ফিরে দেখা (পর্ব-১)

(১)
আমরা তখন ক্লাশ টুয়েলভে । কলেজ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি । একদিন ক্লাশ নিতে এসে মশিউর স্যার বললেন আজ তোমাদের গল্প শুনবো । তোমাদের কোন মজার ঘটনা থাকলে সেগুলো বল । আমি উঠে দাড়ালাম । শুরু করলাম আমার গল্প ।
তখন আমরা ক্লাশ সেভেনে । তিনতলা হাউসের নিচের হাউসে ছিলাম আমি । আমাদের মসজিদটি ছিলো হাউসের সাথে । অন্য হাউসের ক্যডেটরা মসজিদে যাওয়ার জন্য হাউসের সামনের রাস্তা ব্যবহার করত । তেমনি একদিন আমাদের জনৈক বন্ধু জোহরের নামাজ শেষ করে হাউসে ফিরছি্ল । ওর সাথে কথা বলার জন্য ওকে ডাকলাম । সাথে সাথে ও সাবধান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো । এ সময় আমার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো । আমি বললাম কানে ধর । ও সাথে সাথে কান ধরলো । আমার হাসি ঠেকায় কে । ততোক্ষনে আরো অনেকেই জমে গেছে সেখানে । বললাম পাচ কদম সামনে এসে আমার দিকে তাকাও । আমাদের দেখে তো ও বোকা বনে গেলো । যাই হোক যখন আমি স্যারকে এই গল্প বলছিলাম,হঠাৎ করে পিন্টু (ছদ্মনাম) পিছনে ঘুরে বলে উঠলো স্যার সব মিথ্যা কথা স্যার , সব মিথ্যা কথা । ফর্মের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো । কারো আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার গল্প কতটুকু সত্য এবং কে সেই জনৈক বন্ধু ।
(২)
আমার জনৈক বন্ধুর নিক নাম ছিল বঙগবন্ধু । আমরা প্রতি বছর ১৫ই আগষ্ট সেই বন্ধুর উদ্দেশ্যে শোক দিবস পালন করতাম । ওর রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো অনুষ্ঠানঙ্গুলো । আমরা সারারাতব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করতাম ।
সেবার ক্লাশ টুয়েলভে উঠে মনে হল ওর উদ্দেশ্যে শেষ শোক দিবসটা ঘটা করে পালন করা উচিত । অবশেষে পরিকল্পনা করে ঠিক করলাম ব্রেকফাষ্টে ১ মিনিট নীরবতা পালন করব এবং সবাই কালো ব্যাজ পরে থাকবো সারাদিন । পরিকল্পনা অনুযায়ী সব করা হল । কালো প্যান্ট কেটে ব্যাজ বানালাম । নির্দিষ্ট দিনে সবাই কালো ব্যাজ পরলাম । সব টেবিল লিডারদের বলে দেয়া হল ডাইনিং হলে ঘন্টা দেয়ার পর জুনিওরদের খাবার সার্ভ করতে দিবি না । ঠিক তাই হল ।
ডিউটি মাষ্টার স্যার হতভম্ব হয়ে গেলেন । ব্রেকফাষ্টের বেল দেয়া হয়েছে অথচ খাবার টেবিলে চামচের টুং টাং শব্দ নেই । ডাইনিং হল সম্পূর্ন নীরব । আমরা এক মিনিট নীরবতা পালন করে খাওয়া শুরু করলাম । এরপর কালো ব্যাজ
পরেই ক্লাশে গেলাম । মিল্কব্রেকের পূর্ব পর্যন্ত ভালোভাবেই ক্লাশ শেষ করলাম । মিল্ক ব্রেক শেষ করে ক্লাশে যাওয়ার সময় ডিউটি মাষ্টার স্যার বললেন তোমরা ব্যাজ খুলে ফেলো , তোমাদের নামে রিপোর্ট হয়েছে । ষ্টাফ লাউঞ্জ এ নাকি এমব নিয়েই আলোচনা হচ্ছে । কে আর পরে থাকে সেই কালো ব্যাজ । ক্লাশে যেয়ে দেখি সব ষ্টাফদের পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে আমাদের কালো ব্যাজ পরা অবস্থায় হাতে নাতে ধরতে পারে । ভাগ্যিস সেদিন সাইফুল স্যারের মত একজন ভালো স্যার ডিউটি মাষ্টার ছিলেন । আমরা বেচে গেলাম । পরে জানতে পেরেছিলাম এই রিপোর্টটি করেছিলো আমাদের থার্ড পিরিয়ডে ক্লাশ নেয়া জনৈক বাংলা স্যার । এবং ষ্টাফ লাউঞ্জ এ এটাকে নাকি পলিটিক্যাল শেপ দেয়া হয়েছিল । অথচ আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো সেই বন্ধুকে নিয়ে একটু মজা করা , আর কিছুই নয় ।
(৩)
ক্লাশ নাইনে থাকতে আমরা ছিলাম কলেজের সবচেয়ে হট ব্যাচ । আমাদের জ্বালায় স্যারেরা অতিষ্ঠ । তারা বলেন কলেজের ইতিহাসে আমরাই নাকি সবচেয়ে ইনডিসিপ্লিন ব্যাচ । শুনে আমাদের আরো ভালোই লাগে । এভাবেই চলছিলো । সেবার কলেজে একজন নতুন স্যার এলেন । নতুন স্যারকে আমাদের ক্লাশ নিতে দেয়া হল । ক্যাডেট কলেজে তিনি ছিলেন একেবারেই নতুন । প্রথম ক্লাশে তিনি আমাদের ওয়েভ নিয়ে পড়ালেন । পড়াতে গিয়ে তিনি ইথার শব্দটিকে বারবার ইতার উচ্চারণ করছিলেন । আমরা সবাই মুখ টিপে হাসছিলাম আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম । একটু বিব্রত হয়েই ক্লাশ শেষ করলেন । সেদিন রাতেই আবার তার প্রেপ ডিউটি পরলো । ক্লাশে এসেই তিনি হুকুম দিলেন ক্কোন কথা বলা যাবে না । স্যার যেহেতু হুকুম দিয়েছেন সুতরাং সেটাতো মানা যাবেই না । তাই স্যার ক্লাশ থেকে একটু বের হলেই আমরা জোরে জোরে কথা বলা শুরু করলাম । একজন আবার বোর্ডে বড় করে লিখে রাখলো ”ইতর” । একটু পরে ক্লাশে ঢুকে স্যার প্রচন্ড রেগে গেলেন । রাগে তার গা কাপছিলো । অনেক চার্জ করেও বের করতে পারলেন না কে বোর্ডে ”ইতর” লিখেছে । যখন প্রেপ শেষের ঘন্টা পড়ল আমরা ইতর ইতর বলে মিছিল করতে করতে হাউসের দিকে রওনা হলাম । স্যার সেদিন এক বিব্রত পরিস্থিতিতে ক্যাডেট কলেজে টিচিং শুরু করেছিলেন । অথচ আমরা যখন আরেকটু সিনিওর হই তখন তার সাথে আমাদের সম্প্রর্কটা হয়েছিল অন্যরকম । কিছুদিন পরেই তিনি অন্য কলেজে বদলি হন । আমরা তাকে খুব মিস করেছি ।
মিস করেছি আমাদের শ্রদ্ধেয় এনামুল হক স্যারকে ।

১,৮৫৮ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “ফিরে দেখা (পর্ব-১)”

  1. নাজমুল (০২-০৮)

    শোভন দারুণ লিখেছো তুমি আশা করি সামনে তোমার কাছ থেকে অনেক ভালো লেখা পাবো B-)
    আমরা তোমার মতই লেখক খুজছিলাম B-)
    দোস্ত আসলেই ভালো লিখসিস আরো লিখতে থাক 😀

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    পাবনার পোলাপাইন লেখা দিতেছে এই আনন্দ কই রাখি কাইয়ুম। 😀

    তাও আবার উপন্যাস। ২৫ পর্ব না হইলেও মিনিমাম দশ পর্ব তো হইবোই কি কও।

    লেখা ভালো হইছে বাচ্চু, লাইগা থাক


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    সিনিয়ররা সব ভালো হয়ে গেছে দেখছি... প্রথম ব্লগে এখন আর কেউ পাঙ্গায় না......... x-( x-(

    আমি বললাম কানে ধর । ও সাথে সাথে কান ধরলো । আমার হাসি ঠেকায় কে ।

    এখন তুই নিজেই কানে ধরে ব্লগ চক্কর দেওয়া শুরু কর......

    জবাব দিন
  4. আজাদ (৯৪-০০)

    তুমি নিশ্চত ভাসানী হাউস এ ছিলা । ক্লাস সেভেনের ব্লক থেকে মসজিদ সবচেয়ে কাছে। আমাদের সময় এক হুজুর ছিলেম উনি অনেক রাতে এত জোরে যিকির করতেন যে আমাদের ঘুম ভেংগে যেত ! আমি ক্লাস সেভেনে সিলাম ১০৩ এ।রুম থেকে হুজুর কে বীট দেয়া যেত (নাউযুবিল্লাহ)

    জবাব দিন
  5. ইফতেখার আলম খান (৭৯-৮৪)

    চমৎকার।

    যাই হোক যখন আমি স্যারকে এই গল্প বলছিলাম,হঠাৎ করে পিন্টু (ছদ্মনাম) পিছনে ঘুরে বলে উঠলো স্যার সব মিথ্যা কথা স্যার , সব মিথ্যা কথা । ফর্মের সবাই হো হো করে হেসে উঠলো । কারো আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার গল্প কতটুকু সত্য এবং কে সেই জনৈক বন্ধু ।

    :just: :khekz: :khekz:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কুচ্ছিত হাঁসের ছানা (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।