে দিন ” ।
(২১)
ক্যান্ডিডেটস টাইমে পিটি এক্সকিউজ পেয়েছি আমরা । তবে ফলিনে দাড়াতে হত ঠিকই । প্যারেড স্টেট দিয়ে তারপর হাউসে যেতে হত । একদিন এডজুটেন্ট স্যার নিজে এলেন আমাদের কাউন্ট করতে । ১৬ টা সারি কাউন্ট করার পর বললেন আর দুজন কই । আমরা বললাম সবাইতো আছে । স্যার বললেন “তিন ষোলং ছয়চল্লিশ আর দুজন কোথায়” । আমরা কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না তিন ষোলং আটচল্লিশ হয় । অবশেষে স্টাফকে বললেন অন্য দুজনকে খুজে বের করতে ।
(২২)
আমাদের এক স্যার এবং ম্যাডাম স্বামী-স্ত্রী । স্যার ছিলেন খুব বদরাগী । অন্যদিকে ম্যাডাম ছিলেন খুব নরম স্বভাবের । যাইহোক ম্যাডামের সাথে কাউকে কথা বলতে দেখলে স্যার হয়ত ব্যাপারটা সহ্য করতে পারতেন না । একবার ফেয়ারওয়েল ডিনারে ম্যাডামের পাশে আমাদের এক বড় ভাই বসেছিলেন । খাওয়ার ফাকে ফাকে কথা বলছিলেন ম্যাডামের সাথে । এই দৃশ্য দেখে স্যার প্রচন্ড রেগে গেলেন । রাগে ফুসতে ফুসতে বললেন “হারামজাদা ফাজলামি ফাইছস (পাইছস) , আমার বউয়ের সাথে এত কিসের কথা ! আর একটাও কথা বলবি না , আমি তরে ইডি দিব ” । টেবিলে বসা সবার আক্কেলগুড়ুম ।
এরই কিছুদিন পর বাংলা কবিতা আবৃতি কম্পিটিশনের রিভিউয়ের দ্বায়িত্ব পেলেন ম্যাডাম । সবাইকে কবিতা লেখার জন্য উৎসাহ দিতে গিয়ে তিনি বললেন “তোমরা বেশি বেশি কবিতা লিখবে , ৮ম ব্যাচের এক ক্যাডেট ছিল , যে আমাকে দেখলেই কবিতা লিখত । খুব ভাল কবিতা লিখত ও…………” । এই কথা শুনে অডিটোরিয়ামের সবাই হেসে উঠল একসাথে ।

* আংশিক সম্পাদিত – মডারেটর

৫,৫৪০ বার দেখা হয়েছে

৬৫ টি মন্তব্য : “ফিরে দেখা (পর্ব-৫)”

  1. তোমার "ফিরে দেখা"-গুলো পড়ে আমারও অনেক কিছু ফিরে দেখতে ইচ্ছে হয়। শুধু সময়ের অভাব সেই ইচ্ছেকে প্রকাশ পেতে দেয় না। ভালো থেকো। বারবার ফিরে এসো "ফিরে দেখা"-গুলো নিয়ে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফরিদ (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।