অতন্দ্রিলা

প্রিয় মিমোসা,
আজ তোর ছবি দেখলাম ফেসবুকে ।এখনো অত সুন্দরী আছিস কেমন করে বলবি?আমি হিংসায় জ্বলে পুড়ে গেলাম ।আমার চিঠি পড়ে কি বুঝতে পারছিস আমার কী ভীষণ মন খারাপ?বোধ হয় না ।আজ সকালে উঠে দেখলাম আমার আদরের কন্যা রবি ঠাকুরের কবিতা পড়ছে ।অতন্দ্রিলার সঙ্গে আমার কিছুতে মিল নেই ।ও চুপচাপ,আমি অস্থির চঞ্চল,ও কখনো রাগ করে না,আমি কথায় কথায় রেগে যাই ।তবে ওর জন্মের আগের কয়টা মাস মন শান্ত রাখার জন্য রবি ঠাকুর নিয়ে মেতে থাকতাম বলেই হয় তো ও আমার মত রবি ঠাকুরের পাগলাটে ভক্ত পাঠিকা ।”অভিসার” কবিতাটা পড়ছিল আজ ।ঐ যে “সন্ন্যাসী উপগুপ্ত/
মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে একদা ছিলেন সুপ্ত/নগরীর দীপ নিবেছে পবনে দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে/নিশীথের তারা শ্রাবণ গগনে ঘন মেঘে অবলুপ্ত ।”সন্ন্যাসী উপগুপ্তের সঙ্গে নগরীর নটী বাসবদত্তার কেমন করে প্রেম হয়েছিল কে জানে ।শেষ লাইনটা হল,আজ রজনীতে হয়েছে সময় এসেছি বাসবদত্তা ।এই কবিতাটা আমি যখন পড়ি,আমার চোখ পানিতে ভরে যায় ।কেন বল তো?বলতে পারলে এক বক্স চকোলেট খাওয়াব ।তুই ভাবতে থাক,আমি এর মাঝে তোকে একটা গল্প শোনাই ।আমার আর শুভর প্রেম কেমন করে হয়েছিল তা তোর মনে আছে?ক্লাস টুয়েলভের শুরুতে আমার ভীঁষণ জ্বর হয়েছিল ।কিচ্ছু খেতে পারতাম না ।ঐ যে তুই রোজ বাড়ী এসে পড়া বুঝিয়ে দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে যেতি,মনে পড়ে?ভীষণ অপমান করতি ।আমার মাথায় নাকি কিচ্ছু ঢোকে না আরো ছাইপাশ কত কী বলেছিস ।এক দিন জ্বরের ঘোরে সব ঝাপসা দেখছি ।বাবা কোথা থেকে এক ছোকরা মতন ডাক্তার ধরে নিয়ে এলেন ।বাচ্চা ছেলেরা প্রেম করতে যাবার আগে যে রকম নার্ভাস থাকে ঐ রকম ।দেখলেই মনে হয়,দূর!এ ডাক্তারীর কী জানে?তেরোর ঘরের নামতা জিজ্ঞেস করলেই আটকে যাবে । সে আমার পালস দেখবে বলে হাত ধরে বলল,তোমার বয়স কত বল তো ।আমি ঝটকা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,আপনি তো দারুণ অভদ্র ।বয়সে ছোট হলেই তুমি বলতে হবে?ধমক খেয়ে সে আরো নার্ভাস হয়ে গেল ।আমার ঘরের চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে নখ উল্টে ফেলল ।আমার ভাবী ভাল মানুষ টাইপ ।অনেক যত্ন করে তার কাটা ধুয়ে স্যাভলন লাগিয়ে দিলেন ।অবশ্য সুন্দর ছেলে দেখলে হয় তো সবার মায়া লাগে ।আমার কিন্তু লাগে নি ।আমি বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম পুরো সময় ।এর পর আর এক দিন দেখা হল ।বই কিনতে গেলাম ।তাকে দেখলাম মনযোগ দিয়ে আর্থার সি ক্লার্কের সায়েন্স ফিকশান বাছাই করছে ।এমন মুখ করে রেখেছে যেন দু দিন খেতে পায় নি ।দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ।আমি কাছে গিয়ে বললাম,ও ডাক্তার সাহেব!চিনতে পারছেন?সে ভয় পাওয়া চেহারা নিয়ে তাকিয়ে রইল ।কথা বলল না ।আমি ঝাঁঝালো গলায় বললাম,আপনার মেমোরি তো ভীষণ ডাল ।কী করে ডাক্তার হলেন?ঐ যে সে দিন দেখে এলেন না আমায়?আমি “শেষের কবিতা ” নামের ঐ বড় বাড়ীটায় থাকি ।”সে বলল,”মনে আছে ।আপনি না বলায় রেগে গিয়েছিলেন ।” আমি হেসে বললাম,”আমার রাগ একটু বেশী,বুঝলেন?”ভয় পাওয়া চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবককে ফেলে আমি চলে এলাম ।এর দু মাস পর এক দিন কলেজের গেটের সামনে তাকে আবিষ্কার করলাম ।আমি সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই চেহারায় কেমন ভয়ের ছাপ পড়ল ।আমি হাসি মুখে বললাম,”ডাক্তার সাহেব কোন কাজে এসেছেন বুঝি?”
সে নার্ভাস ভঙ্গীতে বলল,”এই একটু এলাম ।আপনার নামটা তো জানা হল না ।”
আমি খিলখিল করে হেসে বললাম,”ও তাই বুঝি!আচ্ছা আমাকে দেখলে আপনি এত ভয় পান কেন?আমার চেহারাটা কী ভয় পাওয়ার মত?”
সে আরো নার্ভাস হয়ে গেল ।আমার ইচ্ছে হল এই হাঁদারামের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেই ।আমি বললাম,”আপনি অকারণে মিথ্যে বলছেন কেন?আমার নাম তো আপনি জানেন ।একটু আগেই তো ক্লাসের একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করছিলেন,অতসীদের ক্লাসরুম কোনটা ।” এ বারে আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার হাত পা কাঁপছে ।আমি মনে মনে তিন বার বললাম,মর গাধা ।তারপর বললাম,”আমার ক্লাস হল টুয়েলভ বি ।সায়েন্স গ্রুপ ।তিন তলার এক কোণায় ।আসুন আপনাকে দেখিয়ে দি ।ঐ যে!দেখতে পাচ্ছেন?আর আমার নাম হল এশা আফরোজ অতসী ।”তার চোখ দেখে মনে হল সে আমার কথা কিছুই বুঝতে পারছে না ।আমি আবার মনে মনে বললাম,যা গাধা!বাড়ী গিয়ে আয়োডিনযুক্ত লবণ খা ।এর মাঝে তুই এসে হাজির ।তুই কলেজ শেষে বাড়ী গিয়ে ঘুমাবি ।সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত টানা পড়বি ।রুটিনে হেরফের হবার জো নেই ।আমার দেরী দেখে বিরক্ত হয়ে বললি,”রাস্তাঘাটে উটকো লোকের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করছিস!যত্তোসব!সময় তো সস্তা হয়েছে!প্রিটেস্টের সাত দিন নেই ।”তোর বকা শুনে বেচারা আরো ভড়কে গেল ।আচ্ছা,মিমোসা!তুই এত বাচ্চা বয়সে এই রকম গিন্নী মা স্বভাবের ছিলি কেন?উফ!এখনো আছিস?তোর বর সে দিন আমার চেম্বারে এসেছিল ।আমি বললাম,ও তন্ময়!মন্ডা খাবি! খাস মুক্তাগাছার ।সে কাঁচুমাচু মুখ করে বলল,না রে ।সে বরাবর ভোজন রসিক ছিল ।তার অমৃতে অরুচি দেখে আমি সন্দেহের চোখে তাকালাম ।তারপর বললাম,বার্গার খাবি?আমি নিজে তৈরি করেছি ।পারফেক্টলি হাইজিনিক ।সে দুঃখ দুঃখ মুখ করে বলল,বার্গারে কি ভেজিটেবলস?আমি বললাম,না রে বিফ!তার মুখটা আরো দুঃখী দুঃখী হয়ে গেল ।করুণ গলায় বলল,থাক খাব না । আমি বললাম,কফি খাবি?বিনের বিস্বাদ কফি না ।খাস ব্রাজিলিয়ান কফি ।ভাই পাঠিয়েছে । সে এ বার আর পারল না । রাজি হল ।বলল,”চিনি কম দিস ।ক্রিম দিস না ।আমার বাড়ী ফিরে বৌকে ফিরিস্তি দিতে হবে সারা দিন কী খেলাম তার ।” ও রে!ওর তো ডায়াবেটিস নেই ।অত অত্যাচার করিস না ।দুটো ভালমন্দ খেতে দিস ।তোর বরাবর কড়া শাসন ।মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার আগে বড় জ্বালাতন করেছিস তুই ।রোজ কাকভোরে উঠিয়ে দিতি আর রাত গভীরে ফোন করে দেখতি আমি জেগে নাকি ।শোন!ঐ গাধা ডাক্তারকে আমি দেখলাম এক বছর পর ।কথায় বলে না ,মেডিকেলে চান্স পাবার পর মানুষ এক বার ডাক্তার হয় ।তখন আমার কী খুশীর দিন ছিল ।তখন আমার ভাইয়ের ছেলের আকিকা ছিল ।বাবা দেখলাম কী মনে করে ঐ বেকুবের শিরোমণিকে ডেকেছে ।সে ফুলবাবু সেজে ড্রয়িং রুমে গভীর মনোযোগ দিয়ে বি বি সি নিউজ দেখছে ।আমি সে দিন কী মনে করে সেজেছিলাম খুব ।গা ভর্তি করে রূপার গয়না পরেছিলাম রূপালি পাড়ের ফিরোজা শাড়ীর সাথে ।একটু রূপটান মেখেছিলাম ।কোন দিন মাখি না ।সে দিন কী মনে করে সাজলাম কে জানে ।আমি তার কাছে গিয়ে বল্লাম,”ও ডাক্তার সাহেব,আমাকে চিনতে পারছেন?”
বোকা ডাক্তার আমাকে এক নজর দেখে চোখ নামিয়ে নিল। ভীতুটাকে দেখে মনে হল ঘাঁউ করে চিত্‍কার করে আরো ভয় পাইয়ে দেই। আমি বললাম,”আপনি আমাকে এত ভয় পান কেন বলুন ত।আমি কী ভয়ংকর দেখতে? “তার কী হল কে জানে ।নীচু গলায় বলল,”জ্বি না ।আপনাকে একটা কথা বলবো? আপনাকে
দেখে একটা কথা মনে পড়ল ।রেগে যাবেন না প্লিজ ।আমার কথা নয়,কবিগুরুর কথা।” আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,বলুন ।সে বলল,”আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর।” আমি কী যে অবাক হয়েছিলাম সে দিন ।কবিগুরুর ঐ একটা কথার জন্য সেই নার্ভাস বোকারাম ডাক্তারকে কী ভীষণ সুপুরুষ মনে হয়েছিল ।রবি ঠাকুরকে পেলে আমি খুব বকে দিতাম ।কী যে সব কান্ড করে গেছে লোকটা। বিয়ের প্রস্তাব এল। ঐ একটা লাইনের মুগ্ধতার জন্যেই রাজি হতে দ্বিধা করি নি ।এ বার বল তো আমার কেন মন খারাপ? অনেক সময় দিয়েছি ।আর নয় ।আমার ডান হাতের কড়ে আঙুলে একটা কাটা দাগ আছে ।দেখেছিস নিশ্চই ।আমার বড় ভাবী আমার থেকে প্রায় তেরো বছরের বড়। আমার বড় বোন নেই। সেই অভাব ভাবী পূরণ করেছিলেন ।খুব মিষ্টি দেখতে মৃদু
ভাষী বিনয়ী মানুষ। কোন ছেলে চিঠি দিল,কোন রঙের চুড়ি পরব আর সব ছেলেমানুষী আবদার মেটানোর এমন জায়গা আর কোথায় পাব বল ।আমাদের বিশাল তিন পুরুষের পরিবারের প্রথম বৌ তিনি। বাড়ীর ভেতরকার এক মাত্র বন্ধু যার সাথে গোপন মেয়েলি তথ্যের লেনদেন করা যায়। আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন ভাবীর ভার্সিটির এক জন বন্ধু আমাদের বাড়ী এলেন। অমিয় দা,খুব ভাল ছাত্র ছিলেন। দেশের বাইরে পি এইচ ডি করতে লেগেছেন। কদিনের জন্য এসে ভাবীর সাথে দেখা করতে এসেছেন ।আমার ভাবীর নাম শুক্লা ।অমিয়দা ডাকতেন শুক্লাবুড়ী ।ভাবীকে দেখে মনে হত তিনি এ বাড়ীর বৌ হবার জন্যে জন্মেছেন। তার গুছিয়ে পড়া শাড়ী,কানের বেলকুঁড়ি,হাতের সোনার বালা ,মাথার ঘোমটা দেখে মনে হত কোন দিন যদি বিয়ে করি ভাবীর মতন লক্ষ্মী বৌ হব ।আর এখন দেখ না!কোন পার্টিতেও শাড়ী পরি না,গয়না দূরে থাক ।অত সময় কোথায় ?ভাবীর মুখে সারা দিন হাসি ।খুব খাটতেন ।কারো কিছু লাগল,অমনি ও বড় বৌ এটা দাও!ওটা চাই! এ দিকে এস শুক্লা!কিন্তু অমিয় দাকে দেখে ভাবীর মুখের হাসিটা আলাদা। অনেকটা খেলুড়ে খুকি লুডু কানামাছিতে জিতলে যে হাসিটা হাসে তার মতন ,তরল। ভাবীর যে এ বাড়ীর বাইরে আলাদা জগত ছিল,তার বন্ধু বান্ধব আছে এ আমার বিশ্বাস হতে চাইতো না ।অমিয় দা তাই আমার কাছে বিশাল কৌতূহলের বিস্ময়ের মানুষ। অমিয় দা থাকবেন আমাদের বাড়ী। এ মানুষটিকে প্রথম দেখলে আমার কেন যেন
সমুদ্রের কথা মনে হত। লোকটার কথা বলায়,চোখে কিংবা অন্য কোথাও একটা সমুদ্র সমুদ্র ভাব আছে ।খুব গল্প করলাম আমরা ।আমার স্কুলের গল্প ,বন্ধুদের গল্প। এক রাতে খুব জোছনা হয়েছে ।ছাদে বসে বসে গল্প করছি ।বললাম,আপনার প্রিয় কবি কে দাদা? তিনি বললেন অনেকে আছে ।অমিয় চক্রবর্তীর একটা কবিতা শুনবে? তারপর,ভরাট জাদুকরী গলায় বললেন,”অতন্দ্রিলা!ঘুমোও নি জানি/তাই চুপিচুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে বলি শোন/সৌরতারা ছাওয়া এই বিছানায়/সূক্ষ্মজাল রাত্রির মশারি/কত দীর্ঘ দুজনার গেল সারা দিন/আলাদা নিঃশ্বাসে/এতক্ষণে ছায়া ছায়া পাশে ছুঁই দুজনে দুজনা/অতন্দ্রিলা…/হঠাত্‍ কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জোছনা/দেখি তুমি নেই ।”মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।তরল গলায় বললাম,আপনি কী দারুণ অমিয়দা ।সেই জোছনা,কবিতা,এবং নিরিবিলি ছাদে পাশাপাশি বসে থাকায় কী বিশেষ কিছু ছিল? যা ঋষি পুরুষের মনকেও অন্য রকম করে দেয় ।উনাকে আমার মহাপুরুষের মত লাগতো। না হয় এত সুন্দর করে কেউ হাসতে পারে? কী যে ভাল লাগতো ।যেন রবি ঠাকুর,জীবনানন্দকে দেখছি ।পর দিন জলপাই কেটে বিশেষ এক রকম ভর্তা করে খাওয়াবো উনাকে ভেবে বটি ধরতেই কী করে হাত কেটে কী কান্ড হল ।অমিয় দা চমকে উঠে হাত ধরলেন ।কাটা ধুয়ে ডেটল লাগিয়ে ব্যান্ড এইড বেঁধে দিলেন ।পরপুরুষ হাত ছুঁয়েছে বলে চমকে উঠি নি ।মহাপুরুষের ছোঁয়া ভেবেছিলাম বলেই হয় তো ।তার পরের দিন তিনি চলে গেলেন ।এক বার চোখে চোখে চাইলাম ।কীসের যেন ঝিলিক দেখলাম ।মেয়েরা বোধ হয় সব সময় এ সব বুঝতে পারে রে ।বয়স যত কম হোক। আমেরিকা গিয়ে অমিয় দা আমাকে একটা চিঠি লিখলেন ।কুশল প্রশ্ন নেই ।সাদা
কাগজে একটা কথাই লেখা,”অতন্দ্রিলা,হঠাত্‍কখন শুভ্র বিছানায় পড়ে জোছনা ,দেখি তুমি নেই ।”সে রাতে আমি ঘুমাতে গেলে মনে হল,কে যেন কানে কানে
বলছে,অতন্দ্রিলা,ঘুমোও নি জানি ।রাতে ভাল ঘুম হল না ।ভোরে ভাবীর গলা জড়িয়ে বললাম,অমিয় দা কেমন লোক বল তো ।ভাবী বললেন,কেমন আবার?ভাল ।আমি কাঁদোকাঁদো হয়ে বললাম,উনাকে চিঠি লিখতে বারণ করবে তো ।ভাবী অবাক হলেন ।তারপরেও অমিয়
দার খবর আমার কানে আসতো ।তিনি কিছুতেই বিয়ে করতে চাইছেন না ।কয়েক বছর গেল। শুনলাম,বিয়ে করেছেন ।একটু কষ্ট হয়েছিল কি?হয় তো ।পরের বছর অমিয় দা দেশে এলেন ।আমাদের বাড়ীতে এলেন ।তেমন কিন্তু কথা বললেন না ।তার স্ত্রীকে দেখলাম,চওড়া পাড়ের শাড়ী পরা,কপালে সিঁদুর ।বেশ সুন্দরী। হিংসে হচ্ছিল? না তো!হিংসে হয় নি ।এত দিন পর অমিয় দার কথা কেন বলছি জানিস?তিনি সে দিন আমার কাছে এসেছিলেন ।সত্যি খুশী হয়েছিলাম ।জানিস তো আমার মেয়ের মুখের সঙ্গে আমার মুখ বদল করা যায়?যখন আমার মেয়েকে নিয়ে উনার সামনে দাঁড় করিয়ে বললাম,এ হল
অতন্দ্রিলা উনি কী ভীষণ চমকে উঠেছিলেন ।আরো অনেক কথা হল ।জানি তিনি আমার মেয়েকে আর দেখছিলেন না ।ওর জায়গায় অনেক বছর আগের জোছনা রাতের মুগ্ধ কিশোরীকে দেখছিলেন ।বিয়ের বছর খানেকের মাথায় তার স্ত্রীর সাথে তার ছাড়া ছাড়ি হয়ে গেছে ।কেন জিজ্ঞেস করতে ভয় হল ।চলে যাবার আগে আগে বললেন,তোমার ডান হাতের কড়ে আঙুলে একটা কাটা দাগ আছে না?আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত
বাড়ালাম। দাগটা এক নজর দেখে ঋষিপুরুষ বিদায় নিলেন ।এই দাগটার কথা আমি শুভকে বলি নি কখনো। অমিয় দা দগদগে ক্ষত বুকে নিয়ে বছরের পর বছর পার করেছেন। আমার না হয় থাকল একটা কাটা দাগ। বাসবদত্তার সঙ্গে তো উপগুপ্তের প্রেম হয়েছিল। হয় তো অন্য ধর্মের মারকুটে রাগী বোকা কিশোরী বালিকাকেও তেমনি অসাধারণ অমিয় দা হৃদয় দিয়েছিলেন। সে দিন উনাকে খুব বলতে ইচ্ছে হয়েছিল,বলুন,”আজ রজনীতে হয়েছে সময় এসেছি বাসবদত্তা। “আসি রে। আজ আর লিখব না। ভাল থাকিস।
ইতি
অতসী

১,৬১৫ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “অতন্দ্রিলা”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    ব্লগে স্বাগতম। লিখা থামাবে না আপু তবে প্রথম লেখক হিসেবে নিয়মানুযায়ী দশটা ফ্রন্টরোল বিদ্যুতের তেজে দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে! :grr: :grr:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সৌরভ(০৬-১২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।